ওএসডি ডিসির অধীনে নির্বাচনসহ ১৩ অভিযোগ, পুনঃনির্বাচন দাবি হাব ঐক্য ফোরামের
Published: 2nd, March 2025 GMT
জাতীয় নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ওএসডি হওয়া ডিসির অধীনে নির্বাচন, জালিয়াতি ও কারচুপিসহ ১৬টি অভিযোগ তুলে ধরে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়ন অব বাংলাদেশ (হাব) এর নির্বাচন বাতিল করে সৎ প্রশাসক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছে হাব ঐক্য ফোরাম।
রবিবার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংগঠনটির সভাপতি ও হাবের সাবেক সভাপতি ড.
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন হাব ঐক্য ফোরামের সদস্য সচিব ও হাবের সাবেক ইসি সদস্য মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ। এ সময় সংগঠনটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
হাব নির্বাচনে নজিরবিহীন জালিয়াতি ও কারচুপি করে সম্প্রতি হাবের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ বলেন, “দুর্নীতিবাজ বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে ইজারা দিতে সুষ্ঠু নির্বাচনে নির্বাচিত হাব কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। তারপর ২০১৮ সালের ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী ডিসি বর্তমান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দাউদুল ইসলামকে বিধি ভেঙে হাবের প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। কুখ্যাত সেই ডিসির অধীনে উপসচিব ফিরোজ আল মামুনকে নির্বাচন কমিশনার ও আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মুর্শেদা জামানকে (যুগ্ম সচিব) দায়িত্ব দিয়ে পছন্দের গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় বসাতে হাবের প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনার ভোটচুরির কারিগর হাব এ প্রশাসক নিয়োগ পাওয়ার পর হতেই সুপরিকল্পিতভাবে একটি গোষ্ঠীকে হাবের ক্ষমতায় বসাতে তৎপর হয়ে উঠে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সরকারি এক আদেশে উক্ত দাউদুল ইসলামকে ওএসডি করা হয়। নির্বাচনের সর্বময় ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হলেও পুরো নির্বাচনটি কুখ্যাত এই দাউদুল ইসলাম নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও তার পছন্দের প্রার্থীদের জিতিয়ে ভোট ও ফলাফল ঘোষণার জালিয়াতি করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে হাবের দায়িত্ব তার পছন্দের ব্যক্তিদের হাতে গতকাল তুলে দেওয়া হয়।সুষ্ঠু হজ্জ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ঐতিহ্যবাহী হাব আজ তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।”
“২০১৮ সনের দিনের ভোট রাতে করার মহাকারিগর দাউদুল ইসলাম ও তার অনুগত নির্বাচন কমিশন, আপিল বোর্ড হাবের নির্বাচনে জালিয়াতির কিছু চিত্র তথ্য প্রমাণসহ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।”
“১। নির্বাচনী তফসিলে বাণিজ্য সংগঠন আইন ১৯৯৪ এর ধারা ১৮, উপধারা (৪), (৫), (৬) অনুসরণ করা হয়নি। অথ্যাৎ নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা, আপিল গ্রহণ, শোনানি ও নিষ্পত্তি করার আগেই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে অফিস বেয়ারার নির্বাচনের কাজ চূড়ান্ত করে ফেলেছেন যা সম্পূর্ণরূপে বেআইনি। আমরা ভোট পুনঃগণনার জন্য নিদ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপিল করেছি। কিন্তু ভোট পুণঃগণনা করা হয়নি।
২। কতটি ব্যালট পেপার ছাপিয়েছে- নির্বাচন শুরু পূর্বে ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার কতটি আনা হয়েছে তা চেক করা বা হিসাব করার কোন সুযোগ প্রার্থী বা পোলিং এজেন্টকে দেওয়া হয়নি।
৩। ভোটগ্রহণ শেষে সকল প্রার্থী বা তাদের প্রতিনিধির সামনে ভোট গণনা করার বিধান থাকলেও আমাদের অগোচরে নির্বাচন বোর্ড ও তাদের পছন্দের লোকদের নিয়ে বেরিকেড দিয়ে ব্যালট গণনার নামে প্রহসন করে পূর্বপরিকল্পিত ফলাফল দ্রুত ঘোষণা করে দেওয়া হয়। প্রার্থীর বাইরেও এমন লোকদেরকে থাকতে দেওয়া হয়েছে যাদের ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকা সম্পূর্ণ বেআইনি।
৪। ভোটগ্রহণ শুরুর সময় আমাদেরকে ব্যালট পেপার দেখতে বা কোন ব্যালট বৈধ/অবৈধ তা চেক করতে দেওয়া হয়নি। কোন আবেদন নিবেদন করেও ব্যালট চেক করার সুযোগ পাওয়া যায়নি।
৫। ব্যালট পেপার পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সুযোগ না দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য আমাদের প্রতিপক্ষের ব্যালট সবগুলো ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
৬। হাব এর সংঘ বিধির ৪০ ধারায় ভোট গণনার পর ফলাফল সিট তৈরি করে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বা তাদের প্রতিনিধির স্বাক্ষর নেওয়ার বিধান থাকলেও ফলাফল সিট আমাদেরকে দেখানো হয়নি।
৭। অদ্যাবধি কতটি ব্যালট অবৈধ বা বাতিল হয়েছে তা অবহিত করা হয়নি।
৮। হাব এর সংঘ বিধির কোথাও কাউন্টিং মেশিনে ভোট গণনার কথা না থাকলেও কাউন্টিং মেশিনে ভোট গণনা করা শুরু করলে আমাদের আপত্তির মুখে প্রশাসক নিজে স্বীকার করেন যে, মেশিনে গণনার পর আবার ম্যানুয়াল গণনা করা হবে। তার স্বীকারোক্তির বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু মেশিনে ভোট গণনার নামে প্রহসন করে মৌখিক ভাবে ফলাফল ঘোষণা দিয়ে আর ম্যানুয়াল গণনার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
৯। যেখানে মেশিনে ভোট গণনা করা হয়েছে তার আশ পাশেও প্রার্থী বা অন্য কারো যাওয়ার কোনো ব্যবস্থাই রাখেনি। সেখানে যাওয়ার প্রবেশ দ্বারে প্রশাসক দাউদুল ইসলাম ও নির্বাচন কমিশন ব্যারিকেড দিয়ে বসে ছিলেন যেন কেউ ব্যালট পেপার বা কাউন্টিং দেখতে না পারে। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে এবং আমাদের কাছেও ছবি ভিডিও রয়েছে।
১০। এ পর্যন্ত বহু ফলাফল হাব এর নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করা হয়েছে। স্ক্রিনে এমন প্রচুর পরিমাণ বাতিল ব্যালট দৃশ্যমান হয়েছে যার পরিসংখ্যান ফলাফলে প্রতিয়মান হয়নি। স্ক্রিনে ফলাফল সিট বার বার পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের বাতিল ভোটও তাদের পক্ষে কাউন্ট করে তাদের ভোট বৃদ্ধি করা হয়েছে।
১১। ব্যবহৃত ব্যালট পেপার, অব্যবহৃত ব্যালট পেপার, মুড়ি কোথায় কার কাছে কিভাবে আছে তা আমরা আজো জানতে পারিনি। আমাদের প্রবল ধারণা ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী ব্যালট তৈরির জন্য এগুলো গোপনীয় রাখা হয়েছে এবং আমাদের ভোট অনেকগুলো নষ্ট করেছে। অন্যদিকে আমাদের বৈধ ভোট নষ্ট করা হয়েছে।
১২। ভোট চলাকালীন আপিল বোর্ডের সদস্যরা নির্বাচন কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার বিধান থাকলেও আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ভোট শুরু হওয়ার পর ঘণ্টাখানেক থেকে ভোট কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান। আপিল বোর্ডের কোনো সদস্যই সারাদিন ও ভোট গণনার সময় উপস্থিত ছিলেন না। যার ফলে আমরা তাৎক্ষণিক আপিল করার সুযোগ পাইনি। এটিও হাব এর প্রশাসক দাউদুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশন ও আপিল বোর্ডের নির্বাচন কমিশনের একটি চক্রান্তের অংশ।
১৩। আজো পর্যন্ত ঢাকা আঞ্চলিক পরিষদের প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল অফিসিয়ালি প্রকাশ করা হয়নি। অথচ আঞ্চলিক পরিষদের অফিস বেয়ারার নির্বাচন সম্পন্ন করে ফেলেছেন। গতকাল হাব এর একজন কর্মচারীকে এ সম্পর্কে ফোন করলে সে জানায় এখনো নাকি ঢাকা আঞ্চলিক পরিষদের ফলাফল রেডি হয়নি।”
মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ বলেন, “বিধি মোতাবেক ভোট পুনঃগণনা, ব্যালট, মুড়ি চেক করা, ব্যালট পেপার কোথায় কিভাবে আছে, পূর্ণাঙ্গ ফলাফল কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না ইত্যাদিসহ ভোটের জালিয়াতির তথ্য প্রমাণ দিয়ে গত ২৩ ও ২৪ তারিখে আমরা আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের বরাবরে ন্যায়বিচার, ভোট পুনঃগণনা ও অনিয়মের নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেওয়ার জন্য আবেদন করি।”
“কিন্তু আমাদের আপিল শুনানি বা নিষ্পত্তির আগেই চূড়ান্ত ফলাফল, বেয়ারার নির্বাচন সম্পন্ন করে ফেলা হয়। বার বার অনুরোধ করার পর গত ২৭/২/২০২৫ আপিল শুনানি করা হয়।”
তিনি বলেন, “আপিল বোর্ডে আমরা নির্বাচনে জালিয়াতির তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করি। অদ্যাবধি আমরা আপিল বিভাগের রায় পাইনি। অথচ হাব এর প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশন গতকাল একটি অভিজাত হোটেলে ঝমকালো আয়োজনে হাব এর বেয়ারার চূড়ান্ত করে প্রেসিডেন্ট মহাসচিবসহ সবাইকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
“এমন জালিয়াতির নির্বাচন জগৎবাসী আর কখনো দেখেছেন কিনা? তা আমাদের বোধগম্য নয়। অতএব, অনতিবিলম্বে এই জালিয়াতির নির্বাচন বাতিল করে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান প্রশাসক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে পুনরায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং এসব বেআইনি কাজের সাথে যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাণিজ্য উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা” করেন তিনি।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ ট গণন র র পছন দ র ত ফল ফল ব যবস থ র জন য আম দ র থ কল ও চ ক কর হ ব এর উপস থ ব আইন
এছাড়াও পড়ুন:
ওএসডি ডিসির অধীনে নির্বাচনসহ ১৩ অভিযোগ, পুনঃনির্বাচন দাবি হাব ঐক্য ফোরামের
জাতীয় নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ওএসডি হওয়া ডিসির অধীনে নির্বাচন, জালিয়াতি ও কারচুপিসহ ১৬টি অভিযোগ তুলে ধরে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়ন অব বাংলাদেশ (হাব) এর নির্বাচন বাতিল করে সৎ প্রশাসক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছে হাব ঐক্য ফোরাম।
রবিবার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংগঠনটির সভাপতি ও হাবের সাবেক সভাপতি ড. ফারুক আহমেদ সরদার এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন হাব ঐক্য ফোরামের সদস্য সচিব ও হাবের সাবেক ইসি সদস্য মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ। এ সময় সংগঠনটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
হাব নির্বাচনে নজিরবিহীন জালিয়াতি ও কারচুপি করে সম্প্রতি হাবের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ বলেন, “দুর্নীতিবাজ বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে ইজারা দিতে সুষ্ঠু নির্বাচনে নির্বাচিত হাব কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। তারপর ২০১৮ সালের ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী ডিসি বর্তমান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দাউদুল ইসলামকে বিধি ভেঙে হাবের প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। কুখ্যাত সেই ডিসির অধীনে উপসচিব ফিরোজ আল মামুনকে নির্বাচন কমিশনার ও আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মুর্শেদা জামানকে (যুগ্ম সচিব) দায়িত্ব দিয়ে পছন্দের গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় বসাতে হাবের প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনার ভোটচুরির কারিগর হাব এ প্রশাসক নিয়োগ পাওয়ার পর হতেই সুপরিকল্পিতভাবে একটি গোষ্ঠীকে হাবের ক্ষমতায় বসাতে তৎপর হয়ে উঠে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সরকারি এক আদেশে উক্ত দাউদুল ইসলামকে ওএসডি করা হয়। নির্বাচনের সর্বময় ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হলেও পুরো নির্বাচনটি কুখ্যাত এই দাউদুল ইসলাম নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও তার পছন্দের প্রার্থীদের জিতিয়ে ভোট ও ফলাফল ঘোষণার জালিয়াতি করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে হাবের দায়িত্ব তার পছন্দের ব্যক্তিদের হাতে গতকাল তুলে দেওয়া হয়।সুষ্ঠু হজ্জ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ঐতিহ্যবাহী হাব আজ তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।”
“২০১৮ সনের দিনের ভোট রাতে করার মহাকারিগর দাউদুল ইসলাম ও তার অনুগত নির্বাচন কমিশন, আপিল বোর্ড হাবের নির্বাচনে জালিয়াতির কিছু চিত্র তথ্য প্রমাণসহ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।”
“১। নির্বাচনী তফসিলে বাণিজ্য সংগঠন আইন ১৯৯৪ এর ধারা ১৮, উপধারা (৪), (৫), (৬) অনুসরণ করা হয়নি। অথ্যাৎ নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা, আপিল গ্রহণ, শোনানি ও নিষ্পত্তি করার আগেই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে অফিস বেয়ারার নির্বাচনের কাজ চূড়ান্ত করে ফেলেছেন যা সম্পূর্ণরূপে বেআইনি। আমরা ভোট পুনঃগণনার জন্য নিদ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপিল করেছি। কিন্তু ভোট পুণঃগণনা করা হয়নি।
২। কতটি ব্যালট পেপার ছাপিয়েছে- নির্বাচন শুরু পূর্বে ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার কতটি আনা হয়েছে তা চেক করা বা হিসাব করার কোন সুযোগ প্রার্থী বা পোলিং এজেন্টকে দেওয়া হয়নি।
৩। ভোটগ্রহণ শেষে সকল প্রার্থী বা তাদের প্রতিনিধির সামনে ভোট গণনা করার বিধান থাকলেও আমাদের অগোচরে নির্বাচন বোর্ড ও তাদের পছন্দের লোকদের নিয়ে বেরিকেড দিয়ে ব্যালট গণনার নামে প্রহসন করে পূর্বপরিকল্পিত ফলাফল দ্রুত ঘোষণা করে দেওয়া হয়। প্রার্থীর বাইরেও এমন লোকদেরকে থাকতে দেওয়া হয়েছে যাদের ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকা সম্পূর্ণ বেআইনি।
৪। ভোটগ্রহণ শুরুর সময় আমাদেরকে ব্যালট পেপার দেখতে বা কোন ব্যালট বৈধ/অবৈধ তা চেক করতে দেওয়া হয়নি। কোন আবেদন নিবেদন করেও ব্যালট চেক করার সুযোগ পাওয়া যায়নি।
৫। ব্যালট পেপার পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সুযোগ না দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য আমাদের প্রতিপক্ষের ব্যালট সবগুলো ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
৬। হাব এর সংঘ বিধির ৪০ ধারায় ভোট গণনার পর ফলাফল সিট তৈরি করে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বা তাদের প্রতিনিধির স্বাক্ষর নেওয়ার বিধান থাকলেও ফলাফল সিট আমাদেরকে দেখানো হয়নি।
৭। অদ্যাবধি কতটি ব্যালট অবৈধ বা বাতিল হয়েছে তা অবহিত করা হয়নি।
৮। হাব এর সংঘ বিধির কোথাও কাউন্টিং মেশিনে ভোট গণনার কথা না থাকলেও কাউন্টিং মেশিনে ভোট গণনা করা শুরু করলে আমাদের আপত্তির মুখে প্রশাসক নিজে স্বীকার করেন যে, মেশিনে গণনার পর আবার ম্যানুয়াল গণনা করা হবে। তার স্বীকারোক্তির বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু মেশিনে ভোট গণনার নামে প্রহসন করে মৌখিক ভাবে ফলাফল ঘোষণা দিয়ে আর ম্যানুয়াল গণনার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
৯। যেখানে মেশিনে ভোট গণনা করা হয়েছে তার আশ পাশেও প্রার্থী বা অন্য কারো যাওয়ার কোনো ব্যবস্থাই রাখেনি। সেখানে যাওয়ার প্রবেশ দ্বারে প্রশাসক দাউদুল ইসলাম ও নির্বাচন কমিশন ব্যারিকেড দিয়ে বসে ছিলেন যেন কেউ ব্যালট পেপার বা কাউন্টিং দেখতে না পারে। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে এবং আমাদের কাছেও ছবি ভিডিও রয়েছে।
১০। এ পর্যন্ত বহু ফলাফল হাব এর নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করা হয়েছে। স্ক্রিনে এমন প্রচুর পরিমাণ বাতিল ব্যালট দৃশ্যমান হয়েছে যার পরিসংখ্যান ফলাফলে প্রতিয়মান হয়নি। স্ক্রিনে ফলাফল সিট বার বার পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের বাতিল ভোটও তাদের পক্ষে কাউন্ট করে তাদের ভোট বৃদ্ধি করা হয়েছে।
১১। ব্যবহৃত ব্যালট পেপার, অব্যবহৃত ব্যালট পেপার, মুড়ি কোথায় কার কাছে কিভাবে আছে তা আমরা আজো জানতে পারিনি। আমাদের প্রবল ধারণা ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী ব্যালট তৈরির জন্য এগুলো গোপনীয় রাখা হয়েছে এবং আমাদের ভোট অনেকগুলো নষ্ট করেছে। অন্যদিকে আমাদের বৈধ ভোট নষ্ট করা হয়েছে।
১২। ভোট চলাকালীন আপিল বোর্ডের সদস্যরা নির্বাচন কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার বিধান থাকলেও আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ভোট শুরু হওয়ার পর ঘণ্টাখানেক থেকে ভোট কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান। আপিল বোর্ডের কোনো সদস্যই সারাদিন ও ভোট গণনার সময় উপস্থিত ছিলেন না। যার ফলে আমরা তাৎক্ষণিক আপিল করার সুযোগ পাইনি। এটিও হাব এর প্রশাসক দাউদুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশন ও আপিল বোর্ডের নির্বাচন কমিশনের একটি চক্রান্তের অংশ।
১৩। আজো পর্যন্ত ঢাকা আঞ্চলিক পরিষদের প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল অফিসিয়ালি প্রকাশ করা হয়নি। অথচ আঞ্চলিক পরিষদের অফিস বেয়ারার নির্বাচন সম্পন্ন করে ফেলেছেন। গতকাল হাব এর একজন কর্মচারীকে এ সম্পর্কে ফোন করলে সে জানায় এখনো নাকি ঢাকা আঞ্চলিক পরিষদের ফলাফল রেডি হয়নি।”
মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ বলেন, “বিধি মোতাবেক ভোট পুনঃগণনা, ব্যালট, মুড়ি চেক করা, ব্যালট পেপার কোথায় কিভাবে আছে, পূর্ণাঙ্গ ফলাফল কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না ইত্যাদিসহ ভোটের জালিয়াতির তথ্য প্রমাণ দিয়ে গত ২৩ ও ২৪ তারিখে আমরা আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের বরাবরে ন্যায়বিচার, ভোট পুনঃগণনা ও অনিয়মের নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেওয়ার জন্য আবেদন করি।”
“কিন্তু আমাদের আপিল শুনানি বা নিষ্পত্তির আগেই চূড়ান্ত ফলাফল, বেয়ারার নির্বাচন সম্পন্ন করে ফেলা হয়। বার বার অনুরোধ করার পর গত ২৭/২/২০২৫ আপিল শুনানি করা হয়।”
তিনি বলেন, “আপিল বোর্ডে আমরা নির্বাচনে জালিয়াতির তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করি। অদ্যাবধি আমরা আপিল বিভাগের রায় পাইনি। অথচ হাব এর প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশন গতকাল একটি অভিজাত হোটেলে ঝমকালো আয়োজনে হাব এর বেয়ারার চূড়ান্ত করে প্রেসিডেন্ট মহাসচিবসহ সবাইকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
“এমন জালিয়াতির নির্বাচন জগৎবাসী আর কখনো দেখেছেন কিনা? তা আমাদের বোধগম্য নয়। অতএব, অনতিবিলম্বে এই জালিয়াতির নির্বাচন বাতিল করে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান প্রশাসক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে পুনরায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং এসব বেআইনি কাজের সাথে যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাণিজ্য উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা” করেন তিনি।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি