অস্কার নিয়ে যে ১১ বিতর্কিত ঘটনা আপনার জানা দরকার
Published: 2nd, March 2025 GMT
একাডেমি অব মোশন পিকচার্স আর্ট অ্যান্ড সায়েন্সের (এএমপিএএস) প্রতিষ্ঠা ১৯২৭ সালে। সিনেমাশিল্পে শ্রম অসন্তোষ ঠেকাতেই মূলত এর প্রতিষ্ঠা হয়। সিনেমা কোম্পানি মেট্রো গোল্ডেন-মায়ারের অন্যতম প্রতিষ্ঠা লুইস বি মায়ার এর অন্যতম উদ্যোক্তা। মূলত ইউনিয়নের হস্তক্ষেপের বাইরে এসে শ্রমিক সমস্যা সমাধান করতে অভিনেতা, পরিচালক, লেখক, কলাকুশলী ও প্রযোজকদের জোট এটি। প্রতিষ্ঠার পর তাঁরা চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন একটা পুরস্কারের ব্যবস্থা করার। ১৯২৯ সাল থেকে সেই শুরু একাডেমি অ্যাওয়ার্ড।
পুরস্কারের যে মূর্তিটি দেওয়া হয়, সেটির নকশা করেছিলেন সিনেমা কোম্পানি এমজিএমের শিল্পপরিচালক কেট্রিক গিবসন আর তৈরি করে দিয়েছিলেন জর্জ স্ট্যানলি। ১৯৩০ সাল থেকেই এ ট্রফিকে বলা শুরু হলো অস্কার। এ নামকরণ নিয়ে তিনটি ভাষ্য আছে। যেমন একাডেমিতে মার্গারেট হেরিক নামে একজন গ্রন্থাগারকর্মী ছিলেন। তিনি মনে করতেন, মূর্তিটি তাঁর চাচার মতোই দেখতে। আর সেই চাচার নাম ছিল অস্কার। মার্গারেট তাই শুরু থেকেই অস্কার ডাকা শুরু করেন। আরেকটি ভাষ্য বলছে, নামটি দিয়েছিলেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়া বেটি ডেভিস। তাঁর সাবেক স্বামীর নাম ছিল হারমান অস্কার নেলসন। মূর্তিটির পেছন দিকটা নাকি হারমান অস্কারের মতোই ছিল। আবার অনেকে লিখেছেন, আসলে প্রখ্যাত আইরিশ নাট্যকার অস্কার ওয়াইল্ডের নাম ধরেই পুরস্কারটির এ নামকরণ। তবে যা-ই হোক না কেন, ১৯৩৯ সাল থেকে একাডেমি কর্তৃপক্ষও একে অস্কার পুরস্কার বলা শুরু করে।
বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জমকালো আসর হচ্ছে এই অস্কার। একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের এবারের আসর ৯৭তম। সিনেমাপ্রেমীরা এই দিনের অপেক্ষায় থাকেন। আবার এই আসর নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনাও কম হয় না। নানা ধরনের বিতর্কজুড়ে আছে অস্কার অনুষ্ঠান নিয়ে। কোন ঘটনাটি বেশি বিতর্কিত—এই প্রশ্ন করলে আগে নানা অভিমত পাওয়া যেত। তবে ২০২২ সালের আসরে (৯৪ তম অস্কার) যা ঘটেছিল, এর পর থেকে অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন অভিমত আসার সুযোগ নেই। ভরা আসরে উপস্থাপককে চড় মারাই অস্কারের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিতর্কিত ঘটনা।
‘এমিলিয়া পেরেজ’ অভিনেত্রী কার্লা সোফিয়া গ্যাসকোন। এএফপি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক ড ম
এছাড়াও পড়ুন:
লালনসহ গুণীজনের নাম বাদের পেছনে রাজনীতি
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) আবাসিক হলসহ বিভিন্ন ভবন থেকে লালন সাঁই, বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পিসি রায়), কবি জীবনানন্দ দাশসহ শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম বাদ দেওয়া নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। এ ঘটনায় খোদ শিক্ষা উপদেষ্টা অসন্তুষ্ট, শিক্ষার্থীরা বিরক্ত, খুবির বর্তমান প্রশাসন বিব্রত।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢালাওভাবে নাম বাদ দেওয়ার বিষয়টি যেভাবে প্রচার হচ্ছে, ঘটনাটি তেমন নয়। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী তিনটি ভবনের নাম বদল হয়েছে। অন্য ভবন যে নামে পরিচিত ছিল, সেই নামেই ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইচ্ছা করে কারও নাম বাদ দেওয়া হয়নি। স্থাপনাগুলোর নতুন নামকরণ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ চলছে। আগামী সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থাপনার নাম দেওয়া ও পরিবর্তনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কিছু ছাত্র-শিক্ষকের বিরোধী ভূমিকা। নানা চাপ এড়াতে আগের নামে ফিরে গিয়ে নতুন আরেক বিতর্কে পড়েছে খুবির নতুন প্রশাসন।
শিক্ষকরা জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্থাপনার রাজনৈতিক নামকরণ না করার বিষয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ঐকমত্য ছিল। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কোনো স্থাপনাই রাজনৈতিক ব্যক্তির নামে হয়নি। ২০১৬ সালে এই ধারার ছন্দপতন ঘটান তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ফায়েক উজ জামান। প্রথম মেয়াদের শেষে নিয়োগ বাণিজ্য, নির্মাণকাজে অনিয়মসহ নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের বড় অংশ তাঁর বিরোধিতায় নামেন।
ওই সময় ছাত্রদের নতুন হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ছাত্রীদের নতুন হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে করা হয়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হলেও প্রতিবাদ করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। দ্বিতীয় দফায় উপাচার্য নিয়োগ পেতে নামকরণকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন অধ্যাপক ফায়েক উজ জামান। ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর সিন্ডিকেটের ১৮৮তম সভায় ১৯টি ভবন ও স্থাপনার নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তখন একাডেমিক ভবন-১-কে ড. সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে, একাডেমিক ভবন-২-কে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর নামে, একাডেমিক ভবন-৩ কবি জীবনানন্দ দাশের নামে, নির্মাণাধীন ১০ তলা চতুর্থ একাডেমিক ভবনকে জয় বাংলা ভবন, প্রশাসনিক ভবনকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের নামে এবং পুরোনো প্রশাসনিক ভবন সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে করা হয়।
এ ছাড়া টিএসসিকে লালন সাঁই মিলনায়তন, অতিথি ভবনকে মাইকেল মধুসূদনের নামে, কেন্দ্রীয় গবেষণাগারকে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের নামে, মেডিকেল সেন্টারকে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর নামে, জিমনেশিয়ামকে সুলতানা কামালের নামে, আইইআর ভবনকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে, আবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে প্রফেসরস কোয়ার্টারকে শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার নামে, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরস কোয়ার্টারকে শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. সুখরঞ্জন সমাদ্দারের নামে, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরস কোয়ার্টারকে শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব এবং লেকচারারস কোয়ার্টারকে শহীদ বুদ্ধিজীবী এস এম এ রাশিদুল হাসানের নামে করা হয়।
দেখা গেছে, চতুর্থ একাডেমিক ভবন, টিএসসি ও জিমনেশিয়ামের কাজ তখন শুরুই হয়নি। এসব নাম শুধু কাগজেই রয়েছে।
সূত্রটি জানায়, গণঅভ্যুত্থানের পর গত ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে ৩৭ দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ক্যাম্পাসের সব স্থাপনা থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম বদল।
ওই দিন দাবি উত্থাপনকারীর মধ্যে শিক্ষার্থী আয়মান আহাদ বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিজম রেজিমের সবার নাম পরিবর্তন চেয়েছি। বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধে খুলনায় নিহত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু বিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীদের নামে করা স্থাপনার বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য ছিল না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রদের দাবির মুখে অধ্যাপক ড. এ টি এম জহির উদ্দিনকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গত ১২ ডিসেম্বর গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নামের প্রস্তাব চায়। এর পর কমিটির প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে উত্থাপন করা হলে তারা সেটির অনুমোদন দিয়েছে। পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি অফিস আদেশ জারি করা হয়।
নতুন আদেশে দেখা গেছে, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের’ নাম পরিবর্তন করে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন হল, ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের’ নাম বিজয়-২৪ হল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভবনের নাম খুবির প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান প্রশাসনিক ভবন করা হয়েছে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত অতিথি ভবন, কাজী নজরুল ইসলাম গ্রন্থাগার ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষা ভবনের (আইইআর) নাম বহাল রেখে অন্য ১৩টি ভবন ও স্থাপনা আগের নামে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দুই সিন্ডিকেট সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে কয়েকজন জানান, ২০১৪ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান বা জিয়াউর রহমানসহ কোনো রাজনৈতিক নেতার নামে স্থাপনা হয়নি। অন্যায়ভাবে সব নামকরণ করা হয়েছে। তখন আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে সবাই একমত ছিলেন। বাকি নামগুলোর বিষয়ে কী হতে পারে, এটা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ পরামর্শ দিতে পারছিলেন না। এ জন্য আগের নামে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব উঠলে সবাই সরল মনে সমর্থন জানান। কিন্তু এটা যে এভাবে সমালোচনা হবে, তারা বুঝতে পারেননি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘টিএসসি, জিমনেশিয়ামসহ কিছু ভবনের অস্তিত্ব তখন ছিলই না, তবু নামকরণ করা হয়েছে। নামকরণের ক্ষেত্রে সবার মর্যাদা ঠিক রাখা হয়নি। বসবাসের ছোট কোয়ার্টারের নাম শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামে কখনোই মানানসই নয়। পিসি রায়ের নামে বড় একটি কলেজসহ বহু একক স্থাপনা রয়েছে। সেখানে একটি ভবনের নাম দেওয়া যুক্তিসংগত ছিল না। এমন অনেক নাম স্থাপনার সঙ্গে যাচ্ছিল না, এ জন্য বেশির ভাগই আমরা আগের নামে ফিরে গেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নতুন নামকরণের বিষয়ে আলোচনা করছি। সবার মত নিয়ে এই অঞ্চলের বিশিষ্ট ব্যক্তির নামে স্থাপনার নামকরণ করব।’