আজ রোববার সকাল ১০টা। রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের সামনে প্রায় ৪০ জন নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের অপেক্ষা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিক্রির গাড়ির জন্য। সকাল সোয়া ১০টায় সেখানে গাড়ি আসে। মাত্র ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে গাড়িতে থাকা সব পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যান জনা পনেরো মানুষ।

বিপরীত চিত্র দেখা গেল রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার সেনপাড়া-পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের গলি সড়কে। আজ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গাড়ি নিয়ে বিক্রেতারা বসে আছেন। কিছুক্ষণ পরপর চলতি পথে এক-দুজন ক্রেতা এসব পণ্য কিনছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সংস্থাটি ঢাকা শহরের ২৫টি গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে সুলভ মূল্যে পাস্তুরিত গরুর দুধ, ফার্মের মুরগির ডিম, ড্রেসড (চামড়া ছাড়ানো) ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংস বিক্রি করছে। ঢাকার বাইরেও অধিকাংশ জেলা ও উপজেলা শহরে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ২৮ রমজান পর্যন্ত এই বিক্রয় কার্যক্রম চলবে।

কিছু এলাকায় গ্রাহক উপস্থিতি কম থাকার বিষয়টি আমরা যাচাই করে দেখব। আর আগামী দুই দিনের মধ্যে বিক্রির জন্য গরুর মাংসের পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়বে।—বাসনা আখতার, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ঢাকা

একজন ভোক্তা প্রতিটি গাড়ি থেকে ৬৫০ টাকায় ১ কেজি গরুর মাংস, ২৫০ টাকায় চামড়া ছাড়া ব্রয়লার মুরগি, ৮০ টাকায় ১ লিটার পাস্তুরিত দুধ ও ১১৪ টাকায় ১ ডজন ডিম কিনতে পারছেন। এতে একজন ভোক্তার সব মিলিয়ে ১ হাজার ৯৪ টাকা লাগছে। বাজার থেকে এসব পণ্য কিনতে আরও অন্তত ১৫০-২০০ টাকা বেশি লাগত।

সরেজমিনে দেখা যায়, কোথাও গ্রাহকের তুলনায় গাড়িতে পণ্যের পরিমাণ কম। এতে অনেকেই পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। আবার কোথাও গ্রাহকের উপস্থিতি কম। কারণ, ওই সব স্থান সম্পর্কে গ্রাহকেরা জানতেনই না।

রাজধানীর খামারবাড়িতে আজ দুপুর ১২টায় গাড়ি থেকে পণ্য কিনতে আসেন সাইফুল ইসলাম। কিন্তু ততক্ষণে ওই গাড়িতে আর পণ্য ছিল না। পরে খালি হাতে ফেরেন তিনি। আবার মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার বাসিন্দা আকরাম হোসেন দুপুরে বাজারের জন্য যাচ্ছিলেন। পথে অধিদপ্তরের গাড়ি পেয়ে গরু ও মুরগির মাংস এবং দুধ কেনেন। সেখানে তখন লাইন ছিল না। এসব পণ্য কিনতে তাঁর সময় লেগেছে মাত্র তিন মিনিট।

মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার বিক্রেতা আমির হোসেন বলেন, ‘এখানে ক্রেতাদের উপস্থিতি একেবারেই কম। চার-পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও সব পণ্য বিক্রি করা যায়নি।’

অন্যদিকে খামারবাড়িতে পণ্য বিক্রি করা গাড়ির হিসাবরক্ষক মোকাদ্দাস ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গাড়ি এখানে আসার আগেই ৪০-৫০ জনের একটা সারি ছিল। গাড়ি দাঁড়ানোর পর সেটি আরও দীর্ঘ হয়।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সংস্থাটি সারা দেশে প্রতিদিন ৬০ হাজার ডিম, ৬ হাজার লিটার পাস্তুরিত দুধ, ২ হাজার কেজি চামড়া ছাড়া ব্রয়লার মুরগি এবং দুই থেকে আড়াই হাজার কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছে। এ কাজে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি), বাংলাদেশ ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএফএ), দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য অংশীজন ও প্রান্তিক খামারিরা।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রমজান মাসে বাজারে মাছের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল থাকায় আলাদাভাবে মাছ বিক্রির কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। তবে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) বিক্রয়কেন্দ্রে সামুদ্রিক মাছ, কাপ্তাই লেক থেকে আহরিত রেডি টু কুক ফিশ পাওয়া যাবে।

বেশি চাহিদা গরুর মাংসের

রাজধানীর রিং রোডের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গতকাল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আরেকটি গাড়ি যায়। ওই গাড়িতে ৪০ কেজি গরুর মাংস, ৪০ কেজি মুরগির মাংস, ১২০ লিটার দুধ ও ১ হাজার ৫০০ ডিম ছিল। অর্থাৎ প্রথম ৪০ জনের মধ্যেই গরু ও মুরগির মাংস বিক্রি শেষ হয়ে যায়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনপুরা হাছিন জানান, তাঁদের বিক্রি করা পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা গরুর মাংসের। কিন্তু ক্রেতার তুলনায় পরিমাণ কম থাকায় অনেকেই কিনতে পারেন না।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ গাড়ি থেকে সুলভ মূল্যে গরুর মাংস কেনার জন্য গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় আসেন ষাটোর্ধ্ব ফজিলাতুন্নেছা বেগম। এরপর ওই গাড়ির পেছনে আধা ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষার পর পণ্য কেনার সুযোগ পান তিনি। কিন্তু ততক্ষণে গরুর মাংস বিক্রি শেষ হয়ে যায়। ফলে শুধু ডিম-মুরগি নিয়েই বাসায় ফেরেন এই বৃদ্ধা।

প্রথম আলোকে ফজিলাতুন্নেছা বেগম বলেন, ‘সারা বছর সেভাবে গরুর মাংস খেতে পারি না। এখন রোজা শুরু হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা ভালো কিছু খেতে চায়। এ জন্য আসছিলাম।’ গতকাল খামারবাড়িতে ফজিলাতুন্নেছার মতো আরও অন্তত ৩০ জন মানুষ গরুর মাংস কিনতে পারেননি।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু এলাকায় গ্রাহক উপস্থিতি কম থাকার বিষয়টি আমরা যাচাই করে দেখব। আর দুই দিনের মধ্যে বিক্রির জন্য গরুর মাংসের পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়বে। তখন আরও বেশি ক্রেতা গরুর মাংস কেনার সুযোগ পাবেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপস থ ত র জন য খ ম রব গ র হক পর ম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে সড়কে নিহত ১০ জনের মধ্যে দম্পতি ঝিনাইদহের বাসিন্দা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে নিহত ১০ জনের মধ্যে দুইজন ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তারা হলেন, দিলীপ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী সাধনা রাণী। এ দম্পতির শিশু সন্তান আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এ ঘটনায় বোয়ালিয়া গ্রামে শোক নেমে এসেছে।

বুধবার (২ এপ্রিল) সকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া চুনতি বন রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রামের দোহাজারী হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক মনজুর হোসেন জানান, চট্টগ্রামমুখী রিলাক্স পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে কক্সবাজারগামী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে এক শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়। আহত হয়েছে পাঁচজন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের সকলের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। সম্ভবত মাইক্রোবাসটি কক্সবাজারে যাচ্ছিল। নিহতরা সকলে মাইক্রোবাসের যাত্রী।

আরো পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তুচ্ছ ঘটনায় ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত

চট্টগ্রামে টানা তিন দিন একই স্থানে দুর্ঘটনা, নিহত ১৬

দোহাজারী হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক মো. মতিন বলেন, নিহত কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে দুইজন ঝিনাইদহ জেলার বাসিন্দা। বাকিদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে।

গণমাধ্যমে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার খবর প্রকাশের পর নিহত দিলীপ বিশ্বাসের গ্রামের বাড়ি বোয়ালিয়া গ্রামে শোকের মাতম চলছে। স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। নিহত দিলীপ বিশ্বাস বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। তিনি ঈদের ছুটিতে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে কয়েকজন মিলে কক্সবাজারে ঘুরতে যাচ্ছিলেন।

শৈলকূপা থানার ওসি মাসুম খান জানান, দিলীপ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী সাধনা রাণী মারা গেছে। তাদের মেয়ে আরাধ্য বিশ্বাস (৬) আহত হয়েছে। সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।  

ঢাকা/সোহাগ/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ