প্রবালঘেরা সেন্ট মার্টিন আসলে কি ‘প্রবাল দ্বীপ’, কী বলছেন গবেষকেরা
Published: 2nd, March 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরের আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্ট মার্টিন স্থানীয় লোকজনের কাছে পরিচিত ‘নারকেল জিঞ্জিরা’ নামে। দেশে-বিদেশের নানা ওয়েবসাইটে এই দ্বীপকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ কারণে দেশের বেশির ভাগ মানুষ সেন্ট মার্টিনকে প্রবাল দ্বীপ হিসেবেই জানে। কক্সবাজার জেলা তথ্য বাতায়ন এবং মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় সেন্ট মার্টিনকে প্রবাল দ্বীপ বলা হয়েছে। কিন্তু সেন্ট মার্টিন কি আসলে প্রবাল দ্বীপ? সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা করেন যাঁরা, তাঁরা কিন্তু এই প্রসঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন।
সেন্ট মার্টিনের প্রবালসহ জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ চৌধুরী। সর্বশেষ তিনি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সেন্ট মার্টিন সফর করেন। টানা কয়েক দিন সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন তিনি।
সেন্ট মার্টিন ‘প্রবাল দ্বীপ’ কি না, জানতে চাইলে শাহনেওয়াজ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এটি মানুষের ভুল ধারণা। সেন্ট মার্টিন আসলে প্রবাল দ্বীপ নয়, প্রবালসমৃদ্ধ পাথুরে দ্বীপ। প্রবাল দ্বীপ প্রবালের কারণে তৈরি হয়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পাথুরে। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই এখানে প্রবাল বা কোরাল ছিল। এখনো আছে। কক্সবাজারের পানি ঘোলাটে হলেও সেন্ট মার্টিনের পানি পরিষ্কার। কারণ, সেখানে পলি প্রবাহের প্রভাব কম। পানির লবণাক্ততা ও স্বচ্ছতা বেশি থাকার কারণেই সেখানে কোরাল তৈরি হয়। তবে প্রবাল তৈরি হলেও এটি প্রবাল দ্বীপ নয়।
২০২২ সালের ১ জুন সায়েন্স ডাইরেক্ট নামের আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকীর ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। কানাডীয় জীব বিজ্ঞানী টমাস টমাসিকের সঙ্গে যৌথভাবে ওই গবেষণা করেছিলেন গবেষক শাহনেওয়াজ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক গবেষক মোহম্মদ নুরুন্নবী। গবেষণার শিরোনাম ছিল, ‘প্রবাল দ্বীপ হিসেবে সেন্ট মার্টিনকে ভুল চরিত্রায়ণের প্রভাব’।
গবেষণায় বলা হয়েছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কিছু প্রবালপ্রাচীর থাকলেও এটি মূলত পাললিক শিলা এবং বালির স্তর দ্বারা গঠিত। ভুল ‘চরিত্রায়ণের’ কারণে দ্বীপের প্রকৃত বাস্তুতন্ত্র এবং পরিবেশগত গুরুত্ব উপেক্ষিত হতে পারে। সেই সঙ্গে দ্বীপের পর্যটন, মৎস্যসম্পদ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মূল্যায়নেও ভুল হতে পারে।
তবে সেন্ট মার্টিন যে একটি প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ তাতে সন্দেহ নেই। এ নিয়ে শাহনেওয়াজ চৌধুরী বলেন, সেন্ট মার্টিনে যে পাথুরে প্রবাল পাওয়া যায়, সেটি আন্দামান দীপপুঞ্জের পরে শুধু শ্রীলঙ্কা, তামিলনাড়ুর ও মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলের দিকে দেখা মেলে। অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের উত্তরে একমাত্র সেন্ট মার্টিনে পাথুরে প্রবালের দেখা মেলে, যা এ অঞ্চলের সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এ কারণে পরিবেশবিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেন্ট মার্টিনকে সরাসরি প্রবাল দ্বীপ না বলে প্রবালসমৃদ্ধ পাথুরে দ্বীপ বলা যেতে পারে। কারণ, দ্বীপের চার দিকে ছড়িয়ে আছে পাথরের স্তূপ। অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ডের দক্ষিণাংশের গলাচিপা, দক্ষিণপাড়া, দিয়ারমাথা, মাঝরপাড়া এলাকার ফসলি জমিতেও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য পাথরখণ্ড। সমুদ্রের ১-৩ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা এসব পাথরখণ্ডের মধ্যেই কিন্তু সাদা, লাল, নীল, সবুজসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রবাল জন্মে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের গঠন নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন গবেষক দল। ১৫ ফেব্রুয়ারি তোলা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রবালঘেরা সেন্ট মার্টিন আসলে কি ‘প্রবাল দ্বীপ’, কী বলছেন গবেষকেরা
বঙ্গোপসাগরের আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্ট মার্টিন স্থানীয় লোকজনের কাছে পরিচিত ‘নারকেল জিঞ্জিরা’ নামে। দেশে-বিদেশের নানা ওয়েবসাইটে এই দ্বীপকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ কারণে দেশের বেশির ভাগ মানুষ সেন্ট মার্টিনকে প্রবাল দ্বীপ হিসেবেই জানে। কক্সবাজার জেলা তথ্য বাতায়ন এবং মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় সেন্ট মার্টিনকে প্রবাল দ্বীপ বলা হয়েছে। কিন্তু সেন্ট মার্টিন কি আসলে প্রবাল দ্বীপ? সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা করেন যাঁরা, তাঁরা কিন্তু এই প্রসঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন।
সেন্ট মার্টিনের প্রবালসহ জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ চৌধুরী। সর্বশেষ তিনি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সেন্ট মার্টিন সফর করেন। টানা কয়েক দিন সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন তিনি।
সেন্ট মার্টিন ‘প্রবাল দ্বীপ’ কি না, জানতে চাইলে শাহনেওয়াজ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এটি মানুষের ভুল ধারণা। সেন্ট মার্টিন আসলে প্রবাল দ্বীপ নয়, প্রবালসমৃদ্ধ পাথুরে দ্বীপ। প্রবাল দ্বীপ প্রবালের কারণে তৈরি হয়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পাথুরে। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই এখানে প্রবাল বা কোরাল ছিল। এখনো আছে। কক্সবাজারের পানি ঘোলাটে হলেও সেন্ট মার্টিনের পানি পরিষ্কার। কারণ, সেখানে পলি প্রবাহের প্রভাব কম। পানির লবণাক্ততা ও স্বচ্ছতা বেশি থাকার কারণেই সেখানে কোরাল তৈরি হয়। তবে প্রবাল তৈরি হলেও এটি প্রবাল দ্বীপ নয়।
২০২২ সালের ১ জুন সায়েন্স ডাইরেক্ট নামের আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকীর ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। কানাডীয় জীব বিজ্ঞানী টমাস টমাসিকের সঙ্গে যৌথভাবে ওই গবেষণা করেছিলেন গবেষক শাহনেওয়াজ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক গবেষক মোহম্মদ নুরুন্নবী। গবেষণার শিরোনাম ছিল, ‘প্রবাল দ্বীপ হিসেবে সেন্ট মার্টিনকে ভুল চরিত্রায়ণের প্রভাব’।
গবেষণায় বলা হয়েছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কিছু প্রবালপ্রাচীর থাকলেও এটি মূলত পাললিক শিলা এবং বালির স্তর দ্বারা গঠিত। ভুল ‘চরিত্রায়ণের’ কারণে দ্বীপের প্রকৃত বাস্তুতন্ত্র এবং পরিবেশগত গুরুত্ব উপেক্ষিত হতে পারে। সেই সঙ্গে দ্বীপের পর্যটন, মৎস্যসম্পদ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মূল্যায়নেও ভুল হতে পারে।
তবে সেন্ট মার্টিন যে একটি প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ তাতে সন্দেহ নেই। এ নিয়ে শাহনেওয়াজ চৌধুরী বলেন, সেন্ট মার্টিনে যে পাথুরে প্রবাল পাওয়া যায়, সেটি আন্দামান দীপপুঞ্জের পরে শুধু শ্রীলঙ্কা, তামিলনাড়ুর ও মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলের দিকে দেখা মেলে। অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের উত্তরে একমাত্র সেন্ট মার্টিনে পাথুরে প্রবালের দেখা মেলে, যা এ অঞ্চলের সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এ কারণে পরিবেশবিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেন্ট মার্টিনকে সরাসরি প্রবাল দ্বীপ না বলে প্রবালসমৃদ্ধ পাথুরে দ্বীপ বলা যেতে পারে। কারণ, দ্বীপের চার দিকে ছড়িয়ে আছে পাথরের স্তূপ। অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ডের দক্ষিণাংশের গলাচিপা, দক্ষিণপাড়া, দিয়ারমাথা, মাঝরপাড়া এলাকার ফসলি জমিতেও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য পাথরখণ্ড। সমুদ্রের ১-৩ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা এসব পাথরখণ্ডের মধ্যেই কিন্তু সাদা, লাল, নীল, সবুজসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রবাল জন্মে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের গঠন নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন গবেষক দল। ১৫ ফেব্রুয়ারি তোলা