বিএনপির সভায় গিয়ে আহত ঢাবির সাবেক শিক্ষকের মৃত্যু
Published: 2nd, March 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সাবেক ডিন ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক (৭৭) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি বিএনপির বর্ধিত সভায় গিয়ে আহত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
রবিবার (২ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হল প্রাঙ্গণে বিএনপির বর্ধিত সভাস্থলে গর্তে পড়ে আহত হন তিনি। পরে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন শাহিদা রফিক। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে পরবর্তীতে তাকে ধানমন্ডি ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরো পড়ুন:
‘দায় ও দরদের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করবে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’
ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পরিচিতি সভা
তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রবীণ রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ এবং হাঁট-চলা করতে পারেন না বলে জানা গেছে।
অধ্যাপক শাহিদা রফিকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.
নেতৃবৃন্দ মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, অধ্যাপক শাহিদা রফিক এমন সময় মৃত্যুবরণ করলেন, যখন তার স্বামী সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া গুরুতর অসুস্থ। আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন মরহুমা অধ্যাপক শাহিদা রফিককে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন এবং তার স্বামী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে আরোগ্য দান করেন।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নিরাপদ থাকুক বনের প্রাণীরা
একটি অসুস্থ বুনো পুরুষ হাতিকে পাওয়া গেল রাঙামাটির লংগদু এলাকায়। হাতিটির পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ভালো করে চলাফেরা করতে পারছিল না। এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। খাবারের অভাবে হাতিটি মারা যাওয়ার উপক্রম। এ রকম এক অবস্থায় বন অধিদপ্তর আর স্থানীয় হাতি সংরক্ষণ দল হাতিটির চিকিৎসায় এগিয়ে এল। তাকে অজ্ঞান করে চিকিৎসা দিয়ে বনে আবার ছেড়ে দেওয়া হলো। সুস্থ হয়ে গত দুই মাসে হাতিটি বনের ভেতর স্বাভাবিক চলাফেরা করছে। মানুষের আঘাতে হাতিসহ অন্য বুনো প্রাণীদের এ রকম অনেক ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। বেশির ভাগ সময়ই আহত বুনো প্রাণীরা মারা পড়ে। লংগদুর হাতিটির জীবন ফিরে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
এ দেশে হাতির বসবাস উপযোগী বন নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ এলাকায় হাতি–মানুষের দ্বন্দ্ব হচ্ছে। গত এক যুগে মারা গেছে শতাধিক হাতি। হাতি মারা পড়লে খবরটি পাওয়া যায়; কিন্তু অন্য প্রাণীর খবর পাওয়া বিরল। ২০১৬ সালে এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, আমাদের বনে হাতি এখন টিকে আছে মাত্র ২৬৮টি। গত দশ বছরে কত হাতি মারা গেল সেই তথ্য জানা আছে; কিন্তু কী পরিমাণ হাতির বাচ্চা আমরা পেয়েছি সেই তথ্যটি অজানা। কেবল হাতি গণনা করলেই তা আবার জানা যাবে।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ টাঙ্গুয়ার হাওরে গেলাম পাখিশুমারি করতে। ১০ হাজার হেক্টরের এই হাওরটি পৃথিবীবাসীর কাছে বুনো হাঁসের স্বর্গ নামে পরিচিত। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে এই হাওরে লক্ষাধিক বুনো হাঁস দেখা যায়। এ বছর পাখিগণনায় পাওয়া গেল তার উল্টো ফল। পাখি দেখা গেল মাত্র ২২ হাজার। এত পাখি কমে যাওয়ার বড় কারণ হাওরটি ভালো নেই। চায়না জাল দিয়ে সারা হাওরে অবৈধ উপায়ে মাছ ধরা আর সঙ্গে পাখি শিকার। এ কারণে কমে গেছে পাখি। তাই এবার শীতের পাখিশুমারিতে যেকোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম পাখি পাওয়া গেছে।
এ বছরের প্রথম দিকে সোনাদিয়ায় গিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বিরল পাখি চামুচঠুঠো বাটানের দেখা পাইনি। তবে জানুয়ারির শেষ ভাগে মহেশখালীর সোনাদিয়ায় দেখা গেছে তিনটি আর দুটি পাখির দেখা মিলেছে সন্দ্বীপের কাছাকাছি গাংগুরিয়া চরে। সোনাদিয়া ছিল এই পাখিটির সবচেয়ে ভালো আবাস। আস্তে আস্তে এই দ্বীপটিও পাখিটির অনুপোযোগী হয়ে গেল।
গত দুই বছর আরেকটি পাখির গবেষণাকাজে নিয়মিত সুন্দরবন যাচ্ছি। এ সময়ের মধ্যে সুন্দরবনের ৩-৪টি খালে সুন্দরী হাঁস নামের এই পাখির উপস্থিতি পেয়েছি মাত্র ৬-৮টি। বাসার সন্ধান মিলেছে ২টি। এ বনে শতাধিক সুন্দরী হাঁস টিকে আছে বলে ধারণা করা হয়, যা গোটা পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশ। কিন্তু এখন এর অবস্থাও ভালো না। আমরা আসলে জানি না পাখিটি কী কারণে এত দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘দ্য লিভিং প্লানেট’ রিপোর্টে বলা হয়েছে, গোটা পৃথিবীর ৭৩ শতাংশ বুনো প্রাণীর সংখ্যা কমেছে। তারা বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমাদের দেশে বন্য প্রাণীর সংখ্যা ১১০০–এর কাছাকাছি। এত প্রজাতির বন্য প্রাণীর জন্য বন আছে আছে মাত্র ২.৫৭ মিলিয়ন হেক্টর। আমাদের দেশের মোট বুনো প্রাণীর প্রায় ২৪ শতাংশ বিপদগ্রস্ত অবস্থায় আছে। আর ৩১ প্রজাতির প্রাণী চিরতরে এ দেশ থেকে হারিয়ে গেছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল সুন্দরবন দিবস। সম্প্রতি সুন্দবনের বাঘ গণনার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের জাতীয় প্রাণী বাঘের সংখ্যা বেড়ে এখন ১২৫টি হয়েছে। বিপন্ন একটি প্রাণীর সংখ্যা বনে বেড়েছে, যা নিশ্চয় ভালো খবর। এক বাঘ ছাড়া অন্য কোনো বুনো প্রাণীর বেড়ে যাওয়ার খবর আমরা শুনি না। বাঘ গবেষণায় সরকার বেশ ভালো কাজ করেছে। বন রক্ষার পাশাপাশি বাঘের নিরাপদ আবাস তৈরি করা হয়েছে।
আজ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে অর্থায়ন, মানুষ ও ধরিত্রীর উন্নয়ন’। বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণে সরকারের ভূমিকা বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারলেই নিরাপদ বন হবে সব প্রাণীর।