অটোমোবাইল থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে গ্যাস ইউনিটে নিয়ে যাচ্ছে ইন্টট্রাকো রিফুয়েলিং
Published: 2nd, March 2025 GMT
বিনিয়োগসংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্ট্রাকোর পরিচালনা পর্ষদ। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইন্ট্রাকো অটোমোবাইলসের একটি সিএনজি স্টেশন থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়া হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুসারে, সিএনজি স্টশনের জমির মালিকের সঙ্গে লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এই বাস্তবতায় কোম্পানিটি মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই সিএনজি স্টেশন আর পরিচালনা করতে চায় না। এই বাস্তবতায় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইন্ট্রাকো অটোমোবাইলসের বিনিয়োগ ভোলা নন–পাইপ গ্যাসলাইন ইউনিটে সরিয়ে নেওয়া হবে।
বিষয়টি হলো, গত সরকারের সময় ভোলা থেকে সিএনজি আকারে প্রতিদিন পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিবহনের দায়িত্ব পায় ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন। প্রথম পর্যায়ে দৈনিক ৫ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ দিয়ে শুরু করে ইন্ট্রাকো ধীরে ধীরে দৈনিক ২৫ মিলিয়ন গ্যাসে উন্নীত করতে চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত অক্টোবরের মধ্যে বাকি ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ শুরু করতে না পারায় চুক্তির অবশিষ্ট অংশের আর কার্যকারিতা নেই; যদিও উৎপাদন বৃদ্ধিতে তাদের আগ্রহ আছে।
দেশের গ্যাসের সংকট মেটাতে ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে এনে দেশের শিল্পকারখানায় ব্যবহার শুরু হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। দেখা যাচ্ছে, সেই গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং ভোলা নন-পাইপ গ্যাসলাইন ইউনিটে বিনিয়োগ সিরিয়ে নিচ্ছে।
গত এক বছরে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিংয়ের শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৪৭ টাকা ৩০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৩ টাকা ৫০ পয়সা। ২০২৪ সালে কোম্পানিটি ১ শতাংশ, ২০২৩ সালে ১০ শতাংশ, ২০২২ সালে ১০ শতাংশ, ২০২১ সালে ২ শতাংশ ও ২০২০ সালে ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির কারখানায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন অস্থিরতায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনেকটাই হাত গুটিয়ে আছেন। এমন পরিস্থিতিতেও বড় বিনিয়োগে যাচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এই শিল্পগোষ্ঠী ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে রপ্তানিমুখী প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের কারখানা করতে যাচ্ছে।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে আরএফএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কারখানাটি হচ্ছে। ইতিমধ্যে কারখানা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ। তবে এখনো যন্ত্রপাতি আমদানি হয়নি। কারখানা চালুর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৬০ লাখ মার্কিন ডলার বা ৭৩ কেটি ২০ লাখ টাকার প্লাস্টিক পণ্যের ক্রয়াদেশ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনটাই জানালেন আরএফএল গ্রুপের কর্মকর্তারা।
নতুন এই কারখানার যন্ত্রপাতির জন্য বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্লাস্টিক মেশিনারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হাইতিয়ান গ্রুপের সঙ্গে আজ রোববার চুক্তির কথা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে অর্থাৎ এপ্রিল-মে মাসে কারখানার উৎপাদন শুরু হবে। কারখানাটিতে বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালি পণ্য উৎপাদন হবে। পাশাপাশি খেলনা ও পোষা প্রাণীর প্রয়োজনীয় পণ্যও উৎপাদনে যাবে আরএফএল।
প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে দেড় যুগের অভিজ্ঞতা রয়েছে আরএফএলের। ২০০৭ সালে ভারতে গৃহস্থালি প্লাস্টিক পণ্য পাঠানোর মধ্য দিয়ে এই খাতে তাদের রপ্তানি শুরু। বর্তমানে বিশ্বের ৮০টি দেশে আরএফএলে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করেছে গ্রুপটি।
আরএফএল গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (রপ্তানি) সালাহ উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘আমরা এত দিন ইউরোপের বাজারে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করেছি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি উত্তর আমেরিকার বাজারের দিকে দৃষ্টি দিতে চাই। কারণ, বাজারটি অনেক বড়। তা ছাড়া সেখানকার মানুষ আমাদের মতো দীর্ঘ সময়ের জন্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করে না। স্বল্প সময় ব্যবহার করে আবার নতুন পণ্য কেনে।’
বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘদিন ধরে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হলেও তা একটি গণ্ডির মধ্যেই আটকে আছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ১৮ কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি।
আরএফএলের নতুন কারখানায় বছরে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করা যাবে। ক্রয়াদেশ থাকলে রপ্তানিও হবে সমপরিমাণ পণ্য। আর কারখানাটিতে কর্মসংস্থান হবে আড়াই হাজার মানুষের। এমনটাই জানালেন আরএফএলের কর্মকর্তারা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘আমরা খুবই ইতিবাচক। সংকটের সময় আমরা কাজের গতি বাড়িয়ে দিই। এমন কৌশলে আমরা সফলতাও পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘উত্তর আমেরিকায় প্লাস্টিক পণ্যের বাজারে চীনাদের রাজত্ব। তবে খরচ বেড়ে যাওয়ায় চীনারা এই ব্যবসা থেকে সরে আসছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধও নতুন মাত্রা পেয়েছে। ফলে প্লাস্টিকের ক্রয়াদেশ আশপাশের দেশে স্থানান্তরিত হবে। আমরা সেই সুযোগটি নিতে চাই।’
প্রাণের বর্তমান চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরীর বাবা আমজাদ খান চৌধুরী ১৯৮১ সালে ৪২ বছর বয়সে সামরিক বাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ওই বছরই শুরু করেছিলেন ফাউন্ড্রি বা টিউবওয়েল তৈরি ও আবাসন ব্যবসা। সম্বল ছিল পেনশনের টাকা। তবে আবাসন ব্যবসা তিনি বেশি দিন করেননি। ফাউন্ড্রির ব্যবসায় বেশি নজর দেন। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আরএফএল)। কোম্পানিটির আওতায় এখন বহু ধরনের পণ্য রয়েছে। তবে আমজাদ খান চৌধুরীর লক্ষ্য ছিল কৃষি ব্যবসায় নামা। তারই অংশ হিসেবে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেড (এএমসিএল)-প্রাণ।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের লেনদেন ছিল ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ৫৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। শিল্পগ্রুপটিতে কাজ করেন ১ লাখ ৪৫ হাজার কর্মী।