বয়স্ক ভাতার তালিকায় ‘মৃত’ দেখানো সেই সুরধ্বনীকে ‘জীবিত’ করা হয়েছে, পাবেন ভাতা
Published: 2nd, March 2025 GMT
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার সুরধ্বনী রানী করকে (৭৮) মৃত দেখিয়ে প্রায় দেড় বছর বয়স্ক ভাতাবঞ্চিত রাখার পর এবার তাঁকে ‘জীবিত’ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর মৃত্যুসনদ তৈরি করে ভাতা না দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
আজ রোববার মোহনগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সুরধ্বনী রানী মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামের মৃত নরেন্দ্র চন্দ্র করের স্ত্রী।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়, স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুরধ্বনী রানী কর আট বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। ভাতাপ্রক্রিয়া ডিজিটাল হওয়ার পরও তিনি নিয়মিত ভাতা পেয়েছেন। কিন্তু বছর দেড়েক আগে হঠাৎ তাঁর মুঠোফোন নম্বরে ভাতার টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যের কাছে গিয়েও কোনো সুরাহা পাননি। পরে কয়েকজনের পরামর্শে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি মারা গেছেন। তাঁর জায়গায় আরেকজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে। সমাজসেবা কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ঘুরেও ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি।
এ নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি প্রথম আলোতে ‘বয়স্ক ভাতা বন্ধের খোঁজ নিতে গিয়ে সুরধ্বনী জানলেন তিনি মৃত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে এলে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসের নির্দেশে মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সমাধানের চেষ্টা চালান।
সম্প্রতি সুরধ্বনীর বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বারের মৃত্যুসনদের ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী সুরধ্বনী রানীর স্থলে অন্যজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছিল। সুরধ্বনী যেহেতু জীবিত আছেন বলে জানতে পেরেছি, তাই ওই এলাকার অন্য এক মৃত ব্যক্তির জায়গায় তাঁকে প্রতিস্থাপন করে ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চলতি মার্চ মাস থেকে তিনি ভাতা পাবেন। এ ঘটনায় তেঁতুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামকে শোকজ করেছে উপজেলা প্রশাসন।’
ভুক্তভোগী সুরধ্বনী রানী কর বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সমাজসেবা অফিসে গিয়েছিলাম। তাদের কথামতো নতুন একটি মোবাইল নম্বরে নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে জমা দিয়েছি। চলতি মাস থেকে ভাতা পাব বলে জানিয়েছে। অনেক কষ্ট করে আমাকে চলতে হয়। ভাতার টাকাটা পেলে ওষুধ কিনে কোনো রকমে চলতে পারব।’ তিনি জানান, দুই ছেলে রেখে ২০ বছর আগে স্বামী মারা যান। এক ছেলে ছোটবেলায় হারিয়ে গেছে। আরেক ছেলে দিনমজুরি করে পরিবার নিয়ে কষ্ট করে চলেন।
আরও পড়ুনবয়স্ক ভাতা বন্ধের খোঁজ নিতে গিয়ে সুরধ্বনী জানলেন তিনি মৃত২৮ জানুয়ারি ২০২৫মোহনগঞ্জের ইউএনও জুয়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি নজরে আসামাত্র দ্রুত সুরধ্বনী রানীর ভাতার ব্যবস্থা করতে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে তাঁর ভাতার ব্যবস্থা হয়েছে বলে জেনেছেন। এদিকে মৃত্যুসনদ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে শোকজ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শোকজের কাগজ এখনো পাইনি। তবে এটা আমার দোষ নয়। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুর রশিদের কথায় আমি মৃত্যুসনদে সই করেছিলাম।’ খোঁজখবর না নিয়ে মৃত্যুসনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে বলেন, কোনো মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি মূলত সদস্যরা নিশ্চিত করে সনদ তৈরি করেন। চেয়ারম্যান এতে শুধু স্বাক্ষর দেন। এর দায় ইউপি সদস্যের।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বয়স ক ভ ত র ব যবস থ ম ত য সনদ কর মকর ত সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
মায়ের সঙ্গে আর দেখা হলো না, বাড়ির কাছে এসে ডুবল নৌকা
৬ দিন আগে ভাইয়ের বাড়িতে (মধ্যনগর গ্রামে) বেড়াতে যান বিউটি চক্রবর্তী (৫০)। তাঁর ছেলে প্রণয় চক্রবর্তী মামার বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করেন। তিনিই মাকে নৌকায় তুলে দেন। নৌকায় মাকে তুলে দেওয়ার সময় প্রণয় বলেছিলেন, ‘সাবধানে যাও, আমি ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাবো।’ আর বাড়ি ফেরা হলো না বিউটি চক্রবর্তীর, মায়ের সাথে আর দেখাও হলো না ছেলের। বাড়ির কাছাকাছি এসে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান বিউটি চক্রবর্তী।
শনিবার (২৯ মার্চ) সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে যাত্রীবাহী নৌকাডুবির ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়। উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের বৌলাই নদীতে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে ৫ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধারের কথা পুলিশ জানালেও পরে একজনের জ্ঞান ফেরে।
নিহত ৪ জন হলেন নোয়াপাড়ার বিউটি চক্রবর্তী (৫০), মোহনগঞ্জের হাতনি গ্রামের কল্পনা সরকার (৪৫), কলমাকান্দা উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের সুজিত সরকারের পাঁচ বছরের শিশু কন্যা গঙ্গা সরকার (৫) ও মোহনগঞ্জের হাতনি গ্রামের রুদ্রা সরকার (৬)।
এদিকে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার হাতনি গ্রামের নিরদ সরকারের ছেলে নিরব সরকারকে (১০) সিলেট ওসমানী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
বিউটি চক্রবর্তী মধ্যনগরে ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন জানিয়ে তার স্বামী তাপস চক্রবর্তী বলেন, মধ্যনগরে আমার ছেলে প্রণয় চক্রবর্তী তাকে (বিউটি চক্রবর্তী) নৌকায় তুলে দেয়। রাতে হঠাৎ খবর পাই নৌকাডুবি হয়েছে। তাৎক্ষণিক ছুটে যাই, গিয়ে দেখি সব শেষ। লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরেছি, ছেলেও খবর পেয়ে মধ্যনগর থেকে ছুটে এসেছে। রাতেই দাহ সম্পন্ন হয়েছে।
ছেলে প্রণয় চক্রবর্তী বলেন, আমিই মাকে নৌকায় তুলে দিয়েছি। এরপর আর কিছু বলতে পারলেন না প্রণয়। মা হারানোর শোকে কন্ঠরোধ হয়ে যায় তার।
নৌকার যাত্রী লিপটন তালুকদার বলেন, নৌকার মধ্যে আমি ও আমার স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ নৌকার মাঝির এক সহকারী আমাকে বলেন, ‘এই লিপটন তাড়াতাড়ি ওঠ, নৌকা ডুবে যাচ্ছে।’ ওঠে বসতে বসতে নৌকা তলিয়ে যায়। জানালা দিয়ে আমার স্ত্রীকে নিয়ে বের হয়ে রক্ষা পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ৬০-৭০ জন যাত্রী ছাড়াও নৌকার মধ্যে টিন, সিমেন্ট, ধান, কাঠসহ নানা জিনিসপত্র বোঝাই ছিলো।
জামালগঞ্জ থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ট্রলারডুবিতে চারজন মারা গেছেন। এরমধ্যে দুইজন মহিলা ও দুইজন শিশু। একজন গুরতর আহত তাকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক।