৪০ বিদ্যালয় ভবনের কাজ ফেলে পালিয়েছেন ঠিকাদার
Published: 2nd, March 2025 GMT
প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে রাউজানের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। উপজেলার ১৮১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শতাধিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার ৭টি পদও শূন্য। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ৬ জন কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন।
এদিকে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাউজানের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নকাজ থমকে গেছে। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর মনোনীত ঠিকাদাররা পালিয়ে যাওয়ায় অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকা কাজের মধ্যে রয়েছে ৩৪টি বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ৪০টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন ও বর্ধিত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণকাজ।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয় চলছে দু’জন-তিনজন শিক্ষক দিয়ে। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বৃক্ষভানুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩ জন। সেখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৭৩ জন। পাঁচটি ক্লাস সামলাতে হিমশিম তিন শিক্ষক। হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন মাত্র চারজন শিক্ষক। এ বিদ্যালয়ে ৮ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও বাকিগুলো খালি। গর্জনীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে ৩ জন শিক্ষক দিয়ে। ডাবুয়া হিঙ্গলা ফজলুর কবির চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪০ জন। এই বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক থাকলেও, প্রধান শিক্ষক নেই। ৮ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন শিবু প্রসাদ দাশ।
জানা যায়, সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দে যেসব বিদ্যালয়ে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছিল, সেটাও অনেকটা স্থবির। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কাজ ফেলে পালিয়েছেন প্রায় ঠিকাদার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাউজানের প্রায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পেতেন সাবেক এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর মনোনীত ঠিকাদার। অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকা কাজের মধ্যে রয়েছে ৩৪টি বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ৪০টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন ও বর্ধিত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণকাজ। প্রকৌশল বিভাগের লোকজন বলেছেন মূল ঠিকাদার কাজ না করে কমিশনের চুক্তিতে কাজ করতে দিয়েছে উপ-ঠিকাদারকে। অনভিজ্ঞ ঠিকাদার হওয়ায় অনেকে ঠিক সময়ে কাজে হাত দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম সমকালকে বলেন, ‘অসমাপ্ত অবস্থায় থাকা কিছু উন্নয়ন কাজ ঠিকাদারের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিকল্প পন্থায় করা হচ্ছে। কিছু কাজ করা যাচ্ছে না স্থানীয়দের মধ্যে কোন্দল ও ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায়।’
রাউজানে শূন্য পদ নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা স্বীকার করে সদ্য অবসরে যাওয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস সমকালকে বলেন, ‘চলমান সংকটের মধ্যে চলতি বছর আরও অনেক শিক্ষককের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তারা চলে যাবেন অবসরে। নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় সংকট আরও বাড়তে পারে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের তীব্র নিন্দা
সুদানে জাতিসংঘের এক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় ছয় শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি সুদানের কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর লজিস্টিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে নৃশংস ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।’
সুদানের কোরদোফান অঞ্চলের কাদুগলি শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ভবনটিতে গতকাল শনিবার এ হামলা হয়।
গুতেরেসের বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন।
গুতেরেস বলেন, ‘দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
হামলায় নিহত শান্তিরক্ষীদের সবাই বাংলাদেশি। তাঁরা ইউএন ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন। হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।সুদানের সেনাবাহিনী ওই হামলার দায় র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর ওপর চাপিয়েছে।
সুদানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে এ লড়াই চলছে।
আরএসএফ তাৎক্ষণিকভাবে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সুদানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, এ হামলা বিদ্রোহী মিলিশিয়া এবং এর পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁদের ধ্বংসাত্মক কৌশলের স্পষ্ট প্রকাশ।
সুদান সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। ভিডিওতে একটি স্থান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তারা বলেছে, এটি জাতিসংঘের স্থাপনা।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহত হওয়ার এ ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
দক্ষিণ কোরদোফানে আজ (শনিবার) শান্তিরক্ষীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।.আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ মহাসচিবযেখানে হামলা হয়েছে, সেই তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল আবেই নিয়ে সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ২০১১ সালে সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর থেকে সেখানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন মোতায়েন রয়েছে।
দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত আবেই বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদার অঞ্চল।
সুদানের আবেই অঞ্চলে একটি সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন জাতিসংঘের একজন শান্তিরক্ষী