গাজীপুরের টঙ্গীর হাজি মাজার বস্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৬০ জনকে আটক করেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া অভিযান চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। অভিযানে উদ্ধার করা হয় নগদ টাকা, ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ছুরি, চাকুসহ বিভিন্ন জিনিস।

গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে গিয়ে দেখা যায়, বস্তির চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছেন র‍্যাব, পুলিশ, সেনা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা। বস্তিটিতে সারি বাঁধা কয়েক শ টিনশেড ঘর। প্রতিটি ঘরে যাতায়াতের জন্য আছে সরু গলির মতো রাস্তা। সেনাসদস্যরা এক এক করে বস্তির প্রতিটি ঘর তল্লাশি করেন। এ সময় বিভিন্ন ঘর থেকে উদ্ধার হয় মাদক বিক্রির ৩৯ হাজার ৪০০ টাকা, দুটি চাকু, দুটি ছোরাসহ বিভিন্ন জিনিস। এ সময় ৬০ জনকে আটক করা হয়।

অভিযান চলাকালে কথা হয় টঙ্গী পশ্চিম থানার এক উপপরিদর্শকের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যারা চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বেশির ভাগই এ বস্তির বাসিন্দা। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন জায়গায় অপরাধ করে এসে এই বস্তিতে আশ্রয় নেয়। কিছুদিন আগেও মহাসড়কে কে আগে ছিনতাই করবে, এ নিয়ে এখানকার দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। আমরা প্রায়ই অভিযান চালিয়ে এদের অনেককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠাই। কিন্তু কিছুদিন পর আবার কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে অপরাধে জড়ায়।’

কথা হয় বস্তির কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে। এর মধ্যে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রেহানা আক্তার বলেন, ‘আমরা সকালবেলা কামে চইল্যা যাই। বাসায় আহি রাইত ১০–১১টায়। এর মধ্যে কে, কী করল, সেইড্যা দেখার সময় নাই। তয়ে মাঝেমধ্যেই দেহি বাইরের কিছু লোক (বহিরাগত) বস্তিতে ঘোরাঘুরি করে। কিছু পোলাপাইন তাগোর কাছে মাদক বেচে। এসব নিয়্যা আমরা কেউ কিছু বলতে গেলেই সমস্যা। মাঝেমধ্যে মারধরও করে। হেললাইগ্যা সবকিছু দেইখ্যাও কেউ কিছু কই না। আমরা নিজেরাও সব সময় আতঙ্কে থাকি।’

অভিযানটি পরিচালিত হয় গাজীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদের বন্ধের পর টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু রোববার

ঈদ উপলক্ষে ৯ দিন বন্ধ থাকার পর ৬ এপ্রিল আবার শুরু হচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও খাদ্য অধিদপ্তরের সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী দামে তেল, ডাল ও চিনি বিক্রি করে সরকারি সংস্থা টিসিবি। সংস্থাটি স্মার্ট পরিবার কার্ডের মাধ্যমে পরিবেশক বা সরবরাহকারীর দোকানের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি করে। আবার স্মার্ট কার্ড ছাড়া সর্বসাধারণের জন্য ট্রাকে করেও তেল, ডাল, চিনি বিক্রি করে সংস্থাটি।

অন্যদিকে খোলাবাজারে বিক্রি বা ওএমএস কর্মসূচির আওতায় ট্রাকে করে সাশ্রয়ী দামে চাল ও আটা বিক্রি করে খাদ্য অধিদপ্তর। ট্রাকের পাশাপাশি নির্ধারিত পরিবেশকের দোকানের মাধ্যমেও চাল-আটা বিক্রি করে সংস্থাটি।

সরকারি এই দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, ঈদের আগে সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ পর্যন্ত সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চালিয়েছিলেন তাঁরা। সরকারি ছুটি শেষে ৬ এপ্রিল আবার এ কার্যক্রম শুরু হবে।

বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৬০ লাখ পরিবারের মধ্যে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোট এক কোটি পরিবার কার্ডের বিপরীতে এ পণ্য বিক্রি করা হতো। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে এসব কার্ডের মধ্যে একটি বড় অংশ অযোগ্য বা ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করে। এ কারণে সরকার প্রায় ৪৩ লাখ পরিবার কার্ড বাতিল করে। পাশাপাশি নতুন করে উপকারভোগী চিহ্নিত করে নতুন স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রমও চলছে।

অন্যদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ট্রাকে করেও পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। প্রতিদিন রাজধানীর ৫০টি স্থানে, চট্টগ্রাম নগরীর ২০টি স্থানে এবং বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি কিছু শ্রমঘন জেলায় ট্রাকে পণ্য বিক্রির এ কার্যক্রম পরিচালনা করে সংস্থাটি। টিসিবির প্রতিটি ট্রাকে ২০০ জনের পণ্য থাকে। যদিও টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ভিড় করেন প্রতিদিন।

সংস্থাটি জানায়, টিসিবির ট্রাক থেকে যেকোনো ভোক্তা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে পারেন। টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি কিনতে পারেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা ও চিনি ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। আর রমজান উপলক্ষে গত মাসে ছোলা ও খেজুরও বিক্রি করা হয়েছিল টিসিবির ট্রাকে।

টিসিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৬ এপ্রিল থেকে স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে টিসিবির বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হবে। তবে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি চালু হবে আরও কয়েক দিন পর। কারণ, এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরে জানানো হবে।

এদিকে খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওএমএস ট্রাকের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরে ৭০টি স্থানে ট্রাক সেলের মাধ্যমে এবং প্রায় দেড় শ পরিবেশকের দোকানের মাধ্যমে চাল-আটা বিক্রি করা হয়। ট্রাক ও পরিবেশকের দোকান থেকে একজন ভোক্তা পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি আটা কেনার সুযোগ পান।

রাজধানীতে ওএমএসের পণ্য বিক্রির কাজটি করে থাকে খাদ্য অধিদপ্তরের সংস্থা ঢাকা রেশনিং। ঢাকা রেশনিংয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক শাব্বীর আহমেদ মুরাদ বলেন, ‘৬ এপ্রিল আমাদের সব ধরনের পণ্য বিক্রি কার্যক্রম আবার শুরু হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ