এডিপি বাস্তবায়নে সুপারিশ উপেক্ষিত, ৩ বছরে ব্যয়ের লক্ষ্য ৯,০৮,৬০০ কোটি টাকা
Published: 2nd, March 2025 GMT
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)-এর গতি বাড়াতে অর্থ বিভাগ ২০১৮ সালে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছিল। গত ছয় বছরেও সেগুলোর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। ফলে এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উন্নয়নখাতে তিন বছরে ৯,০৮,৬০০ কোটি টাকা খরচ করার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বাজেট মনিটরিং কমিটির সভায় বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছিল অর্থ বিভাগ। এ সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল- অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পের বিপরীতে অর্থায়ন নিশ্চিত করা; নতুন অগ্রাধিকার প্রকল্পের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান না হলে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে বা স্থগিত রেখে নতুন প্রকল্পে অর্থায়ন করা; সর্বোচ্চ বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত ১০০টি প্রকল্পে বৈদেশিক সাহায্যের ছাড় ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্তৃক নিয়মিত পরিবীক্ষণ সভা করা; দক্ষ প্রকল্প পরিচালকের অভাব পূরণে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা এবং প্রবৃদ্ধি সহায়ক ১০টি বড় প্রকল্প সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা।
জানা গেছে, এই সুপারিশগুলো এখন পর্যন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তাই সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন লক্ষ্য অনুযায়ী হচ্ছে না।
এদিকে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য আগামী তিন অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ৯ লাখ ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ করার প্রাথমিক লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এরমধ্যে আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে এডিপির আকার হবে দুই লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে তা সামান্য বাড়িয়ে প্রাক্কলন করা হয়েছে দুই লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এরপর ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে তা ৪৩ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে তিনলাখ ৪১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন বেশ খারাপ। এটি অর্থবছরের পুরোটা জুড়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে । কারণ চলতি অর্থবছরে জুলাই- জানুয়ারি পর্যন্ত ( সাত মাস) এডিপি বাস্তবায়ন হার অর্ধেকের কাছকাছি যাওয়া সম্ভব হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের এডিপি আকার খুব কম করে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন আগামী অর্থবছরে এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের চেয়ে মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যা আগে কখনো ঘটেনি। সব সময় এডিপির আকার অন্ততপক্ষে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জন্য যে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি হাতে নেওয়া হয়েছিল বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে এর সিংহভাগ অর্থই খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চলতি অর্থবছরের এডিপি মোটা অঙ্কের কাটছাট করা হচ্ছে। কাটছাটের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপি’র আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে মূল এডিপি থেকে সংশোধিত এডিপি’র আকার কমেছে ১৮ শতাংশ। এটিও একটি রেকর্ড। এর আগে খুব কম সময়ই এডিপি এতো পরিমাণ কমানো হয়েছে।
অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের জন্য একটি বড় আকৃতির এডিপি হাতে নিয়েছিল বিগত রাজনৈতিক সরকার। এই এডিপিতে অনেক রাজনৈতিক প্রকল্প ছিল, যা তত্বাবধায়ক সরকার কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করে বাস্তবায়ন স্থগিত করে রেখেছে। ফলে এডিপি বাস্তবায়ন হারও বেশ কমে গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এডিপি চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে মূল এডিপি তো নয়ই, সংশোধিত এডিপিও পুরোটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সংশোধিত এডিপি’র সর্ব্বোচ্চ ৯৫ ভাগ বাস্তবায়ন করা গেছে। অর্থ বিভাগের করা ‘অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২’ তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে, ২০১৭-২০১৮ এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে। এই দুই অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি’র বাস্তবায়ন হার ছিল ৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম বাস্তবায়নের বছর ছিল ২০১৯-২০২০ অর্থবছর। এই অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল মাত্র ৮০ শতাংশ।
ঢাকা/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প ৬০০ ক ট সরক র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স দেশে এসেছে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৬৯৭ কোটি ৫০ লাখ চার হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১২১ টাকা ৪৩ পয়সা হিসেবে)।
ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় তার আগের বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১৬ কোটি ডলার।
রবিবার (২ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
মালদ্বীপে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের বৈধতা দেওয়ার আহ্বান
আরব আমিরাতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
আরিফ হোসেন খান বলেন, “চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। গত জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। এসময়ের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৫ শতাংশ।”
তিনি আরো বলেন, “চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার।”
আগের বছরের (২০২৩ সাল) ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার ডলার, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি ৪০ হাজার ডলার, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ডলার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার, মেতে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্টে ২২১ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার ডলার, নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার এসেছিল।
ঢাকা/এনএফ/এসবি