ব্যক্তির সংস্কার ছাড়া রাষ্ট্রের সংস্কার অসম্ভব: চরমোনাই পীর
Published: 2nd, March 2025 GMT
ব্যক্তিগত শুদ্ধি বা ব্যক্তির সংস্কার ছাড়া রাষ্ট্রের সংস্কার সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতি সব জায়গাতেই সমস্যার সূচনা হয় ব্যক্তির মাধ্যমে। ব্যক্তি যদি কর্তৃত্ববাদী হন, তাহলে রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দূষিত করেন। এ জন্য ব্যক্তির মধ্যে জন্ম নেওয়া মাইক্রো (ক্ষুদ্র) ফ্যাসিবাদই ম্যাক্রো (সামষ্টিক) ফ্যাসিবাদের সূচনা করে এবং রাষ্ট্রকে ফ্যাসিজমের নির্মম দুর্বিপাকে নিপতিত করে। তাই আমাদের ব্যক্তিগত শুদ্ধি না হলে রাষ্ট্রের শুদ্ধি বা সংস্কার অসম্ভব।’
রোববার সকালে বরিশালের চরমোনাই দরবার শরিফে পবিত্র রমজান উপলক্ষে ১৫ দিনব্যাপী তালিম-তারবিয়াতের কার্যক্রম শুরু হয়। জোহরের নামাজের পর উদ্বোধনী বয়ানে চরমোনাই পীর এসব কথা বলেন।
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ব্যক্তি দুর্নীতিগ্রস্ত হলে কোনো আইন-কানুন দিয়ে দুর্নীতি রোধ করা যায় না। আত্মা দূষিত হলে তার প্রভাব সমাজ-রাষ্ট্রে সর্বত্র বিস্তৃত হয়। তাই ব্যক্তির সংস্কার ও আত্মশুদ্ধি আগে প্রয়োজন। ব্যক্তির শুদ্ধি ছাড়া রাষ্ট্র শুদ্ধি সম্ভব নয়। কোনো সংস্কারই সুফল বয়ে আনতে পারবে না।
নতুন ফ্যাসিবাদের পদধ্বনিতে দেশের মানুষ শঙ্কিত মন্তব্য করে চরমোনাই পীর বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বড় ফ্যাসিবাদের বিদায় হয়েছে। কিন্তু তারপরও দেশের নানা প্রান্তে আগের মতো দখলদারি, হানাহানি এবং পদ নিয়ে কাড়াকাড়ির চিত্র দেখা যাচ্ছে। মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার আগেই নতুন ফ্যাসিবাদের অশুভ পদধ্বনিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। কারণ আত্মা পরিশুদ্ধ না হলে শুধু দল পরিবর্তন করে কোনো লাভ হয় না।
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ইসলামের অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানিয়ে মুফতি রেজাউল করীম বলেন, হাজার বছরের ইতিহাসের শিক্ষা হলো—ইসলাম ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা শান্তি আনতে পারেনি। অতএব বাংলাদেশেও যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলা হচ্ছে, তাতে ইসলামকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সমাজবিধ্বংসী এজেন্ডা নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে চরমোনাই পীর বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে সমাজবিধ্বংসী এলজিবিটিকিউ কর্মীদের অন্তর্ভুক্তি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয়ভাবে অতি আবেগপ্রবণ। ধর্ম তাঁদের কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এখানে ধর্মবিদ্বেষী কোনো ব্যক্তি রাজনৈতিক দলের নেতা হলে সেই দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। তিনি নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। বাংলাদেশে সমকামীদের প্রমোট করার কোনো সুযোগ নেই।
ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি ব্যক্তির সংস্কারও অত্যন্ত জরুরি। ব্যক্তি পরিবর্তন না হলে কোনো সংস্কারই সফল হবে না। আমরা চাই একটি আদর্শ সমাজব্যবস্থা, একটি কল্যাণ রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রবর্তন। যেখানে ন্যায়বিচার, সততা ও ইসলামি মূল্যবোধ অটুট থাকবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চরম ন ই প র ব যবস থ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্টদের গলার স্বর শুনতে পাওয়া যাচ্ছে: রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের গলার স্বর শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশের জনগণের পাচার করা টাকা পতিত স্বৈরাচারের ‘টনিক’ হিসেবে কাজ করছে। শেখ হাসিনার একটি ভরসা হচ্ছে পাচার করা টাকা। সেই টাকার জোরে দেশে নানা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। একটি প্রবাদ আছে ‘টাকায় কথা কয়’ শেখ হাসিনা এই প্রবাদটি কাজে লাগাতে চাচ্ছে।
অপরাধী আওয়ামী নেতাদের জামাই আদরে আদালতে হাজির করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর বিভিন্ন পাতানো মামলায় বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা ও আলেম-ওলামাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে তোলা হয়েছিল। আর এখন কারাগারে ভয়াবহ অপরাধী আওয়ামী নেতাদের জামাই আদরে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাসিনার অলিগার্করা ‘শর্ষের ভিতর ভূত’ হয়ে থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ভারতে পলাতক হাসিনা একের পর এক হুংকার দিচ্ছেন। জুলাই-আগস্টের শাজাহান খান গংরা আদালতে এসে সরকারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। আদালতকে ভেংচি কাটছেন। পুলিশকে থোড়াই কেয়ার করছেন। হাসিনার দোসররা আসামি হয়েও আদালতে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন, তা মূলত অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অকার্যকর’ প্রমাণের এক গভীর চক্রান্ত।
রিজভী বলেন, দীর্ঘ রক্তঝরা আন্দোলনের অব্যবহিত পর থেকে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির প্রত্যাশার প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি থাকলেও গণতন্ত্রকে মজবুত কাঠামো তৈরির প্রস্তুতির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসর, খুনের আসামিরা প্রকাশ্যে আদালতে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচার চেয়ে বক্তব্য রাখেন। হাসিনার গণহত্যাকারী বাহিনীর নেতারা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের ভয়াবহ অপশাসনের জন্য ক্ষমা চাওয়া তো দূরে থাক, উল্টো আদালতে হুমকি দিচ্ছেন। হাজারো শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আরও বড় ফ্যাসিস্ট হয়ে ফিরে আসার হুমকি দিচ্ছেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, মাফিয়া অর্থনীতির জোরে শেখ হাসিনা দেশের যে সম্পদ পাচার করেছেন, সেই সম্পদের মুনাফা দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চান। পতিত ফ্যাসিবাদের বড় বড় দোসররা অনেকেই প্রশাসনের হেফাজতে ছিলেন, কিন্তু তাঁরা কীভাবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন? নিশ্চয়ই এখনো প্রশাসনের মধ্যে অনেকেই ঘাপটি মেরে আছেন, ফ্যাসিবাদের খুনি দোসরদের সহযোগীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।