তাদের জন্য সমীকরণ কিছুই ছিল না। শুধু আফগানিস্তানের জন্য অসম্ভব একটা অঙ্ক ছিল ম্যাচে। যেখানে প্রথমে ব্যাটিং করে ইংল্যান্ড অন্তত পক্ষে ২০৭ রানের ব্যবধানে জিতলে সেমিতে যেতে পারত আফগানরা, সেখানে গতকাল করাচিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় মাত্র ১৭৯ রানে! এ রান তাড়া করতে নেমে ১২৫ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয় পেয়ে প্রোটিয়ারা হয়েছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তানের পর দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে শূন্য হাতেই ফিরছে ইংলিশরা। অধিনায়ক যশ বাটলার আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন এটাই তাঁর অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচ, যেখানে তিনি মাত্র ২১ রান করতে পারেন।

অবশ্য ইংল্যান্ডের হারে বাংলাদেশের একটু লাভ হয়েছে বৈকি। আসরের ছয় নম্বর দল হয়েছেন শান্তরা। তাতে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচ্ছেন তারা। 

আইসিসির নির্ধারিত প্রাইজমানি অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দলই শুধুমাত্র টুর্নামেন্টে খেললেই পাবে ১ লাখ ২৫ হাজার ডলার (প্রায় দেড় কোটি টাকা)। এছাড়া ৭ম ও ৮ম স্থান অধিকারী দল দুটি পাবে ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার (প্রায় ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা) করে। তবে ইংল্যান্ডের হারে বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করে এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার (প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা) প্রাইজমানি পাচ্ছে। সাথে অংশগ্রহণ বাবদ পাওয়া দেড় কোটি টাকা যোগ করলে মোট আয় দাঁড়াবে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা ৭ম বা ৮ম স্থান অর্জনের চেয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা বেশি।

আসরের সেমিতে ওঠা চার দল হলো ভারত, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। পঞ্চম স্থানে রয়েছে আফগানিস্তান, সাতে পাকিস্তান আর আটে ইংল্যান্ড। তবে সেমিফাইনালে কে কার মুখোমুখি হবে, তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। আজ দুবাইয়ে ভারত আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ‘এ’ গ্রুপের সেরা ও রানার্সআপ ঠিক হবে। আপাতত যা ঠিক হয়েছে, তাহলো মঙ্গলবার দুবাইয়ে প্রথম সেমিফাইনালে খেলবে ভারত। বুধবার লাহোরে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলবে নিউজিল্যান্ড। 

গতকাল করাচি থেকে ম্যাচ শেষ করেই দুবাই রওনা দেওয়ার কথা দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া দলের। সোমবার তাদের কোনো একটি দল ফিরে আসবে লাহোরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলার জন্য। এদিন করাচিতে একেবারেই বাজে ব্যাটিং করে ইংলিশরা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন কেবল জো রুট। প্রোটিয়াদের হয়ে ৩৯ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন পেসার মার্কো জেনসেন। রান তাড়া করতে নেমে ডুসেন ৭২ আর ক্লাসেন ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ম ফ ইন ল আফগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে না উপসাগরীয় দেশগুলো

ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানকে নিজেদের বিমানবন্দর ও আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে না সৌদি আরব ও উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশ। দেশগুলো এরই মধ্যে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত রোববার (৩০ মার্চ) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানে বোমা হামলা চালানোর ঘোষণার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো।

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েত এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বলে দিয়েছে, ইরানে হামলা চালানোর জন্য তারা নিজেদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না। ইরানে হামলা চালানোর সঙ্গে জড়িত কোনো মার্কিন উড়োজাহাজ এসব দেশ থেকে জ্বালানিও নিতে পারবে না। এমনকি হামলাসংশ্লিষ্ট উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানকে নিজেদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে (এমইই) এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা (উপসাগরীয় অঞ্চলের নেতারা) এতে জড়াতে চাইছেন না।’

উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে না দেওয়াটা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি বড় ধাক্কা। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানের সহায়তাপুষ্ট ইয়েমেনের হুতিদের ওপর ব্যাপক বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে আলোচনায় বাধ্য করতেই ট্রাম্প প্রশাসন তা করেছে।

উপসাগরীয় অঞ্চলের তেলসমৃদ্ধ মিত্রদেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হামলায় সহযোগিতা না করাটা ইরানকে সাহস জোগাবে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে দর-কষাকষিতে তেহরানকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমইইকে বলেন, হুতিদের ওপর হামলা চালাতে উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করেছে। দেশগুলোর নাম তিনি প্রকাশ করেননি।

হুতিদের ওপর হামলায় সহায়তা পাওয়া উপসাগরীয় মিত্রদের কাছ থেকে ইরানের বেলায়ও একই ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে দেশগুলো জরুরি উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করবে, এমন ধারণা পোষণ করেছিল ওয়াশিংটন।

ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ তৈরিতে’ উপসাগরীয় দেশগুলোর সহায়তা কামনা করছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এ জন্য সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক যোগাযোগও শুরু করেছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গত মার্চে আমিরাত ও সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠক করেছেন।

এই বৈঠকের পরপরই কাতার ও সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে এসব অনুমতি আটকে রাখা হয়েছিল। কাতার এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন কেনার অনুমতি পেয়েছে। সৌদি আরব এমন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার অনুমতি পেয়েছে, যা উড়োজাহাজ থেকে ভূমিতে ছোড়া রকেট প্রতিহত করতে পারবে।

গত সোমবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মে মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরব সফরের পরিকল্পনা করছেন। একই সফরে উপসাগরীয় অঞ্চলের আরও কয়েকটি দেশেও সফর করতে পারেন তিনি।

দিয়েগো গার্সিয়ায় মনোযোগ যুক্তরাষ্ট্রের

ইসরায়েলে ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে জর্ডান ও উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যুদ্ধবিমান ও সামরিক মালবাহী উড়োজাহাজের উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফ্লাইট চলাচলের হিসাব রাখে এমন একটি উন্মুক্ত সূত্রের তথ্যমতে, উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মালবাহী উড়োজাহাজের চলাচল আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এটা সর্বোচ্চ।

কিন্তু উপসাগরীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার পর ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়ায় নিজেদের সামরিক ঘাঁটিতে বি-২ বোমারু বিমানের সংখ্যা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

উপসাগরীয় বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশে হামলা চালানোর জন্য দিয়েগো গার্সিয়া এর আগেও ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কৌশলগত এ দ্বীপটি উপসাগরীয় অঞ্চলের নিজেদের ঘাঁটিগুলোর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে ওয়াশিংটন। ১৯৯০–এর দশকে ইরাকে হামলা চালানোর সময় নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সৌদি আরব। তখন চাগোস দ্বীপপুঞ্জের দিয়েগো গার্সিয়ার নিজেদের ঘাঁটি ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

স্যাটেলাইট তথ্য সরবরাহকারী উন্মুক্ত সোর্স প্ল্যানেট ল্যাব চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে জানিয়েছে, দিয়েগো গার্সিয়ার ঘাঁটিতে তিনটি বি-২ বোমারু বিমান দেখা গেছে।

ইরান থেকে চাগোস দ্বীপপুঞ্জে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির দূরত্ব ৫ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের মতো। বি-২ বোমারু বিমান ট্যাংক ভরে জ্বালানি নিলে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার যেতে পারে। বহন করতে পারে ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমা। এসব বোমা ‘বাংকার দুমড়েমুচড়ে’ দিতে সক্ষম। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এসব বোমা দিয়ে ইরানের ভূপৃষ্ঠের গভীরে আঘাত হানা যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ