আমি বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে আশাহীন নই: অমর্ত্য সেন
Published: 2nd, March 2025 GMT
বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, তাঁর বন্ধু অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছেন, কিন্তু অচলাবস্থা নিরসনে তাঁকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন অমর্ত্য সেন। আজ রোববার পিটিআই এ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। পিটিআই বলেছে, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের শান্তিনিকেতনে নিজের বাসভবনে এ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অমর্ত্য সেন।
সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমার ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। কারণ, আমি খুব জোরালোভাবে বাঙালি পরিচয়কে ধারণ করি।’
অমর্ত্য সেন বলেন, ‘আমি ঢাকায় অনেক সময় কাটিয়েছি এবং সেখানে আমার স্কুলের শিক্ষা শুরু করেছিলাম। ঢাকার পাশাপাশি মানিকগঞ্জে আমার পৈতৃক বাড়িতে প্রায়ই গিয়েছি। মায়ের দিক থেকে আমি নিয়মিত বিক্রমপুরে, বিশেষ করে সোনারাংয়ে গিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে এসব জায়গার খুব গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ তার বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা নিয়ে অন্য অনেকের মতো আমি উদ্বিগ্ন।’
ঢাকায় শৈশব কাটানো অমর্ত্য সেনের স্কুলশিক্ষা শুরু হয়েছিল সেন্ট গ্রেগরী স্কুলে। পরে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেন।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অগ্রগতির ওপর আলোকপাত করেন অমর্ত্য সেন। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, জন্মহার কমে আসা এবং গড় আয়ু বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন তিনি।
অমর্ত্য সেন বলেন, বাংলাদেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। বিশেষ করে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতির মতো বিষয় রয়েছে। এখানে সরকারি এবং ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বেসরকারি সংস্থা—উভয়ের ভূমিকা রয়েছে।
বাংলাদেশে সংবাদপত্র ‘তুলনামূলক স্বাধীন’ বলেও উল্লেখ করেন অমর্ত্য সেন। সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েও অনেক সংবাদপত্রের বিকশিত হওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করেন তিনি।
অমর্ত্য সেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন সেনাশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা না করায়, যেমনটি অনেক দেশে ঘটেছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার কথা বলেছেন তিনি। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, তাহলে অন্য দলগুলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছে, সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
অমর্ত্য সেন বলেন, ‘আমি মনে করি, কোনো একটি গোষ্ঠীকে এক পাশে ঠেলে না দিয়ে বাংলাদেশের উচিত, সবাই একসঙ্গে কাজ করার যে ঐতিহ্য এই দেশের রয়েছে, সেটার সর্বোত্তম ব্যবহার করা। একটি উদারপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। আমি আশা করি যে স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদের প্রতি বাঙালি সম্প্রদায়ের যে অঙ্গীকার রয়েছে, সেটা টিকে থাকবে। আমি আশা করি, বাংলাদেশে আগে নির্বাচন যেমন হতো বলে অনেকে দাবি করেন, তার চেয়ে আগামীর নির্বাচন দৃশ্যত বেশি অবাধ হবে। আমি বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে আমি আশাহীন নই।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন জানতে চাইলে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘ইউনূস একজন পুরোনো বন্ধু। আমি জানি, তিনি খুবই সামর্থ্যবান ব্যক্তি এবং অনেক দিক দিয়ে একজন উল্লেখযোগ্য মানুষ। তিনি বাংলাদেশের সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতা) ও গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন আরও বলেন, ‘আপনি যদি হঠাৎ করে একটি দেশের প্রধান হন, যেমনটি ইউনূসের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিষয় বিবেচনা করতে হবে। সেখানে বিভিন্ন ইসলাপন্থী দল রয়েছে, এখন হিন্দুদেরও বিভিন্ন পক্ষ রয়েছে। ইউনূসের সামর্থ্যের ওপর আমার অনেক আস্থা রয়েছে।’
বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং মন্দিরগুলোতে ভাঙচুরের কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন অমর্ত্য সেন। সরকার ও জনগণ—উভয়েরই এসব সহিংসতা প্রতিরোধ করার দায়িত্ব ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ করা জরুরি বলে উল্লেখ করেন অমর্ত্য সেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অমর ত য স ন ব ন অমর ত য স ন সরক র র ওপর ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
হিজরতের ৫টি শিক্ষা
সাহাবিদের হিজরতের ঘটনাবলি কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং তা মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাদের হিজরতের ঘটনা ও ত্যাগের আদর্শ থেকে কয়েকটি মৌলিক শিক্ষা উঠে আসে:
১. হিজরত প্রথমত আল্লাহর আদেশ পালনহিজরত কেবল কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল না, বরং ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ইবাদতমূলক নির্দেশ। এই কারণে সাহাবিরা সবচেয়ে প্রিয় বস্তু—ঘরবাড়ি, সম্পদ, আত্মীয়স্বজন—সহজে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। (মুহাম্মদ সাইদ রমাদান আল-বুতি, ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা: ১৫৬, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০০৪)
২. ইমানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগহিজরত শেখায় যে একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুহাইব তাঁর সব সম্পদ, আবু সালামা তাঁর পরিবার এবং বনু জাহশ (রা.) জন্মভূমি ত্যাগ করে এই মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এই ত্যাগ বিনা মূল্যে অর্জিত হয়নি।
আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. ইমানের সম্পর্ক অন্য সব সম্পর্ক থেকে ঊর্ধ্বেওমর (রা.) আইয়াশকে যখন তার মায়ের দোহাইয়ের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছিলেন, তা প্রমাণ করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের বন্ধন অন্য সব জাগতিক সম্পর্ক (গোত্র, পরিবার, রক্ত) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।
৪. ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসাহিজরত মোটেই বিশৃঙ্খল ছিল না। ওমর (রা.)-এর পরিকল্পনা, কাফেলাবদ্ধ হয়ে যাত্রা এবং কৌশল অবলম্বন—সবই প্রমাণ করে যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি মানবীয় প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করাও আবশ্যক।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫৫. আল্লাহর দয়ার বিশালতাএই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফিতনা ও দুর্বলতা মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তারা মক্কায় বন্দী হয়ে নিজেদের পাপী মনে করছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করে আশার দরজা খুলে দেন, ‘বলো, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ (পাপ করেছ), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।”’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)
এই আয়াতটি ছিল তাঁদের জন্য এক ঐশী ক্ষমা ও নতুন সুযোগের বার্তা।
হিজরত কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি একটি অক্ষয়–দর্শন—যেখানে ইমান, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের বীজ নিহিত ছিল। এই দর্শনই মুসলমানদের নতুন এক দিগন্তে পৌঁছে দেয়।
আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫