বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক কর্মীর কাছে টিকিট বুকিং দিয়ে এক ট্রাভেল এজেন্ট প্রতারণার শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাদ্দাম হোসেন নামে বিমানের এক গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্টের কাছে ৫১ জন ওমরাহ হজযাত্রীর জন্য ৭০ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে দাবি ট্রাভেল এজেন্টের মালিক আসাদুল হকের। টিকিট বুকিংয়ের জন্য কেন প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে এক কর্মীকে টাকা দিয়েছেন– এ প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। 

এদিকে প্রতারণার ঘটনায় ঝামেলা এড়াতে রাজধানীর খিলক্ষেত থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। দুই মাসেও এ জিডির তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। 

খিলক্ষেত থানার এসআই তদন্ত কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী সমকালকে বলেন, প্রতারণার ঘটনায় থানায় মামলা হলে ঝামেলা হয়। এ কারণে মামলা না নিয়ে জিডি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জিডি তদন্তে এখন পর্যন্ত জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। 

শনিবার ভুক্তভোগী আসাদুল হক সমকালকে জানান, গত বছরের শেষ দিকে এক ট্রাভেল এজেন্সির কর্মী বাদল মিয়ার মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্ট সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে পরিচয় হয়। আমি তাঁকে ৫১ জন ওমরাহ হজযাত্রীর জন্য টিকিট বুকিং বাবদ ডিসেম্বর মাসে কয়েকবারে ৭০ লাখ টাকা দিই। সর্বশেষ গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ১৫ হজযাত্রীর টিকিট বুকিংয়ের জন্য টাকা দিই। পরদিন ফ্লাইটের সময় হাজিরা বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারেন টিকিটগুলো ভুয়া। এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় মামলা না নিয়ে জিডি করতে বলে পুলিশ। সেই জিডি তদন্তেও কোনো অগ্রগতি নেই। 

জানতে চাইলে বিমানকর্মী সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিমানের টিকিট বুকিং বিষয়ে একটি প্রতারক চক্র আমার ছবি, নাম ও পদবি ব্যবহার করেছে। এ বিষয়ে আমি আদালতে মামলা করেছি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। এ ছাড়া টিকিট প্রতারণার বিষয়টি লিখিতভাবে বিমান কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে না উপসাগরীয় দেশগুলো

ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানকে নিজেদের বিমানবন্দর ও আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে না সৌদি আরব ও উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশ। দেশগুলো এরই মধ্যে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত রোববার (৩০ মার্চ) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানে বোমা হামলা চালানোর ঘোষণার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো।

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েত এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বলে দিয়েছে, ইরানে হামলা চালানোর জন্য তারা নিজেদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না। ইরানে হামলা চালানোর সঙ্গে জড়িত কোনো মার্কিন উড়োজাহাজ এসব দেশ থেকে জ্বালানিও নিতে পারবে না। এমনকি হামলাসংশ্লিষ্ট উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানকে নিজেদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে (এমইই) এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা (উপসাগরীয় অঞ্চলের নেতারা) এতে জড়াতে চাইছেন না।’

উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে না দেওয়াটা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি বড় ধাক্কা। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানের সহায়তাপুষ্ট ইয়েমেনের হুতিদের ওপর ব্যাপক বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে আলোচনায় বাধ্য করতেই ট্রাম্প প্রশাসন তা করেছে।

উপসাগরীয় অঞ্চলের তেলসমৃদ্ধ মিত্রদেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হামলায় সহযোগিতা না করাটা ইরানকে সাহস জোগাবে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে দর-কষাকষিতে তেহরানকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমইইকে বলেন, হুতিদের ওপর হামলা চালাতে উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করেছে। দেশগুলোর নাম তিনি প্রকাশ করেননি।

হুতিদের ওপর হামলায় সহায়তা পাওয়া উপসাগরীয় মিত্রদের কাছ থেকে ইরানের বেলায়ও একই ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে দেশগুলো জরুরি উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করবে, এমন ধারণা পোষণ করেছিল ওয়াশিংটন।

ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ তৈরিতে’ উপসাগরীয় দেশগুলোর সহায়তা কামনা করছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এ জন্য সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক যোগাযোগও শুরু করেছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গত মার্চে আমিরাত ও সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠক করেছেন।

এই বৈঠকের পরপরই কাতার ও সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে এসব অনুমতি আটকে রাখা হয়েছিল। কাতার এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন কেনার অনুমতি পেয়েছে। সৌদি আরব এমন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার অনুমতি পেয়েছে, যা উড়োজাহাজ থেকে ভূমিতে ছোড়া রকেট প্রতিহত করতে পারবে।

গত সোমবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মে মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরব সফরের পরিকল্পনা করছেন। একই সফরে উপসাগরীয় অঞ্চলের আরও কয়েকটি দেশেও সফর করতে পারেন তিনি।

দিয়েগো গার্সিয়ায় মনোযোগ যুক্তরাষ্ট্রের

ইসরায়েলে ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে জর্ডান ও উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যুদ্ধবিমান ও সামরিক মালবাহী উড়োজাহাজের উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফ্লাইট চলাচলের হিসাব রাখে এমন একটি উন্মুক্ত সূত্রের তথ্যমতে, উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মালবাহী উড়োজাহাজের চলাচল আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এটা সর্বোচ্চ।

কিন্তু উপসাগরীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার পর ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়ায় নিজেদের সামরিক ঘাঁটিতে বি-২ বোমারু বিমানের সংখ্যা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

উপসাগরীয় বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশে হামলা চালানোর জন্য দিয়েগো গার্সিয়া এর আগেও ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কৌশলগত এ দ্বীপটি উপসাগরীয় অঞ্চলের নিজেদের ঘাঁটিগুলোর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে ওয়াশিংটন। ১৯৯০–এর দশকে ইরাকে হামলা চালানোর সময় নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সৌদি আরব। তখন চাগোস দ্বীপপুঞ্জের দিয়েগো গার্সিয়ার নিজেদের ঘাঁটি ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

স্যাটেলাইট তথ্য সরবরাহকারী উন্মুক্ত সোর্স প্ল্যানেট ল্যাব চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে জানিয়েছে, দিয়েগো গার্সিয়ার ঘাঁটিতে তিনটি বি-২ বোমারু বিমান দেখা গেছে।

ইরান থেকে চাগোস দ্বীপপুঞ্জে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির দূরত্ব ৫ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের মতো। বি-২ বোমারু বিমান ট্যাংক ভরে জ্বালানি নিলে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার যেতে পারে। বহন করতে পারে ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমা। এসব বোমা ‘বাংকার দুমড়েমুচড়ে’ দিতে সক্ষম। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এসব বোমা দিয়ে ইরানের ভূপৃষ্ঠের গভীরে আঘাত হানা যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ