ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পণ্য বিক্রিতে একাধিকবার বাধা দিয়েছেন বিএনপির একজন নেতা ও তাঁর অনুসারীরা। এতে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ আছে। বিপাকে পড়েছেন সেখানকার নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

টিসিবি পণ্যের কয়েকজন ভোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো.

আনিস ও তাঁর অনুসারীরা টিসিবির পণ্য নিজেরা বিক্রির জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের এক নারী প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগ করেন। তিনি এতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যায়িত করে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়।

আজ রোববার সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের পারগেন্ডারিয়া এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে গতকাল শনিবার দুপুরে একই স্থানে বিএনপি নেতা আনিস ও তাঁর অনুসারীরা টিসিবির পণ্য বিক্রিতে বাধা দেন। এতে ডিলার বাধ্য হয়ে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ রাখেন।

টিসিবির পণ্যের ডিলার চন্দ্রপুরী স্টোরের পরিচালক সালাউদ্দিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল শনিবার আমরা টিসিবির পণ্য বিক্রি করছিলাম। এ সময় কিছু লোক নিজেদের বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মী পরিচয় দিয়ে আমাদের কাজে বাধা দেন। এ সময় সেখানে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের প্রতিনিধি রোকেয়া ম্যাডাম এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। তখন ওই ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। তাঁর ওপর চড়াও হন। অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা রোকেয়া ম্যাডামকে সেখান থেকে অন্যত্র নিয়ে যাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁরা বলেছেন, ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু আজ রোববারও পণ্য বিক্রি শুরু করতে গেলে ওই নেতা-কর্মীরা আবার বাধা দেন। বাধ্য হয়ে আমরা বিক্রি বন্ধ রেখেছি।’

কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রাশেদ খান বলেন, ‘টিসিবির অধীনে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য শুভাঢ্যা পারগেন্ডারিয়া এলাকায় দুজন ডিলারের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চলছিল। প্রতিজনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ কেজি চাল, ২ কেজি তেল ও ২ কেজি চিনি। গত শনিবার ডিলার পণ্য বিক্রি করার সময় একটি দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাঁকে পণ্য বিক্রিতে বাধা দেন। এ সময় সেখানে দায়িত্বে থাকা আমাদের কার্যালয়ের কার্যসহকারী রোকেয়া মাহমুদ প্রতিবাদ জানালে তাঁরা চড়াও হয়ে তাঁকে হুমকি-ধমকি দেন ও ভয়ভীতি দেখান। একপর্যায়ে তাঁকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা হয়। বিষয়টি তিনি আমাকে জানালে আমি তাঁকে সেখান থেকে চলে আসতে বলি। এ অবস্থায় ওই লোকদের হুমকির মুখে রোকেয়া পণ্য বিক্রি বন্ধ রেখে সেখান থেকে চলে আসেন।’ তিনি আরও বলেন, আজ রোববার পুনরায় পণ্য বিক্রি করতে গেলেও ওই ব্যক্তিরা ডিলারদের বাধা দেন। বাধার মুখে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ আছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা মো. আনিসের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। জানতে চাইলে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি নিপুণ রায় প্রথম আলোকে বলেন, টিসিবির পণ্য বিক্রি করবে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ডিলার। অন্য কারও টিসিবির পণ্য বিক্রি করার সুযোগ নেই। কোনো ব্যক্তি এটি করতে পারেন না। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় টিসিবির পণ্য কিনতে আসা গৃহকর্মী ছালেহা বেগমের (৫০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীডা অসুস্থ। কামকাইজ করতে পারে না। আমি মাইনষের বাড়িতে কাম কইরা কুনু রকম সংসারডা চালাইতাছি। আমার অবস্থা দেইখ্যা মেম্বার আমারে টিসিবির কার্ড দিছিল। ওই কার্ড দিয়া কম টেহায় জিনিসপাতি কিনতে পারতাম। আজ ‍টিসিবির মাল দিতাসে হুইনা এইহানে আইছি। আইয়া দেহি মাল বিক্রি বন্ধ আছে। হুনছি নেতারা গন্ডগুল করায় মাল বিক্রি বন্ধ রাখছে।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই সরকারের আমলেও আমগো মতো গরিবের মাল লইয়াও টানাটানি করে মানুষ। আমরা কই যামু?’

দিনমজুর রহিম মিয়া (৪৫) বলেন, ‘রোজার মাসে টিসিবির জিনিস কিনতে পারলে পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারতাম। দোকানে তেলের দাম বেশি, কিনতে পারি না। তাই এখানে এলাম। এসে শুনি বিএনপির নেতারা পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। তাহলে আমাদের মতো গরিব মানুষ কোথায় যাবে? পণ্য কিনতে না পেরে খালি হাতে বাসায় ফিরে যেতে হচ্ছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ম ন আয় র ম ন ষ ব এনপ র স বন ধ র খ র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

১২ কেজি এলপিজির দাম কমলো

সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২৮ টাকা কমানো হয়েছে। ২৮ টাকা দাম কমিয়ে মার্চ মাসের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা।

ফেব্রুয়ারি মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ছিল ১ হাজার ৪৭৮ টাকা। এরও আগে গত জানুয়ারি মাসে দাম ছিল ১ হাজার ৪৫৯ টাকা।

এছাড়া ৫.৫ কেজি সিলিন্ডারে দাম ৬৬৪ টাকা, ১২.৫ কেজির দাম ১ হাজার ৫১০ টাকা, ১৫ কেজির দাম ১ হাজার ৮১২ টাকা, ১৬ কেজির দাম ১ হাজার ৯৩৩ টাকা, ১৮ কেজির দাম ২ হাজার ১৭৫ টাকা, ২০ কেজির দাম ২ হাজার ৪১৬ টাকা, ২২ কেজির দাম ২ হাজার ৬৫৮ টাকা, ২৫ কেজির দাম ৩ হাজার ২০ টাকা, ৩০ কেজির দাম ৩ হাজার ৬২৪ টাকা, ৩৩ কেজির দাম ৩ হাজার ৯৮৭ টাকা, ৩৫ কেজির দাম ৪ হাজার ২২৮ টাকা এবং ৪৫ কেজির সিলিন্ডারের ৫ হাজার ৪৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সোমবার (৩ মার্চ) বিকেল ৩ টায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ নতুন দাম ঘোষণা করেন।

আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।

প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। আমদানিকারক কোম্পানির চালান (ইনভয়েস) মূল্য থেকে গড় করে পুরো মাসের জন্য ডলারের দাম হিসাব করে বিইআরসি।

এএ

সম্পর্কিত নিবন্ধ