ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুক্তিযোদ্ধার নাতি পরিচয়ে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে মো. সুমন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এক যুগ পর তদন্তে তার প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়েছে। 

সুমনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় মামলা হয়েছে। মামলা হওয়ার আগে থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন।

গত শুক্রবার বিকেলে আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরলে আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশ সুমনকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার (১ মার্চ) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

১১৬ বার পেছাল সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন

পতেঙ্গা সৈকতে পুলিশের এস আইয়ের উপর হামলা, গ্রেপ্তার ১০ 

গ্রেপ্তার সুমনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া গ্রামে। 

আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি মো.

মোজাফফর হোসেন বলেন, “সুমন শুক্রবার ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরছেন বলে গোপন মাধ্যমে জানতে পারে পুলিশ। পরে ইমিগ্রেশন এলাকায় সদর থানা পুলিশ অবস্থান নেয়। সেখান থেকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে সুমনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া উপজেলার মোগড়া গ্রামের বাসিন্দা নান্নু মিয়ার ছেলে মো. সুমন। ২০১২ সালে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পরীক্ষায় অংশ নেন এবং মুক্তিযোদ্ধার নাতি কোটায় চাকরির জন্য প্রতিবেশী মো. হোসেন মিয়ার মুক্তিযোদ্ধা সনদ দাখিল করেন। প্রকৃতপক্ষে, হোসেন মিয়া তার দাদা নয়। এই প্রতারণার বিষয়ে ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর স্থানীয় যুবক মো. ফরহাদ মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। 

লিখিত অভিযোগের পর তৎকালীন কসবা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেনকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই পুলিশ কর্মকর্তার স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত মো. সুমন ২০১২ সালের ৩ জুলাই ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তিনি ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পরীক্ষার সময় তার প্রতিবেশী হোসেন মিয়ার মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। পরবর্তী বিধি মোতাবেক পুলিশ ভেরিফিকেশনের (ভিআর) পর ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করে ২০১৩ সালের ২৯ মার্চ থেকে কনস্টেবল পদে চাকরি করে আসছিলেন। 

প্রকৃতপক্ষে মো. সুমনের দাখিলকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হোসেন মিয়া তার দাদা নন। অভিযুক্ত মো. সুমনের দাদার নাম আলতাফ আলী হোসেন। সুমন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হোসেন মিয়ার নাতি না হয়েও ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যের মুক্তিযোদ্ধা সনদ দাখিল করে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়ে যাবতীয় বেতন ও রেশনসহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

এদিকে, কুমিল্লার বুড়িচং থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় কনস্টেবল মো. সুমন গত বছরের ১ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। সেসময় তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান ছিল। এরপর ২১ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় মামলা হয়।

ঢাকা/মাইনুদ্দীন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ কর ব র হ মণব ড় য় স মন র

এছাড়াও পড়ুন:

২০১২ সালেও সেভেন সিস্টার্স নিয়ে একই কথা বলেছিলেন ড. ইউনূস: খলিলুর

প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টার্স খ্যাত সাত রাজ্য নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে মন্তব্য করেছেন, তা নতুন কিছু নয়। ২০১২ সালেও একই মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তখন তো এত আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। শুধু তিনি নন, ২০২৩ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীও প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। 

বুধবার (২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার বিমসটেক সম্মেলন বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে‌ তিনি এসব কথা বলেন।

ড. খলিলুর রহমান বলেন, ভারতের সেভেল সিস্টার নিয়ে চীনে যে কথাটা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এটি নতুন নয়। এর আগে ২০১২ সালেও একই কথা তিনি বলেছিলেন। ২০২৩ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লিতে দাঁড়িয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টার্স ও বাংলাদেশকে একটা ভ্যালু চেইনে আবদ্ধ করার কথা বলেন। তিনি এ প্রসঙ্গে সিঙ্গেল ইকোনমি জোনের কথাও বলেছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, কানেকটিভি এ অঞ্চলের সম্ভাবনা দুয়ার খুলে দেবে। যাদের জন্য সমুদ্রে এক্সেস পাওয়াটা কঠিন, তাদের জন্য আরো বেশি। আমরা কিন্তু জোর করে কারো ওপর কানেকটিভি চাপিয়ে দেব না। সে সুযোগও আমাদের নেই। কেউ যদি সেই সুযোগ নেয়, ভাল কথা। প্রধান উপদেষ্টা সম্পূর্ণ সৎ উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন। এখন যদি কেউ অন্য কোনো ব্যাখ্যা দেন, তাহলে তো কিছু করার নেই। শুধু এটুকু বলতে পারি, ভালো উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেছিলেন।

সম্প্রতি চীন সফরকালে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ‘সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত সাত রাজ্যের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য। এই রাজ্যগুলো ভারতের স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। সমুদ্রে পৌঁছানোর জন্য তাদের যোগাযোগের কোরো উপায় নেই। এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ।’ 

তিনি বলেন, ‘এটি বিশাল এক সম্ভাবনা উন্মোচন করে। এটি চীনা অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণ হতে পারে।’

তার মন্তব্য নিয়ে ভারতের রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলা ও নীতিনির্ধারকদের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত দিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে কোরো প্রতিক্রিয়া না জানালেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে খলিলু রহমান বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে কানেকটিভি ছাড়া এগোনো সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিকভাবে যে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে, তা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ বা কানেকটিভিটি থাকতে হবে। জোটবদ্ধভাবে যেটা মোকাবিলা করা সম্ভব, সেটি একক কারো পক্ষে করা সম্ভব না। সেই সম্ভাবনার কথাই বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। 

ঢাকা/হাসান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২০১২ সালেও সেভেন সিস্টার্স নিয়ে একই কথা বলেছিলেন ড. ইউনূস: খলিলুর