রমজানের শুরুতেই কেন বুক করবেন ঈদে বাড়ি ফেরার ফ্লাইট
Published: 2nd, March 2025 GMT
ঈদ মানেই বাড়ি ফেরার আনন্দ। যে যেখানেই থাকুক, কর্মস্থলের শত ব্যস্ততা ফেলে শিকড়ের টানে বাড়ি ফেরেন। কারণ, এই উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করেই পরিবারের সব সদস্য মিলিত হন, একসঙ্গে সময় কাটান। কিন্তু ঈদের সময়টায় যেহেতু সবারই একসঙ্গে থাকে বাড়ি ফেরার তাগিদ, তাই বাস বা ট্রেনের টিকিট পাওয়া এবং ঠিক সময়ে বাড়ি ফেরা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় দেখা যায়, ট্রাফিক জ্যাম থেকে শুরু করে পথের নানা ঝক্কি-ঝামেলার কারণে ঈদের দিনেও বাড়ি পৌঁছানো সম্ভব হয় না। আবার পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই ছুটি শেষ। ঈদের আনন্দ যেন পথেই মাটি! এ ধরনের সমস্যা এড়াতে আগেই করে ফেলতে পারেন টিকিট বুকিং। কারণ, সময় যত গড়ায়, টিকিটের দামও তত বাড়তে থাকে। রমজানের শুরুতে ফ্লাইটের টিকিট কাটলে কী কী সুবিধা পাবেন, জানা যাক।
কম খরচে টিকিট কেনার সুযোগ
এয়ারলাইনসগুলো সাধারণত ‘ডিমান্ড-বেইসড’ প্রাইসিং মডেল অনুসরণ করে, যেখানে ফ্লাইটের টিকিটের মূল্য নির্ধারিত হয় চাহিদার ভিত্তিতে। অর্থাৎ কোনো রুটে যখন টিকিটের চাহিদা কম থাকে, তখন এয়ারলাইনসগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে টিকিট বিক্রি করে। তবে চাহিদা বাড়তে শুরু করলে, বিশেষ করে ঈদের সময়, টিকিটের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়। রমজানের প্রথম দিকে সাধারণত আকাশপথে ভ্রমণের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকে। এ সময় যাঁরা আগেভাগে টিকিট বুক করেন, তাঁরা বেশ কম দামে টিকিট পেতে পারেন। বিশেষ করে প্রাথমিক বুকিং পর্বে এয়ারলাইনসগুলো বিভিন্ন রকমের ডিসকাউন্ট অফার করে, যা শেষ মুহূর্তে আর পাওয়া যায় না। অন্যদিকে রমজানের শেষের দিকে এবং ঈদের আগের সপ্তাহে টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে পৌঁছায়, ফলে টিকিটের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় দ্বিগুণ বা তিন গুণ পর্যন্ত। অনেক সময় শেষ মুহূর্তে আসন খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়, ফলে যাত্রীদের বাধ্য হয়ে ফার্স্ট ক্লাস বা বিজনেস ক্লাসের টিকিট কিনতে হয়, যা সাধারণ অর্থে অনেক ব্যয়বহুল। তাই যাঁরা বাজেটের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যে আকাশপথে ভ্রমণ করতে চান, তাঁরা বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির ওয়েবসাইটে গিয়ে আগেভাগেই করতে পারেন ঈদের টিকিট। এমনকি আগে টিকিট কেটে রেখে এর মূল্য পরেও পরিশোধ করতে পারেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন ‘বুক নাও, পে লেটার’ নামের এই ফিচার।
নিজের সুবিধা এবং পছন্দমতো ফ্লাইট ও আসন
শেষ মুহূর্তে টিকিট কাটলে সব সময় নিজের পছন্দসই ফ্লাইট বা আসন পাওয়া যায় না। ঈদের আগে ফ্লাইটের চাহিদা এতটাই বেড়ে যায় যে যাত্রীদের অপ্রত্যাশিত সময়ের ফ্লাইট নিতে বাধ্য হতে হয়, যা তাঁদের ব্যক্তিগত বা পেশাগত পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। বিশেষ করে, যাঁরা পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে চান, তাঁদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া শেষ মুহূর্তে বুকিং করলে ফ্লাইটের আসনের পছন্দসই বিকল্প না–ও থাকতে পারে। সাধারণত উইন্ডো সিট, এক্সট্রা লেগস্পেস কিংবা পছন্দসই কেবিন ক্লাস প্রথমেই বুক হয়ে যায়। ফলে অনেক সময় মাঝের সিট নিতে হয়, যা দীর্ঘ ভ্রমণে বেশ অস্বস্তিকর হতে পারে। আগেভাগে বুকিং করলে নিজের সুবিধামতো সিট বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে, যা যাত্রাকে করে তোলে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময়।
শেষ মুহূর্তের দুশ্চিন্তা কমে যায়
যাত্রার পরিকল্পনা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। ঈদের ঠিক আগের কয়েক দিন বিমানবন্দরগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় থাকে, ফ্লাইটে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয় এবং অনেক সময় ফ্লাইট বিলম্বিতও হয়। এসব দুশ্চিন্তা ও ঝামেলা এড়ানোর জন্য আগেভাগে টিকিট নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। টিকিট পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকলে যাত্রীরা প্রায়ই বিকল্প পরিবহনব্যবস্থার খোঁজ করেন, যা আবার সময় ও আর্থিক দিক থেকে ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় শেষ মুহূর্তে টিকিট না পেলে বাস বা ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা তুলনামূলক বেশি সময়সাপেক্ষ ও ক্লান্তিকর হতে পারে। আগেভাগে টিকিট বুক করলে এসব অনিশ্চয়তা দূর হয় এবং রমজানের শেষের দিনগুলো শান্তিতে উপভোগ করা যায়। তাড়াহুড়োর মধ্যে না থেকে নিশ্চিন্তে ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
ফ্লাইট বুকিংয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
অনলাইন টিকিট বুকিং করার সময় শুধু বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট বা ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবহার করুন। সাশ্রয়ীভাবে আকাশপথে যাতায়াত করতে চাইলে টিকিটের মূল্য তুলনা করে নেওয়া উচিত। বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির ওয়েবসাইটে গেলেই টিকিটের মূল্য দেখতে পাবেন। তবে অনেক ওয়েবসাইটেই প্রথমে সার্চ করলে যে খরচ দেখায়, টিকিট বুকিং করতে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন হিডেন চার্জ থাকে। ফলে খরচ অনেক বেড়ে যায়।
ফ্লাইট এক্সপার্টে এই ঝামেলা নেই। যেমন ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইটে টিকিট সিলেক্ট করলেই নিচে একসঙ্গে দেখতে পাবেন প্রতিটি এয়ারলাইনসের টিকিটের মূল্য। সব কটির মূল্য যাচাই করে এবং তুলনামূলক কম মূল্যে টিকিট কাটতে পারবেন। এ ছাড়া বেশ কিছু এয়ারলাইনস আগেভাগে বুকিং করলে বিশেষ ছাড় দেয়, সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রমজ ন র শ ফ ল ইট র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে না উপসাগরীয় দেশগুলো
ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানকে নিজেদের বিমানবন্দর ও আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে না সৌদি আরব ও উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশ। দেশগুলো এরই মধ্যে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত রোববার (৩০ মার্চ) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানে বোমা হামলা চালানোর ঘোষণার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েত এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বলে দিয়েছে, ইরানে হামলা চালানোর জন্য তারা নিজেদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না। ইরানে হামলা চালানোর সঙ্গে জড়িত কোনো মার্কিন উড়োজাহাজ এসব দেশ থেকে জ্বালানিও নিতে পারবে না। এমনকি হামলাসংশ্লিষ্ট উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানকে নিজেদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে (এমইই) এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা (উপসাগরীয় অঞ্চলের নেতারা) এতে জড়াতে চাইছেন না।’
উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে না দেওয়াটা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি বড় ধাক্কা। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানের সহায়তাপুষ্ট ইয়েমেনের হুতিদের ওপর ব্যাপক বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে আলোচনায় বাধ্য করতেই ট্রাম্প প্রশাসন তা করেছে।
উপসাগরীয় অঞ্চলের তেলসমৃদ্ধ মিত্রদেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হামলায় সহযোগিতা না করাটা ইরানকে সাহস জোগাবে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে দর-কষাকষিতে তেহরানকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমইইকে বলেন, হুতিদের ওপর হামলা চালাতে উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করেছে। দেশগুলোর নাম তিনি প্রকাশ করেননি।
হুতিদের ওপর হামলায় সহায়তা পাওয়া উপসাগরীয় মিত্রদের কাছ থেকে ইরানের বেলায়ও একই ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে দেশগুলো জরুরি উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করবে, এমন ধারণা পোষণ করেছিল ওয়াশিংটন।
ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ তৈরিতে’ উপসাগরীয় দেশগুলোর সহায়তা কামনা করছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এ জন্য সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক যোগাযোগও শুরু করেছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গত মার্চে আমিরাত ও সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠক করেছেন।
এই বৈঠকের পরপরই কাতার ও সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে এসব অনুমতি আটকে রাখা হয়েছিল। কাতার এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন কেনার অনুমতি পেয়েছে। সৌদি আরব এমন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার অনুমতি পেয়েছে, যা উড়োজাহাজ থেকে ভূমিতে ছোড়া রকেট প্রতিহত করতে পারবে।
গত সোমবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মে মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরব সফরের পরিকল্পনা করছেন। একই সফরে উপসাগরীয় অঞ্চলের আরও কয়েকটি দেশেও সফর করতে পারেন তিনি।
দিয়েগো গার্সিয়ায় মনোযোগ যুক্তরাষ্ট্রেরইসরায়েলে ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে জর্ডান ও উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যুদ্ধবিমান ও সামরিক মালবাহী উড়োজাহাজের উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফ্লাইট চলাচলের হিসাব রাখে এমন একটি উন্মুক্ত সূত্রের তথ্যমতে, উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মালবাহী উড়োজাহাজের চলাচল আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এটা সর্বোচ্চ।
কিন্তু উপসাগরীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার পর ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়ায় নিজেদের সামরিক ঘাঁটিতে বি-২ বোমারু বিমানের সংখ্যা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
উপসাগরীয় বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশে হামলা চালানোর জন্য দিয়েগো গার্সিয়া এর আগেও ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কৌশলগত এ দ্বীপটি উপসাগরীয় অঞ্চলের নিজেদের ঘাঁটিগুলোর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে ওয়াশিংটন। ১৯৯০–এর দশকে ইরাকে হামলা চালানোর সময় নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সৌদি আরব। তখন চাগোস দ্বীপপুঞ্জের দিয়েগো গার্সিয়ার নিজেদের ঘাঁটি ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
স্যাটেলাইট তথ্য সরবরাহকারী উন্মুক্ত সোর্স প্ল্যানেট ল্যাব চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে জানিয়েছে, দিয়েগো গার্সিয়ার ঘাঁটিতে তিনটি বি-২ বোমারু বিমান দেখা গেছে।
ইরান থেকে চাগোস দ্বীপপুঞ্জে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির দূরত্ব ৫ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের মতো। বি-২ বোমারু বিমান ট্যাংক ভরে জ্বালানি নিলে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার যেতে পারে। বহন করতে পারে ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমা। এসব বোমা ‘বাংকার দুমড়েমুচড়ে’ দিতে সক্ষম। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এসব বোমা দিয়ে ইরানের ভূপৃষ্ঠের গভীরে আঘাত হানা যাবে।