স্বৈরাচারী শাসনামলের নৃশংসতা নথিভুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার
Published: 2nd, March 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত সব নৃশংসতার সঠিক নথিভুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
এর মধ্যে শাপলা চত্বরে আন্দোলনকারীদের ওপর দমনপীড়ন, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের নিষ্ঠুরতা এবং বছরের পর বছর ধরে ঘটে যাওয়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই দেশে জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত সকল নৃশংসতার যথাযথ নথিভুক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যদি এসব ঘটনার যথাযথ নথিভুক্তি না করা হয়, তাহলে সঠিক তথ্য জানা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হবে।”
আরো পড়ুন:
ধৈর্য ও সংযমের মাধ্যমে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেন যারা
রবিবার (২ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস এবং জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তরের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ বলেন।
আবাসিক সমন্বয়কারী লুইস বলেন, “জনগণের ওপর ঘটে যাওয়া নৃশংসতার ঘটনাসমূহ যথাযথ অধিভুক্ত করতে জাতিসংঘ প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এটি এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ এবং সত্য প্রতিষ্ঠার একটি প্রক্রিয়া।”
২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়ে অনুসন্ধানীমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানায়।
তিনি বলেন, “আমরা অত্যন্ত খুশি যে জাতিসংঘ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এটি প্রকাশ করা সহজ কাজ ছিল না, তবে যথা সময়ে এটি তারা প্রকাশ করেছে।”
আবাসিক সমন্বয়কারী লুইস প্রধান উপদেষ্টাকে জানান যে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফোলকার তুর্ক আগামী ৫ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৫তম অধিবেশনে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ব্রিফ করবেন।
আবাসিক সমন্বয়কারী আশা প্রকাশ করেন যে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আসন্ন বাংলাদেশ সফরকালে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে পুনরায় বৈশ্বিক মনোযোগে আনবেন, বিশেষ করে যখন এক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা হ্রাস পাচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমরা আর্থিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ার বিষয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।”
তিনি বলেন, “প্রতি মাসে শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হয়, যা অন্যান্য মৌলিক চাহিদার সঙ্গে যুক্ত।”
জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস আগামী ১৩ থেকে ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন।
সূত্র: বাসস
ঢাকা/এসবি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প-জেলেনস্কি বাকবিতণ্ডা: বিশ্বনেতারা কে কোন পক্ষে
হোয়াইট হাউসে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠকটি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় আর বিশৃঙ্খলার মধ্যে শেষ হয়। এ ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। খবর রয়টার্স
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার পরই এক্স পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, ধন্যবাদ আমেরিকা, ধন্যবাদ আমাদের সমর্থন করার জন্য, ধন্যবাদ আমাদের দেখে রাখার জন্য। ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস এবং জনগণের প্রতি। ইউক্রেনের শান্তি দরকার। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক্স পোস্টে বলেন, রাশিয়া অবৈধ এবং অন্যায়ভাবে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেন সাহস এবং ধৈর্যের সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। তাদের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই লড়াই আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কানাডা সব সময় তার সঙ্গে রয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, ইউক্রেনের জনগণের থেকে আর কেউ অধিক শান্তি চাইতে পারে না। এজন্য আমরা একসঙ্গে ন্যায় সংগত শান্তির পথ খুঁজতে যুক্ত হয়েছি। এক্ষেত্রে ইউক্রেন জার্মান এবং ইউরোপের ওপর নির্ভর করতে পারে।
পর্তুগালে সফররত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়ার ইউক্রেনের ওপর হামলা চালিয়েছে, ফলে দেশটির জনগণ ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। তিন বছর আগে ইউক্রেনকে সহযোগিতা করা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আমাদের জন্য কঠিন ছিল। যা এখনও চলছে। সুতরাং আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা এবং জাপানসহ যারা ইউক্রেনকে সহযোগিতা করেছে তাদেরকে অবশ্যই সস্মান করতে হবে। কারণ এসব দেশ ইউক্রেনের স্বাধীনতা, তাদের সম্মান এবং সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য লড়াই করছে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, পশ্চিমাদের প্রতিটি বিভাজন আমাদের সবাইকে দুর্বল করে এবং তাদের সুবিধা বাড়ায়, যারা আমাদের সভ্যতার পতন দেখতে চায়। ক্ষমতা বা প্রভাবের নয় বরং সেই নীতিগুলোর— বিশেষ করে স্বাধীনতার। যার ভিত্তিতে আমাদের সভ্যতা গড়ে উঠেছে। এই বিভাজন কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।
তিনি আরও বলেন, এই সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং মিত্রদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করা উচিত। ইউক্রেনে নিয়ে যে সংকট শুরু হয়েছে, তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। এ নিয়ে ইতালি দ্রুতই প্রস্তাব রাখবে।’
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মুখপাত্র বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুক্তরাজ্য সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত কিয়েভের জন্য শান্তির পথ খুঁজে বের করতে আমরা পাশে রয়েছি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, আমরা যতদিন প্রয়োজন, ততদিন ইউক্রেনের পাশে থাকব। কারণ এটি একটি গণতান্ত্রিক জাতির লড়াই, যা একটি স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে লড়ছে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, শক্তিশালী নেতারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন, দুর্বলরা যুদ্ধ বাঁধান। আজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তির জন্য সাহসী অবস্থান নিয়েছেন। ধন্যবাদ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোককে রাসমুসেন বলেন, এটি ইউক্রেনের জন্য কঠিন আঘাত। বন্ধুদের মধ্যে দৃঢ় আলোচনা হতে পারে, কিন্তু যখন তা ক্যামেরার সামনে ঘটে, তখন একমাত্র বিজয়ী হয় ক্রেমলিন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন জেলেনস্কিকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, আপনার মর্যাদা ইউক্রেনীয় জনগণের সাহসিকতার প্রতিফলন। আপনি কখনো একা নন, প্রিয় প্রেসিডেন্ট।
মলদোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু বলেন, সত্যটা খুব সহজ। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়েছে। ইউক্রেন তার স্বাধীনতা রক্ষা করছে এবং আমাদেরও। আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, প্রিয় জেলেনস্কি, প্রিয় ইউক্রেনীয় বন্ধুরা, আপনারা একা নন।
বিশ্বনেতাদের এই প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দেয় যে, ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন এখনো সুদৃঢ়, যদিও হোয়াইট হাউসের সাম্প্রতিক ঘটনা নতুন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে।