বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের ১৫টি পদ শূন্য হয়ে আছে চার মাসেরও বেশি সময়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে ক্রিকেট বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ১০ জন পরিচালক নিয়ে। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভাষায় জোড়াতালি দিয়ে চলছে বিসিবি। অথচ বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ চাইলে অনেক আগেই পরিচালনা পর্ষদের শূন্যপদ পূরণ করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) একাধিক কর্মকর্তা।
পরিচালকদের শূন্যপদ সম্পর্কে জানতে চেয়ে বিসিবিকে চিঠিও দিয়েছিল এনএসসি। চিঠি ইস্যুর চার মাস পেরিয়ে গেলেও বিসিবি উপনির্বাচনের উদ্যোগ না নেওয়ায় বিস্মিত ক্রীড়া নীতিনির্ধারকরা। এ ব্যাপারে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের আন্তরিকতার ঘাটতি দেখছেন ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টরাও। দেশের ক্রিকেটের কার্যক্রমে গতি আনতে পরিচালকদের শূন্যপদে দ্রুত নির্বাচন আশা করেন তারা।
ফারুক বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হন গত বছর ২১ আগস্ট। ১০ জন পরিচালক নিয়েই গত ছয় মাসে ক্রিকেট কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারলেও উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি আনা সম্ভব হয়নি। বিভাগীয় পর্যায়ে একাডেমি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বলা হলেও বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। মূলত, জাতীয় দলের কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে সভাপতিকে। পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করেছে জাতীয় দল। নারী টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছেন নিরপেক্ষ ভেন্যু দুবাইয়ে। বিপিএল, ঢাকা তৃতীয়, দ্বিতীয় এবং প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ আয়োজন করেছেন স্পন্সর নিয়ে। প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ মাঠে গড়াবে কাল থেকে।
নারীদের আন্তর্জাতিক সফরের পাশাপাশি ঘরোয়া লিগের খেলাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমবারের মতো নারীদের লাল বলের ক্রিকেট লিগ হয়েছে। ক্রিকেটীয় এ কার্যক্রম নিয়ে সভাপতির গর্ব করার উপলক্ষ থাকলেও দুর্বলতাগুলো চোখে পড়ার মতোই। পরিচালক কম থাকায় বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে ফারুককে। বর্তমানে একাধিক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে একজন পরিচালককে। ফিন্যান্স, গেম ডেভেলপমেন্ট ও লজিস্টিক অ্যান্ড প্রটোকল বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফাহিম সিনহাকে। গ্রাউন্ডস, টেন্ডার অ্যান্ড পারচেজ ও এইচপির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল আনাম, টুর্নামেন্ট, ফ্যাসিলিটি ম্যানেজমেন্ট ও প্রতিবন্ধী ক্রিকেটের চেয়ারম্যান আকরাম খান। স্বপন চৌধুরীকে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট কমিটি ও শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম চৌধুরী স্বপ্ন। ইফতেখার আহমেদ মিঠু মিডিয়া ও আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান। সালাউদ্দিন চৌধুরীকে সিসিডিএমের সঙ্গে অডিটের চেয়ারম্যান করা হলেও কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কারণ দেখিয়ে অডিট বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন। নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য সামলে এত বিভাগ কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করা কঠিন বলে মনে করেন বিসিবি কর্মকর্তারাই।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন পরিচালক বলেন, ‘ইসমাইল হায়দার মল্লিকের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা বহাল রয়েছেন। এখন বোর্ডে কী হচ্ছে, সব খবর চলে যাচ্ছে আগের পরিচালকদের কাছে। এগুলো পরিষ্কার করার পাশাপাশি উপনির্বাচনের মাধ্যমে ১৫ জন পরিচালক সংযুক্ত করা গেলে স্বেচ্ছাচারিতা থাকবে না। সভাপতির উচিত হবে দ্রুত উপনির্বাচন দেওয়া।’
বিসিবির পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে অক্টোবরে। ক্লাব ক্যাটেগরিতে ছয়টি, বিভাগীয় ক্যাটেগরিতে আটটি ও সাবেক ক্রিকেটার ক্যাটেগরিতে একজন পরিচালকের পদ শূন্য রয়েছে। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, পরিচালকের পদ শূন্য হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। বিদ্যমান কাউন্সিলরদের থেকে প্রার্থী হতে পারবেন। কাউন্সিলর নন এমন কেউ পরিচালক পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। তিন বছর আগের তালিকাভুক্ত কাউন্সিলরদের ভোটে হতে হবে উপনির্বাচন। সে ক্ষেত্রে বিসিবির উপনির্বাচনের জন্য কাউন্সিলর নেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রশ্ন হলো বিসিবির কার্যক্রমে গতি আনতে এবং গঠনতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে ফারুক আহমেদ উপনির্বাচন দিতে রাজি আছেন কিনা। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বিসিবি সভাপতিকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ র ক আহম দ শ ন যপদ আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
ফাঁদ পেতে উদ্ধার করা হলো আটকে পড়া বিড়াল
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে বিমে আটকে পড়া বিড়ালটি উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার ভোরে এটিকে উদ্ধার করা হয়। বিড়ালটিকে উদ্ধার করতে একটি ফাঁদ পাতা হয়েছিল।
বিড়ালটি আটকে পড়ার খবরটি গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল রাতে আরিজ উল মুলকের নেতৃত্বে উদ্ধারকাজে যোগ দেন চারজন স্বেচ্ছাসেবী। সন্ধ্যা থেকে ডিএনসিসির দুটি লেডারের সাহায্যে চেষ্টা চালিয়ে উদ্ধার করতে না পারায় রাত ১০টায় আরিজ উল মুলক বিড়ালটি ধরতে একটি বিশেষ ধরনের খাঁচা (ফাঁদ) নিয়ে আসেন। বিড়ালটিকে নিরাপদে উদ্ধার করতে বিমের ওপরে খাঁচাটিতে খাবার দিয়ে রেখে যান। পরে আজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় স্বেচ্ছাসেবীরা এসে খাঁচার মধ্যে বিড়ালটি পান এবং নিরাপদে উদ্ধার করেন।
ডিএনসিসির কর্মীরা স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান, বিড়ালটিকে উদ্ধারের পর বারিধারায় একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং মোহাম্মদপুরের একজন স্বেচ্ছাসেবক বিড়ালটি লালন–পালনের জন্য নিয়ে গেছেন। বিড়ালটি এখন পুরোপুরি সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন আরিজ উল মুলক।
উল্লেখ্য, শনিবার বিকেলের দিকে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারের ঠিক ওপরের অংশে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে বিমে আটকে থাকা বিড়ালটিকে দেখতে পেয়ে নগরবাসীর কেউ একজন বিষয়টি ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে জানান। পরে তিনি বিড়ালটিকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। বিড়ালটিকে উদ্ধারে মহাখালী উড়ালসড়কের ওপরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে একটি বিমের বর্ধিত অংশে একটি লেডার যন্ত্র ওঠানো হয়। ওই লেডারে করে সিটি করপোরেশনের দুই কর্মী ওপরে গিয়ে বিড়ালটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিড়ালটিকে ভয় পেয়ে দূরে সরে যেতে দেখা যায়। পরে আরেকটি লেডার দিয়েও চেষ্টা চালানো হয়। বিড়ালটি আতঙ্কিত হয়ে বিমের প্রান্তে অবস্থান নিলে রাত ১০টায় লেডার নামিয়ে আনা হয়। পরে একটি ফাঁদ (খাঁচা) দিয়ে তাতে খাবার দেওয়া হয়।
আরিজ উল মুলক জানান, তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বিপদে পড়া প্রাণীদের নিজের চেষ্টায় উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি এটি করেন।
ডিএনসিসি প্রশাসক বিকেলে গুলশান নগর ভবনে তাঁর কার্যালয়ে আরিজ উল মুলক এবং তাঁর সহযোগী আকাশ আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি বিড়ালটি উদ্ধারের জন্য তাঁদের প্রশংসা করেন এবং ধন্যবাদ জানান।