পুরকৌশলের বড় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন কুয়েট
Published: 2nd, March 2025 GMT
দেশে পুরকৌশলবিষয়ক সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা ‘ইন-জিনিয়াস’। জিপিএইচ ইস্পাত ও প্রথম আলো যৌথভাবে এ আয়োজন করে। এ আয়োজনের একাডেমিক পার্টনার ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগ কার্যক্রমটি সমন্বয় করে।
পুরকৌশলের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও দক্ষতা বাড়াতে এবং আন্তর্জাতিক মানের কাঠামো-নকশার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই এ প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে পড়ুয়া এবং সদ্য স্নাতক শিক্ষার্থীরা দলীয়ভাবে এতে অংশ নেন।
এবার ‘জিপিএইচ ইস্পাত–প্রথম আলো ইন-জিনিয়াস ২০২৪’ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) দল ‘স্ট্যাবল স্ট্রাকচার’। প্রথম রানার্সআপ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ‘ফিউশন ট্রিনিটি’। দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ‘রুয়েট জেনেসিস’। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) মিলনায়তনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, মেডেল, সনদ ও নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে।
এবারের সেরারাভবন নির্মাণসংক্রান্ত পড়ালেখার ক্ষেত্রে ক্লাসরুমের শিক্ষা ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য থাকে। সেই পাথর্ক্য সম্পর্কেই আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ পান ইন-জিনিয়াসের প্রতিযোগীরা। স্ট্যাবল স্ট্রাকচার দলের সদস্য মো.
জিপিএইচ ইস্পাত-প্রথম আলো ইন-জিনিয়াস প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন কর্মশালারও আয়োজন করা হয়। এসব কর্মশালায় পেশাজীবী বিশেষজ্ঞরা তাঁদের ভাবনা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীরাও নিজেদের নকশা ও আইডিয়া উপস্থাপন করেন। প্রথম রানার্সআপ দল ফিউশন ট্রিনিটির সদস্য তানজিদ হাসান, আম্মার বিন গোলাম মোস্তফা ও তানভীর আহমেদ। তানজিদ হাসান বলেন, ‘সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রথম থেকে আমরা থাকতে পারিনি। বুয়েটে পরীক্ষা শেষ করে তারপর আসতে হয়েছে। প্রকৌশলের পড়াশোনায় ক্লাস-পরীক্ষা ও মাঠের কাজের মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকে। এসব কারণে পেশাজীবনের শুরুতেই পুরকৌশলীরা একরকম ধাক্কা খান। আমরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনেক নিয়মকানুন শিখেছি।’ আরেক সদস্য তানভীর আহমেদ বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি এই প্রতিযোগিতার কারণে স্ট্রাকচারাল ডিজাইনের বিভিন্ন বাস্তবধর্মী দিকের ব্যাপারে জানতে পেরেছি। এ রকম প্রতিযোগিতা আরও আয়োজন করা দরকার।’
নতুন বন্ধু পেয়েছিশুধু জানা-শেখাই নয়, বন্ধুত্ব ও নেটওয়ার্কিংয়ের একটি বড় প্ল্যাটফর্মও এ প্রতিযোগিতা। এ প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল দ্বিতীয় রানার্সআপ রুয়েট জেনেসিসের সঙ্গে। দলের সদস্য মো. সামিউল ইসলাম, শরিফুল হক ও কামরুল হাসান হিমেল চৌধুরী। কামরুল বলেন, ‘আমরা ক্লাসরুম থেকে অনেক কিছু শিখি। এই শিক্ষা ভবিষ্যতে চাকরিজীবনে প্রবেশের পর প্রয়োগের সুযোগ থাকে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেই অভিজ্ঞতাই পাওয়ার সুযোগ হলো। অনেক নতুন বন্ধু পেয়েছি। প্রকৌশলী কমিউনিটির সঙ্গেও একটা যোগাযোগ হলো। প্রতিযোগিতার জন্য অনেক রাত জেগে কাজ করেছি আমরা। দেখা গেছে, সারা রাত ধরে ডিজাইন করে সকালে আবার তা বদলে ফেলেছি। সারা রাত কাজ করে আবার সকাল আটটার ক্লাসরুমে ঠিকই হাজির ছিলাম। দারুণ একটা চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে অনেক কিছু শেখাও হলো।’ শরিফুল হক বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতা আসলে পুরোটাই ব্যবহারিক। আমরা থিওরিতে অনেক কিছু শিখি, কিন্তু এ ধরনের প্রতিযোগিতা আমাদের সামনে বাস্তব সমস্যা হাজির করে। শুরুতে অনেক কিছু বুঝতে পারছিলাম না। কারণ, ক্লাসে পড়েছি এক রকম, কিন্তু নিয়মকানুন বলে আরেক রকম। এ সমস্যা সমাধান করতে আমরা অনেককে বিরক্ত করেছি। শিক্ষক আর সিনিয়রদের কাছে বারবার গিয়েছি। নানা চ্যালেঞ্জ জয় করতে হয়েছে।’
পুরস্কার নয়, এসব চ্যালেঞ্জ জয়ের আনন্দই এই প্রতিযোগিতা থেকে শিক্ষার্থীদের বড় প্রাপ্তি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন জ ন য় স র ন র সআপ অন ক ক ছ সদস য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন।