নির্বাচন দেরিতে হলে ষড়যন্ত্র বাড়বে: সালাহ উদ্দিন আহমেদ
Published: 2nd, March 2025 GMT
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে হবে, দেরি হলে ষড়যন্ত্র বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে সরকার কী করবে জনগণের সামনে তা দৃশ্যমান করার দাবি জানাচ্ছি। নির্বাচন প্রক্রিয়া যতো দীর্ঘায়িত হবে, চলমান সমস্যা আরও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির মধ্যে যে অস্থিরতা রয়েছে তা কাটাতে হলে একটি নির্বাচন প্রয়োজন। যত দিন যাচ্ছে গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রা পথ বাধাগ্রস্ত করার কূটকৌশল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধু পুলিশ দিয়ে নয়, রাজনীতি দিয়ে ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা করতে হবে। তাহলেই ফ্যাসিবাদের মূল উপড়ে ফেলা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কারের প্রথম প্রস্তাবক বিএনপি। দলটি সবার আগে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাবের সঙ্গে সরকারের কমিশনের খুব বেশি পার্থক্য নেই।’
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এখনও অনুশোচনা প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। বরং তাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয় অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ারাই অপরাধী। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টাতে হবে।’
এ সময় দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহবান জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না আনা গেলে তারা সরকারের ভালো কাজগুলোরও সমালোচনা করবে।’ এই বিষয়টির দিকে নজর দিতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাতারে ড. ইউনূস: পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেছেন, “আমরা পৃথিবীর জন্য আশার এক বাতিঘর হিসেবে দাঁড়াতে চাই।”
তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি করার সুযোগ এসেছে। এটি এমন এক চুক্তি যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, ঐতিহ্য, ন্যায়বিচার, মর্যাদা এবং সুযোগের ভিত্তিতে একটি ভবিষ্যৎ একত্রে গড়ে উঠবে।”
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কাতারের দোহায় ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলে ‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় বিশ্ববাসীর প্রতি এই আশার বার্তা শোনান প্রধান উপদেষ্টা।
আরো পড়ুন:
কাতারের আমিরের মায়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
কাতারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের বন্ধু ও অংশীদারদের অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক চুক্তি পুনর্লিখনের জন্য, পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের ভূমিকা অন্বেষণ করতে আহ্বান জানাই, যা প্রান্তিক জনগণের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক।”
তিনি বলেন, “এটি এমন এক সামাজিক চুক্তি, যেখানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও প্রান্তিক জনগণের ক্ষমতায়ন মৌলিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তৃতায় একটি সহনশীল, সমৃদ্ধ ও টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “তবে এখন এমন নানা হুমকি রয়েছে, যা আমাদের উন্নয়নকে বিপথে ঠেলে দিতে পারে।”
তিনি বলেন, “আমরা এমন এক সময় পার করছি, যেখানে বহুপাক্ষিকতা হুমকির মুখে, জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে এবং মানবিক সংকট গভীরতর হচ্ছে। নতুন নতুন নীতিমালা, প্রযুক্তি এবং শাসন পদ্ধতি আমাদের পৃথিবীকে দ্রুত রূপান্তরিত করছে, যা অতীতের অনেক অনুমানকে অচল করে দিচ্ছে।”
“এখন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি,” যোগ করেন তিনি।
বিশ্ববাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান রেখে ড. ইউনূস বলেন, “আসুন আমরা সাহসী হই। একটি এমন পৃথিবী গড়ি, যেখানে কেউ এতটা দরিদ্র না হয় যে, সে স্বপ্ন দেখতে না পারে এবং কোনো স্বপ্ন এত বড় না হয় যে, তা অর্জন করা যায় না।”
“ভবিষ্যৎ এমন কিছু নয়, যা আমরা উত্তরাধিকার হিসেবে পাই। এটি এমন কিছু, যা আমরা তৈরি করি। এবং আমাদের প্রত্যেকেরই এতে একটি করে ভূমিকা রয়েছে,” বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের উদ্ভাবন, সহমর্মিতা এবং সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের সক্ষমতাও ব্যাপক।”
কাতারের প্রশংসা করে ড. ইউনূস বলেন, কাতার যেভাবে আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে, তা দেখাচ্ছে কীভাবে একটি দেশ উদ্ভাবন, ঐতিহ্য ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট, সামাজিক বৈষম্য এবং কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ মোকাবিলা করতে পারে।”
ড. ইউনূস তার মূল বক্তব্যে সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন।
তিনি কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেখ মোজা বিনতে নাসের এবং ভাইস চেয়ারপারসন ও সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানিকে সময়োপযোগী ও চমৎকার এই শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
দোহায় মঙ্গলবার শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়ীত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’।
এই শীর্ষ সম্মেলন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ও উদ্ভাবনী পন্থাগুলো আধুনিক টেকসই উন্নয়নে কীভাবে অবদান রাখতে পারে, তা অনুসন্ধান করা হয়, যা একটি আরো সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা করবে।
প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীরা সোমবার কাতারের স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে দোহায় হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। প্রধান উপদেষ্টাকে বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা জানান কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে ঢাকা থেকে সফরসঙ্গীদের নিয়ে কাতারের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
আর্থনা সম্মেলনের ফাঁকে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন ড. ইউনূস।
ঢাকা/হাসান/রাসেল