বছরের পর বছর ধরে সিরিয়ায় রুশ হামেইমিম বিমানঘাঁটির সৈন্যরা উপকূলীয় শহরগুলোতে অবাধে ঘুরে বেড়াতেন। দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহীদের ওপর বোমাবর্ষণের জন্য ওই ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ওড়ানো হতো। কিন্তু এখন দৃশ্য বদলে গেছে। বাশার সরকারের পতনের পর বিদ্রোহীদের হাতে দেশটির নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে। ফলে হামেইমিম বিমানঘাঁটি ও সোভিয়েত আমলের টার্টোস নৌ ঘাঁটি এখন এই বিদ্রোহীদের পাহারায় রয়েছে। এখন সেখান থেকে রুশ কোনো গাড়িবহর বের হতে হলেও খাকি পোশাক পরিহিতি হায়াত তাহরির আল–শাম (এইচটিএস) বিদ্রোহীদের পাহারার মধ্য দিতে যেতে হয়।

নাম প্রকাশ না করে এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘তাদের কাউকে এখন বের হতে হলে আমাদের জানাতে হয়।’

মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় সামরিক সংযোগ রাখতে রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এসব ঘাঁটির ভবিষ্যৎ এখন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল–শারার হাতে। তিনি এখন বাশারের আমলে ৪৯ বছরের ইজারা দেওয়া এসব ঘাঁটির চুক্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে চান। তিনি এতে আরও নতুন শর্ত যুক্ত করতে চান। তবে পুরোপুরিভাবে রাশিয়ার এসব ঘাঁটি বন্ধ করে দিতে চান না। এর বিনিময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে কূটনৈতিক সমর্থন এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে চান।

গত বছরের ডিসেম্বরে বাশার সরকারের পতন হয়। বাশার হামেইমিম ঘাঁটি দিয়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান। একসময় ক্রমাগত রুশ বোমাবর্ষণের লক্ষ্যে পরিণত হওয়া সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতারা এখন মস্কোর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স সিরিয়া ও রাশিয়ার আটজন কূটনীতিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছেন। এসব সূত্র শারার সঙ্গে পুতিনের বিশেষ দূতের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সম্পর্কে জানিয়েছে। নাম প্রকাশ না করে এসব সূত্র বলছে, শত্রুতা পাশে সরিয়ে রাখলে দুই পক্ষেরই লাভ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সিরিয়ার ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলেও এখনো ২ কোটি ৩০ লাখ জনগোষ্ঠীর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির বাণিজ্য করা কঠিন। কিন্তু রাশিয়ার অস্ত্র, জ্বালানি এবং গম সরবরাহ একটি জীবনরেখা হতে পারে। দামেস্কভিত্তিক একজন কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেছেন, দেশটির নেতারা আগের শত্রুদের সঙ্গেও শান্তি স্থাপন করতে ইচ্ছুক।

ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের আনা বোর্শচেভস্কায়া বলেন, সিরিয়াকে মস্কোর এখনো কিছু দেওয়ার আছে। তা এতটাই শক্তিশালী যে উপেক্ষা করার মতো নয়। রাশিয়ার জন্য দামেস্কে একটি সরকার দরকার যে তাদের স্বার্থ নিশ্চিত করবে। তাতেই তারা ওই সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে সম্মত হবে।

জাতিসংঘের সহায়তাকারী একটি সূত্র বলছে, নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর সিরিয়ায় এখনো খাদ্যশস্য রপ্তানি করেনি রাশিয়া।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে সিরিয়ার প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তিনি মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে চান। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, বাশার সরকারের পর সিরিয়ার জন্য ইরান বা রাশিয়ান প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। মার্কিন মিত্র ইসরায়েল চায়, রাশিয়া তুরস্কের প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে সিরিয়ায় থাকুক।

দুটি সূত্র জানায়, গত ২৯ জানুয়ারি দামেস্কে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাশারের অধীনে রাশিয়ার সঙ্গে  ঋণচুক্তি বাতিলের দাবি জানান শারা। যুদ্ধের আগে সিরিয়া মূলত বৈদেশিক ঋণমুক্ত ছিল। বর্তমানে তাদের ২০ থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়ার কাছে ঋণের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভের সঙ্গে তিন ঘণ্টার সাক্ষাতের সময়, সিরিয়ার কর্মকর্তারা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছিলেন। তা হচ্ছে বাশারের সিরিয়ায় প্রত্যাবর্তন। তবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সেটি বড় কোনো বাধা নয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। রাশিয়া বাশারকে ফেরত দিতে রাজি হবে না। রাশিয়ার কাছ থেকে বাশারকে এখনো ফেরত চাওয়াও হয়নি বলে রাশিয়ার একটি সূত্র জানিয়েছে। শারার পক্ষ থেকে মস্কোতে বাশারের জমা করা সিরিয়ার তহবিল ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভের নেতৃত্বে রাশিয়ান প্রতিনিধিদল এ ধরনের তহবিলের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চিকিৎসা ছাড়া মায়ের কোলে ফিরল সেই শিশু

বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলার তীরে উদ্ধার হওয়া পরিচয়হীন সেই নবজাতক ফিরেছে আপন ঠিকানায়। বাবার কোলে চড়ে গত রোববার রাতে (ঈদের আগের দিন) ঢাকা থেকে বাগেরহাটে মায়ের কোলে পৌঁছায়। শিশুটি এখন মায়ের কাছে রয়েছে। তবে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় শিশুটিকে বাড়ি ফিরতে হয়।

শিশুটির বাবা বাগেরহাট শহরে ফুটপাথের চা দোকানি গণেশ শ্যাম আজ বুধবার বিকেলে সমকালকে বলেন, গত রোববার দুপুরে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে রিলিজ দেয়। ওই রাতে তিনি ও তার শাশুড়ি সুমি দাস বাসে শিশুটিকে নিয়ে বাগেরহাটের বাসায় পৌঁছান।

রিলিজ দেওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে গণেশ জানান, শিশুটির পিঠের টিউমার নিরসনে অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু, একমাস বয়স হওয়ার আগে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। যেহেতু শিশুর বয়স এক সপ্তাহ হয়েছে। তাই, আরও তিন সপ্তাহ পর ঢামেকে ভর্তির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।

শিশুটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বাবা গণেশ বলেন, পিঠের টিউমার থেকে পানি বের হচ্ছে। বাগেরহাটের স্থানীয় চিকিৎসকদের চিকিৎসা নিতে যোগাযোগ করছি। কিন্তু, ঈদের ছুটি হওয়ায় কোনো চিকিৎসক পাচ্ছেন না। এজন্য আগামী শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার দিকে নগরীর সংলগ্ন কীর্তণখোলার তীরে ত্রিশ গোডাউন এলাকায় পরিত্যক্ত বাথরুমে অজ্ঞাত নবজাতক উদ্ধার হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ফুচকা বিক্রেতা পারভীন বেগম শিশুটিকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যান। গত ২৮ মার্চ শিশুটির অভিভাবকের সন্ধান পাওয়া যায়। তার আগের দিন (২৭ মার্চ) উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর ও শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে শিশুটিকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

বাবা গণেশ দত্ত জানান, বরিশাল নগরীর সদর রোড মোখলেসুর রহমান ক্লিনিকে ২১ মার্চ স্ত্রী অন্তরা দাস সিজারের মাধ্যমে শিশুটির জন্ম দেন। এটি তাদের প্রথম সন্তান। জন্মগতভাবেই পিঠের মেরুদণ্ড টিউমার ধরা পড়ে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওইদিনই নবজাতককে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলো। ব্যয়বহুল চিকিৎসা ও পুরো সুস্থ্য না হওয়ার আশঙ্কায় পরদিন ২২ মার্চ দুপুরে ওয়ার্ডে বসেই শিশুটিকে এক রিক্সাচালকের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর তাদের আর কিছু জানা নেই।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউর মুনীর জানান, শিশুটির পিঠে মেরদণ্ডের টিসু থেকে টিউমারের উৎপত্তি হয়েছে। এটি পুরোপুরি ভাল হওয়ার সম্ভাবনা কম। চিকিৎসাও অনেক ব্যয়বহুল। তিনি জানান, শিশুটি দত্তক নিতে অনেকে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। শারীরিক অবস্থা দেখে ফিরে যান।

বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, শিশুটির চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এজন্য কেউ সাহায্যে করতে চাইলে তার মুঠোফোন ০১৭১৫-৫৪৫১৪৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ