১৫ বছর পর শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমামতি ফেরত পেলেন মুফতি ছাইফুল্লাহ
Published: 2nd, March 2025 GMT
১৫ বছর পর কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমামতির দায়িত্ব ফেরত পেলেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। আজ রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঈদুল ফিতর উদ্যাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভায় তাঁকে এই দায়িত্বে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদ মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ কিশোরগঞ্জ শহরের বড় বাজার মসজিদের খতিব। তাঁর বাবা আবুল খায়ের মোহাম্মদ নূরুল্লাহ শোলাকিয়া মাঠের সাবেক ইমাম এবং ভাই ওয়ালিওল্লাহ রাব্বানি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
আজকে সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান। এতে ঈদের জামাত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবারও শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তাব্যবস্থায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি ছাড়াও সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। দূরদূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে রেলওয়ে ‘শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করবে।
প্রস্তুতিমূলক সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, সেনাবাহিনীর মেজর রায়হান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তারী কাদেরী, সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির রমজান আলী ও ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আবুল খায়ের মোহাম্মদ নূরুল্লাহ টানা ৩০ বছর শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমামতি করেন। ২০০৩ সালে বার্ধক্যের কারণে এ দায়িত্ব থেকে তিনি সরে যান। ২০০৪ সাল থেকে তাঁর ছেলে আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমামতি করেন। ২০০৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ছাইফুল্লাহকে ইমামতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। পরে ইমামতির দায়িত্ব পান ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। গত বছর ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রামপুরা থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে আসামি করা হয়। তখন থেকে তিনি পলাতক।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
১৭০ জন আত্মীয় ও বন্ধুকে হারিয়েছেন মিয়ানমারের এই ইমাম
গত শুক্রবার মিয়ানমারের সাগাইং এলাকায় আজানের সাথে সাথে শত শত মুসলিম পাঁচটি মসজিদে গিয়েছিলেন নামাজ আদায়ের জন্য। রমজানের শেষ জুমা হওয়ায় মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের সমাগমও ছিলো বেশি।
স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার একটি মারাত্মক ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পে তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ছিল মায়োমা এলাকায়। এ ঘটনায় মসজিদগুলোর ভেতরে থাকা প্রায় সবাই মারা যায়।
শত শত কিলোমিটার দূরে, থাই সীমান্তবর্তী শহর মায়ে সোতে মায়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাইও ভূমিকম্প অনুভব করেছিলেন। পরের দিনগুলোতে, তিনি জানতে পারেন যে, তার প্রায় ১৭০ জন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব মারা গেছেন, যাদের বেশিরভাগই মসজিদে ছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শহরের মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
তিনি বিবিসিকে বলেন, “আমি প্রাণ হারানো মানুষগুলোর কথা ভাবি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সন্তানদের কথাও - তাদের মধ্যে ছোট শিশুও আছে। এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সময় আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না।”
মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সাগাইং ও মান্দালয়ের কাছে সংঘটিত ভূমিকম্পে ২ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ বের করার কাজ অব্যাহত রেখেছেন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং-এর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মসজিদে নামাজ পড়ার সময় প্রায় ৫০০ মুসলিম মারা গেছেন।
সাগাইংয়ের প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, শহরের যে রাস্তায় মসজিদগুলো ছিল, সেই মায়োমা স্ট্রিটই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তার আরো অনেক বাড়িও ভেঙে পড়েছে।
শত শত মানুষ রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছে, তারা এখন গৃহহীন অথবা আফটার শকের আতঙ্কে তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে।
শুধুমাত্র মায়োমাতেই, ধসে ৬০ জনেরও বেশি লোক চাপা পড়ে বলে জানা গেছে, যেখানে মায়োডাও এবং মোয়েকিয়া মসজিদে আরও অনেক লোক মারা গেছে।
সোয়ে নাই ও জানান, অজু করার স্থানে অনেক মৃতদেহ পাওয়া গেছে। কিছু লোককে অন্যদের হাত ধরে থাকতে দেখা গেছে, যা দেখে মনে হচ্ছে ভেঙে পড়া ভবন থেকে তাদের টেনে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল।
সামরিক জান্তা এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলির মধ্যে চলমান লড়াইয়ের কারণে সাগাইংয়ের পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। সাগাইংয়ের মুসলিম কবরস্থানটি বিদ্রোহী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) নিয়ন্ত্রিত একটি এলাকার কাছে অবস্থিত এবং বেশ কয়েক বছর ধরে জনসাধারণের জন্য বন্ধ রয়েছে। ভূমিকম্পের পর থেকে সেনাবাহিনী বৃহত্তর সাগাইং অঞ্চলের কিছু অংশে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে।
সোয়ে নাই ও-এর মতে, সাগাইং শহরের মুসলিম সম্প্রদায়কে তাদের মৃতদেহ মান্দালয়ে স্থানান্তর করতে হয়েছে। তাদেরকে দুই শহরের সংযোগকারী একমাত্র সেতু ব্যবহার করে ইরাবতী নদী পার হতে হয়েছে।
তাদের মৃতদেহ দাফনের জন্য মান্দালয়ের সবচেয়ে বড় মসজিদে রেখে যাওয়া হচ্ছে।
ঢাকা/শাহেদ