চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিপণিবিতান। নিউমার্কেট হিসাবে খ্যাত এই মার্কেট ঈদ বাজারের প্রধান কেন্দ্র। তখনও ঈদের বাকি এক মাস, এরই মধ্যে মা ও বোনকে নিয়ে ঈদবাজার করতে এসেছেন মো. রিয়াদ। ঈদ মার্কেটে ভিড় এড়াতে তিনি আগেভাগে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছেন। ভিড় না থাকায় দামাদামি ও পছন্দমতো কেনাকাটার সুযোগও থাকে। শুধু রিয়াদ নন, রমজান শুরুর আগে বা রমজানের প্রথম সপ্তাহেই অনেকে ঈদের কেনাকাটা সেরে নেন। ব্যবসায়ীরাও রমজানের আগেই ক্রেতাদের জন্য পছন্দমতো ঈদ পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। তবে ঈদবাজারকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ : ঈদের পোশাকের তালিকায় শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ না হলেই নয়। পোশাকটাও হওয়া চাই একটু জমকালো। বিপণিবিতানের আলিফ ফ্যাশনের বিক্রেতা বলেন, ‘ঈদের বাজারে একটু জমকালো পোশাকের মধ্যে জর্জেট, সিল্কের চাহিদা বেশি। আর এই সঙ্গে সুতি, কটন কিংবা ভয়েল কাপড় তো সব সময়ই বিক্রি করছি।’ বিভিন্ন রঙের জর্জেট ও সিল্কের থ্রিপিস, গাউন, ওয়ান পিস রয়েছে বাজারে। সিল্কের ওপর বিভিন্ন রঙের ডিজিটাল প্রিন্টের চাহিদাও রয়েছে। আবার পুঁতি, পাড় বসানো ভারী কাজ করা জর্জেটের কামিজও পাওয়া যাবে এই ঈদে।
এই পোশাকগুলো পেয়ে যাবেন বিপণিবিতান (নিউমার্কেট), চিটাগং শপিং কমপ্লেক্স, সেন্ট্রাল প্লাজা, আখতারুজ্জামান সেন্টার, সিটি করপোরেশন সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেট, মতি টাওয়ার, মতি কমপ্লেক্স ও গুলজার টাওয়ারের দোকানগুলোয়। হাতের কাজ করা লিনেনের ওয়ান পিস, সেই সঙ্গে একটু ভিন্ন ধাঁচের টপ, ফতুয়া, কুর্তা পাওয়া যাবে এ মার্কেটগুলোয়। এ ছাড়া এই আবহাওয়ায় সুতি ও বাটিকের কামিজও পাওয়া যাবে। জর্জেট এবং সিল্ক কাপড়ের প্রতি গজ ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে পাবেন। আর সুতি ও লিনেনের দাম পড়বে গজপ্রতি ৬০ টাকা। জামার জন্য ক্রুশকাঁটা বা পুঁতি, ইয়ক পাবেন ১৫ টাকা থেকেই। শাড়ির জন্য যেতে পারেন বিপণিবিতান, শপিং কমপ্লেক্স, সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট ও মতি টাওয়ারে। সাধ্যের মধ্যে বাটিক, সুতি, হাফসিল্ক, তাঁত ও জর্জেটের ওপর কাজ করা শাড়ি পাবেন ৮০০ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে।
শিশুর ঈদপোশাক : সামর্থ্যের মধ্যে শিশুর ঈদপোশাক পেয়ে যাবেন বিপণিবিতান ও সেন্ট্রাল প্লাজায়। এখানে নবজাতক থেকে শুরু করে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুর পোশাক রয়েছে। কথা হয় বিপণিবিতানের ইহসান শপের বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদ এবার গরমকালে হবে। তাই বাজারে শিশুদের জন্য সুতি, ভয়েল, লিনেন, কটন কাপড়ের পোশাক আনা হয়েছে।’ আর এই তালিকায় ছেলেবাচ্চাদের জন্য রয়েছে টি-শার্ট, বাটিকের ফতুয়া, শার্ট ও পাঞ্জাবি। ফতুয়া ও শার্টে রয়েছে বিভিন্ন প্রিন্ট আর টি-শার্টে থাকছে বিভিন্ন লেখা ও কার্টুন চরিত্র।
এ ছাড়া পাঞ্জাবি-পায়জামা কিনতে পারেন শপিং কমপ্লেক্স ও লাকী প্লাজা থেকে। মেয়েশিশুদের জন্য কামিজ, কুর্তা, লেহেঙ্গা, স্কার্ট, ফ্রকও পেয়ে যাবেন
এই মার্কেটগুলোয়। সেন্ট্রাল প্লাজা থেকে কিনতে পারেন পাশ্চাত্য ধাঁচের বিভিন্ন পোশাক যেমন স্কার্ট, টপ, শার্ট। বিক্রেতারা জানান, এখন কামিজের সঙ্গে শিশুরা গাউন, মেঝে ছোঁয়া ফ্রকগুলোও পরছে। চাইলে আপনি কাপড় কিনে বানিয়েও নিতে পারেন সাধ্যের মাঝে। কামিজ, লেহেঙ্গা কিনতে চাইলে বিপণী বিতান, সেন্ট্রালপ্লাজা ও শপিং কমপ্লেক্সে। এখানে কামিজ পাওয়া যাবে ৩৫০ টাকা থেকে। লেহেঙ্গার দামটা একটু বেশিই হবে। এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পারেন এই পোশাক।
ছেলেদের পোশাক : পাঞ্জাবি-পায়জামার বিভিন্ন দোকান রয়েছে বিপণি বিতানে। শপিং কমপ্লেক্সে এক থেকে দেড় হাজারের মধ্যে পাঞ্জাবি, ফতুয়া পাওয়া যাবে। আর টি-শার্ট, পোলো শার্ট, প্যান্ট পাবেন সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটের দোতলায়।
ব্যবসায়ীরা যা বলছেন : বিপণি বিতানের সভাপতি মোহাম্মদ সাগির বলেন, ‘এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঈদ অনুষ্ঠিত হবে। আশা করছি অন্যবারের তুলনায় এবার ভালো বেচাকেনা হবে। প্রতিটি দোকানে যুগোপযোগী প্রয়োজনীয় নতুন পণ্য দোকানে তুলেছে। মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। তাদের বাজেট মাথায় রেখে পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা যাতে সুলভমূল্যে পছন্দের পণ্যটি কিনতে পারেন সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ দোকান ফিক্সড প্রাইজ। ক্রেতাদের আর দামাদামির ঝামেলাও থাকবে না।’
সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটের সিনিয়র সহ সভাপতি হাসান দস্তগীর আজাদ বলেন, ‘ক্রেতাদের সুবিধা অনুযায়ী যুগোপযোগী সুলভ মূল্যে ঈদের পোশাক, কসমেটিক, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে তারা মানসম্মত পণ্য বিক্রি করবেন। আমরা আশা করছি ক্রেতারা এই মার্কেটে এসে বিমুখ হয়ে ফিরবেন না।’
চকবাজারের মতি টাওয়ারের সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন,‘আমাদের মার্কেটে মধ্যবিত্ত লোকজন বেশি আসে। এখানে ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে তরুণীদের পছন্দের থ্রি পিছ, লেহেঙ্গাসহ ঈদ পোশাক যেমন কিনতে পাবেন, তেমনি একই দামের মধ্যে শাড়িও মিলবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ র ক ন ক ট ব যবস য় র কমপ ল ক স দ র জন য পছন দ
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের বন্ধের পর টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু রোববার
ঈদ উপলক্ষে ৯ দিন বন্ধ থাকার পর ৬ এপ্রিল আবার শুরু হচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও খাদ্য অধিদপ্তরের সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম।
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী দামে তেল, ডাল ও চিনি বিক্রি করে সরকারি সংস্থা টিসিবি। সংস্থাটি স্মার্ট পরিবার কার্ডের মাধ্যমে পরিবেশক বা সরবরাহকারীর দোকানের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি করে। আবার স্মার্ট কার্ড ছাড়া সর্বসাধারণের জন্য ট্রাকে করেও তেল, ডাল, চিনি বিক্রি করে সংস্থাটি।
অন্যদিকে খোলাবাজারে বিক্রি বা ওএমএস কর্মসূচির আওতায় ট্রাকে করে সাশ্রয়ী দামে চাল ও আটা বিক্রি করে খাদ্য অধিদপ্তর। ট্রাকের পাশাপাশি নির্ধারিত পরিবেশকের দোকানের মাধ্যমেও চাল-আটা বিক্রি করে সংস্থাটি।
সরকারি এই দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, ঈদের আগে সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ পর্যন্ত সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চালিয়েছিলেন তাঁরা। সরকারি ছুটি শেষে ৬ এপ্রিল আবার এ কার্যক্রম শুরু হবে।
বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৬০ লাখ পরিবারের মধ্যে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোট এক কোটি পরিবার কার্ডের বিপরীতে এ পণ্য বিক্রি করা হতো। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে এসব কার্ডের মধ্যে একটি বড় অংশ অযোগ্য বা ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করে। এ কারণে সরকার প্রায় ৪৩ লাখ পরিবার কার্ড বাতিল করে। পাশাপাশি নতুন করে উপকারভোগী চিহ্নিত করে নতুন স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রমও চলছে।
অন্যদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ট্রাকে করেও পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। প্রতিদিন রাজধানীর ৫০টি স্থানে, চট্টগ্রাম নগরীর ২০টি স্থানে এবং বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি কিছু শ্রমঘন জেলায় ট্রাকে পণ্য বিক্রির এ কার্যক্রম পরিচালনা করে সংস্থাটি। টিসিবির প্রতিটি ট্রাকে ২০০ জনের পণ্য থাকে। যদিও টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ভিড় করেন প্রতিদিন।
সংস্থাটি জানায়, টিসিবির ট্রাক থেকে যেকোনো ভোক্তা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে পারেন। টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি কিনতে পারেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা ও চিনি ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। আর রমজান উপলক্ষে গত মাসে ছোলা ও খেজুরও বিক্রি করা হয়েছিল টিসিবির ট্রাকে।
টিসিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৬ এপ্রিল থেকে স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে টিসিবির বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হবে। তবে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি চালু হবে আরও কয়েক দিন পর। কারণ, এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরে জানানো হবে।
এদিকে খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওএমএস ট্রাকের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরে ৭০টি স্থানে ট্রাক সেলের মাধ্যমে এবং প্রায় দেড় শ পরিবেশকের দোকানের মাধ্যমে চাল-আটা বিক্রি করা হয়। ট্রাক ও পরিবেশকের দোকান থেকে একজন ভোক্তা পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি আটা কেনার সুযোগ পান।
রাজধানীতে ওএমএসের পণ্য বিক্রির কাজটি করে থাকে খাদ্য অধিদপ্তরের সংস্থা ঢাকা রেশনিং। ঢাকা রেশনিংয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক শাব্বীর আহমেদ মুরাদ বলেন, ‘৬ এপ্রিল আমাদের সব ধরনের পণ্য বিক্রি কার্যক্রম আবার শুরু হবে।’