‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ কি নতুন দলের দলীয় স্লোগান, কীভাবে এল এই স্লোগান
Published: 2nd, March 2025 GMT
নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের প্রায় সব শীর্ষ নেতা বক্তব্যের ইতি টেনেছেন ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানটি দিয়ে।
দল গঠনের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের অনেকে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটি ব্যবহার করতেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে একই স্লোগান অনেক নেতা ব্যবহার করায় কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে স্লোগানটি কি জাতীয় নাগরিক পার্টি দলীয় স্লোগান হিসেবে গ্রহণ করেছে।
সে প্রশ্নের উত্তরের আগে জেনে নেওয়া যাক, ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটি কোথা থেকে এল।
প্রখ্যাত ভারতীয় ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের এক লেখায় উঠে এসেছে এ স্লোগানের আদ্যোপান্ত। ২০২২ সালের ২৯ মে ভারতীয় পত্রিকা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে এক লেখায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ১৯২১ সালে মাওলানা হাসরাত মোহানি (১৮৭৫-১৯৫১) প্রথম স্লোগানটি ব্যবহার করেন। এরপরে এ স্লোগান ঠাঁই করে নেয় উপনিবেশবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের নেতা ভগত সিংয়ের কণ্ঠেও।
নানা পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন হাসরাত মোহানি। উর্দু ভাষার এ কবি ছিলেন শ্রমিকনেতা, ছিলেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও।
হাসরাত মোহানি ভারতের উত্তর প্রদেশের উন্নাও জেলার মোহন নামের একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ইরফান হাবিব লিখেছেন, জন্মের পর হাসরাত মোহানির নাম রাখা হয় ফজলুল হাসান। এ নামেই তিনি বেড়ে ওঠেন। একজন বিপ্লবী উর্দু কবি হিসেবে ‘হাসরাত’ ছিল তাঁর কলমি নাম, যা একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও তাঁকে পরিচিতি দিয়েছিল। তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির এক নেতার সঙ্গে প্রথম ভারতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে পূর্ণ স্বরাজ বা পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করেছিলেন।
ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর হাসরাত মোহানি গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ভারতীয় সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ইনকিলাব জিন্দাবাদ বা বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক স্লোগানটি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি এখনো দেয়। তিনি বাংলাদেশে অতীতে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের এ স্লোগান দিতে শুনেছেন।‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে দিয়েছিলেন হাসরাত মোহানি।
ইরফান হাবিবের লেখায় দেখা যাচ্ছে ১৯২৯ সালে আদালতে দেওয়া এক জবানবন্দিতে ভগত সিং বলেন, ’ ইনকিলাব বা বিপ্লব বোমা বা পিস্তলের সংস্কৃতি নয়। আমাদের বিপ্লবের অর্থ হলো প্রকাশ্য অন্যায়ের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকা বর্তমান পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ বদলে দেওয়া।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক জাফর আহমেদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে জানান, ইনকিলাব আরবি শব্দ। জিন্দাবাদ উর্দু শব্দ। মানে হলো ইনকিলাব জিন্দাবাদ শব্দটি আরবি ও উর্দুর মিশেল। তিনি বলেন, জিন্দাবাদ মানে অভিনন্দন জানানো। ফলে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানের মানে হলো বিপ্লবকে অভিনন্দন জানানো।
অবশ্য ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব তাঁর লেখায় ইনকিলাব জিন্দাবাদের অর্থ হিসেবে লিখেছেন, ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’।
আমাদের দলীয় স্লোগান ও মূলনীতি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আপাতত আত্মপ্রকাশ, কমিটি প্রকাশ আর ঘোষণাপত্র হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো সামনে চূড়ান্ত করা হবে।আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক, জাতীয় নাগরিক পার্টিদেশে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গত জুলাইয়ে যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে, তখন তরুণদের অনেকেই ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটি ব্যবহার করেন।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অনেক নেতা ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটি দিলেও দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সেটি ব্যবহার করেননি।
জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি জাতীয় নাগরিক পার্টির দলীয় স্লোগান নয়। যেহেতু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটি বেশ আলোচিত ছিল, তারই ধারাবাহিকতায় এখনো আমরা এই স্লোগানটি বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যবহার করছি।’
’আমাদের দলীয় স্লোগান ও মূলনীতি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আপাতত আত্মপ্রকাশ, কমিটি প্রকাশ আর ঘোষণাপত্র হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো সামনে চূড়ান্ত করা হবে’, বলেন তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের মঞ্চে দলের শীর্ষস্থানীয় পদে থাকা নেতারা। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইনক ল ব জ ন দ ব দ স ল গ ন র দল য় স ল গ ন ইরফ ন হ ব ব ব যবহ র কর সদস য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের নামাজ শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, বিএনপি-আ.লীগ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ২
নাটোরের লালপুর উপজেলায় ঈদের নামাজ শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার জেরে বিএনপির নেতাকর্মীর ওপরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা ও গুলিবর্ষণ করে। এতে সুজাত আলী ও সাব্বির নামে দুইজিন গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে একজন বিএনপিকর্মী বলে জানা গেছে। গুলিবিদ্ধ দু’জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ঈদগাহে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৯ জনকে আটক করে করেছে পুলিশ।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, ঈদের নামাজ শেষে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় বিএনপি ও স্থানীয়দের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেনে তারা। এতে সুজাত আলী ও সাব্বির (২৪) নামের দুইজন গুলিবিদ্ধ হন। লুকমান হোসেন নামের আরও একজন আহত হন। আহত সাব্বির হোসেনকে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুলিবিদ্ধ দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার প্রতিবাদে লালপুর ইউনিয়ন বিএনপি এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আশরাফুল ইসলাম লুলু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি, বিএনপি নেতা এটিএম জাহিদুল আলম ডলার ও জিয়া। তারা অভিযোগ করেন, ফ্যাসিবাদী শক্তি পরিকল্পিতভাবে ঈদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে এবং প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে, যা জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি নেতারা হুঁশিয়ারি দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) আমজাদ হোসাইন বলেন, দুই যুবক ঈদ মাঠে জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছে এ রকমটা জানতে পেরেছি। মারামারিতে সম্পৃক্ত ছিল এরকম ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা বলছে। তবে এতে যিনি ভুক্তভোগী হয়েছেন, তাকে এখনো আমরা পাইনি। এটা নিয়েও যাচাই-বাছাই করছি।
এসপি আমজাদ হোসাইন আরও বলেন, ঘটনাস্থলে ডিবি টিম, পুলিশ, যৌথবাহিনীর সদস্যরা রয়েছে সেখান থেকে রিপোর্ট আসলে পুরো ঘটনাটি জানতে পারব। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।