গতবছর প্রতিটি পেঁয়াজু ২-৩ টাকায় কেনা যেত। এবার দাম পড়বে ৬-১০ টাকা। গতবছর ১০ টাকায় এক প্লেট ছোলা কিনে ইফতার করার সুযোগ ছিল, এবার গুনতে হবে ২০ টাকা। প্রতিটি বেগুনির দাম পড়বে ৬-১০ টাকা, যা গতবার ছিল ৩-৫ টাকা। একটি জিলাপির দাম পড়বে ১০-১৫ টাকা, গতবার যা ছিল ৬-৮ টাকা। এতদিন প্রতিটি বাংলা কলা ৮-১০ টাকায় কেনা যেত। দুই দিন আগে দাম বেড়ে ঠেকেছে ১৫-২০ টাকায়। কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ইফতারের অন্যতম সামগ্রী মুড়ি, চিড়া, লেবু, শসা, কাঁচামরিচসহ বেশকিছু পণ্যের।

এর ফলে চিন্তায় পড়েছেন কম আয়ের মানুষ। তারা সাধারণত পেটভরে ইফতার করেন। এ অবস্থায় ৫০ টাকার ইফতারেও পেট ভরবে না বলে আশঙ্কা করছেন দিনমজুরসহ নিম্ন-মধ্যবিত্তরা।

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে গতকাল শনিবার দেখা যায়, রিকশার নিচে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন চালক নাজমুল ইসলাম শিমুল। বছর ঘুরে রমজান আসায় মনে এক ধরনের স্বস্তি অনুভব করছেন তিনি। তবে এর চেয়ে দুশ্চিন্তার পাল্লাটা কিছুটা ভারী তাঁর। কারণ রোজগারের আয়ের সঙ্গে মেলাতে পারছেন না নিত্যদিনের খরচ। পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা ও জিলাপি কিনতে হিমশিম খেতে হবে তাঁকে। সেখানে ফিরনি, সেমাই, কলা দিয়ে দই-চিড়া খাওয়ার ইচ্ছা শিমুলদের কাছে দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়।

গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বেশির ভাগ খাবার হোটেল, রেস্তোরাঁ এমনকি ফুটপাতের ভাসমান দোকানগুলোতে সরেজমিন রমজানে ইফতারির প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। দোকান মালিক ও বিক্রয় ব্যবস্থাপকরা জানান, এবার বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তির প্রভাব পড়ছে ইফতার সামগ্রীর ওপর। দোকানের চারপাশে দামসহ ইফতারি বিক্রয়ের ব্যানারে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

নগরের ঝাউতলার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম শিমুল বলেন, ‘রোজা রেখে রিকশা চালাতে কষ্ট হয়। এরপরও প্রতিবছর রোজা রাখি। এবারও সব রোজা রাখার ইচ্ছা আছে। তবে দুশ্চিন্তা হচ্ছে বাড়তি খরচ নিয়ে। গতবারের তুলনায় এবার প্রায় সবকিছুর দাম বেশি। বর্তমান বাজারে ৫০ টাকা কিছুই না। অথচ এই টাকা আমার মতো খেটে খাওয়া মানুষের জন্য অনেক কিছু। দুই-তিন প্রকারের ইফতারি কিনতেই শেষ হয়ে যাবে এই টাকা। যে কারণে পেটভরে ইফতার খাওয়া অসম্ভব।’

চকবাজার মোড়ে কথা হয় দিনমজুর রফিকুল মওলার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন আগের মতো কাজ নেই। আয়ের চেয়ে ব্যয় কয়েক গুণ হওয়ায় সবাই কম টাকায় বেশি কাজ করার লোক নিতে চায়। কিন্তু কাজ একেবারে না থাকায় দৈনন্দিন খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। বাড়িতে বউ-বাচ্চার জন্য কোনো টাকা পাঠাতে পারছি না। রোজা চলে এলেও বাজারে দামের উত্তাপ কমেনি। উল্টো কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় কম টাকা দিয়ে কীভাবে প্রতিদিন ইফতার করব? আমার পক্ষে তো ১০০-২০০ টাকা দিয়ে পেটভরে ইফতার করার সুযোগ নেই।’

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ প্রায় ভোগ্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। কয়েক মাস আগে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। একই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকার উপরে। কয়েক মাস ধরে বাজারে মিলছে না চাহিদা মতো ভোজ্যতেল। সরকার প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। সংকটের কারণে কিছু স্থানে তেল মিললেও লিটারপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকা। এতদিন প্রায় সবজির দাম কম ছিল। তবে রোজার দু’দিন আগে বেগুন, শসা, টমেটোসহ প্রায় সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা। কয়েকদিন আগে প্রতি কেজি বেগুন ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হতো, দু’দিন ধরে তা ৫০-৬০ টাকা। প্রায় এক মাস ধরে পাঁচ কেজি টমেটো ১০০-১২০ টাকা ছিল, দু’দিন ধরে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা। ইফতারে সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত ছোট শসা প্রতি কেজি ছিল ৩০-৪০ টাকা; এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ লেবুর। এতদিন লেবুর ডজন ছিল ছোট ৬০-৮০ টাকা, বড় ১০০-১২০ টাকায়। কিন্তু রোজা শুরুর দু’দিন আগে থেকে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। এক ডজন লেবুর দাম ২০০ টাকার উপরে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘নতুন সরকার এলেও পণ্যের বাড়তি দামের নাভিশ্বাস থেকে মুক্তি মেলেনি ভোক্তার। উল্টো কিছু পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। কয়েক মাস ধরে চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে রয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবারের ইফতারের বাজারে। তাই কম আয়ের মানুষ এবার কম টাকায় পেটভরে ইফতার করার সুযোগ পাবে না। প্রশাসনের তদারকির অভাবে যে যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছেন।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইফত র ২০০ ট ক ইফত র ক ইফত র র ২০ ট ক ১০ ট ক

এছাড়াও পড়ুন:

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে খালাসের রায় বহাল

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা বহাল রয়েছে।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পৃথক তিনটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া এবং অপর দুজনের করা পৃথক আপিল মঞ্জুর করে গত ২৭ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় বাতিল করা হয়। এ মামলা থেকে খালাস পান খালেদা জিয়া ও অপর দুজন।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ একটি ও দুদক পৃথক দুটি লিভ টু আপিল করে। পৃথক তিনটি লিভ টু আপিল একসঙ্গে শুনানির জন্য আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ১০ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে আইনজীবী আসিফ হাসান শুনানিতে অংশ নেন।

খালেদা জিয়ার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, এম বদরুদ্দোজা ও মো. রুহুল কুদ্দুস, আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম, জাকির হোসেন ভূঁইয়া ও মো. মাকসুদ উল্লাহ শুনানিতে ছিলেন।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেরিটে শুনানি নিয়ে পৃথক তিনটি লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে ওই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা বহাল রইল।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হওয়া সব কটি মামলার নিষ্পত্তি এখনো হয়নি বলে জানান খালেদা জিয়ার অপর এক আইনজীবী জাকির হোসেন ভূঁইয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিভ টু আপিল খারিজ হওয়ায় খালেদা জিয়াসহ তিনজনকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রইল।’

হাইকোর্ট খালেদা জিয়াসহ তিনজনের আপিল মঞ্জুর করে গত বছরের ২৭ নভেম্বর রায় দিয়েছিলেন। অপর দুজন হলেন হারিস চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ গত মাসে একটি লিভ টু আপিল করে। আর খালেদা জিয়ার বিষয়ে একটি এবং অপর দুজনের বিষয়ে একটিসহ পৃথক দুটি লিভ টু আপিল করে দুদক। শুনানির পর আজ এই তিনটি লিভ টু আপিল খারিজ হলো।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা হয়। একই সাজা হয় অপর আসামিদের। বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের দেওয়া অর্থদণ্ডের আদেশ স্থগিত করেন।

এর ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেন তাঁর আইনজীবীরা। আপিল শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে মামলার পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরির জন্য অনুমতি চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন গত বছরের ৩ নভেম্বর মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। শুনানি শেষে এই আপিল মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।

সম্পর্কিত নিবন্ধ