ব্যক্তিগত শুদ্ধি বা ব্যক্তির সংস্কার ছাড়া রাষ্ট্রের সংস্কার সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতি সব জায়গাতেই সমস্যার সূচনা হয় ব্যক্তির মাধ্যমে। ব্যক্তি যদি কর্তৃত্ববাদী হন, তাহলে রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দূষিত করেন। এ জন্য ব্যক্তির মধ্যে জন্ম নেওয়া মাইক্রো (ক্ষুদ্র) ফ্যাসিবাদই ম্যাক্রো (সামষ্টিক) ফ্যাসিবাদের সূচনা করে এবং রাষ্ট্রকে ফ্যাসিজমের নির্মম দুর্বিপাকে নিপতিত করে। তাই আমাদের ব্যক্তিগত শুদ্ধি না হলে রাষ্ট্রের শুদ্ধি বা সংস্কার অসম্ভব।’

রোববার সকালে বরিশালের চরমোনাই দরবার শরিফে পবিত্র রমজান উপলক্ষে ১৫ দিনব্যাপী তালিম-তারবিয়াতের কার্যক্রম শুরু হয়। জোহরের নামাজের পর উদ্বোধনী বয়ানে চরমোনাই পীর এসব কথা বলেন।

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ব্যক্তি দুর্নীতিগ্রস্ত হলে কোনো আইন-কানুন দিয়ে দুর্নীতি রোধ করা যায় না। আত্মা দূষিত হলে তার প্রভাব সমাজ-রাষ্ট্রে সর্বত্র বিস্তৃত হয়। তাই ব্যক্তির সংস্কার ও আত্মশুদ্ধি আগে প্রয়োজন। ব্যক্তির শুদ্ধি ছাড়া রাষ্ট্র শুদ্ধি সম্ভব নয়। কোনো সংস্কারই সুফল বয়ে আনতে পারবে না।

নতুন ফ্যাসিবাদের পদধ্বনিতে দেশের মানুষ শঙ্কিত মন্তব্য করে চরমোনাই পীর বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বড় ফ্যাসিবাদের বিদায় হয়েছে। কিন্তু তারপরও দেশের নানা প্রান্তে আগের মতো দখলদারি, হানাহানি এবং পদ নিয়ে কাড়াকাড়ির চিত্র দেখা যাচ্ছে। মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার আগেই নতুন ফ্যাসিবাদের অশুভ পদধ্বনিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। কারণ আত্মা পরিশুদ্ধ না হলে শুধু দল পরিবর্তন করে কোনো লাভ হয় না।

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ইসলামের অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানিয়ে মুফতি রেজাউল করীম বলেন, হাজার বছরের ইতিহাসের শিক্ষা হলো—ইসলাম ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা শান্তি আনতে পারেনি। অতএব বাংলাদেশেও যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলা হচ্ছে, তাতে ইসলামকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সমাজবিধ্বংসী এজেন্ডা নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে চরমোনাই পীর বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে সমাজবিধ্বংসী এলজিবিটিকিউ কর্মীদের অন্তর্ভুক্তি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয়ভাবে অতি আবেগপ্রবণ। ধর্ম তাঁদের কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এখানে ধর্মবিদ্বেষী কোনো ব্যক্তি রাজনৈতিক দলের নেতা হলে সেই দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। তিনি নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। বাংলাদেশে সমকামীদের প্রমোট করার কোনো সুযোগ নেই।

ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি ব্যক্তির সংস্কারও অত্যন্ত জরুরি। ব্যক্তি পরিবর্তন না হলে কোনো সংস্কারই সফল হবে না। আমরা চাই একটি আদর্শ সমাজব্যবস্থা, একটি কল্যাণ রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রবর্তন। যেখানে ন্যায়বিচার, সততা ও ইসলামি মূল্যবোধ অটুট থাকবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চরম ন ই প র ব যবস থ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অ

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন (এমএসিসি)। তার সাবেক সহকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের নগদ অর্থ ও ১৬ কেজি স্বর্ণবার জব্দের ঘটনায় ইসমাইল সাবরিকে প্রধান সন্দেহভাজনদের মধ্যে রাখা হয়েছে। আগামী বুধবার (৫ মার্চ) তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

স্থানীয় সময় আজ সোমবার (৩ মার্চ) মালয়েশিয়া এমএসিসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান আজম বাকি।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবর বলছে, ইসমাইল সাবরি ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দেশের সবচেয়ে কম সময়ের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ইসমাইল সাবরি হলেন তৃতীয় নেতা, যিনি তার পূর্বসূরি মুহিউদ্দিন ইয়াসিন এবং নাজিব রাজাকের পরে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।

আরো পড়ুন:

নারী কর্মীদের মালয়েশিয়া না যেতে সতর্কতা

আটকেপড়া ৭ হাজার ৯৬৪ বাংলাদেশি কর্মীকে নিতে রাজি মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন (এমএসিসি) সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কিত সম্পত্তিতে তিনটি অভিযানে মার্কিন ও সিঙ্গাপুর ডলার, সংযুক্ত আরব আমিরাত দিরহাম এবং জাপানি ইয়েনসহ বিভিন্ন মুদ্রায় নগদ অর্থ উদ্ধার করেছে।

সোমবার এমএসিসি প্রধান আজম বাকি সাংবাদিকদের বলেন, “এই নগদ অর্থের সন্ধান নিশ্চিত করে যে (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) এই মামলায় একজন সন্দেহভাজন।” 

সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা জব্দকৃত নগদ অর্থ, বিলাসবহুল ঘড়ি ও ১৬ কেজি সোনার বার প্রদর্শন করেন।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবর অনুসারে, ইসমাইল সাবরির একজন প্রতিনিধি এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেননি।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নির্বিশেষে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গত ৮ জানুয়ারি জাতীয় সুশাসন সম্মেলনে তিনি দুনীর্তির বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “আমি কারো অবস্থান বা প্রভাব নিয়ে চিন্তা করি না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা ইতিমধ্যেই এটি শুরু করেছি।

তবে সমালোচকরা আনোয়ারকে দুর্নীতির অভিযোগ ব্যবহার করে বিরোধীদের চুপ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন, যার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এবং প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী দাইম জয়নুদ্দিনও রয়েছেন।আনোয়ার ইব্রাহিম তাদের বিরুদ্ধে পদের মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করার অভিযোগ এনেছিলেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে মাহাথির মোহাম্মদ আনোয়ার ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে ১৫০ মিলিয়ন রিঙ্গিত মানহানির মামলা দায়ের করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

গত মাসে মাহাথির মোহাম্মদ তার ব্লগে লিখেছিলেন, “আনোয়ার যখন মুখ খোলেন, তখন তিনি মিথ্যা বলেন।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ