বিপিএলে পারিশ্রমিক না পেয়ে ক্ষুব্ধ আফ্রিদি বিসিবিকে অভিযোগ
Published: 2nd, March 2025 GMT
মৌখিকভাবে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে নিজের পারিশ্রমিক বকেয়ার বিষয়টি অনেক আগেই জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি শহীদ আফ্রিদি। চিটাগং কিংসের মেন্টর হিসেবে এবার দায়িত্ব পালন করেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী এই ক্রিকেটার।
কিন্তু পারিশ্রমিক না পেয়ে ক্ষুব্ধ আফ্রিদি এবার ই-মেইল করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবিকে অভিযোগ জানিয়েছে। সঙ্গে এ-ও জানিয়েছে, চিটাগং কিংস তার সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছে। ফারুক আহমেদকে অ্যাড্রেস করে আফ্রিদির পাঠানো চিঠি হাতে এসেছে রাইজিংবিডির।
যেখানে আফ্রিদি বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসা, বিপিএলের প্রতি তার নিবেদন এবং পারিশ্রমিক জটিলতার আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
আগামী বিপিএল নিয়ে কাজ শুরু, ‘সুখবর’ দিলেন ফারুক
চার্টার্ড বিমানে শিরোপা নিয়ে বরিশালে তামিমরা
আফ্রিদি ই-মেইলে লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশকে হৃদয়ের খুব কাছে রাখার একজন হিসেবে, আমি বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে সর্বদা যে ভালোবাসা ও উষ্ণতা পেয়েছি তার জন্য আমার গভীর স্নেহ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।’’
‘‘বাংলাদেশে হোক বা বিশ্বের অন্য কোথাও, বাংলাদেশি ভক্তদের অকুণ্ঠ সমর্থন আমার জন্য অপরিসীম আনন্দ এবং অনুপ্রেরণার উৎস। আমি সত্যিই বাংলাদেশকে আমার দ্বিতীয় বাড়ি মনে করি।’’
‘‘তবে, বিপিএলে এগারতম মৌসুমে আমার অংশগ্রহণ সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমি এই লিখাটা লিখছি। চিটাগাং কিংস ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এবং মেন্টর হিসেবে নিযুক্ত হতে পেরে আমি সম্মানিতবোধ করছি এবং আমি তাদের সাথে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলাম। চুক্তি অনুসারে, টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে আমাকে আমার পারিশ্রমিকের ৫০% (মোট ১০০,০০০ মার্কিন ডলার) দেওয়ার কথা ছিল, বাকি টাকা টুর্নামেন্ট চলাকালীন দিতে হবে।’’
‘‘কিন্তু চিটাগং কিংস ম্যানেজমেন্ট অর্থপ্রদানের শর্তাবলি মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে। ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের পরিবর্তে মাত্র ১৯ হাজার মার্কিন ডলার প্রদান করা হয়েছে, যা আমাদের চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। তবুও, আমি সৎ বিশ্বাসে আমার দায়িত্ব পালন করে চলেছি।’’
‘‘টুর্নামেন্ট চলাকালীন আমি এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে পাকিস্তান ফিরে আসি এবং আমাকে বলা হয়েছিল ১৯ জানুয়ারির ভেতরে আবার ঢাকায় ফিরে যেতে। টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়তা দিয়েছিল তারা আমার রিটার্ন টিকিটের ব্যবস্থা করে দেবে। তবে বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও, টিকিটটি কখনও দেওয়া হয়নি, এবং টুর্নামেন্টের বাকি সময় আমি দলে ফিরে যেতে পারিনি। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক ছিল, বিশেষ করে এত মর্যাদাপূর্ণ লিগের সাথে যুক্ত একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছ থেকে।’’
এদিকে চিটাগং কিংসের কর্ণধার সামির কাদের চৌধুরীর দাবি, আফ্রিদির সঙ্গে ‘ঝামেলা’ হওয়ার কারণে তার পারিশ্রমিক নিয়ে জটিলতার তৈরি হয়েছিল। তাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার কারণও খুঁজে পাননি তিনি। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেছেন, ‘‘ওর (আফ্রিদির) সঙ্গে দুই সপ্তাহ আগেও কথা হয়েছে। যোগাযোগ হচ্ছে না এটা ভুল। হ্যাঁ, তার পারিশ্রমিক পুরোটা এখনও পায়নি। এতো তাড়ার কিছু নেই। সময়মতোই সে তার পারিশ্রমিক পেয়ে যাবে। ২১ হাজার ডলারের মতো দেওয়া হয়েছে। উনি তো আর ক্রিকেটার নন যে এতো তাড়া দেখাতে হবে।’’
সামির কাদের এ-ও জানিয়েছেন, আফ্রিদিকে পুরো পারিশ্রমিক না দেওয়ার বিষয়টি তিনি ফারুক আহমেদকে মৌখিকভাবে জানিয়ে রেখেছেন।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ব প এল
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।
বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রপ্তানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তান ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।
নতুন করে উচ্চ মাত্রায় এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।
ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে। এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।
এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ অভিহিত করেন ট্রাম্প। নতুন শুল্ক আরোপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।
ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে।
অন্যান্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
পাল্টা এই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’।
যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি সেদেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয় সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সেদেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য।
মার্কিন কোম্পানি ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে কোনো দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।
শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে।
অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে।
বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ত চুরিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ করেছেন তিনি।