গবেষণা ও বিদেশে উচ্চশিক্ষায় সহায়তা করে ঢাবির এই সংগঠন
Published: 2nd, March 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাদেকের উদ্যোগে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ (ডিইউআরএস)। তরুণদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা, গবেষণাভীতি দূর করা, গবেষণামুখী ক্যারিয়ারের দিকে ধাবিত করা ডিইউআরএসের অন্যতম লক্ষ্য। লক্ষ্য পূরণে নানামাত্রিক কার্যক্রম তাঁরা পরিচালনা করেন। সেসব কার্যক্রম সম্পর্কে একটা ধারণা দিলেন সংসদের সভাপতি মো.
শিক্ষার্থীভেদে গবেষণা সংসদের আয়োজন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য আছে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ সামিট, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট রিসার্চ কনফারেন্স ও স্নাতক গবেষণা আড্ডা। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ ফেলোশিপও দেয় ডিইউআরএস। আছে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করার সুযোগ। থিসিস, গবেষণা মনোগ্রাফ ও প্রস্তাবনা তৈরির বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয় এই সংগঠন। ২০২০ সালে সংগঠনটি প্রথমবারের মতো আয়োজন করে ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট রিসার্চ কনফারেন্স, ২০২৩ সালে ফার্স্ট আন্ডারগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ সামিট। ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর ‘আন্ডারগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ ডে’ পালন করে তারা। নিয়মিত আয়োজন হিসেবে মিট দ্য রিসার্চার সেশন, দেশ-বিদেশে গবেষণাভ্রমণ ও গবেষণা মেলা তো আছেই।
উচ্চশিক্ষার জন্য এই সংগঠনে আছে ‘স্কলারশিপ অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন উইং’। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের প্রাক্তন সদস্যরা তাঁদের অভিজ্ঞতার গল্প শোনান। এ সম্পর্কে মো. ফাহিম হাসান বলেন, ‘আমাদের গবেষণা সংসদের অনেক সদস্য ও নির্বাহী ইতিমধ্যে উচ্চশিক্ষা নিতে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দেশে নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন বা করেছেন। মূলত তাঁরাই এখানে সাফল্যের গল্প শোনান। এই উইংয়ের নিজস্ব ডেটাবেজ আছে। একজন শিক্ষার্থীকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কী কী করতে হবে, কীভাবে বৃত্তি পাবে—বিস্তারিত দিকনির্দেশনা এতে রয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের পাঁচ শতাধিক সদস্য এখন পর্যন্ত বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আরও কয়েক হাজার। সারা দেশে এই ইতিবাচকতার জোয়ার ছড়িয়ে দিতে প্রায় ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সংসদ তৈরি করেছেন ডিইউআরএসের সদস্যরা।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে না উপসাগরীয় দেশগুলো
ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানকে নিজেদের বিমানবন্দর ও আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে না সৌদি আরব ও উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশ। দেশগুলো এরই মধ্যে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত রোববার (৩০ মার্চ) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানে বোমা হামলা চালানোর ঘোষণার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েত এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বলে দিয়েছে, ইরানে হামলা চালানোর জন্য তারা নিজেদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না। ইরানে হামলা চালানোর সঙ্গে জড়িত কোনো মার্কিন উড়োজাহাজ এসব দেশ থেকে জ্বালানিও নিতে পারবে না। এমনকি হামলাসংশ্লিষ্ট উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানকে নিজেদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে (এমইই) এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা (উপসাগরীয় অঞ্চলের নেতারা) এতে জড়াতে চাইছেন না।’
উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে না দেওয়াটা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি বড় ধাক্কা। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানের সহায়তাপুষ্ট ইয়েমেনের হুতিদের ওপর ব্যাপক বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে আলোচনায় বাধ্য করতেই ট্রাম্প প্রশাসন তা করেছে।
উপসাগরীয় অঞ্চলের তেলসমৃদ্ধ মিত্রদেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হামলায় সহযোগিতা না করাটা ইরানকে সাহস জোগাবে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে দর-কষাকষিতে তেহরানকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমইইকে বলেন, হুতিদের ওপর হামলা চালাতে উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করেছে। দেশগুলোর নাম তিনি প্রকাশ করেননি।
হুতিদের ওপর হামলায় সহায়তা পাওয়া উপসাগরীয় মিত্রদের কাছ থেকে ইরানের বেলায়ও একই ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে দেশগুলো জরুরি উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করবে, এমন ধারণা পোষণ করেছিল ওয়াশিংটন।
ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ তৈরিতে’ উপসাগরীয় দেশগুলোর সহায়তা কামনা করছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এ জন্য সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক যোগাযোগও শুরু করেছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গত মার্চে আমিরাত ও সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠক করেছেন।
এই বৈঠকের পরপরই কাতার ও সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে এসব অনুমতি আটকে রাখা হয়েছিল। কাতার এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন কেনার অনুমতি পেয়েছে। সৌদি আরব এমন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার অনুমতি পেয়েছে, যা উড়োজাহাজ থেকে ভূমিতে ছোড়া রকেট প্রতিহত করতে পারবে।
গত সোমবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মে মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরব সফরের পরিকল্পনা করছেন। একই সফরে উপসাগরীয় অঞ্চলের আরও কয়েকটি দেশেও সফর করতে পারেন তিনি।
দিয়েগো গার্সিয়ায় মনোযোগ যুক্তরাষ্ট্রেরইসরায়েলে ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে জর্ডান ও উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যুদ্ধবিমান ও সামরিক মালবাহী উড়োজাহাজের উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফ্লাইট চলাচলের হিসাব রাখে এমন একটি উন্মুক্ত সূত্রের তথ্যমতে, উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মালবাহী উড়োজাহাজের চলাচল আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এটা সর্বোচ্চ।
কিন্তু উপসাগরীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার পর ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়ায় নিজেদের সামরিক ঘাঁটিতে বি-২ বোমারু বিমানের সংখ্যা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
উপসাগরীয় বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশে হামলা চালানোর জন্য দিয়েগো গার্সিয়া এর আগেও ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কৌশলগত এ দ্বীপটি উপসাগরীয় অঞ্চলের নিজেদের ঘাঁটিগুলোর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে ওয়াশিংটন। ১৯৯০–এর দশকে ইরাকে হামলা চালানোর সময় নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সৌদি আরব। তখন চাগোস দ্বীপপুঞ্জের দিয়েগো গার্সিয়ার নিজেদের ঘাঁটি ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
স্যাটেলাইট তথ্য সরবরাহকারী উন্মুক্ত সোর্স প্ল্যানেট ল্যাব চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে জানিয়েছে, দিয়েগো গার্সিয়ার ঘাঁটিতে তিনটি বি-২ বোমারু বিমান দেখা গেছে।
ইরান থেকে চাগোস দ্বীপপুঞ্জে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির দূরত্ব ৫ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের মতো। বি-২ বোমারু বিমান ট্যাংক ভরে জ্বালানি নিলে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার যেতে পারে। বহন করতে পারে ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমা। এসব বোমা ‘বাংকার দুমড়েমুচড়ে’ দিতে সক্ষম। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এসব বোমা দিয়ে ইরানের ভূপৃষ্ঠের গভীরে আঘাত হানা যাবে।