‘অবশেষে সফল হলো আমার ৮১তম চেষ্টা’
Published: 2nd, March 2025 GMT
অভিনন্দন, আজ শুধু তোমাদের শিক্ষাজীবনের বিশেষ দিনটিরই উদ্যাপন হচ্ছে না, আজ শুরু হতে যাচ্ছে তোমাদের জীবনের নতুন এক অধ্যায়। চেনা এই প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যে অপার সম্ভাবনার জগতে তুমি পা রাখতে যাচ্ছ, মনে রেখো এটাই হবে তোমার জীবনের সব অধ্যায়ের মধ্য থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এই সফরের শক্তি হবে তোমার বলিষ্ঠ কণ্ঠ। যখন আওয়াজ তুলবে, সেটা যেন এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য হয়, যেখান সত্য ও সততা তোমাকে পথ দেখাবে। ভয়কে কখনো কণ্ঠরোধের সুযোগ দেবে না। সামনের পথ যত কঠিন আর অনিশ্চিতই হোক না কেন, নিজের প্রত্যয়কে দৃঢ় রেখো। তোমার কণ্ঠই তোমাকে ও অন্যদের অন্ধকার পেরিয়ে আলোর পথ দেখাবে।
একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আমি সব সময় গল্প বলতে চেয়েছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে নারী, পুরুষ, শিশুর গল্প তুলে এনেছি। এই গল্পগুলো তুলে আনতে গিয়ে আমি তাদের জীবনকে কাছ থেকে দেখেছি। পেয়েছি কিছু সহজ-সরল শিক্ষা, আজ সেগুলোই তোমাদের বলব।
নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকোমাত্র ১৪ বছর বয়সে পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করি। ১৭ বছর বয়সে একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিই। ঠিক করি এমন এক বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করব, যে বিষয়টা কেউ ঘাঁটতে চায় না। স্পষ্ট মনে আছে, এক ঈদের দিনে আবিষ্কার করলাম বাড়ির আশপাশে স্প্রে পেইন্ট দিয়ে কেউ আমার বিরুদ্ধে গ্রাফিতি এঁকেছে। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা, আমাকে চুপ করানো আর ভয় দেখানোই ছিল এই গ্রাফিতির উদ্দেশ্য। কারণ, আমি শহরের কিছু প্রভাবশালীর বিপক্ষে আওয়াজ তুলেছিলাম। আমার অনুসন্ধান তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। আমার বাবা, যাঁর প্রভাব আমার জীবনে অসামান্য, আমাকে সেদিন একটি কথাই শুধু বলেছিলেন, ‘তোমার কথাগুলো যদি সত্য হয়, আমি তোমার সঙ্গে আছি।’ এরপর নিজ হাতে সেদিন প্রতিটা দেয়াল পরিষ্কার করেছিলেন। সেদিন সেই মুহূর্তে শিখেছিলাম, পৃথিবী যতই তোমাকে ভয় দেখাক, ন্যায়ের জন্য সাহস করে দাঁড়িয়ে গেলে সেটাই হবে সবচেয়ে শক্ত হাতিয়ার। আজ যখন তুমি ভবিষ্যতের দোরগোড়ায়, মনে রেখো তোমার একেকটা সিদ্ধান্ত, একেকটা সৎ ও সাহসী পদক্ষেপ তোমাকে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলবে। এবার তুমি তোমার স্বপ্নকে অনুসরণ করো, অথবা গতানুগতিক ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ করো। যে পথই বেছে নাও না কেন, মাথায় রেখো—তোমার সিদ্ধান্ত শুধু তোমার একার নয়, পুরো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকেও বদলে দিতে পারে।
আরও পড়ুন৮ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপানে চাকরির সুযোগ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫অদম্য আর জেদি স্বপ্নগুলো আগলে রাখো‘প্যাশন’ হলো সেই চালিকা শক্তি, যা তোমাকে জীবনের চড়াই–উতরাইগুলো পার হতে সাহায্য করবে। আমার জীবনে বরাবরই গল্প বলা আর সত্যকে তুলে ধরার অদম্য আকাঙ্ক্ষা ছিল। অনেক প্রত্যাখ্যানের পরও আমি সম্ভবের সীমানা পেরিয়ে অসম্ভবকে অর্জনের স্বপ্ন দেখতাম।
অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেও ২০০২ সালে সিদ্ধান্ত নিই—তথ্যচিত্র নির্মাতা হব। প্রথম চলচ্চিত্র বানানোর জন্য প্রস্তাবপত্র লিখে বিশ্বের নানা দেশের ৮০টি টেলিভিশন চ্যানেল ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে পাঠাই। এরপর তাদের জবাবের অপেক্ষা করতে থাকি। আসতে থাকে একের পর এক প্রত্যাখ্যান। আমি লড়তে থাকি নিজের সঙ্গে। নিজের অশ্রু, আক্ষেপ আর মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে।
বুঝতে পারছিলাম না, কেন কেউ ২১ বছর বয়সী একজন নবীন নারী নির্মাতা, যে ঠিকমতো ক্যামেরা ধরতে পারে না, যার সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা নেই, ডিগ্রি নেই, তাকে কাজ দিতে চাইছে না! স্পষ্টত, মানুষ আমার ধারণার চেয়েও বেশি বাস্তববাদী ছিল তখন, যার জন্য এত এত প্রত্যাখ্যান! কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। লেগেই থাকলাম। এরপর একদিন কোনো কারণ ছাড়াই নিউইয়র্ক টাইমস টেলিভিশনের প্রেসিডেন্ট বরাবর একটা অযাচিত ই–মেইল লিখে বসলাম। সঙ্গে দিলাম আমার প্রস্তাবপত্রটিও। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এল ফিরতি ই–মেইল। তাতে লেখা ছিল, আমার তথ্যচিত্রের প্রস্তাব সশরীর শোনানোর জন্য আমাকে নিউইয়র্কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্কের ট্রেন ধরলাম, আর একদল অভিজ্ঞ সাংবাদিকের সামনে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। খুব জলদিই আমার তথ্যচিত্রের প্রস্তাব পাস হয়ে গেল। আমাকে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রশিক্ষণও দেওয়া হলো। অবশেষে সফল হলো আমার ৮১তম চেষ্টা। সামনে খুব সহজ দুটি পথ ছিল—হাল ছেড়ে দাও, অথবা নিজের স্বপ্নের পেছনে লেগে থাকো। জীবনে এমন মুহূর্ত অনেক আসবে, যেখানে হতাশ হয়ে মনে হবে হাল ছেড়ে দিই। আমি অনুরোধ করব, তোমরা বড় স্বপ্ন দেখো। প্রতিদিন যেন ঘুম ভেঙে সেই স্বপ্নের পেছনে ছোটার তাড়না তোমাদের সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুনব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ব্লকচেইন একাডেমি০৩ নভেম্বর ২০২৪এই পরিচালকের জন্ম পাকিস্তানে, তবে থিতু হয়েছেন কানাডায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য র জ বন জ বন র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রোটিয়া বোলিং তোপে দিশাহীন ইংল্যান্ড
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচে শনিবার (১ মার্চ, ২০২৫) ৩টায় দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছে আসর থেকে বিদায় ঘন্টা বেজে যাওয়া ইংল্যান্ড। এই ম্যাচে থ্রি লায়ন্সদের হয়ে শেষ বারের মতো অধিনায়কত্ব করছেন জস বাটলার। দলটির কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বলেছিলেন- গোটা দল কাপ্তানকে দারুণ বিদায় উপহার দিতে যায়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া এবং আফগানিস্তানের পর আরেকটা বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে ইংলিশরা।
করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রোটিয়া বোলার মার্কো ইয়ানসেনের বোলিং তোপে পড়ে ইংলিশরা। ইয়ানসেনের বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার। ৬ বলে ৮ রান করে সাজঘরে ফিরে যান ফিল সল্ট। তিনে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন জেমি স্মিথ। অন্যদিকে শুরুতে ঝড় তোলা ডাকেট থেমেছেন দলীয় ৩৭ রানের মাথায়। ২১ বলে ২৪ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন তিনি। এই তিনটা উইকেটই নেন ইয়ানসেন।
এরপর ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন জো রুট এবং হ্যারি ব্রুক। এই জুটি চাপ সরিয়ে বেশ সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন। দুজনের জুটি ভাঙে দলীয় শতক পূরনের ১ রান আগে। ২৯ বলে ১৯ রান করে কেশব মহারাজের বলে আউট হন ব্রুক।
আরো পড়ুন:
সামনের দশকেই শিরোপা জেতবে আফগানরা: স্টেইন
সেমি ফাইনাল থেকে ছিটকে গেলেন শর্ট
এরপর ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা কেবল এলেন আর গেলেন। স্বাছন্দে ব্যাটিং করা রুটের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন পেসার উইয়ান মুল্ডার। এই ৩৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান ৪৪ বলে ৩৭ রান করেন। এরপর দ্রুত আরও ২ উইকেট তুলে নেয় প্রোটিয়ারা। ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১২৯ রান।
অষ্টম উইকেটে ৪২ রানের জুটি গড়ে দলকে সেই বিপর্যয় থেকে সামাল দেন জফরা আর্চার ও বাটলার। ৩১ বলে ২৫ রান করে বিদায় নেন আর্চার। ৪৩ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলে বাটলার পরের ওভারেই ফেরেন। ইনিংসের ৭০ বল বাকি থাকতেই ১৭৯ রানে থামে ইংল্যান্ডের ইনিংস।
ইয়ানসেনের পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন মাল্ডারও। আর মহারেজের শিকার ২টি উইকেট।
ঢাকা/নাভিদ