পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বেলায়েত হোসেন নামের এক স্কুলশিক্ষকের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর ডাকাত আতঙ্কে রাতভর পাহারা দিয়েছেন এলাকাবাসী। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় উপজেলার ভজনপুর এলাকা থেকে ডাকাত চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ।

গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের আজিজনগর এলাকায় বেলায়েত হোসেনের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। বেলায়েত সদর উপজেলার দেওয়ানহাট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

আটক ব্যক্তিরা হলেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার সঠিবাড়ি-হরিপুর এলাকার আনোয়ার হোসেন (৪১), একই জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মকিমপুর এলাকার শরিফুল ইসলাম (৩৫), একই উপজেলার আজমপুর ফকিরপাড়া এলাকার মো.

হাসানুর (৪০), পালানো শাহপুর এলাকার মো. আয়নাল (৩৮) ও দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর এলাকার তহিদুল ইসলাম (৪০)।

এ ঘটনায় পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুনসী সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন বলে জানিয়েছেন তেঁতুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত কবির। এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে এবং এখনো অভিযান চলছে বলে তিনি জানান।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত একটার পরপরই তেঁতুলিয়া সদরের আজিজনগর এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের পাশে স্কুলশিক্ষক বেলায়েত হোসেনের বাড়িতে ডাকাত হানা দেয়। খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং করেন এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুনসীসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ বেরিয়ে এসে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের সঙ্গে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন এলাকাবাসী। কেউ কেউ মাইকিং করছেন।

স্কুলশিক্ষক বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাত একটার পর বাড়ির দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে কয়েকজন বাড়ির উত্তর গেটের তালা ভাঙে। পরে ৮ থেকে ১০ জন হাতে দেশি অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে তাঁর শোবার ঘরে ঢোকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও তাঁকে মারধর করে হাত পেছনে বেঁধে ফেলে। জীবন বাঁচাতে তাঁরা বাধা দেওয়ার সাহস পাননি। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে তাঁরা ঘরের সবকিছু ওলট–পালট করে। তারা সব মিলিয়ে ঘরে থাকা প্রায় ৩৮ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রীর হাতে থাকা এক জোড়া চুড়ি, কানের দুলসহ ঘরে থাকা আড়াই ভরি স্বর্ণের গয়না নিয়ে যায়। ঘটনার সময় পাশের কক্ষে থাকা তাঁর মেয়ে বিষয়টি টের পেয়ে মুঠোফোনে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের খবর দিলে তাঁরা আসতে শুরু করলে ডাকাতেরা পালিয়ে যায়।

এদিকে রাতেই জেলার প্রতিটি থানা-পুলিশ বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করে। পরে আজ রোববার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় উপজেলার ভজনপুর এলাকা থেকে ডাকাত চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুনসী দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রাতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ডাকাত চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখনো অভিযান চলছে। সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র এল ক র এল ক ব স উপজ ল র ন এল ক এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদের বন্ধের পর টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু রোববার

ঈদ উপলক্ষে ৯ দিন বন্ধ থাকার পর ৬ এপ্রিল আবার শুরু হচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও খাদ্য অধিদপ্তরের সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী দামে তেল, ডাল ও চিনি বিক্রি করে সরকারি সংস্থা টিসিবি। সংস্থাটি স্মার্ট পরিবার কার্ডের মাধ্যমে পরিবেশক বা সরবরাহকারীর দোকানের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি করে। আবার স্মার্ট কার্ড ছাড়া সর্বসাধারণের জন্য ট্রাকে করেও তেল, ডাল, চিনি বিক্রি করে সংস্থাটি।

অন্যদিকে খোলাবাজারে বিক্রি বা ওএমএস কর্মসূচির আওতায় ট্রাকে করে সাশ্রয়ী দামে চাল ও আটা বিক্রি করে খাদ্য অধিদপ্তর। ট্রাকের পাশাপাশি নির্ধারিত পরিবেশকের দোকানের মাধ্যমেও চাল-আটা বিক্রি করে সংস্থাটি।

সরকারি এই দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, ঈদের আগে সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ পর্যন্ত সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চালিয়েছিলেন তাঁরা। সরকারি ছুটি শেষে ৬ এপ্রিল আবার এ কার্যক্রম শুরু হবে।

বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৬০ লাখ পরিবারের মধ্যে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোট এক কোটি পরিবার কার্ডের বিপরীতে এ পণ্য বিক্রি করা হতো। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে এসব কার্ডের মধ্যে একটি বড় অংশ অযোগ্য বা ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করে। এ কারণে সরকার প্রায় ৪৩ লাখ পরিবার কার্ড বাতিল করে। পাশাপাশি নতুন করে উপকারভোগী চিহ্নিত করে নতুন স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রমও চলছে।

অন্যদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ট্রাকে করেও পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। প্রতিদিন রাজধানীর ৫০টি স্থানে, চট্টগ্রাম নগরীর ২০টি স্থানে এবং বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি কিছু শ্রমঘন জেলায় ট্রাকে পণ্য বিক্রির এ কার্যক্রম পরিচালনা করে সংস্থাটি। টিসিবির প্রতিটি ট্রাকে ২০০ জনের পণ্য থাকে। যদিও টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ভিড় করেন প্রতিদিন।

সংস্থাটি জানায়, টিসিবির ট্রাক থেকে যেকোনো ভোক্তা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে পারেন। টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি কিনতে পারেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা ও চিনি ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। আর রমজান উপলক্ষে গত মাসে ছোলা ও খেজুরও বিক্রি করা হয়েছিল টিসিবির ট্রাকে।

টিসিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৬ এপ্রিল থেকে স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে টিসিবির বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হবে। তবে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি চালু হবে আরও কয়েক দিন পর। কারণ, এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরে জানানো হবে।

এদিকে খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওএমএস ট্রাকের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরে ৭০টি স্থানে ট্রাক সেলের মাধ্যমে এবং প্রায় দেড় শ পরিবেশকের দোকানের মাধ্যমে চাল-আটা বিক্রি করা হয়। ট্রাক ও পরিবেশকের দোকান থেকে একজন ভোক্তা পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি আটা কেনার সুযোগ পান।

রাজধানীতে ওএমএসের পণ্য বিক্রির কাজটি করে থাকে খাদ্য অধিদপ্তরের সংস্থা ঢাকা রেশনিং। ঢাকা রেশনিংয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক শাব্বীর আহমেদ মুরাদ বলেন, ‘৬ এপ্রিল আমাদের সব ধরনের পণ্য বিক্রি কার্যক্রম আবার শুরু হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ