Prothomalo:
2025-04-02@14:05:31 GMT

ঋণ নেওয়ার আগে যা ভাববেন

Published: 2nd, March 2025 GMT

শহর কিংবা মফস্‌সলের জীবনে নানা ধরনের জরুরি প্রয়োজনে আমরা ঋণ নিই। অল্প টাকার প্রয়োজন হলে মানুষ সাধারণত পারসোনাল লোন বা ভোক্তাঋণ নেন। এই ঋণ সাধারণত ব্যক্তিগত কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। আয়ের সামর্থ্য অনুসারে গ্রাহককে এসব ঋণ দেয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সাধারণত চাকরিজীবীরা ব্যক্তিগত ঋণ বেশি নেন। অনেক ব্যবসায়ীও এই ঋণ নেন।

এই ঋণের সুবিধা হলো, আপনি যেকোনো কাজে ওই টাকা খরচ করতে পারবেন। ঋণের বিপরীতে সাধারণত জামানত দিতে হয় না।

যা দেখবেন

ঋণ নেওয়ার আগে মোটাদাগে চারটি বিষয় খতিয়ে দেখা উচিত। এক.

দ্রুত অনুমোদন ও তাৎক্ষণিকভাবে টাকা মিলবে কি না; দুই, ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা ও সময়সীমা; তিন. সুদের হার আকর্ষণীয় অর্থাৎ সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম কি না; চার, ন্যূনতম দলিলপত্র দিলেই ঋণ মিলবে কি না।

তাৎক্ষণিকভাবে টাকা মিলবে কি না

সাধারণত জরুরি প্রয়োজনেই মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ নেন। তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার পর দ্রুত অনুমোদিত হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে টাকাও হাতে পেয়ে যাবেন, এমন প্রত্যাশা করেন তাঁরা। তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে টাকা যাতে দ্রুত হাতে পাওয়া যায়, এমন ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত যে ব্যাংকে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থাকে, সেই ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাঁরা।

পরিশোধের সময়সীমা

ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়ার আগে আপনাকে ভাবতে হবে, এই ঋণ কত দিনে পরিশোধ করতে হবে। বেশি সময় ধরে ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ থাকলে প্রতি মাসে কিস্তির পরিমাণ কমে যায়। আপনার ওপর চাপ কম থাকবে।

দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক সর্বোচ্চ ৫ বছর বা ৬০ মাস সময়ে কিস্তি পরিশোধের সুযোগ দেয়। এবার আপনি ভেবে দেখুন, আপনার জন্য কিস্তির সময়সীমা কতটা উপযোগী। কিস্তি পরিশোধ কীভাবে করা হবে, তা–ও নজরে রাখতে হবে। যদি প্রতি মাসে ব্যাংক হিসাব থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা কেটে নেওয়া হয়, ভালো গ্রাহককে তা একধরনের স্বস্তি দেয়। অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তি পরিশোধ করা যায় কি না, তা বিবেচনায় আনতে হবে। সশরীর কিস্তি পরিশোধের ঝক্কিঝামেলা এড়াতে চান অনেকে, সে জন্য।

সহনীয় সুদের হার

ঋণ নেওয়ার আগে সুদের হার কত, তাও দেখতে হবে। বেশি টাকা দেবে, কিন্তু সুদের হার অনেক বেশি—তাহলে আপনার জন্য হয়তো তা উপযোগী বা কার্যকর না–ও হতে পারে। আবার সুদের হার কম, কিন্তু আপনার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম টাকা ঋণ দেবে, তা–ও আপনার জন্য উপযোগী নয়। সুদের হার কম, আবার আপনার প্রয়োজন অনুসারে টাকা ঋণ দেবে, এমন ব্যাংকই বেছে নিতে হবে। সুদের হার সাধারণত প্রতিযোগিতামূলক হয়।

এ ছাড়া প্রসেসিং চার্জ হিসেবে পুরো ঋণের নির্দিষ্ট অংশ দিতে হয়। সাধারণত দশমিক ৫০ শতাংশ হারে প্রসেসিং চার্জ কেটে রাখা হয়।

দলিল-দস্তাবেজ যত কম, তত ভালো

যত কম কাগজপত্র চাওয়া হয়, গ্রাহকদের তত বেশি সুবিধা। কাগজপত্র জোগাড় করতে ঝামেলা কম। চাকরিজীবীরা সাধারণত বেতনের বিবরণী দিয়েই আবেদন করেন। সঙ্গে ঋণের জামিনদার বা গ্যারান্টর লাগে। লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও দিতে হয়। এর বেশি কাগজপত্রও চাইতে পারে কোনো কোনো ব্যাংক।

যে কারণে ঋণ নেন

নানা জরুরি প্রয়োজনেই ভোক্তাঋণ নেওয়া হয়। অসুখ–বিসুখের খরচ মেটানো জন্য অনেকে এই ঋণ নেন। কেউ–বা সংসারের ফ্রিজ-টিভি, এসিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য এই ঋণ নেন। আবার অনেকে ছোটখাটো ব্যবসায় খাটানোর জন্যও ঋণ নেন। অনেকে সন্তানদের পড়াশোনার বাড়তি খরচ জোগাতেও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হন। অনেকে আবার দেশ-বিদেশে ঘোরাঘুরির জন্যও ঋণ নেন।

বিভিন্ন ব্যাংকের ভোক্তাঋণের অফারগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ভোক্তাঋণ পাওয়া যায়।

ব্যাংক যা দেখে

কেউ ব্যক্তিগত ঋণের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিষয় যাচাই–বাছাই করে থাকে। যেমন বয়স, ঠিকানা, আর্থিক সামর্থ্য, গ্যারান্টর ইত্যাদি। সাধারণত ২৫ থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত বয়সী গ্রাহকেরা এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। ব্যাংক ভেদে এই বয়সসীমা কম বেশি হতে পারে।

চাকরিজীবী হলে ন্যূনতম বেতনের সীমা নির্ধারণ করে দেয় ব্যাংক। যেমন কোনো ব্যাংক বেতন ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা হলেই ব্যক্তিগত ঋণ দেয়। চাকরির স্থায়িত্বও দেখা হয়; এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবসার লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়।

যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হয়, এর মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, গ্রাহক ও গ্যারান্টরের ছবি, ভিজিটিং কার্ড, ছয় মাস বা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাংক হিসাবের বিবরণী, বিশেষত কর নথির তথ্য ইত্যাদি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক গজপত র ন র জন য ভ ক ত ঋণ পর শ ধ ক পর শ ধ র স ধ রণত গ র হক ত ঋণ ন ঋণ ন ন আপন র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হওয়া দুজনের পরিবার দিশাহারা

জীবিকার তাগিদে পিরোজপুরের তরুণ কাউছার (২০) ঢাকায় এসে একটি কারখানায় কাজ নেন। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে দিনরাত পরিশ্রম করছিলেন তিনি। মাস শেষে যে আয় হতো, সেটার একটি অংশ তিনি গ্রামে মা–বাবার কাছে পাঠাতেন। সেই কাউছার গত ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন।

অন্যদিকে পটুয়াখালীর যুবক সুমন কুমার পাল (৪০) স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায়। তিনি সেখানে একটি ফার্মেসি (ওষুধের দোকান) চালাতেন। ভালোই চলছিল তাঁর সংসার। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দল তাঁর দোকানে এসে হামলা করে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সুমনকে হত্যা করে চলে যায়। সুমনের মৃত্যুর পর দিশাহারা হয়ে পড়েছে তাঁর পরিবার।

‘কেন আমার ভাইকে খুন করল?’

পিরোজপুরের হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম কাউছারের। তাঁরা দুই ভাই ও দুই বোন। কৃষক বাবাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য কাউছার ও তাঁর ভাই কাইয়ুম কয়েক বছর আগে ঢাকায় আসেন। কাউছার থাকতেন যাত্রাবাড়ী এলাকায়। তিনি সেখানকার একটি মশার কয়েলের কারখানায় চাকরি করতেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে কারখানার কাজ শেষ করে এক সহকর্মীর সঙ্গে বাইরে বের হন। হঠাৎ দুই ছিনতাইকারী তাঁদের গতিরোধ করেন। এক ছিনতাইকারী কাউছারের গলায় ধারালো চাকু ধরে মুঠোফোন দেওয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা কাউছারের বুকে ছুরিকাঘাত করেন। তখন ছিনতাইকারীরা তাঁর এবং তাঁর সহকর্মীর মুঠোফোন নিয়ে চলে যান। এ সময় কাউছার লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। রাত ৯টার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

কাউছারের ভাই কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের কিন্তু কোনো শত্রু ছিল না। একদম খেটে খাওয়া মানুষ আমার ভাই। কেন আমার ভাইকে খুন করল? আমার আব্বা অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় করে তুলেছেন। আমরা যখন বড় হই, তখন দুই ভাই প্রতিজ্ঞা করি, আমরা আব্বাকে সহযোগিতা করব। কিন্তু আমার ভাইকে ছিনতাইকারীরা নৃশংসভাবে খুন করল।’

কাইয়ুম জানান, ঢাকায় আসার পর ঈদের সময় তাঁরা দুই ভাই একসঙ্গে বাড়িতে যেতেন। ঈদের আগে যে বেতন-ভাতা পেতেন, তা দিয়ে মা–বাবার জন্য শাড়ি-লুঙ্গি কিনতেন। এবার কেবল ব্যতিক্রম। ভাইকে ছাড়া তাঁকে ঈদের সময় গ্রামের বাড়িতে ফিরতে হলো।

ছোট ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন কাইয়ুম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইকে যারা হত্যা করল, তাদের কঠিন শাস্তি দিতে হবে।’

মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, কাউছার হত্যা মামলায় পুলিশ আনিছুর রহমান নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ আদালতকে বলেছে, আনিছুরের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা করাই তাঁর একমাত্র পেশা।

একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে পরিবারে বিপর্যয়

সুমন কুমার পাল স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় বসবাস করতেন। সুমনের বড় ছেলের নাম সুজয় কুমার পাল (৯) ও ছোট ছেলের নাম দুর্জয় কুমার পাল (৪)। ফার্মেসিতে যাওয়ার আগে ছোট ছেলে দুর্জয়কে আদর করে বের হতেন সুমন কুমার। আবার দোকান থেকে মধ্যরাতে ফিরে দুই ছেলেকে আদর করে ঘুমাতেন। রোজকার মতো গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার সময় দোকানের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে রওনা হন তিনি। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিনি দোকানে কেনাবেচা করেন।

হঠাৎ দুই ব্যক্তি সুমনের দোকানের সামনে আসেন। কোনো কিছু না বলে দোকানের ‘ক্যাশ’ থেকে টাকা লুট শুরু করেন তাঁরা। এতে বাধা দিলে হাতুড়ি দিয়ে সুমনের মাথায় আঘাত করতে থাকেন। উপর্যুপরি হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাতের পর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে পাশের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠান। শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাঁকে নেওয়া হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে সুমনের স্ত্রী সেতু রানী পাল বাদী হয়ে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সুমন কুমার পালের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সুমন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সুমনের মৃত্যুর পর দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

সুমনের শাশুড়ি চন্দ্রা রানী পাল প্রথম আলোকে বলেন, সুমনের আয়ে সংসার চলত। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে দুই ছেলে সুজয় ও দুর্জয় প্রায় সময় বাবার খোঁজ করে। বাবা কোথায় গেছে, কবে ফিরবে জিজ্ঞাসা করে।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, সুমন কুমার পাল হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আবদুল করিম গ্রেপ্তার হয়েছেন। সুমনের ভাতিজা অর্কজিৎ পাল প্রথম আলোকে বলেন, কাকার মৃত্যুর পর খুব কষ্ট করে তাঁর সংসার চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হওয়া দুজনের পরিবার দিশাহারা