আবার বন্ধ ১২ দেশে সুতা রপ্তানি করা সেই কারখানা
Published: 2nd, March 2025 GMT
বেসরকারি খাতে দেওয়ার দুই বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেল দেশের অন্যতম ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান রাঙ্গুনিয়ার কেএফডি জুট মিলস্ লিমিটেড। গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ৮০০ শ্রমিক-কর্মচারী। অন্যদিকে, উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের সচল মেশিনগুলো অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই মিলটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২০ বছরের জন্য বেসরকারি খাতে লিজ পায় ইউনিটেক্স গ্রুপ। ৪৭ একর আয়তনের এ প্রতিষ্ঠানটি ইউনিটেক্স গ্রুপ লিজ পাওয়ার পর সুতা উৎপাদনের পাশাপাশি কার্পেট, জুট ব্যাগ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়। কারখানায় উৎপাদন হতো দৈনিক ১৮ থেকে ৩০ টন সুতা। উৎপাদিত সুতা রপ্তানি হতো বিশ্বের ১২টি দেশে। কিন্তু গত বর্ষায় ভয়াবহ বন্যার কারণে পাট সংকট ও ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত অর্থের জোগানের অভাবে কারখানার উৎপাদনে ধস নামে। এভাবে নানামুখী সংকটে উৎপাদন ২ টনে নেমে আসে। এতে ক্রমাগত ক্ষতির মুখে পড়া মিল কর্তৃপক্ষ বিজেএমসির কাছে মাসিক ভাড়া ২২ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ লাখ টাকা করার আবেদন করে। কিন্তু বিজেএমসি রাজি না হওয়ায় কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সহকারী পরিচালক রায়হান আহমেদ বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পাট সংগ্রহ করি। কিন্তু বন্যার কারণে কৃষকদের থেকে পাট কেনা যাচ্ছিল না। তার ওপর ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে না পারায় নগদ টাকার অভাবও তৈরি হয়। তারপরও লোকসান দিয়ে হলেও কারখানাটি দুই শিফটে চালু রাখা হয়। কিন্তু ক্রমাগত ক্ষতির কবলে পড়ায় কারখানায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
সরেজমিন দেখা যায়, কারখানায় এখন সুনসান নীরবতা। শ্রমিকের কোলাহল নেই। মেশিনের শব্দ নেই। সব বিভাগে তালা ঝুলছে। শ্রমিক দিলু আক্তার বলেন, ‘কারখানাটি নতুনভাবে চালু হওয়ার পর বাইরের শ্রমিকদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেকের চাকরি হয়। নিয়মিত বেতনের পাশাপাশি ওভারটাইম, হাজিরা বোনাসসহ নানা সুবিধা নিয়ে সুন্দরভাবেই সংসার চলছিল আমাদের। কিন্তু কারখানা বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে বিপদে পড়েছেন। আমরা এখন কর্মহীন।’
ইউনিটিক্স গ্রুপ সূত্র জানায়, ২০২২ সালে লিজ পাওয়ার পর কারখানার মেশিনগুলো সংস্কার করা হয়। এরপর বিদেশ থেকে নতুন মেশিন আনার চেষ্টা করা হয়। ১০ মাস অপেক্ষা করেও এলসি বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে মিলে আগুন লাগে। এতে প্রচুর র-ম্যাটেরিয়ালস পুড়ে যায়। যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চলে যায় আরও ছয় মাস। এর মধ্যে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ সীতাকুণ্ডে একটি বন্ধ হয়ে যাওয়া মিল থেকে কিছু বস্ত্র বানানোর মেশিন আনার পরামর্শ দেয়। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আবেদন করে এক বছর অপেক্ষা করার পরও সেগুলো পাওয়া যায়নি। এদিকে মেশিনগুলো পাওয়ার আশ্বাসে বাইরে থেকে শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। তাদের জন্য ৩০টি পরিবার থাকার উপযোগী কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়, মেরামত করা হয় পরিত্যক্ত ভবন। আরও ২৫টি নির্মাণ করার জন্য মালপত্র আনা হয়। মিলে আনা শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হয়। মেশিন না পাওয়ায় দুই বছরের বেতন-বোনাস দিয়ে তাদের চাকরি ছাড়াতে হয়। সুতা উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বিপাকে পড়তে হয় মিল কর্তৃপক্ষের। পাটের দাম মণপ্রতি ২২০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়ে যায় ৩ হাজার ৬০০ টাকা। পরে মিলে মজুতকৃত পাট দিয়ে ১০ মাস চালানো হয়। এর মধ্যে দেশে রাজৈনতিক পটপরিবর্তন ঘটায় আরও বিপাকে পড়তে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কর্তৃপক্ষ ওখন গ্যাঁড়াকলে। কারখানাটি বাঁচিয়ে রাখতে মাসিক ভাড়া ২২ লাখ থেকে কমিয়ে ১০ লাখ টাকা করা দরকার বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাতে ফের চালু হতে পারে কারখানাটি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবুল হত্যার বিচার দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান রানার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি রায় সাহেব মোড় প্রদক্ষিণ করে বিশ্বজিৎ চত্বরে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, “ছাত্রদলের খুনীরা আমার ভাইকে খুন করেছে। আমরা আশা করেছিলাম ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে আর খুনের রাজনীতি চলবে না। কিন্তু ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা আবার সেই খুন–চাঁদাবাজির রাজনীতি শুরু করেছে।”
একই বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়ামিন সাদাত বলেন, “মাদকসেবনকে কেন্দ্র করে একজনকে খুন হতে হলো। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই হত্যার সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।”
২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, “ছাত্রদল আবার হত্যার রাজনীতি শুরু করেছে। তাদের মধ্যকার মাদক–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একজন শিক্ষার্থীকে প্রাণ দিতে হলো। আজ তেজগাঁও কলেজে হয়েছে, কাল অন্য ক্যাম্পাসে হবে—অথবা আমাদের ক্যাম্পাসেও হতে পারে। আমরা চাই না ৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশে আবার হত্যা–রাজনীতি ফিরে আসুক।”
উল্লেখ্য, এর আগে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হন উচ্চমাধ্যমিক ২০২৪-২৫ সেশনের সাকিবুল হাসান রানা নামে এক শিক্ষার্থী। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঢাকা/লিমন/জান্নাত