সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নির্মিত হয়েছে ছোট-বড় কয়েকটি শপিংমল। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি উচ্চ ও মধ্যবিত্তসহ সব মানুষের সাধ্য বিবেচনা করে গড়ে তোলা হয়েছে এসব মার্কেট। নগরীর অন্যতম একটি ব্যস্ততম এলাকা হচ্ছে বহদ্দারহাট। এখানেই রাস্তার এপাশ-ওপাশের ব্যবধানে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন দুটি মার্কেট। একটি বিশ্বমানের শপিংমল ‘ফিনলে সাউথ সিটি’ এবং অপরটি আধুনিক শপিংমল ‘ইলিজি স্কাই পার্ক’। ফিনলে সাউথ সিটিতে ক্রেতারা এক ছাদের নিচে অনেক কিছু তো পাবেনই, একইসঙ্গে এখানে কেনাকাটায় মিলবে বিশ্বমানের অভিজ্ঞতা। গত ১৭ জানুয়ারি এই শপিংমলের যাত্রা শুরু হয়। এটির উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র ডা.

শাহাদাত হোসেন।  
একই শপিংমলের গাঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে ইলিজি স্কাই পার্ক। ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এটির উদ্বোধন হয়েছে। মধ্যবিত্তকে গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে শপিংমলটি। এই দুটি শপিংমল নতুন রূপ দিয়েছে বহদ্দারহাট এলাকাকে। এখান থেকে এক কিলোমিটারের ব্যবধানে নগরীর আরেক ব্যস্ততম এলাকা চকবাজার। এখানেও কাছাকাছি গড়ে তোলা হয়েছে দুটি শপিংমল। একটি হচ্ছে দারুণ দৃষ্টিনন্দন ‘বালি আর্কেড’, অন্যটি ‘সাফ আমিন’। তবে এই দুটি শপিংমলের মধ্যে সবার নজর কেড়েছে বালি আর্কেড। 
চকবাজার এলাকায় রয়েছে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে তরুণ-তরুণীদের কেনাকাটায় সবসময় জমজমাট থাকে বালি আর্কেড। সেভাবে সাড়া ফেলতে না পারলেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নতুন নতুন আয়োজনে তৈরি হচ্ছে আরেক শপিং মল সাফ আমিন। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ফিনলে সাউথ সিটি শপিং মল। প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকতেই দেখা যাবে সুবিশাল ড্রপঅফ পয়েন্ট, রয়েছে

 পৃথক প্রবেশ ও বাহিরে প্রশস্ত দরজা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই মার্কেটে ক্যাপসুল লিফটের পাশাপাশি রয়েছে সার্ভিস লিফট, এক্সেলেটর, স্বংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, সুবিশাল সিকিউরড পাকিং স্পেস, আধুনিক শপিংমলগুলোর আদলে ফুডকোর্ট। ফুডকোর্টে রয়েছে বিশ্বখ্যাত ফুড চেইন, কিডস প্লে জোন, ইলেকট্রোনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সস মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ও কম্পিউটার সার্বিস সেন্টার, বুকস্টোর,, গিফটশপ, জুয়েলারি, কসমেটিকস, লেডিস গার্মেন্টস কালেকশন, ঘড়ি, অপটিক্স, বোরকা, হিজাব, টেইলারিং শপ, হ্যান্ডিক্রাফটস, বাচ্চাদের কেলনার দোকান, ট্রেন্ডি রেডিমেন্ট গার্মেন্টস, পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামা, শেরওয়ানি, দেশি-বিদেশী জুতা, ব্র্যান্ড গ্যালারি, ম্যাজিক্যাল থিমিপার্ক, পুরুষ ও নারীদের পৃথক নামাজের ব্যবস্থা, প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে টয়লেট সুবিধা।
শপিং মল দেখা গেছে, কেশি-বিদেশী ও নামিদামী ব্র্যান্ডের আউটলেট। এখানে রয়েছে, টাইম জোন, রাইজ, শৈল্পিক, এপেক্স, বাটা, বে সুজ, হারলেন, খাদিঘর, আর্ট, লিকুপার, জি জি আইল্যান্ড, ব্রোস্ট ক্যাপে, ল্যান্ড, সাদিয়াস কিচেন, স্বদেশ পল্লীসহ নানা ব্র্যান্ডের সমাহার।
ফিনলে সাউথ সিটি শপিং মল ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুব খান সমকালকে বলেন, ‘ফিনলে সাউথ সিটি শপিং মল একটি আন্তর্জাতিক মানের শপিং মল। এখানে প্রবেশ করলেই ক্রেতারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হাবের সুবিধাদি পাবেন। তবে আমরা শুধু উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের চাহিদার কথাও মাথায় রেখেছি। এজন্য দোকানগুলোতে মধ্যবিত্তরাও তাদের সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন। তাছাড়া, ক্রেতা টানে কেনাটাকায় নিয়মিত পুরস্কারও দেওয়া হচ্ছে। প্রতি ১০ দিন পর পর ড্রয়ের মাধ্যমে ৩০ জনকে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। ’ 
তিনি বলেন, ‘কম লাভ, বেশি বিক্রি-এই নীতি অনুসরণ করছেন শপিং মলের ২৩৮ রিটেই শপের ব্যবসায়ীরা। ফলে এতে ক্রেতা-বিক্রেতা- দুই পক্ষই লাভ হচ্ছেন। ক্রেতাদের নিরাপত্তায় কেনাকাটাকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। এজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের পাশাপাশি সিসি ক্যামরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হয়। এছাড়া সার্বক্ষণিক জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছেই। সব মলিয়ে এই শপিং মলে কেনাকাটায় নতুন ও দারুণ সব অভিজ্ঞতা পাবেন ক্রেতারা।’
শপিং মলের প্রথম তলায় রয়েছে শৈল্পিক। এই দোকানের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শপিং মলটি উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত। ক্রেতাদের মনজয়ে তারাও নানা অফারের পাশাপাশি নতুন নতুন পোশাকের সমাহার রেখেছেন। ফলে ক্রেতারা হাসিমুখে কেনাকাটা করছেন। এটা আমরা ধরে রাখতে চাই।’ প্রসঙ্গত, মো. আলী এই এই শপিং মল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিও। 
শপিং মলের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, কসমেটিকস শপ ‘গ্লো অ্যান্ড টাচ’। দোকানটিতে কয়েকজন ক্রেতা বিভিন্ন ধরনের কমেটিকস সামগ্রী পছন্দ করছিলেন। তাদের একজন কলেজ ছাত্রী জারা জেবিন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘মার্কেটে প্রবেশ করতেই মনটা জুড়িয়ে গেছে। এক ছাদের নিচে সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে। আমি একটি ত্রিপিস কিনেছি। কসমেটিকসের দোকানগুলোর কালেকশন দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তাই পছন্দ করার চেষ্টা করছি। আমার মনে হয়, শহরের সেরা মার্কেটটি হচ্ছে এই মার্কেট।’ 
ইলিজি হোল্ডিং লিমিটেড নির্মাণ করে ইলিজি স্কাই পার্ক। এখানে দেখা গেছে, ক্রেতাদের আনাগোনা। শুরু থেকেই মার্কেটটিকে জনপ্রিয় করতে নানা উদ্যোগ নেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেটটি উদ্বোধনের পর ঢালিউড কুইন অপু বিশ্বাসসহ বেশ কয়েকজন সেলিব্রেটিকে নিয়ে প্রচারণা চালান।  ক্রেতা টানতে ‘কম লাভে, বেশি বিক্রি’ নীতি নিয়েছেন তারা। 
এই মার্কেটে শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা গৃহবধু রাহেলা বানু সমকালকে বলেন, ‘স্কাই পার্কে দাম অন্য মার্কেটের চেয়ে কিছুটা কম বলে মনে হয়েছে। এখানকার দোকানগুলোতে কালেকশনও ভালো। তাছাড়া এখন কেনাকাটা করলে দাম কিছু কম পাওয়া যাবে, সেজন্য ঈদের আগে কিছু কেনাকাটা করেছি এই মার্কেট থেকে।’
শুরু থেকেই বেশ সাড়া ফেলেছে চকবাজারে অবস্থিত বালি আর্কেড। রাজনৈতিক নেতা সোলেয়মান আলম শেঠের মালিকানাধীন এই মার্কেট। মার্কেটে রয়েছে আধুনিক সিনেমা হল ‘সিনেপ্লেক্স’। প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে কেনাকাটার পৃথক পৃথক জোন। নারীদের ত্রিপিস থেকে শুরু করে রয়েছে শাড়ি, বোরকা হিজাব পর্যন্ত। আছে পুরুষদের শার্ট থেকে শুরু করে টি-শার্ট, পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে শেরওয়ানি পর্যন্ত।  আশেপাশে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাজার হাজার শিক্ষার্থী থাকায় তাদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে বালি আর্কেড। বেচাকেনাও হয় আশানুরূপ। দামও তুলনামূলক কম হওয়ায় নতুনভাবে গড়ে উঠা মার্কেটগুলোর মধ্যে পছন্দের অন্যতম তালিকায় রয়েছে এই মার্কেটটিও।
তবে মোটামুটি বেচাকেনা আশানুরূপ সাড়া ফেলতে পারেনি সাফ আমিন। চকবাজারের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই মার্কেটটিতে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের আনাগোনাই বেশি। মার্কেটের দোকান মালিকরা জানিয়েছেন, নতুন নতুন মার্কেট হওয়ায় প্রতিযোগিতা পড়তে হচ্ছে তাদের। তবে এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ক্রেতাদের মনজয়ে নতুন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে মার্কেটটি ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন তারা।
সাফ আমিনে কেনাকাটা করতে যাওয়া চট্টগ্রাম কলেজ শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন সমকালকে বলেন, ‘চকবাজার এলাকায় কয়েকটি যে কয়েকটি নতুন মার্কেট হয়েছে, সবগুলোতে কমবেশি বেচাকেনা হচ্ছে। সাফ আমিন থেকে আমি টি-শার্ট কিনেছি। দাম মোটামুটি ভালো। তাই মাঝেমধ্যে এই মার্কেট থেকেই আমি কেনাকাটা করি।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ র ক ন ক ট এই ম র ক ট স ফ আম ন চকব জ র ব যবস য় প রব শ আর ক ড

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি: রিজভী

সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

সোমবার (৩ মার্চ) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তিনি এ কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংস্কারের জন্য যেসব কমিশন গঠন হয়েছিল, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত করার লক্ষ্যে।

তিনি আরও বলেন, জনগণ এখন নির্বাচন চায়। দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান সবার। একই সঙ্গে অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করারও আহ্বান জানাই।

বিএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ