এক সময়ের বনদস্যুর ‘বয়ানে’ সুন্দরবনে দস্যুতার দিনগুলো
Published: 2nd, March 2025 GMT
সুন্দরবনে দস্যুতায় টাকা ছিল। কিন্তু সে অবৈধ টাকা নিজেরা উপভোগ করতে পারতেন না। বনের মধ্যে সব সময় মৃত্যুঝুঁকি তাড়িয়ে বেড়াত, এক ঘণ্টা শান্তির ঘুমও হতো না। মোটেও সুখ ছিল না। দস্যুতার জগতে গিয়ে নিজের প্রাপ্তি বলতে নামের সঙ্গে জুড়ে গেছে ডাকাত শব্দটি। স্ত্রী-সন্তানদেরও চলতে হতো মাথা নিচু করে। কথাগুলো একসময়ের বনদস্যু আল-আমীনের।
আল-আমীন বলেন, দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে তিনি ভালোই আছেন। আর কখনো ওই অন্ধকার পথে পা বাড়াতে চান না তিনি। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা হয় কয়রা উপজেলার সুন্দরবনঘেঁষা খোড়লকাঠি বাজারসংলগ্ন কয়রা নদীর তীরে। ছোট বাজারটিকে সুন্দরবন থেকে আলাদা করেছে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়রা নদী।
নদীর ওপারের সুন্দরবনের ত্রাস ছিলেন আল-আমীন। তিনি বলেন, তখন শরীফ বাহিনী ছিল বড় দস্যুদল। সেই দলে যোগ দিয়ে ডাকাত হয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে এলাকায় নাম ছড়িয়ে গেলে বাড়ি ফেরার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা সুন্দরবনের মধ্যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনজীবীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন। র্যাব আর কোস্টগার্ডের অভিযানের ভয়ে বনের মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত ভয় আর উৎকণ্ঠায় কাটত তাঁদের।
আল-আমীনের বলতে থাকেন, ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছিল তাঁর গণ্ডি। বাড়ি ফেরার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠত। অপরাধের জগৎ ছেড়ে ভালো হতে চাইতেন, তবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। ২০১৮ সালের শেষের দিকে সুযোগ আসে। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। দস্যুনেতা শরীফ না চাইলেও তাঁকে কৌশলে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁরা দলের ১৭ জন সদস্য ১৭টি অস্ত্র আর ২ হাজার ৫০০ গুলিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
দস্যুজীবন যাঁরা একবার দেখেছেন, তাঁরা না খেয়ে থাকলেও আর দস্যুতায় ফিরতে চান না—এমনটাই দাবি আল-আমীনের। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গল্প গল্পে তিনি বলেন, ডাঙায় থাকা মাছ ব্যবসায়ীরা ডাকাতদের বাজার, বন্দুক, গুলি সবই সাপ্লাই দিতেন। সব জিনিসের দাম নিতেন তিন থেকে চার গুণ বেশি।
বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন দস্যু ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সব শেষ দস্যুদল হিসেবে আত্মসমর্পণ করে শরীফ বাহিনী। সেদিনই প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। তবে দস্যুনেতা শরীফ গত বছরের ৫ আগস্টের পর আবার সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন বলে তাঁর একসময়ের সাথীদের ভাষ্য।
সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম। তিনি বলেন, দলনেতা শরীফের পুরো নাম করিম শরীফ। কয়রার আল-আমীন ছিল বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। শরীফ প্রথমে আত্মসমর্পণে রাজি থাকলেও পরে বেঁকে বসেন। অন্যরা আত্মসমর্পণ করেন। তবে শরীফ এখন পুনরায় সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম আবদুল মালেক বলেন, বনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কমে আসায় সুন্দরবনে আবারও দস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। এভাবে দস্যুতা চলতে থাকলে বনজীবীদের জীবিকা, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আদায় ও পর্যটন হুমকির মুখে পড়বে; বিপন্ন হবে বন্য প্রাণী আর প্রাণবৈচিত্র্য। দস্যুতা দমনে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় ভোটার দিবস আজ
আজ আজ ২ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবস। ‘তোমার আমার বাংলাদেশে, ভোট দেব মিলেমিশে’ এই প্রতিপাদ্যে সারাদেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সপ্তমবারের মতো জাতীয় ভোটার দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের ভোটার দিবসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
২০২৪ সালে হালনাগাদ করা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা আজ রোববার প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটাধিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ২ মার্চ থেকে দিনটি পালন করে আসছে সংস্থাটি। কমিটির সভাপতি ও নির্বাচন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামানের সই করা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোটার দিবস উপলক্ষে মাঠ পর্যায়ে জেলা, উপজেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে র্যালি, আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘গণতন্ত্র, নির্বাচন ও ভোটাধিকার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে’ প্রতি বছরের ১ মার্চকে জাতীয় ভোটার দিবস হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। তবে পরের বছর ২০১৯ সাল থেকে এই ভোটার দিবস উদযাপনের তারিখ পরিবর্তন করে ২ মার্চ করা হয়। এ দিবস উদযাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন সচিবালয় হতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপন উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকাতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এবং মাঠপর্যায়ে থানা বা উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসগুলোতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকায় সকাল ৯টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক নির্বাচন ভবনের সামনে থেকে জাতীয় ভোটার দিবস ২০২৫-এর শুভ উদ্বোধন করা হবে। এ সময় নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত থাকবেন। এরপর নির্বাচন ভবনের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হবে। সকাল ১১টায় নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে ভোটার দিবস নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইসির আলোচনা সভায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্য থেকে ১০ জন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি, ইউএনডিপির প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে অবজারভার গ্রুপ থেকে কয়েকজন ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকে ‘বিশেষ প্রকাশনা’ প্রকাশ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে ভোটার দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের বিষয়ে বিশেষ টকশো প্রচারিত হবে। মাঠপর্যায়ে জেলা, উপজেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসগুলোতেও র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সহকারী পরিচালক জনসংযোগ মো. আশাদুল হক।
সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জন আর নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ ৪ হাজার ৬৪১ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯৩২ জন।