পৃথিবীর কেন্দ্রে লুকানো হিলিয়াম থাকতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এই হিলিয়ামের উৎপত্তি পৃথিবী থেকে নয় বলে মনে করেন তাঁরা। সাধারণভাবে মনে করা হয়, আমাদের গ্রহের কেন্দ্রস্থল পুরোটাই লোহা দিয়ে তৈরি। একদল বিজ্ঞানী মনে করছেন, বিগ ব্যাংয়ের ঠিক পরে তৈরি আদিম হিলিয়ামও থাকতে পারে পৃথিবীর কেন্দ্রে।

হিলিয়াম সাধারণভাবে অন্যান্য কোনো উপাদানের সঙ্গে বন্ধনে যুক্ত হয় না। গবেষকেরা মনে করছেন, অত্যন্ত উচ্চ তাপ ও চাপে লোহার সঙ্গে আদিম হিলিয়ামের পরমাণু এক হয়ে হীরার কাঠামোয় আটকে রাখতে পারে। চরম পরিস্থিতিতে হিলিয়াম লোহার সঙ্গে বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর কেন্দ্র নিয়ে নতুন আঙ্গিকে গবেষণা করতে আগ্রহী।

পৃথিবী একটি শীতল নীল গ্রহ বলে মনে হয়, তবে গভীরভাবে এটি আসলে একটি ধাতব মাথা। এর বাইরের কেন্দ্রটি বেশির ভাগই গলিত লোহা (এবং কিছু নিকেল), যদিও এর ভেতরের কেন্দ্রটি একটি কঠিন লোহার কক্ষ (নিকেলের চিহ্নসহ)। তবে ভারী ধাতু প্লেলিস্টে একমাত্র জিনিস নয়, যেমনটি দেখা যাচ্ছে, সেখানে হিলিয়াম ভাসমান অবস্থায় থাকতে পারে।

পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল বিশুদ্ধ লোহার মতো ঘন নয় এবং গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে এর বাইরের কেন্দ্রে কার্বন, অক্সিজেন ও সিলিকনের মতো হালকা উপাদান থাকতে পারে। জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় ও তাইওয়ানের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা হিলিয়াম ও লোহার মধ্যে বন্ধন আবিষ্কার করেছে। কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবী যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন লোহার সঙ্গে কিছু হিলিয়াম বন্ধনে আবদ্ধ হয় বলে মনে করেন তাঁরা। হিলিয়াম একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে কোনো ধাতুর সঙ্গে বন্ধন তৈরি করে না। বিজ্ঞানীরা ডায়মন্ড আনভিল সেল নামের একটি হাইপ্রেশারের ডিভাইসে লোহা ও হিলিয়ামের মধ্যে বন্ধন তৈরি করেছেন। চরম উত্তপ্ত অবস্থায় লোহা ও হিলিয়াম আসলে বন্ধনে যুক্ত হতে পারে।

আমরা যে হিলিয়ামের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পরিচিত, তা হিলিয়াম ৪ নামেও পরিচিত। অন্যদিকে আদিম হিলিয়াম ৩ পৃথিবীতে উৎপন্ন হয় না। এর দুটি প্রোটন ও একটি নিউট্রন থাকে। বিগ ব্যাংয়ের ঠিক পরে প্রাথমিক মহাবিশ্বের তীব্র তাপে এটি তৈরি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। হিলিয়াম মহাবিশ্বের সবচেয়ে প্রাচুর্যপূর্ণ উপাদানের মধ্যে একটি। আমাদের সৌরজগতের উদ্ভবের মতো প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্কের বেশির ভাগ ভর তৈরি করে হিলিয়াম।

ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারসে প্রকাশিত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেন, পৃথিবীর বিকাশের সময় আদিম হিলিয়ামের একটি বৃহৎ অংশ উচ্চ চাপের মাধ্যমে গভীর ম্যাগমা সমুদ্রে ধাতব-সিলিকেটের মাধ্যমে পৃথিবীর কেন্দ্রে আটকে থাকতে পারে। আগ্নেয়গিরির শিলা নিয়ে কাজের সময় আদিম হিলিয়ামের বন্ধন নিয়ে জানতে চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। বিভিন্ন আগ্নেয়গিরি থেকে দীর্ঘদিন ধরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আদিম হিলিয়ামসহ ম্যাগমা বের হয়। হিলিয়ামযুক্ত ম্যাগমা ম্যান্টলের গভীর থেকে আসে বলে ভূগর্ভস্থ হিলিয়ামের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। তাঁরা মনে করছেন, ‘আমাদের গ্রহের গভীরে হয়তো আদিম হিলিয়ামের বিশাল আধার থাকতে পারে।’

পৃথিবীর বহিঃপৃষ্ঠের চরম তাপ ও চাপ অনুকরণ করার জন্য লোহা ও আদিম হিলিয়ামকে একটি বিশেষ যন্ত্রে রাখা হয়। লেজার দিয়ে প্রায় ৭২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২ হাজার ৭২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় লোহা ও হিলিয়ামকে উত্তপ্ত করা হয়। ৫ থেকে ৫৫ গিগাপ্যাসকেল চাপের সংস্পর্শে রাখেন বিজ্ঞানীরা। চাপ ও তাপের কারণে বন্ধন তৈরি হয় বলে পৃথিবীর কেন্দ্রে আদিম হিলিয়ামের একটি বৃহৎ আধার থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

সূত্র: পপুলার মেকানিকস

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ দ ন করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে ছাত্রলীগের মিছিলের পর দুই আ.লীগ নেতার বাসায় হামলা

সিলেটে সকালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল করার পর বিকাল ও সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দুই নেতার এবং ছাত্রলীগের এক নেতারা বাসায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।

বুধবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিলেটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য  শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় বিকালে হামলা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায়ও হামলা চালানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নোয়াখালীতে বিনোদনকেন্দ্রে হামলা, পুলিশসহ আহত ৭

রাঙ্গুনিয়ায় আহত আ.লীগ নেতার মৃত্যু

হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।

সিলেট নগরীর শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর (নাদেল) বাসভবনের ‘ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টের কার্যালয়ে’ হামলা চালায় একদল মানুষ। তারা মিছিল নিয়ে তার বাসায় ঢুকে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক তরুণ-যুবক গিয়ে এ হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালান। বাসাটিতে আনোয়ারুজ্জামানের পরিবারের কেউ থাকেন না। দুজন তত্ত্বাবধায়ক বাসার দেখাশোনা করেন।

মেজরটিলা এলাকায় অবস্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তদের একটি দল। সন্ধ্যা সাতটায় রুহেলের বাসায় হামলার সময় তাঁর মা ও বোন বাসায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অবশ্য এসব হামলায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বুধবার সকাল থেকে সিলেট নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মাঠে নামে। তারা ভিডিওতে দেখা যাওয়া চার-পাঁচজন মিছিলকারীকে ধরে পুলিশে হাতে তুলে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে ৩০ থেকে ৪০ জন তরুণ নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। এতে ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান।

এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাদেলের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই হামলা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, মিছিলকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ