রমজানে তৎপর বিএনপি, ইফতার রাজনীতির মাধ্যমে সারবে নির্বাচনের প্রস্তুতি
Published: 2nd, March 2025 GMT
পবিত্র রমজানকে সাংগঠনিক মাস হিসেবে কাজে লাগাতে চাচ্ছে বিএনপি। দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হওয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা উন্মুক্ত পরিবেশে ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে সারাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সারার পরিকল্পনা করছে। এরই মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ এলাকায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নেতাকর্মী ছাড়াও তারা সাধারণ মানুষের দোয়া নিচ্ছেন। সবার জন্য ইফতার আয়োজনের প্রস্তুতি সারছেন।
বিএনপির কয়েক নেতা জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের লক্ষ্য নেতাকর্মীকে সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ রাখা। ইফতারের মাধ্যমে এ কাজটি করা সহজ। এবারও গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীর পরিবারকে রোজার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ঈদ উপহার পাঠানো হবে। এ তালিকায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদেরও রেখেছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি কয়েকটি ইফতার মাহফিল আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে। তবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত তিনটির তারিখসহ চারটি ইফতারের সূচি চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে আজ রোববার প্রথম রোজায় এতিম ও আলেমদের সম্মানে, ৬ মার্চ কূটনীতিক এবং ৯ মার্চ রাজনীতিবিদদের ইফতার করাবে বিএনপি। আরেকটির দিন চূড়ান্ত হয়নি।
বিএনপির সূত্র জানায়, রাজনীতিবিদদের সম্মানে আয়োজিত ইফতারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি শেখ হাসিনার পতনের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিকেও (এনসিপি) আমন্ত্রণ জানাবে বিএনপি। একটা সময় ইফতার মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু কারাবন্দি থাকায় তিনি বিগত ছয় বছর তা পারেননি।
গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুক্তি পেয়েছেন খালেদা জিয়া। বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আছেন। সেখানেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন বলে জানা গেছে।
বারবার দাবি জানালেও অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করেনি। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড.
বিএনপি নেতারা জানান, নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা হলে আবারও তাদের রাজপথের কর্মসূচিতে যেতে হবে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে সক্রিয় রাখতে পুরো রমজান তৎপর থাকবে। সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিত নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবেন নেতারা। গত বছর ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এর পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি তৃণমূলে সহস্রাধিক ইফতার মাহফিল আয়োজন করে। কিন্তু বেশির ভাগ কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনরা হামলা ও বাধা দিয়েছিল।
এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এবার নির্বিঘ্নে রোজা ও ঈদ উদযাপন করতে পারবেন তারা। বাড়তি হিসেবে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এলাকায় অবস্থান নিয়ে গণসংযোগ করবেন। ইফতার ও ঈদের মধ্য দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নেতাদের বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমকালকে বলেন, ‘রোজায় মানুষ ধর্মকর্ম নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। বিগত দিনে বিএনপি নেতাকর্মীকে ইফতার আয়োজনে ফ্যাসিস্টরা অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। যেখানে আমরা ইফতার আয়োজন করতাম, সেখানেই বাধা দেওয়া হতো। শেখ হাসিনার পতনের পর পরিস্থিতি ভিন্ন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এবার ইফতার আয়োজন করা হবে। নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এ কর্মসূচিতে যুক্ত করা হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ত কর ম র ন ত কর ম ক ব এনপ র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়াকাটা সৈকতে ঈদের আনন্দে মেতেছেন পর্যটকরা
দীর্ঘ এক মাস পর্যটকশূন্য থাকার পর পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। ঈদের দিন সোমবার (৩১ মার্চ) বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত সৈকতে লাখো পর্যটক এসেছেন ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকরা সৈকতে আনন্দ-উল্লাসে মেতেছেন। সমুদ্রের নোনা জলে গা ভাসিয়ে হৈ-হুল্লোড় করছেন। অনেকে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তুলছেন, সেলফি তুলছেন স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। কেউ কেউ বিভিন্ন বাহনে চড়ে সৈকতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ঘুরে দেখছেন। কেউবা বেঞ্চে বসে সমুদ্রের তীরে আছড়ে পড়া ঢেউ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। সৈকতে বিরাজ করছে ঈদ উৎসবের আমেজ।
ক্র্যাব আইল্যান্ড, চর গঙ্গামতি, গঙ্গামতি, ঝাউবন, তিন নদীর মোহনা, লেম্বুর বন ও শুটকি পল্লিসহ সব পর্যটন স্পটে আছে পর্যটকদের বিপুল উপস্থিতি। বিক্রি বেড়েছে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
অধিকাংশ হোটেল-মোটেল আগেই বুকিং হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পর্যটকের আগমনে উচ্ছ্বসিত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১৬টি পেশার সঙ্গে ব্যক্তিরা। পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর আছে ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও নৌ পুলিশের সদস্যরা।
ঢাকার জিনজিরা থেকে আসা পর্যটক তৈয়ব হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেছেন, মঙ্গলবার সকালে পরিবার-পরিজন নিয়ে কুয়াকাটায় এসেছি। হোটেলে পৌঁছে রুমে ওঠার আগেই রিসিপশনে ব্যাগ রেখে সৈকতে এসেছি। স্নিগ্ধ সকালে দখিনা হাওয়া ও সৈকতের ছোট ছোট ঢেউ আমাদের মুগ্ধ করেছে। জোয়ারের সময় সবাই একসঙ্গে সাঁতার কাটব।
সভারের ফুলবাড়িয়া থেকে আসা শাহেদ-ইয়াসমিন দম্পত্তি বলেন, সকাল থেকে কুয়াকাটার আকাশ অনেকটা মেঘলা। মেঘলা আকাশে দখিনা হাওয়া এবং সৈকতে ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে পড়া, এ এক দারুণ অনুভূতি। ঈদের ছুটির প্রথম দিনে আমাদের কুয়াকাটা ভ্রমণ স্বার্থক হয়েছে।
সৈকতলাগোয়া প্রসাধন সামগ্রীর দোকানি সুলতান আকন বলেন, গতকাল সৈকতে আশপাশের এলাকার পর্যটক ছিল। বিক্রি মোটামুটি ভালোই হয়েছে। আশা করছি, আজ আরো বেশি পর্যটক আসবে এবং আমরা বিগত এক মাসের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব।
সৈকতে ভ্রাম্যমাণ আচার বিক্রেতা মোসলেম মিয়া বলেন, রমজানে কুয়াকাটায় কোনো পর্যটক ছিল না। আমি গতকাল বিকেলে আমার ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে সৈকতে নেমেছি। রাতে বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। অনেক পর্যটক আসছে। আশা করছি, আজ আরো বেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের সহাকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিশ্ছিদ্র নিরপত্তা দিতে আমরা কাজ করছি। সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য, থানা পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। আশা করছি, পর্যটকরা নিরাপদে কুয়াকাটা ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।
ঢাকা/ইমরান/রফিক