নিটোরে ভর্তি, আবেদন সময় বাড়ল, দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগসহ জেনে নিন বিস্তারিত
Published: 2nd, March 2025 GMT
বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি কোর্সের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে ভর্তিতে আবেদনের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন ১৬ মার্চ পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন আগ্রহীরা। আবেদনের শেষ সময় ছিল গত ২৬ ফেব্রুয়ারি, রাত ১২টা পর্যন্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) ৪ (চার) বছর একাডেমিক ও ১ বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপসহ সর্বমোট ৫ (পাঁচ) বছর মেয়াদি এ কোর্সের আবেদন অনলাইনে করতে হবে। এবারও দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকছে।
আরও পড়ুনডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা: ৫৪৫ আসনের ফলাফল কখন, জানা যাবে দুপুরে২ ঘণ্টা আগেএর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীরা। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী প্রার্থীদের জন্য একটি ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য দুটি আসন সংরক্ষিত থাকবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না পাওয়া গেলে আসন দুটি মেধার ভিত্তিতে পূরণ করা হবে।
ভর্তি আবেদনের যোগ্যতা—
বাংলাদেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড বা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড অথবা দেশের বাইরে যেকোনো স্বীকৃত বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি অথবা সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান উভয় পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৮ থাকতে হবে। আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ ৩ দশমিক ৫ থাকতে হবে।
শুধু ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রাপ্ত জিপিএর যোগফল ন্যূনতম ৭ থাকতে হবে। তবে এককভাবে কোনো পরীক্ষার একটিতে গ্রেড পয়েন্ট ৩ থাকতে হবে।
যেসব প্রার্থী ২০২১ সালের আগে এসএসসি ও ২০২৩ সালের আগে এইচএসসি পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ, তাঁদের আবেদন করার দরকার নেই।
ভর্তি পরীক্ষার নম্বর বণ্টন—
পদার্থবিজ্ঞানে ৩০, রসায়নে ৩০ ও জীববিজ্ঞানে ৩০ নম্বর এবং ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানে ১০ নম্বর; সর্বমোট ১০০ (এক শ) নম্বরের ভিত্তিতে এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ (এক) নম্বর এবং ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা হবে। প্রার্থীদের এসএসসিতে প্রাপ্ত গ্রেডিংয়ের সঙ্গে ৮ ও এইচএসসিতে প্রাপ্ত গ্রেডিংয়ের সঙ্গে ১২ গুণ করে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরসহ মেধাতালিকা প্রস্তুত করা হবে। প্রাপ্ত নম্বর সমান হলে এইচএসসি পরীক্ষায় পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত মোট পয়েন্টের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।
ভর্তির প্রক্রিয়া—
ভর্তির সময় প্রত্যেক প্রার্থীকে এসএসসি ও এইচএসসি অথবা সমমানের পরীক্ষার মূল সনদ, নম্বরপত্র ও শারীরিক সুস্থতার সনদ (মেডিকেল ফিটনেস) অত্র প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে হবে। অত্র প্রতিষ্ঠানে কোনো আবাসিক ব্যবস্থা নেই, ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং কোর্স শেষে ১ (এক) বছর ইন্টার্নশিপ প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
অনলাইন আবেদনপ্রক্রিয়া এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করতে হবে। এ ছাড়া ১,০০০ /- (এক হাজার) টাকা চলতি হিসাব নং ‘0200001767274 ’, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, শ্যামলী শাখা, ঢাকা-এর অনুকূলে বাংলাদেশের অগ্রণী ব্যাংকের যেকোনো অনলাইন শাখায় জমা দিয়ে রসিদ সংগ্রহ করতে হবে।
আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, আবেদনের সময় বৃদ্ধি, এমসিকিউ ১০০, মেধাতালিকা ২০০ নম্বরে০১ মার্চ ২০২৫অনলাইনে আবেদনের জন্য আবেদনকারীর ছবি ও স্বাক্ষর (সর্বোচ্চ 300kb, JPG) এবং ব্যাংক জমা রসিদের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ 400kb, JPG) প্রয়োজন হবে। অনলাইন আবেদনের বিস্তারিত নির্দেশনা ওয়েবসাইট দেখে যথাযথভাবে আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
আবেদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তারিখ
আবেদন শুরু হয়েছে: ১৬ জানুয়ারি থেকে
আবেদন শেষ: ২৬ মার্চ, রাত ১২টা পর্যন্ত
প্রবেশপত্র সংগ্রহ: আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে ১ মে (রাত ১২টা পর্যন্ত) প্রবেশপত্র সংগ্রহ করা যাবে।
ভর্তি পরীক্ষা: ২ মে (শুক্রবার)। সকাল ১০টায় শুরু হবে। পরীক্ষা হবে ১ ঘণ্টা।
আরও পড়ুন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ভর্তি, দেখুন বিস্তারিত০১ মার্চ ২০২৫প্রবেশপত্র সংগ্রহের নিয়ম
২৪ এপ্রিল থেকে ১ মে (রাত ১২টা পর্যন্ত) শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইট থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। ডাউনলোড করা প্রবেশপত্রের রঙিন প্রিন্ট কপিসহ ভর্তি পরীক্ষার দিন উপস্থিত হতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষার ভেন্যু
২ মে সকাল ১০টায় শুরু হবে ভর্তি পরীক্ষা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি (সাবেক আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনি স্কুল অ্যান্ড মহিলা কলেজ) কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে ১ ঘণ্টার পরীক্ষা।
আবেদনের বিস্তারিত ও আবেদনের পদ্ধতি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ক ষ পর ক ষ য় পর ক ষ র র ত ১২ট র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
‘ঈদের মধ্যে কষ্ট আরও বহুগুণ বেড়ে গেছে’
শাহরিয়ার বিন মতিনের ঈদ মানেই ছিল বাবার সঙ্গে ঈদগাহে যাওয়া। মায়ের হাতের চিকেন বিরিয়ানি খাওয়া, বোনকে নিয়ে আনন্দ করা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শাহরিয়ারের মৃত্যুতে এবারের ঈদে কোনো আনন্দ নেই তাঁর পরিবারে। আনন্দের বদলে সঙ্গী হয়েছে বেদনা। ঈদের আনন্দঘন দিন সামনে রেখে কান্না করে সময় কাটছে মা–বাবা ও দাদির।
শাহরিয়ার বিন মতিনের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমড়াশাসন উত্তরপাড়া গ্রামে। শেখ আবদুল মতিন ও মা মমতাজ বেগমের একমাত্র ছেলে তিনি। তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া শেখ মুনতাহিনা স্মাইল (৮) নামে শাহরিয়ারের এক ছোট বোন আছে।
স্বজনেরা জানান, বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকার কুড়িল কুড়াতলী বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে শাহরিয়ারের পরিবার। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে এইচএসসি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঈশ্বরগঞ্জ আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার গত বছরের ১০ জুলাই ঢাকায় মায়ের কাছে চলে গিয়েছিলেন। পরে মিরপুর-২ নম্বরে খালার বাসায় বেড়াতে যান। সেখান থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৮ জুলাই বিকেলে ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরের কাছে গুলিবিদ্ধ হন। গুলি ডান চোখের পাশ দিয়ে ঢুকে মাথা ভেদ করে বের হয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুলাই শাহরিয়ার মারা যান। পরে ময়নাতদন্তের পর লাশ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। এইচএসসি পরীক্ষা অসম্পন্ন করে মারা গেলেও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে ঘোষিত ফলাফলে শাহরিয়ার জিপিএ-৪.৮৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
রোববার সকালে শাহরিয়ারদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে হাতে মেহেদি নিয়ে ঘুরছিল শেখ মুনতাহিনা। সে বলে, ‘হাতে মেহেদি দেওয়ার জন্য ঘুরছি। অন্য ঈদে আমার ভাই হাতে মেদেহি দিয়ে দিত। ঈদের দিন ঘুরতে নিয়ে যেত, খেলা করত আমার সঙ্গে। কিন্তু এবার ভাইয়া নাই।’
শাহরিয়ারকে বাড়ির সামনেই কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে কবরটি পরিষ্কার করা হয়েছে। ছেলের কবর দেখছিলেন বাবা আবদুল মতিন। ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছেন জানিয়ে আবদুল মতিন বলেন, ‘ছেলে হারানোর বেদনার কথা আর বলতে চাই না। ঈদের মধ্যে কষ্ট আরও বহুগুণ বেড়ে গেছে।’
নিজের মুঠোফোন থেকে গত রমজানের ঈদ ও কোরবানির ঈদের ছবি দেখিয়ে আবদুল মতিন বলেন, ‘ঈদের দিন সকালে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ঈদগাহে যেতাম। বাড়িতে এসে একসঙ্গে খাবার খেতাম। প্রাইভেট চাকরি করায় সারা জীবন দেশের বিভিন্ন এলাকায় সন্তানদের নিয়ে থাকলেও ঈদে বাড়িতে আসতাম। পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দ হতো। স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ছবি তুলতাম। বেশি ছবি তুলতাম বলে সে (শাহরিয়ার) মাইন্ড করত। সে বলত, এত ছবি তুলো কেন? এখন সেই ছবিগুলোই স্মৃতি হিসেবে নিয়ে বেঁচে আছি।’
শাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন আবদুল মতিন। মামলার তদন্তকাজ চলছে। দ্রুত যেন বিচার নিষ্পত্তি হয়, এমন দাবি জানিয়ে আবদুল মতিন বলেন, ‘ছেলে হারানোর আমাদের সারা জীবনের কান্না, এ কান্না থামার না। আমরা আরও বেশি কষ্ট পাই, যখন দেখি দুর্নীতি-ঘুষ এখনো আছে। তখন মনে হয়, বাচ্চাদের জীবন বৃথা। যদি দেখতাম জীবনের বিনিময়ে দেশের পরিবর্তন এসেছে, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে, তাহলে শান্তি পেতাম। কিন্তু দেশ দুর্নীতিমুক্ত না দেখলে বাচ্চাদের আফসোস থাকবে, আক্ষেপ থাকবে কেন সন্তানেরা জীবন দিল।’
আবদুল মতিন বলেন, ‘আমি ২৯ বছরে বিয়ে করেছি। আমার বয়সী বন্ধুদের দেখি নাতি নিয়ে ঘুরে। তাই চিন্তা করেছিলাম, ছেলেকে ২১ বছরে বিয়ে করাব, তার মায়ের সঙ্গে সেই গল্প করতাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।’
শাহরিয়ার তাঁর গ্রামে ‘রাজ’ নামে পরিচত ছিলেন। তাঁর দাদা মারা যান ২০২১ সালে। এরপর দাদি একা থাকায় এবং উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সুবাদে দাদির কাছে থাকতেন তিনি। আদরের নাতি হারিয়ে রওশন আরা বেগম বলেন, ‘হাসিনা আমার নাতিরে গুলি কইরা মারাইছে। আমি হাসিনার বিচার চাই। হাসিনার লাগি আমার নাতি কবরে, আমার বাড়িতে ঈদ নাই।’
শাহরিয়ার যে ঘরে থাকত, সেই ঘর গুছিয়ে রাখা হয়েছে। বইপত্র তাকে তুলে রাখা হয়েছে। ছেলে হারানোর বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছে পরিবারটি। শাহরিয়ার চিকেন বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করত জানিয়ে মা মমতাজ বেগম বলেন, ‘ছেলে চলে যাওয়ার পর আর রান্না করিনি বিরিয়ানি। আমার হাতে বিরিয়ানি রান্না হবে না। রোজায় আলুর চপ পছন্দ করত। ঈদের নামাজ পড়ে এসেই ছেলে জড়িয়ে ধরত সালামি নিতে। কিন্তু আমার ছেলে তো আর আসবে না।’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা।
মমতাজ বেগম বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটায় ছেলের কোনো চাহিদা ছিল না। আমার পছন্দমতো যা কিনে দিতাম, তাতেই আনন্দিত হতো। চাঁদ রাতে বাড়িতে কত আনন্দ করত। কিন্তু এবার আমাদের ঈদ নাই।’ ছেলে হত্যার বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি, তাতে সন্তান হত্যার বিচার পাব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ। তবে মরার আগে সন্তান হত্যার বিচার চাই।’