রমজানের প্রথম থেকেই শুরু হয়েছে ঈদের কেনাকাটা। ভিড় এড়াতে, দরদামে সুবিধার জন্য আগাম কেনাকাটায় ঝুঁকছেন ক্রেতারা। নগরীর মার্কেটগুলোও সেজেছে বর্ণিল পোশাকে। এ নিয়ে প্রিয় চট্টগ্রামের বিশেষ আয়োজন
ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামের অর্ধশতাধিক মার্কেট সেজেছে নতুনরূপে। উদ্বোধন হয়েছে নতুন শপিংমল। হাল আমলের ট্রেন্ডকে সামনে রেখে ফ্যাশন হাউসগুলোও তৈরি করেছে নতুন পোশাক। তাই ডিজাইনে এসেছে বৈচিত্র্য। বেড়েছে কালেকশনও। ক্রেতার নজর কাড়তে ব্যবসায়ীরা নতুন করে মূলধন যোগ করেছেন তাদের ব্যবসায়। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে নতুন এই মূলধনের পরিমাণ ছাড়িয়ে যাবে শতকোটি টাকার ঘর। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এই বিনিয়োগ করছেন দুই ধাপে। রমজানের প্রথম ১৫ দিন ও পরের ১৫ দিনকে আলাদাভাবে টার্গেট করে নতুন বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন তারা।
চট্টগ্রাম ডিজাইনার্স ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও রওশন বুটিক হাউসের মালিক রওশন আরা চৌধুরী বলেন, বছরজুড়ে আমাদের লক্ষ্য থাকে পহেলা বৈশাখ আর ঈদ। এই দুটিকে কেন্দ্র করে আমরা পরিকল্পনা সাজাই, বিনিয়োগ বাড়াই। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফ্যাশন হাউস শৈল্পিকের প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম ইলিয়াস বলেন, ‘ট্রাডিশনের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন লুককে বেশি পছন্দ করছেন ক্রেতারা। আমরা পোশাকের ডিজাইনও করেছি সেটি মাথায় রেখে। আমাদের ৫৪টি শোরুম রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ঈদকে ঘিরে এগুলোতে প্রায় ১৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ করেছি। ঈদের আগে প্রয়োজনে আরেক দফা বিনিয়োগ করব আমরা পোশাকে।
বিপণি বিতানের সভাপতি মোহাম্মদ সাগির বলেন, ‘মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। তাদের বাজেট মাথায় রেখে পোশাক এনেছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য নতুন করে মূলধন বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একটি দোকানে সারাবছর যা বিক্রি হয়, তার এক-চতুর্থাংশ ঈদের সময় বিক্রি হয়। এ জন্য ঈদকে ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে বিপণি বিতানের সব ব্যবসায়ী। সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটের সিনিয়র সহসভাপতি হাসান দস্তগীর আজাদ বলেন, ‘ক্রেতার চাহিদা বিবেচনা করে পোশাক তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। এবারে আবহাওয়াও বেশ ভালো। ঈদের কেনাকাটাতে এটাও বড় ভূমিকা রাখেন।’
নগরীর অন্যতম একটি ব্যস্ততম এলাকা হচ্ছে বহদ্দারহাট। এখানেই গড়ে উঠেছে নতুন দুটি মার্কেট। একটি বিশ্বমানের শপিংমল ‘ফিনলে সাউথ সিটি’ এবং অপরটি আধুনিক শপিংমল ‘ইলিজি স্কাইপার্ক’। ফিনলে সাউথ সিটিতে ক্রেতারা এক ছাদের নিচে অনেক কিছু তো পাবেনই, একই সঙ্গে এখানে কেনাকাটায় মিলবে বিশ্বমানের অভিজ্ঞতা। গত ১৭ জানুয়ারি এই শপিংমল যাত্রা শুরু করে। এখন ঈদের পসরা নিয়ে এই মল সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। একই শপিংমলের গা-ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে ইলিজি স্কাইপার্ক। ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এটির উদ্বোধন করা হয়েছে। মধ্যবিত্তকে গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে শপিংমলটি।
ঈদ সামনে রেখে আকর্ষণীয় পোশাকের সমাহার ঘটিয়েছেন বিভিন্ন বিপণিকেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা। নগরীর নিউমার্কেট, মিমি সুপারমার্কেট, বালি আর্কেড, চক সুপারমার্কেট, স্বজন সুপারমার্কেট, সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেট, লাকি প্লাজা, আখতারুজ্জামান সেন্টার, ইউনুস্কো সেন্টার, আফমি প্লাজা, সেন্ট্রাল প্লাজা, বে-শপিং সেন্টার, ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্সের সহস্রাধিক দোকান এনেছে অত্যাধুনিক পোশাক। বাংলাদেশের বুটিকের পাশাপাশি পাকিস্তান, ভারতীয় ও আফগানিস্তানের পোশাক তোলা হয়েছে দোকানে। পাঞ্জাবিতে বিভিন্ন ধরনের নকশা, লেইস ও সিকুয়েন্সের কাজ করেছেন ডিজাইনাররা।
নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, তামাকমুন্ডি লেন, টেরিবাজারে পোশাক বিক্রি হয় পাইকারি মূল্যে। টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, ‘শবেবরাতের পর থেকে রমজান শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ভালো বেচাকেনা হয় তাদের। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকায় এবার ভালো ব্যবসার আশা করছি আমরা।’ টেরিবাজারে ছোট-বড় প্রায় ৮০টি মার্কেট রয়েছে। দোকানের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। এসব দোকানে শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবি, শার্ট থেকে শুরু করে থানকাপড়, কসমেটিকসসহ সাজসজ্জার নানা উপকরণ খুচরা ও পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে। ঈদ সামনে রেখে অন্যান্য পাইকারি মোকামেও এসেছে নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক। গ্রাহকের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে ঈদের দোকান সাজিয়েছেন দোকানিরা। উদ্যোক্তারা জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের ম্যাটেরিয়াল আসে। যেমন– টাঙ্গাইলের তাঁতের কাপড়, নারায়ণগঞ্জের জামদানি, রাজশাহীর মসলিন, সিলেটের মণিপুরি ও কুমিল্লার খাদি। গ্রাহকের চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন টাইপের কাপড়ের ওপর পোশাক ডিজাইন করেন তারা। অনেকে এবার ক্রেপ শাড়ি, ডিজাইনার থ্রিপিস, মসলিন শাড়ি, টুপিস, কুর্তি, অফিসওয়্যার এবং মেনস পাঞ্জাবি তুলেছেন।
নগরীর আগ্রাবাদে ৫০০ গজের ব্যবধানে রয়েছে লাকি প্লাজা, সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেট ও আখতারুজ্জামান সেন্টার। পাশাপাশি থাকা এই তিন বিপণিকেন্দ্রের মধ্যে বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে লাকি প্লাজায়। ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, এই মার্কেটে বিনিয়োগের পরিমাণ এবার ৩০ কোটি টাকারও বেশি। আখতারুজ্জামান সেন্টারে বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০ কোটি টাকারও বেশি। নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিইসি মোড়ে রয়েছে সেন্ট্রাল প্লাজা। সেখানে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৫০ কোটি টাকারও বেশি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকাতে এবার বিনিয়োগের টাকা তুলে আনতে পারবেন বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ র ক ন ক ট ব ন য় গ কর ব যবস য় র ড জ ইন র নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
হামদর্দের চিফ মোতাওয়াল্লি ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুনের জন্মদিন উদযাপিত
হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশের চিফ মোতাওয়াল্লি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়ার জন্মদিন উপলক্ষে হামদর্দ প্রধান কার্যালয়ে কোরআন খতম, আলোচনা সভা, দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।
শনিবার (১ মার্চ ) রাজধানীর বাংলামোটরে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করা হয়।
জন্মদিন উপলক্ষে সকালে হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, হামদর্দ পাবলিক কলেজ, রওশন জাহান ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (ইউনানী) লক্ষ্মীপুর, হামদর্দ জেনারেল হাসপাতাল, হাকীম সাঈদ ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ, হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ বগুড়া, হামদর্দ আধুনিক কারখানার সদস্যবৃন্দ, হামদর্দ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ও হামদর্দ কর্মচারী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সহধর্মিণী, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উপদেষ্টা ও রওশন জাহান ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাকীম কামরুন নাহার হারুন, একুশে পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক, হামদর্দ ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে সিনিয়র পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আনিসুল হক, পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) হাকীম সাইফউদ্দিন মুরাদ, তথ্য ও গণসংযোগ বিভাগের পরিচালক আমিরুল মোমেনীন মানিক, হামদর্দ ফাউন্ডেশনের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহবুব আনোয়ার এবং ভারতের বিশিষ্ট চিকিৎসক হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ইউনানী চেয়ারম্যান ড. মনোয়ার হোসেন কাজমী বক্তব্য দেন।
বক্তারা হামদর্দের সাফল্যের পেছনে ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়ার অবদানের কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, মাত্র ৫০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে হামদর্দ এর যাত্রা শুরু হলেও আজ এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবার প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হামদর্দ শুধু চিকিৎসা ও গবেষণায় নয়, মানবসেবার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
এ সময় ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া বলেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করাই তার জীবনের ব্রত। সততা, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেম নিয়ে সবাইকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।
ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে হামদর্দের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া।
ঢাকা/রাজীব