Samakal:
2025-03-03@14:21:11 GMT

ইফতারির খরচ দ্বিগুণ

Published: 2nd, March 2025 GMT

ইফতারির খরচ দ্বিগুণ

গত বছর প্রতিটি পেঁয়াজু ২-৩ টাকায় কেনা যেত। এবার দাম পড়বে ৬ থেকে ১০ টাকা। গত বছর ১০ টাকায় এক প্লেট ছোলা কিনে ইফতার করার সুযোগ ছিল, এবার গুনতে হবে ২০ টাকা। প্রতিটি বেগুনির দাম পড়বে ৬-১০ টাকা, যা গতবার ছিল ৩-৫ টাকা। একটি জিলাপির দাম পড়বে ১০-১৫ টাকা, গতবার যা ছিল ৬-৮ টাকা। এতদিন প্রতিটি বাংলা কলা ৮-১০ টাকায় কেনা যেত। দুই দিন আগে দাম বেড়ে ঠেকেছে ১৫-২০ টাকায়।  কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ইফতারের অন্যতম সামগ্রী মুড়ি, চিড়া, লেবু, শসা, কাঁচামরিচসহ বেশকিছু পণ্যের।

এর ফলে চিন্তায় পড়েছেন কম আয়ের মানুষ। তারা সাধারণত পেট ভরে ইফতার করেন। এ অবস্থায় ৫০ টাকার ইফতারেও পেট ভরবে না বলে আশঙ্কা করছেন দিনমজুরসহ নিম্ন-মধ্যবিত্তরা।

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে গতকাল শনিবার দেখা যায়, রিকশার নিচে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন চালক নাজমুল ইসলাম শিমুল। বছর ঘুরে রমজান আসায় মনে এক ধরনের স্বস্তি অনুভব করছেন তিনি। তবে এর চেয়ে দুশ্চিন্তার পাল্লাটা কিছুটা ভারী তাঁর। কারণ রোজগারের আয়ের সঙ্গে মেলাতে পারছেন না নিত্যদিনের খরচ। পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা ও জিলাপি কিনতে হিমশিম খেতে হবে তাঁকে। সেখানে ফিরনি, সেমাই, কলা দিয়ে দই-চিড়া খাওয়ার ইচ্ছা শিমুলদের কাছে দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়।

গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বেশির ভাগ খাবার হোটেল, রেস্তোরাঁ এমনকি ফুটপাতের ভাসমান দোকানগুলোতে সরেজমিন রমজানে ইফতারির প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। দোকান মালিক ও বিক্রয় ব্যবস্থাপকরা জানান, এবার বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তির প্রভাব পড়ছে ইফতারির ওপর। দোকানের চারপাশে দামসহ ইফতারি বিক্রয়ের ব্যানারে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

নগরের ঝাউতলার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম শিমুল বলেন, ‘রোজা রেখে রিকশা চালাতে কষ্ট হয়। এর পরও প্রতিবছর রোজা রাখি। এবারও সব রোজা রাখার ইচ্ছা আছে। তবে দুশ্চিন্তা হচ্ছে বাড়তি খরচ নিয়ে। গতবারের তুলনায় এবার প্রায় সবকিছুর দাম বেশি। বর্তমান বাজারে ৫০ টাকা কিছুই না। অথচ এই টাকা আমার মতো খেটে খাওয়া মানুষের জন্য অনেক কিছু। দুই-তিন প্রকারের ইফতারি কিনতেই শেষ হয়ে যাবে এই টাকা। যে কারণে পেটভরে ইফতারি খাওয়া অসম্ভব।’

চকবাজার মোড়ে কথা হয় দিনমজুর রফিকুল মওলার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন আগের মতো কাজ নেই। আয়ের চেয়ে ব্যয় কয়েক গুণ হওয়ায় সবাই কম টাকায় বেশি কাজ করার লোক নিতে চায়। কিন্তু কাজ একেবারে না থাকায় দৈনন্দিন খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। বাড়িতে বউ-বাচ্চার জন্য কোনো টাকা পাঠাতে পারছি না। রোজা চলে এলেও বাজারে দামের উত্তাপ কমেনি। উল্টো কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় কম টাকা দিয়ে কীভাবে প্রতিদিন ইফতার করব? আমার পক্ষে তো ১০০-২০০ টাকা দিয়ে পেট ভরে ইফতারি করার সুযোগ নেই।’

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ প্রায় ভোগ্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। কয়েক মাস আগে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। একই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকার ওপরে। কয়েক মাস ধরে বাজারে মিলছে না চাহিদা মতো ভোজ্যতেল। সরকার প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। সংকটের কারণে কিছু স্থানে তেল মিললেও লিটারপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকা। এতদিন প্রায় সবজির দাম 

কম ছিল। তবে রোজার দু’দিন আগে বেগুন, শসা, টমেটোসহ প্রায় সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা। কয়েকদিন আগে প্রতি কেজি বেগুন ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হতো, দু’দিন ধরে তা ৫০-৬০ টাকা। প্রায় এক মাস ধরে পাঁচ কেজি টমেটো ১০০-১২০ টাকা ছিল, দু’দিন ধরে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা। ইফতারে সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত ছোট শসা প্রতি কেজি ছিল ৩০-৪০ টাকা; এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ লেবুর। এতদিন লেবুর ডজন ছিল ছোট ৬০-৮০ টাকা, বড় ১০০-১২০ টাকায়। কিন্তু রোজা শুরুর দু’দিন আগে থেকে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। এক ডজন লেবুর দাম ২০০ টাকার উপরে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘নতুন সরকার এলেও পণ্যের বাড়তি দামের নাভিশ্বাস থেকে মুক্তি মেলেনি ভোক্তার। উল্টো কিছু পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। কয়েক মাস ধরে চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে রয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবারের ইফতারের বাজারে। তাই কম আয়ের মানুষ এবার কম টাকায় পেটভরে ইফতার করার সুযোগ পাবে না। প্রশাসনের তদারকির অভাবে যে যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছেন।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইফত র ইফত র র ইফত র ক ২০০ ট ক ১০ ট ক ২০ ট ক

এছাড়াও পড়ুন:

দেড় ঘণ্টায় শেষ সুলভ মূল্যের ডিম-দুধ, পাননি অনেকেই

নির্ধারিত এলাকায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গাড়ি পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। এরপর শুরু হয় সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও গরুর মাংস বিক্রি। দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল গাড়িতে ডিম ও দুধ নেই। কেবল ১৬ কেজি গরুর মাংস অবশিষ্ট রয়েছে। অর্থাৎ মাত্র দেড় ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য আনা দুধ ও ডিম।

আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী ওয়্যারলেস এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র। এদিন নগরের ওয়্যারলেস ও টেক্সটাইল এলাকায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। এই কর্মসূচির আওতায় পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ প্রতিটি গাড়িতে ২০০ লিটার দুধ, ১ হাজার ৫০০ পিস ডিম ও ৭৫ কেজি করে মাংস ছিল। সে হিসেবে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ২০০ লিটার দুধ ও ১২৫ ডজন ডিম বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। তবে দুপুর ১২টার দিকে তেমন ভিড় দেখা যায়নি সেখানে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁরা অনেকে আগে এসেও পণ্য পাননি।

এদিন অন্তত ১০ ক্রেতা দুধ-ডিম না পেয়ে ফেরত গেছেন। ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি দুপুর ১২টার দিকে এসে ডিম পাই নাই। বাসা থেকে আসতে আসতেই দেখি সব শেষ। তাঁরা নাকি দেড় হাজার ডিম আনছে। তাহলে আমরা পাই নাই কেন?’

গাড়ি থেকে এসব পণ্য কেনার জন্য প্রথমে টাকা দিয়ে স্লিপ নিতে হয়। কর্মকর্তারা জানান, একজন সর্বোচ্চ এক ডজন ডিম, এক বা দুই লিটার দুধ ও এক কেজি মাংস কিনতে পারেন। কেউ চাইলে শুধু ডিম, দুধ অথবা মাংস কিনতে পারবেন। তবে মাংসের চাহিদা তুলনামূলক কম।

দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকায় ফ্রিজার ট্রাক রয়েছে। ফলে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য পণ্য নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রামে সে সুযোগ নেই। তাই পরিমাণ কম। আবার দ্রুত ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সবাইকে পণ্য দেওয়া হয়েছে। মাংসের চাহিদা কম থাকায় কিছু মাংস থেকে গেছে। ডিমের চাহিদা বেশি ছিল। দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ