রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হবে।

রবিবার (২ মার্চ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞ‌প্তি‌তে এ তথ‌্য জানা‌নো হ‌য়ে‌ছে।

এতে বলা হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ নিম্নরূপ:

১.

চিহ্নিত অপরাধী, সন্ত্রাসী এবং মাদক ও চোরাকারবারিদের ধরতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়েছে।

২. পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল বাড়ানো ও দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও পাবলিক প্রসিকিউটরদের অংশগ্রহণে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ বিষয়ে ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

৩. পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট প্রধান, উপ-পুলিশ কমিশনার, সেনাবাহিনীর মাঠে নিয়োজিত ব্রিগেড প্রধান ও অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রতিটি ঘটনার বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে গণমাধ্যমে ব্রিফ করা।

৪. রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বা চেকপোস্ট ও অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথবাহিনী টার্গেট এলাকাসমূহে জোরদার অপারেশন পরিচালনা করছে।

৫. রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নিয়মিত প্যাট্রোলের পাশাপাশি নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের অতিরিক্ত টহল নিয়োজিত করা হয়েছে।

৬. ছিনতাইকারী, ডাকাত, কিশোর গ্যাং ও অন্যান্য অপরাধপ্রবণ স্থানগুলোতে কম্বাইন্ড অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

৭. থানাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৮. ঢাকা শহরের আশপাশে বিশেষ করে টঙ্গী, বসিলা, কেরাণীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে।

৯. ডিএমপির পুলিশ সদস্য, বিজিবি, আনসার ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যদের জন্য মোটরসাইকেল ক্রয়ের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যাতে করে তাৎক্ষণিকভাবে অলিগলিতে টহল দিয়ে অপরাধীদের ধরা সম্ভব হয়।

১০. মিথ্যা, গুজব ও প্রোপাগাণ্ডার বিপরীতে সত্য তথ্য প্রচারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

১১. স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভোর ও গভীর রাতে ঝটিকা সফরে থানা, চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম পরিদর্শন ও মনিটরিং করছেন।

১২. স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ইতোমধ্যে দেশের সব প্রশাসনিক বিভাগে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

১৩. ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কার্যকর উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন চেকপোস্ট এবং টহল দলের রাত্রিকালীন কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে নিয়মিত দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

১৪. মামলা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তকরণে জেলা ও মেট্রোপলিটন পর্যায়ে মামলা মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে করে নিরপরাধ ব্যক্তিরা মামলার হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছেন।

১৫. জুলাই বিপ্লবের শহীদ পরিবারের মামলাসমূহ নিয়মিতভাবে গুরুত্বের সঙ্গে মনিটরিং করা হচ্ছে যাতে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়।

১৬. আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত প্রতিটি ঘটনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঢকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপর ধ দ র কর মকর ত পর স থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি

চলতি মার্চ মাসে দেশে ধর্ষণের সংখ্যা গত ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ধর্ষণ ও হত্যা। মার্চ মাসে যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণচেষ্টাসহ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪২৮টি। আগের মাসে মোট নারী নির্যাতনের ঘটনার এ সংখ্যা অনেকটাই বেশি।

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মার্চ মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। আজ সোমবার (৩১ মার্চ) এমএসএফ এ প্রতিবেদন দেয়। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি।

এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ মাসে ১৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আর ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল ৫৭টি। মার্চে দলবদ্ধ ধর্ষণ হয়েছিল ১৭টি, যেটি পরের মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ২৫টিতে। ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ফেব্রুয়ারিতে ঘটেছিল ১৯টি আর এ ধরনের ঘটনা মার্চে ঘটে ৬১টি।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসে শিশু ও নারী নির্যাতন বিশেষ করে ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে । নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকার অভাব, বিচারহীনতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের বেপরোয়া করে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেতিবাচক দায়িত্ববোধ, ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে অপারগতার ফলে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যে হারে বেড়ে চলেছে, তা জাতীয় জীবনে অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ধর্ষণ বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা বেড়েছে।

এমএসএফ বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও শিথিলতার সুযোগে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতির মতো অপরাধের সংখ্যাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। স্পষ্টতই এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

মার্চ মাসে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ও পালানোর চেষ্টাকালে মৃত্যু এবং পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্ব সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা যেমন বেড়েই চলেছে, তেমন বেড়েছে দুষ্কৃতকারীদের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের আন্দোলনবিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। এ মাসে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার কমলেও তা এখনো উদ্বেগজনক।

রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত

মার্চ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা বিশেষত রাজনৈতিক নেতাদের নিজদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব অনেক বেড়েছে। বিএনপিরর দলীয় কর্মীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫২টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪৫৯ জন। তাঁদের মধ্যে ১২ জন নিহত এবং ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ছয়জন বিএনপির, তিনজন আওয়ামী লীগের, এক পথচারী, এক বৃদ্ধ ও এক প্রবাসী রয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মী না হয়েও বিএনপির দলীয় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে উল্লিখিত তিনজন নিহত হন।

সহিংসতার ৫২টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বের ৩৯টি, বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ৬টি, বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষের ৩টি, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী ঐক্যজোটের সংঘর্ষের ১টি, বিএনপি-এলডিপি সংঘর্ষের ১টি, বিএনপি–জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংঘর্ষের ১টি, জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্বের ১টি ঘটনা ঘটেছে।

এর পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীদের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ৪টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুজন এবং আহত হয়েছেন ছয়জন। এ ছাড়া এ মাসে দুজন রাজনৈতিক নেতার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এদের মধ্যে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত একজন বিএনপির ও একজন আওয়ামী লীগের এবং লাশ উদ্ধার হওয়া দুজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

গণপিটুনি

মার্চ মাসে অন্তত ৩৯টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১৩ জন নিহত ও ৫৬ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন ৮ জন। গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ৭ জন ডাকাত সন্দেহে, ২ জন সন্দেহজনক চুরির অভিযোগে, ১ জন রাজনৈতিক কারণে, ১ জন ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে, ১ জন অতিরিক্ত মদ্যপানের অভিযোগে এবং ১ জনকে ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অপরদিকে ১৯ জন ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে, ৪ জন যৌন হয়রানির অভিযোগে, ৪ জন ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ১৪ জন ডাকাতির অভিযোগে এবং সন্দেহজনক চুরি, ছিনতাই এ ধরনের অপরাধজনিত কারণে ১৫ জনকে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

এমএসএফ প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ, যা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া আইনকে নিজ হাতে তুলে নিয়ে নির্যাতন বা গণপিটুনির মতো ঘটনা ঘটিয়ে গুরুতর আহত করা অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ। এ ক্ষেত্রে গণপিটুনির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এ সরকারের আমলে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেনি, সম্ভাবনাও নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেনি, কোনো সম্ভাবনাও নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেনি, কোনো সম্ভাবনা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নরসিংদীতে ঈদের দিন ২ ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা
  • ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি
  • দিনাজপুরের গোর-এ শহীদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর হোক