প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির কারখানায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ
Published: 2nd, March 2025 GMT
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন অস্থিরতায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনেকটাই হাত গুটিয়ে আছেন। এমন পরিস্থিতিতেও বড় বিনিয়োগে যাচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এই শিল্পগোষ্ঠী ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে রপ্তানিমুখী প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের কারখানা করতে যাচ্ছে।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে আরএফএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কারখানাটি হচ্ছে। ইতিমধ্যে কারখানা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ। তবে এখনো যন্ত্রপাতি আমদানি হয়নি। কারখানা চালুর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৬০ লাখ মার্কিন ডলার বা ৭৩ কেটি ২০ লাখ টাকার প্লাস্টিক পণ্যের ক্রয়াদেশ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনটাই জানালেন আরএফএল গ্রুপের কর্মকর্তারা।
নতুন এই কারখানার যন্ত্রপাতির জন্য বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্লাস্টিক মেশিনারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হাইতিয়ান গ্রুপের সঙ্গে আজ রোববার চুক্তির কথা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে অর্থাৎ এপ্রিল-মে মাসে কারখানার উৎপাদন শুরু হবে। কারখানাটিতে বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালি পণ্য উৎপাদন হবে। পাশাপাশি খেলনা ও পোষা প্রাণীর প্রয়োজনীয় পণ্যও উৎপাদনে যাবে আরএফএল।
প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে দেড় যুগের অভিজ্ঞতা রয়েছে আরএফএলের। ২০০৭ সালে ভারতে গৃহস্থালি প্লাস্টিক পণ্য পাঠানোর মধ্য দিয়ে এই খাতে তাদের রপ্তানি শুরু। বর্তমানে বিশ্বের ৮০টি দেশে আরএফএলে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করেছে গ্রুপটি।
আরএফএল গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (রপ্তানি) সালাহ উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘আমরা এত দিন ইউরোপের বাজারে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করেছি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি উত্তর আমেরিকার বাজারের দিকে দৃষ্টি দিতে চাই। কারণ, বাজারটি অনেক বড়। তা ছাড়া সেখানকার মানুষ আমাদের মতো দীর্ঘ সময়ের জন্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করে না। স্বল্প সময় ব্যবহার করে আবার নতুন পণ্য কেনে।’
বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘদিন ধরে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হলেও তা একটি গণ্ডির মধ্যেই আটকে আছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ১৮ কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি।
আরএফএলের নতুন কারখানায় বছরে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করা যাবে। ক্রয়াদেশ থাকলে রপ্তানিও হবে সমপরিমাণ পণ্য। আর কারখানাটিতে কর্মসংস্থান হবে আড়াই হাজার মানুষের। এমনটাই জানালেন আরএফএলের কর্মকর্তারা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘আমরা খুবই ইতিবাচক। সংকটের সময় আমরা কাজের গতি বাড়িয়ে দিই। এমন কৌশলে আমরা সফলতাও পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘উত্তর আমেরিকায় প্লাস্টিক পণ্যের বাজারে চীনাদের রাজত্ব। তবে খরচ বেড়ে যাওয়ায় চীনারা এই ব্যবসা থেকে সরে আসছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধও নতুন মাত্রা পেয়েছে। ফলে প্লাস্টিকের ক্রয়াদেশ আশপাশের দেশে স্থানান্তরিত হবে। আমরা সেই সুযোগটি নিতে চাই।’
প্রাণের বর্তমান চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরীর বাবা আমজাদ খান চৌধুরী ১৯৮১ সালে ৪২ বছর বয়সে সামরিক বাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ওই বছরই শুরু করেছিলেন ফাউন্ড্রি বা টিউবওয়েল তৈরি ও আবাসন ব্যবসা। সম্বল ছিল পেনশনের টাকা। তবে আবাসন ব্যবসা তিনি বেশি দিন করেননি। ফাউন্ড্রির ব্যবসায় বেশি নজর দেন। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আরএফএল)। কোম্পানিটির আওতায় এখন বহু ধরনের পণ্য রয়েছে। তবে আমজাদ খান চৌধুরীর লক্ষ্য ছিল কৃষি ব্যবসায় নামা। তারই অংশ হিসেবে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেড (এএমসিএল)-প্রাণ।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের লেনদেন ছিল ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ৫৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। শিল্পগ্রুপটিতে কাজ করেন ১ লাখ ৪৫ হাজার কর্মী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আরএফএল গ র প র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
মাদক মামলায় খালাস পেলেন ডা. ঈশিতা
প্রায় চার বছর আগে রাজধানীর শাহ আলী থানায় দায়ে করা মাদক মামলায় ইশরাত রফিক ওরফে ডা. ঈশিতাকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (৩ মার্চ) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্ত্তী খালাসের রায় দেন।
ডা. ঈশিতার আইনজীবী শেখ কানিজ ফাতেমা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, “রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। এজন্য আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন।”
রায় ঘোষণার সময় ডা. ঈশিতা ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। খালাস পাওয়ায় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন তিনি।
২০২১ সালের ১ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর থেকে ডা. ঈশিতাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার বিরুদ্ধে পরদিন ২ আগস্ট ভুয়া পরিচয় দেওয়া, মাদক ব্যবসা, সার্টিফিকেট জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও প্রতারণা আইনে রাজধানীর শাহ আলী থানায় তিনটি মামলা করা হয়। গ্রেপ্তারের ১৪ মাস পর ২০২২ সালের ১ অক্টোবর কারাগার থেকে মুক্তি পান ডা. ঈশিতা।
এর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ডা. ইশিতাকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর আপিল করা হয় হাইকোর্টে। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৯ মে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চ তাকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
১০০ পিস ইয়াবা এবং পাঁচ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার দেখিয়ে ২০২১ সালের ২ আগস্ট শাহ আলী থানায় ডা. ঈশিতার বিরুদ্ধে মামলা করেন র্যাব-৪ এর ডিএডি খন্দকার মো. আমির আলী।
মামলা তদন্ত করে র্যাব-৪ এর উপ-পরিদর্শক মঈনুল হোসেন ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি এ মামলায় চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করা হয়। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
এদিকে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম ব্যবহারের দায়ে ডা. ঈশিতার বিরুদ্ধে আরেক মামলায় সম্প্রতি চার্জ গঠন করা হয়েছে।
ঢাকা/মামুন/রফিক