উপদেষ্টার নির্দেশ ছিল প্রত্যাহারের, চকরিয়ার ওসিকে করা হলো বদলি
Published: 2nd, March 2025 GMT
সাংবাদিককে তুলে নিয়ে নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ওসি মনজুর কাদের ভুঁইয়াকে বদলি করা হয়েছে। গত শনিবার রাত ১০টার দিকে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) শাকিল আহমেদের সই করা আদেশে তাকে উখিয়া থানায় বদলি করা হয়। যদিও অভিযোগ পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাকে ‘তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের নির্দেশ’ দিয়েছিলেন।
এর আগে ২৮ জানুয়ারি ওসি মনজুরের বিরুদ্ধে মামলা করেন মনছুর আলম নামে এক সাংবাদিক। এতে তিনি অভিযোগ করে– সংবাদ প্রকাশের জেরে ওই সাংবাদিককে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে আরও তিনটি মামলা হয়েছে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর চকরিয়া থানায় যোগ দেওয়া এ ওসির বিরুদ্ধে।
এরপর শনিবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় ওসি মনজুরের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
এরপর চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশকে কল করে ওসি মনজুরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ওই ফোন কলে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘ওসি, চকরিয়া থানা। জানো এর ব্যাপারে? তাকে উইথড্র করো। আজকেই উইথড্র করো।’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাকিল আহমেদ জানান, চকরিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্ত করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট উপদ ষ ট মনজ র চকর য়
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার তাৎপর্য, ইতিহাস ও উদ্দেশ্য
বছরের বিভিন্ন সময়ে রোজা রাখলেও কেবল রমজান মাসের রোজা পালন করা ফরজ। রোজা কেবল উম্মতে মুহাম্মাদ জন্য ফরজ নয়, বরং তা অতীত নবী-রাসুলদের উম্মতদের জন্যও ছিল। কিন্তু রোজার সময়, পদ্ধতি ও ধারা ভিন্ন ছিল।
রোজা ফারসি শব্দ, অর্থ উপবাস থাকা। কোরআন-হাদিসে এটিকে সিয়াম বলে। রোজা শব্দটিই প্রচলিত। সাওম বা সিয়াম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া, পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে সাওম, সিয়াম বা রোজা বলে।
কোরআন যে আয়াতটির মাধ্যমে রোজা ফরজ হয়, সেটিতেই ইঙ্গিত রয়েছে যে পূর্ববর্তী জাতি-গোষ্ঠীর জন্য রোজা ফরজ ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের জন্য সিয়াম (রোজা) বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।
আদম (আ.)-এর সময় আইয়ামে বিজ বা প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতে হতো। ‘আইয়ামে বিজ’ অর্থ শুভ্রতার দিনসমূহ। আদম ও হাওয়া (আ.) জান্নাতে থাকাকালে নিষিদ্ধ ফল খেয়ে ফেলায় তাঁদের গায়ের রং কালো হয়ে যায়। তাই ফেরেশতারা তাঁদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তাঁরাও তওবা করেন। ফলে তাঁদের গায়ের রং সাদা ও সুন্দর হয়। এরপর আল্লাহ আদম (আ.) ও তাঁর উম্মতকে প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা রাখার নির্দেশ দেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) আইয়ামে বিজের সিয়াম পালন করতেন।’ (নাসায়ি)
আরও পড়ুনরমজানে ছয়টি অভ্যাস১৪ মার্চ ২০২৪নুহ (আ.)-এর যুগেও রোজা পালন করা হতো। মহানবী (সা.) বলেন, ‘নুহ (আ.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা ছাড়া গোটা বছর রোজা রাখতেন।’ (ইবনে মাজাহ)। মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘নুহ (আ.)-এর যুগ থেকে প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা ছিল।’ (ইবনে কাসির)
মুসা (আ.)-এর উম্মতের জন্য আশুরার রোজা ফরজ ছিল। মহানবী (সা.) মদিনায় আসার পর ইহুদিদের আশুরার রোজা পালন করতে দেখে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তারা বলল, ‘এটি এক শুভ দিন। এই দিনে আল্লাহ বনি ইসরাইলকে তাদের শত্রু থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। ফলে মুসা (আ.) আল্লাহর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ওই দিনে রোজা রাখেন।’ এ কথা শুনে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তাহলে আমি হজরত মুসা (আ.)-এর অনুসরণে তোমাদের তুলনায় বেশি হকদার।’ (বুখারি)। এরপর মহানবী (সা.) আশুরার রোজা রাখেন এবং সাহাবিদের রোজা রাখার নির্দেশ দেন। এরপর রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা নফলে পরিণত হয়।
দাউদ (আ.) বছরে ছয় মাস রোজা রাখতেন আর ছয় মাস রোজা রাখতেন না। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোজা হলো দাউদ (আ.)-এর রোজা। তিনি এক দিন রোজা রাখতেন এবং এক দিন বিনা রোজায় অতিবাহিত করতেন।’
আরও পড়ুনঅবাধ্যতার শাস্তি১৩ মার্চ ২০২৪ঈসা (আ.)-এর উম্মতের সময়েও রোজার প্রচলন ছিল। ঈসা (আ.)-এর যখন জন্ম হয়, তখন লোকজন তাঁর মা মরিয়মকে তাঁর জন্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমি করুণাময়ের উদ্দেশ্যে রোজা পালনের মানত করেছি। তাই আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলব না।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ২৬)।
ঈসা (আ.) জঙ্গলে ৪০ দিন রোজা রেখেছিলেন। একবার ঈসা (আ.)-এর উম্মতরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আমরা পাপ আত্মাকে কীভাবে বের করব?’ তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘দোয়া ও রোজা ছাড়া তা অন্য কোনো উপায়ে বের হতে পারে না।’
জাহিলি যুগের লোকজন আশুরার রোজা পালন করত। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘অন্ধকার যুগের লোকজন আশুরার রোজা পালন করত। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে মহানবী (সা.) নিজে আশুরার রোজা পালন করেছেন। এরপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হয়, তখন মহানবী (সা.) বলেন, ‘আশুরা দিনে যে চায় সে ওই দিন রোজা রাখবে এবং যে চায় সে ওই দিন রোজা পরিহার করবে।’ (বুখারি)
আরও পড়ুনএকজন রোজাদারের রোজনামচা কেমন হতে পারে১৩ মার্চ ২০২৪রমজানের রোজা পালন ফরজ করে আল্লাহ বলেন, রমজান মাস, এতে মানুষের পথপ্রদর্শক ও সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মীমাংসারূপে কোরান অবতীর্ণ হয়েছিল। অতএব, তোমাদের মধ্যে য কেউ এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে অবশ্যই রোজা রাখে। আর যে রোগী বা মুসাফির তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না, যাতে তোমরা নির্ধারিত দিন পূর্ণ করতে পার ও তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করতে পার, আর তোমরা কৃতজ্ঞ হলেও হতে পার। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
আয়াতটি দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে অবতীর্ণ হয়। তারপর ফরজ রোজা চালু হয়।
আরও পড়ুনসুরা নমলে হজরত সোলায়মান (আ.) ও রানি বিলকিসের ঘটনা১২ মার্চ ২০২৪