ইবিতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২ নেতা আটক
Published: 2nd, March 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে এসে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (২ মার্চ) দুপুরে ইবির সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের মারধর করে ইবি থানা পুলিশে সোপর্দ করেন।
আটকরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নাঈম ও সাদ্দাম হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতা মারুফ আহমেদ।
জানা গেছে, সমাজকল্যাণ বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। এ পরীক্ষায় ওই দুই নেতা অংশগ্রহণ করতে আসেন। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই অন্য শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে প্রতিবাদ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা অনুষদ ভবনে জড়ো হন।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিষদের নেতারা সেখানে উপস্থিত হন। ওই ছাত্রলীগ নেতাদের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের হাত থেকে রক্ষা করে থানায় সোপর্দ করেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আটক নাঈম ও মারুফ বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধামকি দেন। তারও আগে শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। আন্দোলনে যাওয়া শিক্ষার্থীদের পরবর্তী সময়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তারা। ইচ্ছাকৃতভাবে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার জন্য আজ তারা পরীক্ষা দিতে এসেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.
তিনি বলেন, “যেহেতু তারা নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য, তাই আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জমা আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।”
ইবি থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, “নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের দুইজনকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে নিষিদ্ধ সংগঠন সংক্রান্ত একটি মামলা থানায় রয়েছে। সেই মামলাতেই তাদের চালান করা হবে।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ষ দ ধ স গঠন পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
তালিকায় ১ হাজার ৪১৫ নদী, এবার কি বাঁচবে
১ বৈশাখ ১৪৩২ অর্থাৎ এ বছর ১৪ এপ্রিল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে ১ হাজার ৪১৫টি নদীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। বাংলা নতুন বছরে এটি নিঃসন্দেহে দারুণ খবর। এবারের বাংলা নববর্ষ নদীকর্মীদের জন্য নদীর সংখ্যা নির্ধারণী বছর।
নদী তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে সিএসসহ (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) অন্যান্য রেকর্ডকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে ব্রিটিশরা যখন সিএস রেকর্ড প্রস্তুত করে, তখন যে এলাকায় যে প্রবাহকে যে নামে ডাকা হতো, সেই প্রবাহকে রেকর্ডে সেই নাম রাখা হয়েছে। যেমন নদী, খাল, খাঁড়ি, ছড়া, ডারা ইত্যাদি। নদীর মতোই প্রাকৃতিক প্রবাহ ভিন্ন নামে রেকর্ড হয়েছে। নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হলে খাল, খাঁড়ি, ডারা, ছড়াও অনেকটাই নদীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। বর্তমান সরকার খালেরও তালিকা করছে। সেহেতু বলা যায়, নদীর সরকারি সংজ্ঞা হলে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রাকৃতিক প্রবাহ হিসেবে নদীর সংখ্যা আরও বাড়বে।
নদীর একটি বড় তালিকা পাওয়া গেছে। এখন এই তালিকা ধরে নদী সুরক্ষার কাজ পর্যায়ক্রমে চলতে থাকলে আমাদের নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু করা নদী সুরক্ষার কাজ পরবর্তী সরকার এগিয়ে নেবে, এটাই প্রত্যাশাজাতীয় নদী রক্ষা কমিশন প্রায় চার বছর সময় নিয়ে ২০২৩ সালে ১ হাজার ৮টি নদীর তালিকা প্রকাশ করেছিল। ডিসি-ইউএনওরা এই তালিকা সরবরাহ করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪০০ নদীর তথ্য মোটামুটিভাবে দেওয়া ছিল। এ তথ্যগুলো প্রধানত পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকাশিত বই থেকে নেওয়া। অন্য তথ্যগুলো অনেকটাই অসম্পূর্ণ ও ভুলে ভরা। বাস্তবে যে সংখ্যা দিয়েছিল, তারও পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না। অন্য যেকোনো সময়ে নদীর তথ্য সংগ্রহ করার চেয়ে এবার ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। এবারের নদী অনুসন্ধানের কাজে নদীকর্মীদের যুক্ত করা হয়েছে। ফলে তাঁদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত নদীগুলো তালিকায় এসেছে।
নদ-নদীর এই সংখ্যা হাজির করা অবশ্যই আশাজাগানিয়া। তবে নদীর প্রকৃত সংখ্যা এটি নয়। সুন্দরবন ও পার্বত্য জেলাগুলোতে তালিকা চূড়ান্ত করা কঠিন। এর প্রধান কারণ, এখানে ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে না হওয়া। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ সংখ্যাকে চূড়ান্ত বলেননি। তিনিও বলেছেন নতুন নদীর তথ্য পাওয়া গেলে সেটিও যুক্ত হবে। সেই অনুসন্ধান চলতে থাকবে।
নদীগুলোকে পরবর্তী ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নদীর প্রস্থের চেয়ে ছোট যেন সেতু, কালভার্ট তৈরি না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। নদীসহ যেকোনো জলপ্রবাহ তথা জলাশয়ের জমি যাতে ব্যক্তির নামে লিখিত না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা জারি করতে হবে। কেউ সরকারের এসব জমি ব্যক্তির নামে লিখে দিলে, খাজনা-খারিজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।যে ১ হাজার ৪১৫টি নদী পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে এখন সরকারকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। প্রাপ্ত নদীর মধ্যে মোট কতটি ভারত-বাংলাদেশ আন্তসীমান্ত নদী আছে, তা চিহ্নিত করা জরুরি। এরপর সব আন্তসীমান্ত নদী যাতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন স্বীকৃত হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার নদীর ক্ষেত্রে সংখ্যা পরিবর্তন হলো কি না, দেখতে হবে।
নদীগুলোর অবস্থা অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস জরুরি। শ্রেণিবিশেষে নদীগুলোর কাজ করতে হবে। যে রকম শ্রেণি হতে পারে Ñআন্তসীমান্ত নদী (স্বীকৃত এবং স্বীকৃতির বাইরে), দখলে থাকা নদী, দূষিত থাকা নদী, উৎসমুখ বন্ধ হওয়া নদী, ব্যক্তির নামে জেলা প্রশাসন থেকে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কবুলিয়ত দেওয়া নদী, অবৈধভাবে লিখিত হওয়া নদী, বিলের নামে লিজ হওয়া নদী, প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া নদী, প্রবাহ স্বাভাবিক থাকা নদী, মৌসুমি নদী, বারোমাসি নদী।
নদীগুলোর জন্য কাজের একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করতে হবে। স্বল্পমেয়াদি, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সবটুকু করে যেতে পারবে না। পরবর্তী যাঁরাই দায়িত্বে থাকবেন, তাঁরাই যেন কাজের ধারাবাহিকতায় নদী সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকেন।
আরও পড়ুননদী রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের যা করা প্রয়োজন০২ জানুয়ারি ২০২৫স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় নদীর শ্রেণীকরণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, দূষণ মুক্তকরণ, অবৈধভাবে মালিকানা বাতিলের কাজ করতে হবে। নদীর মালিক যেহেতু আইনত ব্যক্তি হতে পারে না, তাই কোনো ব্যক্তির নামে অবৈধ মালিকানা, খারিজ, রেকর্ড কিংবা গেজেট হলে তা একটি পরিপত্র জারি করে বাতিল করতে হবে, প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। নয়তো নদী সুরক্ষার কাজ বাংলাদেশে কোনো দিন বৃহৎ পরিসরে করা যাবে না। স্বল্পমেয়াদি কাজে এটি সম্পন্ন করতে হবে।
আইন সংশোধন করা কিংবা পরিপত্র জারি করা, দুটিই সহজ কাজ। সদিচ্ছা থাকলেই হবে। এ কাজ ভূমি মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের কাজ হলেও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ও এখানে ভূমি রাখতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নিশ্চিহ্ন হওয়া নদীতে প্রবাহ ফেরাতে হবে। নদীগুলোর ভাঙনরোধের কাজ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় যে কটি নদীকে দখল-দূষণ থেকে মুক্ত করা যাবে না, সে কটি নদীর কাজ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নিতে হবে। আমাদের নদীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জলমহাল, বিল, হাওরসহ যে নিম্নাঞ্চল আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে। নদীর যে জমি ডিসিরা ব্যক্তির নামে কবুলিয়ত দিয়েছেন, সেগুলো এক নোটিশে বাতিল করতে হবে।
নদীগুলোকে পরবর্তী ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নদীর প্রস্থের চেয়ে ছোট যেন সেতু, কালভার্ট তৈরি না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। নদীসহ যেকোনো জলপ্রবাহ তথা জলাশয়ের জমি যাতে ব্যক্তির নামে লিখিত না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা জারি করতে হবে। কেউ সরকারের এসব জমি ব্যক্তির নামে লিখে দিলে, খাজনা-খারিজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
নদীর একটি বড় তালিকা পাওয়া গেছে। এখন এই তালিকা ধরে নদী সুরক্ষার কাজ পর্যায়ক্রমে চলতে থাকলে আমাদের নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু করা নদী সুরক্ষার কাজ পরবর্তী সরকার এগিয়ে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
● তুহিন ওয়াদুদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক
[email protected]