‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল, নিমাল মাওলা ওয়া নিমান নাসির।’ এই দোয়া জিকির যেকোনো সময় করা যায়। অসুস্থ বা উদ্বিগ্ন অবস্থায়, কোনো ক্ষতির আশঙ্কায় অথবা শত্রুর হাত থেকে মুক্তির জন্য এ দোয়া বিশেষ কার্যকর।

আল্লাহই যথেষ্ট এবং উত্তম সাহায্যকারী। অন্য দোয়ার মতো আল্লাহর কাছে কোনো আবেদন করা হয় না। দোয়াটি এত গুরুত্বপূর্ণ যে হজরত ইব্রাহিম (আ.

) ও প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোতে এই দোয়া পড়তেন।

হজরত ইব্রাহিম (আ.)–কে যখন অবিশ্বাসী অত্যাচারী শাসক নমরুদ আগুনে নিক্ষেপ করে, তখন তিনি পড়েন ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল’। যার ফলে আল্লাহ হজরত ইব্রাহিম (আ.)–কে আগুন থেকে রক্ষা করেছিলেন।

আরও পড়ুন‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া’ কেন পড়ব২৪ মার্চ ২০২৪

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকিল বাংলা অর্থ

 পবিত্র কোরআনে সুরা আলে ইমরানের ১৭৩ নম্বর আয়াতের অংশ এবং সুরা আনফালের ৪০ নম্বর  আয়াতের (আবার সুরা হজের ৭৮ নম্বর আয়াত) অংশের মিলিত রূপ। ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল, নিমাল মাওলা ওয়া নিমান নাসির।’ অর্থ: আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনিই কত ভালো কর্মবিধায়ক।

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকিল বাংলা অর্থ: আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনিই কত ভালো কর্মবিধায়ক।

এই আয়াতের প্রেক্ষাপট হলো মুসলিমরা প্রথমবারের মতো জানতে পারে তাদের বদরের যুদ্ধে অংশ নিতে হবে। আবু সুফিয়ানের বাণিজ্যযাত্রা, মক্কার কুরাইশদের এক হাজার সদস্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে আগমন সব তথ্য মুসলিমরা পাচ্ছিল। মুসলিমরা বদরের ময়দানে যুদ্ধের জন্য উপস্থিত হলেও তাদের তখনো প্রস্তুতি চলছিল।

এ অবস্থায় সাহাবিদের মানসিকতা কেমন ছিল, আল্লাহ সে প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তাদেরকে লোকে বলেছিল যে তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো । তখন এ তাদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছিল আর তারা বলেছিল ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনিই কত ভালো কর্মবিধায়ক।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৩)

এটি পড়ার কথা সহিহ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। রাসুল (সা.) মুশরিকদের হামলা হবে, এমন খবর শুনে হামরাউল আসাদ নামক জায়গায় দোয়াটি পাঠ করেন। (বুখারি, হাদিস: ৪৫৬৩)

আরও পড়ুনবাদশাহ ও এক বুদ্ধিমান বালকের ঘটনা১১ মার্চ ২০২৪

এখানে আল্লাহকে ওয়াকিল বলা হয়েছে। ওয়াকিল মানে হলো অভিভাবক। মানুষ যখন আল্লাহর হাতে নিজেদের কোনো সংকটকালীন মুহূর্তে সোপর্দ করে, তখন আল্লাহ নিজেই তাদের হেফাজত করা এবং সমস্যা সমাধান করার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন।

একইভাবে সুরা তওবার ৫৯ নম্বর আয়াতে আছে, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ওদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে যদি ওরা তুষ্ট হতো, তাহলে বলা হতো আর যদি বলত আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ অবশ্যই শিগগিরই নিজের অনুগ্রহ থেকে আমাদের দান করবেন ও তাঁর রাসুল দান করবেন; আমরা আল্লাহরই ভক্ত। (সুরা তওবা, আয়াত: ৫৯)

আবার সুরা তওবার শেষ আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারপর ওরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তুমি বলো আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আমি তাঁর ওপরই নির্ভর করি আর তিনি মহা আরশের অধিপতি।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ১২৯)

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকিল এর ফজিলত

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যখন ইব্রাহিম (আ.)–কে আগুনের কুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন—হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল। ফলে তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন। সেই জ্বলন্ত আগুন তাঁর জন্য শীতল হয়ে পড়েছিল। মুহাম্মদ (সা.) তখন বলেছিলেন, ‘যখন লোকেরা বলেছিল, (কাফির) লোকেরা তোমাদের মোকাবিলার জন্য সমবেত হয়েছে। ফলে তোমরা তাদের ভয় করো।

কিন্তু এ কথা তাদের ইমান বাড়িয়ে দিল এবং তারা বলল—হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল। অর্থাৎ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।’ সাহাবিরা এই দোয়া আমল করেছিলেন খন্দকের যুদ্ধের সময়। যখন সাহাবিরা জানতে পারলেন ১০ হাজার সেনা এসে মদিনা শহরকে ঘেরাও করতে যাচ্ছে, তখনো তাঁরা আল্লাহর কাছে এই বলে সাহায্য কামনা করেছিলেন—হাসবুনাল্লাহি ওয়া নিমাল ওয়াকিল। (বুখারি: ৪৫৬৩-৪৫৬৪)

আরও পড়ুনআল্লাহ যেভাবে গুনাহ ক্ষমা করেন২৫ মার্চ ২০২৪

তিরমিজি শরিফে একটি হাদিস আছে। হাদিসটি যে পরিচ্ছেদে আছে, তার নাম হলো, ‘বিপদে আপনি যা করবেন।’ অর্থাৎ বিপদে পড়া অথবা বিপদের আশঙ্কা থাকে, তখন করণীয় কী? হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেমন করে হাসিখুশি থাকব, অথচ শিঙাওয়ালা (ইসরাফিল ফুৎকার দেওয়ার জন্য) শিঙা মুখে ধরে আছেন।

আর তিনি কান লাগিয়ে আছেন যে তাঁকে কখন ফুৎকার দেওয়ার আদেশ করা হবে এবং তিনি ফুৎকার দেবেন।’ এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর সাহাবিরা রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। এমনটি দেখে মহানবী (সা.) তাঁদের বললেন, ‘তোমরা বলো, হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল।’ অর্থাৎ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনিই কত ভালো কর্মবিধায়ক। (তিরমিজি: ২৪৩১, ৩২৪৩)

আরও পড়ুনহারুত-মারুত বাবেল শহরে অবতীর্ণ হয়েছিলেন২১ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ সব ন ল ল হ বল ছ ল কর ছ ল আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্মপাশায় এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি মাজারে আগুন, থানায় লিখিত অভিযোগ

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা সদরে এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি মাজারে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগুনে দুটি মাজারের শামিয়ানা, গিলাফসহ অন্যান্য উপকরণ পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাজারের অনুসারী ও সাধারণ মানুষেরা। তাঁরা জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক মাজার রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাজার রয়েছে সদর ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে হজরত লোড়া পীরের মাজারে গত রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে তিন দিনব্যপী ৪৫তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে মিলাদ, সামা কাউয়ালি ও বাউলগানের আয়োজন করা হয়। প্রথম দিনের কর্মসূচি রাত আড়াইটার দিকে শেষ হয়। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত আনুমানিক চারটার দিকে মাজারের শামিয়ানা ও গিলাফে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। ততক্ষণে মাজারের শামিয়ানা, গিলাফ পুড়ে যায় এবং মাজারের পশ্চিম পাশে থাকা দুটি সাউন্ড বক্সের বেশ কিছু অংশ পুড়ে যায়।

অপর দিকে উপজেলার নোয়াবন্দ গ্রামে হজরত কালাম শাহ (রহ.) মাজারে গত বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসেন। রাত ১২টার দিকে এই আগুন নেভাতে সক্ষম হলেও মাজারের শামিয়ানা ও গিলাফ পুড়ে যায়।

কালাম শাহ (রহ.) মাজারের খাদেম শাহ আরিফুল হক এবং লোড়া পীরের মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান (৩৫) বলেন, মাজারে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি তাঁরা কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে পারছেন না। মনে হচ্ছে, এটি উগ্রপন্থীদের কাজ। এ ঘটনায় তাঁরা পৃথকভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। দ্রুত জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।

ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এনামুল হক আজ শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রাজনগর গ্রামের মাজারটিতে প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রল ভরে আগুন লাগিয়ে মাজারে ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। সেখান থেকে একটি আধা পোড়া প্লাস্টিকের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। নোয়াবন্দ গ্রামের মাজারটিতে কীভাবে আগুন লেগেছে, তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুনছয় মাসে ৮০ মাজারে হামলা, বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি২৩ জানুয়ারি ২০২৫

দুই মাজারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পওয়ার কথা নিশ্চিত করে ওসি বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে উপজেলার সব কটি মাজারের লোকজন ও মাজারের খাদেমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। টহল বাড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

উপজেলার ধর্মপাশা মাস্টারবাড়ী ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ গোলাম জিলানী বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি মাজারে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাত আটটার পরপরই উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়ে। মানুষজন চলাচল করতেও ভয় পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তরিকত ঐক্য পরিষদের ধর্মপাশা উপজেলা শাখার সভাপতি জুবায়ের পাশা বলেন, ‘মাজারে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এ ঘটনায় আমরা খুবই ব্যথিত হয়েছি। সত্যিকারের কোনো মুসলমান মাজারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটাতে পারে না। অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার লক্ষ্যে একটি কুচক্রী মহল এতে জড়িত রয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।’

আরও পড়ুনময়মনসিংহে শর্তহীনভাবে মাজারে ওরস পালনের ঘোষণা ভক্তদের২৭ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রোজার চাঁদ দেখলে কী দোয়া পড়বেন
  • ধর্মপাশায় এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি মাজারে আগুন, থানায় লিখিত অভিযোগ