উজিরপুরে সেতুর কাজে চাঁদা না পেয়ে হামলার অভিযোগ কৃষক দল ও ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে
Published: 2nd, March 2025 GMT
বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় একটি সেতু নির্মাণকাজের ঠিকাদার ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অভিযোগ করেছেন, তাঁর কাছে স্থানীয় কৃষক দল ও ছাত্রদলের দুই নেতা চাঁদা দাবি করেছেন। চাঁদা না দেওয়ায় নির্মাণকাজের শ্রমিকদের ওপর এই দুজনের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। এরপর আরেক দফায় তাঁর এক সহযোগীর বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর-লুটপাট করা হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা করেছেন তিনি।
অভিযুক্ত দুজন হলেন উজিরপুর উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব স্বপন মল্লিক ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মনির হোসেন সরদার। মামলার বাদী হলেন উজিরপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুজ্জামান ওরফে লিটন।
রফিকুজ্জামান অভিযোগ করেন, উপজেলার উত্তর বড়াকোঠা এলাকায় ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে কাজ পান তিনি। কাজ শুরু করলে মনির হোসেন সরদার তাঁর (রফিকুজ্জামান) ব্যবসায়িক অংশীদার ও বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুম মল্লিকের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর প্রথম দফায় মনির ও স্বপন তাঁদের ২০-২৫ জন সহযোগীকে নিয়ে সেতু নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের ওপর হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা শ্রমিকদের মারধর এবং নির্মাণকাজের অস্থায়ী অফিস ঘরসহ ছয়টি সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। শ্রমিকদের রান্না করা খাবারও নষ্ট করা হয়। হামলায় শ্রমিক আতিকুর রহমান, লিয়ন ইসলাম, রিয়াদ হোসেন গুরুতর আহত হন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া হামলাকারীরা একজন নারী শ্রমিককে মারধর ও শ্লীলতাহানি করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ওই দিন রাতেই অভিযুক্তরা দ্বিতীয় দফায় ঠিকাদার রফিকুজ্জামানের ব্যবসায়িক অংশীদার যুবদল নেতা মাসুম মল্লিকের ধামুরা এলাকার বাড়িতে হামলা করে বলে অভিযোগ করেন রফিকুজ্জামান। তারা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে মুঠোফোন ও স্বর্ণালংকার লুট করে নেয় বলে মামলার এজাহারে বলা আছে। এ সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকে ডাকাত প্রবেশের ঘোষণা দেওয়া হলে গ্রামবাসী এগিয়ে আসার আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে ঠিকাদার রফিকুজ্জামান ছাত্রদল নেতা মনির হোসেন, কৃষক দল নেতা স্বপন মল্লিকসহ তাঁদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। রফিকুজ্জামান অভিযোগ করেন, পুলিশ শুরুতে মামলা নিতে গড়িমসি করলেও শুক্রবার দিবাগত রাতে মামলা নেয়। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
কৃষক দল নেতা স্বপন মল্লিক ও ছাত্রদল নেতা মনির হোসেন সরদার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এসব ঘটনা সাজানো নাটক। তাঁদের রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে এ মিথ্যা অভিযোগ সাজানো হয়েছে।
মনির হোসেন সরদার আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাঁদা দাবি ও হামলার ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার সঙ্গে পারিবারিক বিরোধ থাকায় রাজনৈতিক উদ্দেশে এই মামলা করা হয়েছে।’
আর কৃষক দল নেতা স্বপন মল্লিক বলেন, ‘প্রস্তাবিত এলাকার সেতুটি নির্দিষ্ট স্থানের চেয়ে উত্তরে গিয়ে এক গরিব কৃষকের জমির ওপর দিয়ে জোরপূর্বক বানানোর কাজ শুরু করেছেন ওই ব্যক্তি। এ বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করলে নাটক সাজিয়ে আমাদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা করেছে এবং অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করার পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল দল ন ত কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হিজরতের ৫টি শিক্ষা
সাহাবিদের হিজরতের ঘটনাবলি কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং তা মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাদের হিজরতের ঘটনা ও ত্যাগের আদর্শ থেকে কয়েকটি মৌলিক শিক্ষা উঠে আসে:
১. হিজরত প্রথমত আল্লাহর আদেশ পালনহিজরত কেবল কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল না, বরং ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ইবাদতমূলক নির্দেশ। এই কারণে সাহাবিরা সবচেয়ে প্রিয় বস্তু—ঘরবাড়ি, সম্পদ, আত্মীয়স্বজন—সহজে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। (মুহাম্মদ সাইদ রমাদান আল-বুতি, ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা: ১৫৬, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০০৪)
২. ইমানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগহিজরত শেখায় যে একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুহাইব তাঁর সব সম্পদ, আবু সালামা তাঁর পরিবার এবং বনু জাহশ (রা.) জন্মভূমি ত্যাগ করে এই মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এই ত্যাগ বিনা মূল্যে অর্জিত হয়নি।
আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. ইমানের সম্পর্ক অন্য সব সম্পর্ক থেকে ঊর্ধ্বেওমর (রা.) আইয়াশকে যখন তার মায়ের দোহাইয়ের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছিলেন, তা প্রমাণ করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের বন্ধন অন্য সব জাগতিক সম্পর্ক (গোত্র, পরিবার, রক্ত) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।
৪. ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসাহিজরত মোটেই বিশৃঙ্খল ছিল না। ওমর (রা.)-এর পরিকল্পনা, কাফেলাবদ্ধ হয়ে যাত্রা এবং কৌশল অবলম্বন—সবই প্রমাণ করে যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি মানবীয় প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করাও আবশ্যক।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫৫. আল্লাহর দয়ার বিশালতাএই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফিতনা ও দুর্বলতা মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তারা মক্কায় বন্দী হয়ে নিজেদের পাপী মনে করছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করে আশার দরজা খুলে দেন, ‘বলো, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ (পাপ করেছ), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।”’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)
এই আয়াতটি ছিল তাঁদের জন্য এক ঐশী ক্ষমা ও নতুন সুযোগের বার্তা।
হিজরত কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি একটি অক্ষয়–দর্শন—যেখানে ইমান, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের বীজ নিহিত ছিল। এই দর্শনই মুসলমানদের নতুন এক দিগন্তে পৌঁছে দেয়।
আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫