Samakal:
2025-04-23@21:57:01 GMT

অ্যান্ড দ্য অস্কার গোজ টু...

Published: 2nd, March 2025 GMT

অ্যান্ড দ্য অস্কার গোজ টু...

অস্কার মঞ্চে আলোর ছড়াছড়ি। তবুও মিলনায়তনজুড়ে প্রখ্যাত সব তারকার ঔজ্জ্বল্যে ম্লান হয়ে যায় সেসব আলোর রোশনাই। এমনই আলো ঝলমল জমকালো মঞ্চে একে একে এসে সোনালি রঙা খাম খুলে বিখ্যাত তারকারা বলছেন, ‘অ্যান্ড দ্য অস্কার গোজ টু...’। একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানের এই চেনা চিত্র আবারও দেখতে আরও কয়েক ঘণ্টা বাকি।

আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় আবারও দেখা যাবে এই চিত্র। তাইতো পুরো পৃথিবীর বিনোদনপ্রেমীদের নজর এখন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউডের ডলবি থিয়েটারে। এখানেই ২৪টি বিভাগে সেরা চলচ্চিত্র শিল্পী-কুশলীকে দেওয়া হবে অস্কার পুরস্কার। জাঁকজমক আয়োজনের মাধ্যমে গত বছর মুক্তিপ্রাপ্ত বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রের সেরা কাজগুলোকে এবারের আসরে স্বীকৃতি দেবে একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস। বরাবরের মতো মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে হেভিওয়েট তারকারা নজরকাড়া পোশাক পরে লালগালিচায় পা মাড়াবেন। অস্কার অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচার করবে যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি চ্যানেল। অনুষ্ঠান চলবে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা।

ওয়াল্ট ডিজনির মালিকানাধীন এবিসি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশে সরাসরি দেখানো হবে জমকালো এই আয়োজন। বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় স্টার মুভিজ এসডি, স্টার মুভিজ এইচডি, স্টার মুভিজ সিলেক্ট এসডি, স্টার মুভিজ সিলেক্ট এইচডি চ্যানেলে উপভোগ করা যাবে অনুষ্ঠানটি। ফলে বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক টিভি সেটের সামনে বসে উপভোগ করবেন ৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের জমকালো মহাযজ্ঞ।

৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসকে ঘিরে এখন চলছে নানান জল্পনা। চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি কার কার ভাগ্যে জুটবে তা নিয়ে গোটা দুনিয়ার সিনেমাপ্রেমীদের আগ্রহ তুঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই হলিউডের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এই পুরস্কার নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এবারের আয়োজনের কিছু তথ্য।

কার হাতে অস্কার!

২৪টি ক্যাটেগরিতে অস্কার ঘোষণা করা হলেও সবচেয়ে আলোচনার জন্ম দেয় বেস্ট পিকচার, বেস্ট অ্যাকটর, বেস্ট অ্যাকট্রেস ও বেস্ট ডিরেক্টর– এই চার ক্যাটেগরি। এবার বেস্ট পিকচার বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে গেল বছরের আলোচিত ১০ সিনেমা। এ ছাড়া বাকি তিন বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছেন পাঁচজন করে। প্রতি বছর অস্কার ঘোষণার আগে ভবিষ্যদ্বাণীর অন্ত থাকে না। ২০২৪ সালের মার্চের ১ তারিখ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো থেকে সেরা ছবি তথা বেস্ট পিকচার ক্যাটেগরিতে সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ১০টি সিনেমা।

চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মাঝে এখন একটাই প্রশ্ন–কে হবে এবারের বিজয়ী? পুরস্কারপ্রাপ্তির দৌড়ে এগিয়ে থাকা নামগুলো নিয়ে একটি অনুমান করাই যায়। এবারের অস্কারে ‘সেরা ছবি’র দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে এডওয়ার্ড বার্গার পরিচালিত ‘কনক্লেভ’। এরইমধ্যে সিনেমাটি গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা ও এসএজি পুরস্কার জিতেছে। শন বেকারের ‘আনোরা’ এবং ব্র্যাডি করবেটের ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ও জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

পরিচালনা বিভাগে এগিয়ে রয়েছেন শন বেকার (আনোরা)। গোল্ডেন গ্লোব ও নিউইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিক সার্কেল অ্যাওয়ার্ড জেতার পর অনেকেই মনে করছেন এবার তিনি অস্কারও জিতে নিতে পারেন। তবে ব্র্যাডি করবেট (দ্য ব্রুটালিস্ট) ও জাস্টিন টারটেল (দ্য নিট-পিকার) পেয়ে যেতেন পারেন অস্কার।

‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ ছবির জন্য অড্রিয়েন ব্রডির নাম শীর্ষে থাকলেও, আ কমপ্লিট আননোন ছবিতে বব ডিলানের চরিত্রে অভিনয় করা টিমোথি শ্যালামে শেষ মুহূর্তে আলোচনায় উঠে এসেছেন। শ্যালামে যদি বিজয়ী হন, তবে তিনি হবেন ৩০ বছরের কম বয়সী দ্বিতীয় সেরা অভিনেতা।

সেরা অভিনেত্রী বিভাগে ডেমি মুর (দ্য সাবস্ট্যান্স) এবং ফার্নান্দা তোরেস (আই অ্যাম স্টিল হিয়ার) শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। মুর ইতোমধ্যে এসএজি পুরস্কার জিতেছেন, যা তাকে এক ধাপ এগিয়ে রাখছে। শেষ মুহূর্তে কোনো চমক আসতে পারে।

সেরা পার্শ্ব-অভিনেতা বিভাগে আ রিয়াল পেইন ছবিতে অভিনয়ের জন্য কিয়েরন কলকিন এগিয়ে রয়েছেন। দ্য ব্রুটালিস্ট ছবির গাই পিয়ার্সও আছেন জনপ্রিয়তার তালিকায়। সেরা পার্শ্ব-অভিনেত্রী বিভাগে এমিলিয়া পেরেজ ছবির জোয়ে সালদানা এগিয়ে রয়েছেন, যিনি ইতোমধ্যে গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা ও এসএজি পুরস্কার জিতেছেন। তবে কনক্লেভ ছবির ইসাবেলা রোজলিনি যদি বিজয়ী হন, এটি হতে পারে বড় চমক।

সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য বিভাগে আনোরা ছবির চিত্রনাট্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন সমালোচকের প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং এটি অস্কারও জিততে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ‘নিকেল বয়েজ’ ছবির চিত্রনাট্যও দারুণ। সেরা অ-ইংরেজি ভাষার ছবি গোল্ডেন গ্লোব ও বাফটায় সাফল্য পাওয়া ফরাসি ছবি এমিলিয়া পেরেজ এই বিভাগে এগিয়ে রয়েছে। ব্রাজিলের আই অ্যাম স্টিল হিয়ার ছবির সম্ভাবনাও উজ্জ্বল। আপনার কি মনে হয়, এই পূর্বাভাস মিলবে? নাকি আমরা দেখতে পাবো অবিশ্বাস্য কিছু চমক?

এবারের আসরের সঞ্চালক

আমেরিকান টিভি তারকা কোনান ও’ব্রায়েন একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের ৯৭তম আসর সঞ্চালনা করবেন। এবারই প্রথম এই দায়িত্বে দেখা যাবে তাঁকে। এমি অ্যাওয়ার্ড জয়ী কোনান ও’ব্রায়েন একাধারে টেলিভিশন সঞ্চালক, গল্পকার, প্রযোজক ও কমেডিয়ান। ‘‘লেট নাইট উইথ কোনান ও’ব্রায়েন’’, ‘‘দ্য টুনাইট শো উইথ কোনান ও’ব্রায়েন’’ ও ‘কোনান’ অনুষ্ঠান তিনটির সঞ্চালক হিসেবে কোনান ও’ব্রায়েনের দুনিয়াজোড়া খ্যাতি রয়েছে। দুই দশকের সঞ্চালনা ক্যারিয়ারের আগে ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’ ও ‘দ্য সিম্পসনস’ অনুষ্ঠানের লেখক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে ‘‘কোনান ও’ব্রায়েন নিডস অ্যা ফ্রেন্ড’’ পডকাস্ট সঞ্চালনা করছেন তিনি। এছাড়াও ৬১ বছর বয়সী এই গল্পকার সম্প্রতি শুরু করেছেন ভ্রমণবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘‘কোনান ও’ব্রায়েন মাস্ট গো’’। অস্কারের দুই নির্বাহী প্রযোজক রাজ কাপুর ও কেটি মুল্যান কোনান ও’ব্রায়েনকে নিয়ে বলেন, ‘দুর্দান্ত অস্কার সঞ্চালনার সমস্ত গুণ আছে কোনানের। তিনি অসাধারণ রসিক, ক্যারিশম্যাটিক ও মজার মানুষ। নিজেকে টেলিভিশন লাইভ অনুষ্ঠানের জন্য পূর্ণ দক্ষ হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। হলিউডের সবচেয়ে তাৎপর্যময় রাতে নতুন, রোমাঞ্চকর ও উদযাপনময় একটি অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে কাজ করতে আমরা মুখিয়ে আছি।’

লালগালিচার জৌলুস

আয়োজকেরা এবার ৯০০ ফুট দীর্ঘ লালগালিচা রেখেছেন। বরাবরের মতো পুরস্কার বিতরণ শুরুর আগে বিশ্বের নামিদামি তারকারা বলগাউন ও প্যান্টস্যুটসহ নজরকাড়া পোশাকে ও দামি অলঙ্কারে জৌলুস ছড়াবেন। আমন্ত্রিত অতিথিদের অনুভূতি জানতে ডলবি থিয়েটারের বাইরে ‘রেড কার্পেট শো’ সঞ্চালনা করবেন আমেরিকান নৃত্যশিল্পী-অভিনেত্রী জুলিয়ান হাফ এবং জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব জেসি পামার। বাংলাদেশ সময় রোববার দিবাগত রাত ৪টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে এ আয়োজন। জেসি পামার এবারই প্রথমবারের মতো এবং জুলিয়েন হাফ এই নিয়ে টানা দুই বছর ধরে এ শোটি সঞ্চালনা করছেন। ৩০ মিনিটের এই বিশেষ আয়োজনে থাকবে অস্কারের মনোনীত অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী এবং পারফরমারদের নানা বিষয়।

মঞ্চ মাতাবেন সংগীতশিল্পীরা

৯৭তম অস্কারে মনোনীত সেরা পাঁচটি মৌলিক গানের পরিবেশনা থাকছে অনুষ্ঠানে। এবারের আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করবেন দোজা ক্যাট, সিন্থিয়া এরিভো, আরিয়ানা গ্র্যান্ডে, ব্ল্যাকপিংকের লিসা, কুইন লতিফা এবং রায়ে। এ ছাড়া দলীয় পরিবেশনায় থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের কোরাস দল ‘লস অ্যাঞ্জেলেস মাস্টার কোরাল’। এরিবো ও গ্রান্দে এবারের অস্কারে মনোনয়নও পেয়েছেন।

 

‘উইকেড’ ছবির জন্য এরিবো পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রী বিভাগে এবং গ্রান্দে রয়েছেন সেরা পার্শ্ব চরিত্রের দৌড়ে। শোনা যাচ্ছে, অস্কারের অনুষ্ঠান শুরু হবে তাদের পরিবেশনা দিয়ে। তারা ‘উইকেড’ ছবি থেকে একটি বা দুটি গান পরিবেশন করবেন। কুইন লতিফা অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ২০০৩-এ, ‘শিকাগো’ ছবির জন্য। এছাড়া গত একবছরে যারা প্রয়াত হয়েছেন তাদের সম্মান জানানো হবে ‘ইন মেমোরিয়াম’ পর্বে। এছাড়াও আরও অনেক তারকাশিল্পী মঞ্চ মাতাবেন।

কোটি টাকার উপহার

৯৭তম অস্কারে মনোনীত ২০ জন অভিনয়শিল্পী ও পাঁচ পরিচালকের জন্য থাকছে উপহারের ব্যাগ। এতে থাকছে প্রায় ৬০টি উপকরণ! সব মিলিয়ে এগুলোর দাম ১ লাখ ৭০ হাজার ডলার (১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা)।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র অন ষ ঠ ন র জন য এক ড ম করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘কৃষক আত্মহত্যা করলে মানুষের মুখে খাবার তুইলা দিব কারা’

‘আমার আব্বা এনজিও এবং সারের দোকান থেকে ঋণ নিয়া পেঁয়াজ চাষ করছিল। দুই বিঘা জমিতে চাষ করতে খরচ হইছে দেড় লাখ টাকা। কিন্তু বিক্রি করে পাইছে মাত্র ৫৮ হাজার টাকা। ঋণ শোধের চিন্তায় আব্বা পেঁয়াজ ক্ষেতেই বিষপানে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলো। আব্বা পেঁয়াজ বিক্রি করছিল ৬০০ টাকা মণ। অথচ এহন বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি অয় ২ হাজার টাকায়। কারণ এহন কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ নাই। আমার আব্বার মতো কৃষকরা যদি এভাবে ঠইকা আত্মহত্যা করে, তাইলে দেশের মানুষের মুখে খাবার তুইলা দিব কারা?’

ঘাম ঝরানো কষ্টের ফসলের দাম না পেয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগরে কৃষক সাইফুল শেখ অত্মহত্যা করেন। তাঁর করুণ পরিণতির কথা কাঁদতে কাঁদতে তুলে ধরলেন মেয়ে রোজেফা খাতুন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ক্ষুদ্র কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মূল্য বঞ্চনা’ তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোজেফা কৃষক বাঁচানোর আকুতি জানালেন করুণ স্বরে।

খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি) আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে মেহেরপুরের প্রান্তিক কৃষক সাইফুল শেখের আত্মহত্যার ঘটনা সরেজমিন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বক্তারা বলেন, কৃষিপ্রধান দেশে কৃষকের আত্মহত্যা শুধু ট্র্যাজেডি নয়, লজ্জাজনক। কাঠামোগত শোষণের শিকার হয়ে প্রান্তিক কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ শোষণ থেকে কৃষককে বাঁচাতে কৃষিমূল্য কমিশন গঠন, ন্যায্য বাজার ব্যবস্থাপনা তৈরি, ঋণ ব্যবস্থাপনা সহজীকরণ ও আমদানি নীতির সংস্কার প্রয়োজন।

খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের সভাপতি এম জয়নুল আবেদীন বলেন, কৃষক যখন তাঁর ফসল বাজারে তোলেন, তখনই দেখা যায় সে কৃষিপণ্যটি আমদানি করা হচ্ছে। ফলে কৃষক তাঁর ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। কৃষককে মেরে ফেলে সস্তায় কৃষিপণ্য কেনার অধিকার কারও নেই। উৎপাদক ও ভোক্তা– দু’জনের কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা সরকারকে নিশ্চিত করার আহ্বান জানান জয়নুল আবেদীন।

কীভাবে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেটার উদাহরণ তুলে ধরে খানির সহসভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিক বলেন, ফসল যখন কৃষকের ঘরে থাকে, তখন এর দাম থাকে না; কিন্তু ফসল যখনই মহাজনের হাতে যায়, তখনই দাম বেড়ে যায়। মেহেরপুরের কৃষক সাইফুল শেখ যখন পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আত্মহত্যা করছেন, তখন পেঁয়াজের মণপ্রতি দাম ছিল ৬০০ টাকা। ঠিক তার দুই সপ্তাহ পর মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম উঠেছে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। অথচ এখন আর কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ নেই। মুনাফা লুটছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা আত্মহত্যার ঘটনা দেখছি; কিন্তু কৃষক যখন পেশা পরিবর্তন করে ভ্যান চালানো শুরু করেন, তা কি আত্মহত্যা নয়?

ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কৃষকরা মহাজনের কাছ থেকে, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে চড়া সুদে ঋণ নেন। প্রতি সপ্তাহে তাঁকে তা পরিশোধ করতে হয়। যখন ফসল ঘরে আসে, তখন মহাজন ও এনজিও প্রতিনিধিরা এসে হাজির হয় ঋণের টাকার জন্য। তখন বাধ্য হয়ে তাঁকে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি সরকারের পক্ষ থেকে কৃষককে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার পথ সহজ করা ও মৌসুমি ঋণ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেন। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা চরম অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সম্প্রতি সরকার যে ধানের দাম নির্ধারণ করেছে, সেটা কৃষকের জন্য লাভজনক হবে না।

কৃষক দাদন নেন মহাজনের কাছ থেকে; কিন্তু ব্যাংকে যান না উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ব্যাংকে এত কাগজপত্র দিতে হয় যে, কৃষক ঋণ নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। ব্যাংক ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়াটা কৃষকের জন্য সহজতর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে খানির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠক উম্মে সালমা। সেখানে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে– লোকসান ঠেকাতে সরকারের সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ও চাল কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করা, কৃষকের ফসল বিক্রির সুবিধার্থে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা, ফসল সংরক্ষণের জন্য কৃষি জোনভিত্তিক কমিউনিটি সংরক্ষণাগার নির্মাণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য শস্য বীমা চালু, ফসলহানি হলে ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা।

পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক-প্রানের নির্বাহী প্রধান নুরুল আলম মাসুদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ইনসিডইন বাংলাদেশের অপারেশন অফিসার মো. মুশফিকুর রহমান ও একশনএইডের উপব্যবস্থাপক অমিত রঞ্জন দে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এক কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ২২ থেকে ২৫ টাকা হলেও কৃষকদের ১৪ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। প্রতি বিঘায় খরচ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হলেও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় মণ। ভেজাল পেঁয়াজ বীজ ও কীটনাশক প্রয়োগ করে দেশব্যাপী কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ