চট্টগ্রামের রাউজানে কাজী সাফায়েত কালাম আরিয়ান নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি পরিচয় দেওয়া কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গত শনিবার রাত ১১টার দিকে রাউজান পৌরসভার গহিরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে মুহাম্মদ কাওসার নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাউজানের এক ছাত্র প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকে হেনস্তা ও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে গহিরায় ছাত্রলীগের এক কর্মী অবস্থান করছেন, এমন খবর পেয়ে আটক করতে যায় পুলিশ। তবে নিজেদের বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে স্থানীয় তিন ব্যক্তি ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশের কাছ থেকে কেড়ে নেয়।

এ ঘটনার পর গভীর রাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন রাউজানের ফেসবুক পেজে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে স্থানীয় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ জসিম আশ্রয় দিচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, রাউজানে ছাত্রলীগের কর্মীকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন জসীম, সাফায়াত হোসেন, মারুফ নামের বিএনপির তিন নেতা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ব্যক্তিদের একজন সাফায়াত হোসেন। তিনি উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব। তবে এ বিষয়ে সাফায়াত হোসেনকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। এ কারণে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘এক আসামিকে আটক করতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল পুলিশ। তৃতীয় পক্ষের কিছু ব্যক্তির কারণে ওই আসামি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম ক ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপদ থাকুক বনের প্রাণীরা

একটি অসুস্থ বুনো পুরুষ হাতিকে পাওয়া গেল রাঙামাটির লংগদু এলাকায়। হাতিটির পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ভালো করে চলাফেরা করতে পারছিল না। এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। খাবারের অভাবে হাতিটি মারা যাওয়ার উপক্রম। এ রকম এক অবস্থায় বন অধিদপ্তর আর স্থানীয় হাতি সংরক্ষণ দল হাতিটির চিকিৎসায় এগিয়ে এল। তাকে অজ্ঞান করে চিকিৎসা দিয়ে বনে আবার ছেড়ে দেওয়া হলো। সুস্থ হয়ে গত দুই মাসে হাতিটি বনের ভেতর স্বাভাবিক চলাফেরা করছে। মানুষের আঘাতে হাতিসহ অন্য বুনো প্রাণীদের এ রকম অনেক ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। বেশির ভাগ সময়ই আহত বুনো প্রাণীরা মারা পড়ে। লংগদুর হাতিটির জীবন ফিরে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।

এ দেশে হাতির বসবাস উপযোগী বন নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ এলাকায় হাতি–মানুষের দ্বন্দ্ব হচ্ছে। গত এক যুগে মারা গেছে শতাধিক হাতি। হাতি মারা পড়লে খবরটি পাওয়া যায়; কিন্তু অন্য প্রাণীর খবর পাওয়া বিরল। ২০১৬ সালে এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, আমাদের বনে হাতি এখন টিকে আছে মাত্র ২৬৮টি। গত দশ বছরে কত হাতি মারা গেল সেই তথ্য জানা আছে; কিন্তু কী পরিমাণ হাতির বাচ্চা আমরা পেয়েছি সেই তথ্যটি অজানা। কেবল হাতি গণনা করলেই তা আবার জানা যাবে।

ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ টাঙ্গুয়ার হাওরে গেলাম পাখিশুমারি করতে। ১০ হাজার হেক্টরের এই হাওরটি পৃথিবীবাসীর কাছে বুনো হাঁসের স্বর্গ নামে পরিচিত। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে এই হাওরে লক্ষাধিক বুনো হাঁস দেখা যায়। এ বছর পাখিগণনায় পাওয়া গেল তার উল্টো ফল। পাখি দেখা গেল মাত্র ২২ হাজার। এত পাখি কমে যাওয়ার বড় কারণ হাওরটি ভালো নেই। চায়না জাল দিয়ে সারা হাওরে অবৈধ উপায়ে মাছ ধরা আর সঙ্গে পাখি শিকার। এ কারণে কমে গেছে পাখি। তাই এবার শীতের পাখিশুমারিতে যেকোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম পাখি পাওয়া গেছে।

এ বছরের প্রথম দিকে সোনাদিয়ায় গিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বিরল পাখি চামুচঠুঠো বাটানের দেখা পাইনি। তবে জানুয়ারির শেষ ভাগে মহেশখালীর সোনাদিয়ায় দেখা গেছে তিনটি আর দুটি পাখির দেখা মিলেছে সন্দ্বীপের কাছাকাছি গাংগুরিয়া চরে। সোনাদিয়া ছিল এই পাখিটির সবচেয়ে ভালো আবাস। আস্তে আস্তে এই দ্বীপটিও পাখিটির অনুপোযোগী হয়ে গেল।

গত দুই বছর আরেকটি পাখির গবেষণাকাজে নিয়মিত সুন্দরবন যাচ্ছি। এ সময়ের মধ্যে সুন্দরবনের ৩-৪টি খালে সুন্দরী হাঁস নামের এই পাখির উপস্থিতি পেয়েছি মাত্র ৬-৮টি। বাসার সন্ধান মিলেছে ২টি। এ বনে শতাধিক সুন্দরী হাঁস টিকে আছে বলে ধারণা করা হয়, যা গোটা পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশ। কিন্তু এখন এর অবস্থাও ভালো না। আমরা আসলে জানি না পাখিটি কী কারণে এত দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘দ্য লিভিং প্লানেট’ রিপোর্টে বলা হয়েছে, গোটা পৃথিবীর ৭৩ শতাংশ বুনো প্রাণীর সংখ্যা কমেছে। তারা বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমাদের দেশে বন্য প্রাণীর সংখ্যা ১১০০–এর কাছাকাছি। এত প্রজাতির বন্য প্রাণীর জন্য বন আছে আছে মাত্র ২.৫৭ মিলিয়ন হেক্টর। আমাদের দেশের মোট বুনো প্রাণীর প্রায় ২৪ শতাংশ বিপদগ্রস্ত অবস্থায় আছে। আর ৩১ প্রজাতির প্রাণী চিরতরে এ দেশ থেকে হারিয়ে গেছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল সুন্দরবন দিবস। সম্প্রতি সুন্দবনের বাঘ গণনার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের জাতীয় প্রাণী বাঘের সংখ্যা বেড়ে এখন ১২৫টি হয়েছে। বিপন্ন একটি প্রাণীর সংখ্যা বনে বেড়েছে, যা নিশ্চয় ভালো খবর। এক বাঘ ছাড়া অন্য কোনো বুনো প্রাণীর বেড়ে যাওয়ার খবর আমরা শুনি না। বাঘ গবেষণায় সরকার বেশ ভালো কাজ করেছে। বন রক্ষার পাশাপাশি বাঘের নিরাপদ আবাস তৈরি করা হয়েছে।

আজ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে অর্থায়ন, মানুষ ও ধরিত্রীর উন্নয়ন’। বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণে সরকারের ভূমিকা বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারলেই নিরাপদ বন হবে সব প্রাণীর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ