পৃথিবীর কেন্দ্রে আদিম কোনো উপাদান লুকিয়ে আছে
Published: 2nd, March 2025 GMT
পৃথিবীর কেন্দ্রে লুকানো হিলিয়াম থাকতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এই হিলিয়ামের উৎপত্তি পৃথিবী থেকে নয় বলে মনে করেন তাঁরা। সাধারণভাবে মনে করা হয়, আমাদের গ্রহের কেন্দ্রস্থল পুরোটাই লোহা দিয়ে তৈরি। একদল বিজ্ঞানী মনে করছেন, বিগ ব্যাংয়ের ঠিক পরে তৈরি আদিম হিলিয়ামও থাকতে পারে পৃথিবীর কেন্দ্রে।
হিলিয়াম সাধারণভাবে অন্যান্য কোনো উপাদানের সঙ্গে বন্ধনে যুক্ত হয় না। গবেষকেরা মনে করছেন, অত্যন্ত উচ্চ তাপ ও চাপে লোহার সঙ্গে আদিম হিলিয়ামের পরমাণু এক হয়ে হীরার কাঠামোয় আটকে রাখতে পারে। চরম পরিস্থিতিতে হিলিয়াম লোহার সঙ্গে বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর কেন্দ্র নিয়ে নতুন আঙ্গিকে গবেষণা করতে আগ্রহী।
পৃথিবী একটি শীতল নীল গ্রহ বলে মনে হয়, তবে গভীরভাবে এটি আসলে একটি ধাতব মাথা। এর বাইরের কেন্দ্রটি বেশির ভাগই গলিত লোহা (এবং কিছু নিকেল), যদিও এর ভেতরের কেন্দ্রটি একটি কঠিন লোহার কক্ষ (নিকেলের চিহ্নসহ)। তবে ভারী ধাতু প্লেলিস্টে একমাত্র জিনিস নয়, যেমনটি দেখা যাচ্ছে, সেখানে হিলিয়াম ভাসমান অবস্থায় থাকতে পারে।
পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল বিশুদ্ধ লোহার মতো ঘন নয় এবং গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে এর বাইরের কেন্দ্রে কার্বন, অক্সিজেন ও সিলিকনের মতো হালকা উপাদান থাকতে পারে। জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় ও তাইওয়ানের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা হিলিয়াম ও লোহার মধ্যে বন্ধন আবিষ্কার করেছে। কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবী যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন লোহার সঙ্গে কিছু হিলিয়াম বন্ধনে আবদ্ধ হয় বলে মনে করেন তাঁরা। হিলিয়াম একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে কোনো ধাতুর সঙ্গে বন্ধন তৈরি করে না। বিজ্ঞানীরা ডায়মন্ড আনভিল সেল নামের একটি হাইপ্রেশারের ডিভাইসে লোহা ও হিলিয়ামের মধ্যে বন্ধন তৈরি করেছেন। চরম উত্তপ্ত অবস্থায় লোহা ও হিলিয়াম আসলে বন্ধনে যুক্ত হতে পারে।
আমরা যে হিলিয়ামের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পরিচিত, তা হিলিয়াম ৪ নামেও পরিচিত। অন্যদিকে আদিম হিলিয়াম ৩ পৃথিবীতে উৎপন্ন হয় না। এর দুটি প্রোটন ও একটি নিউট্রন থাকে। বিগ ব্যাংয়ের ঠিক পরে প্রাথমিক মহাবিশ্বের তীব্র তাপে এটি তৈরি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। হিলিয়াম মহাবিশ্বের সবচেয়ে প্রাচুর্যপূর্ণ উপাদানের মধ্যে একটি। আমাদের সৌরজগতের উদ্ভবের মতো প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্কের বেশির ভাগ ভর তৈরি করে হিলিয়াম।
ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারসে প্রকাশিত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেন, পৃথিবীর বিকাশের সময় আদিম হিলিয়ামের একটি বৃহৎ অংশ উচ্চ চাপের মাধ্যমে গভীর ম্যাগমা সমুদ্রে ধাতব-সিলিকেটের মাধ্যমে পৃথিবীর কেন্দ্রে আটকে থাকতে পারে। আগ্নেয়গিরির শিলা নিয়ে কাজের সময় আদিম হিলিয়ামের বন্ধন নিয়ে জানতে চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। বিভিন্ন আগ্নেয়গিরি থেকে দীর্ঘদিন ধরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আদিম হিলিয়ামসহ ম্যাগমা বের হয়। হিলিয়ামযুক্ত ম্যাগমা ম্যান্টলের গভীর থেকে আসে বলে ভূগর্ভস্থ হিলিয়ামের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। তাঁরা মনে করছেন, ‘আমাদের গ্রহের গভীরে হয়তো আদিম হিলিয়ামের বিশাল আধার থাকতে পারে।’
পৃথিবীর বহিঃপৃষ্ঠের চরম তাপ ও চাপ অনুকরণ করার জন্য লোহা ও আদিম হিলিয়ামকে একটি বিশেষ যন্ত্রে রাখা হয়। লেজার দিয়ে প্রায় ৭২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২ হাজার ৭২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় লোহা ও হিলিয়ামকে উত্তপ্ত করা হয়। ৫ থেকে ৫৫ গিগাপ্যাসকেল চাপের সংস্পর্শে রাখেন বিজ্ঞানীরা। চাপ ও তাপের কারণে বন্ধন তৈরি হয় বলে পৃথিবীর কেন্দ্রে আদিম হিলিয়ামের একটি বৃহৎ আধার থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
সূত্র: পপুলার মেকানিকস
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দেড় ঘণ্টায় শেষ সুলভ মূল্যের ডিম-দুধ, পাননি অনেকেই
নির্ধারিত এলাকায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গাড়ি পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। এরপর শুরু হয় সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও গরুর মাংস বিক্রি। দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল গাড়িতে ডিম ও দুধ নেই। কেবল ১৬ কেজি গরুর মাংস অবশিষ্ট রয়েছে। অর্থাৎ মাত্র দেড় ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য আনা দুধ ও ডিম।
আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী ওয়্যারলেস এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র। এদিন নগরের ওয়্যারলেস ও টেক্সটাইল এলাকায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। এই কর্মসূচির আওতায় পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ প্রতিটি গাড়িতে ২০০ লিটার দুধ, ১ হাজার ৫০০ পিস ডিম ও ৭৫ কেজি করে মাংস ছিল। সে হিসেবে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ২০০ লিটার দুধ ও ১২৫ ডজন ডিম বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। তবে দুপুর ১২টার দিকে তেমন ভিড় দেখা যায়নি সেখানে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁরা অনেকে আগে এসেও পণ্য পাননি।
এদিন অন্তত ১০ ক্রেতা দুধ-ডিম না পেয়ে ফেরত গেছেন। ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি দুপুর ১২টার দিকে এসে ডিম পাই নাই। বাসা থেকে আসতে আসতেই দেখি সব শেষ। তাঁরা নাকি দেড় হাজার ডিম আনছে। তাহলে আমরা পাই নাই কেন?’
গাড়ি থেকে এসব পণ্য কেনার জন্য প্রথমে টাকা দিয়ে স্লিপ নিতে হয়। কর্মকর্তারা জানান, একজন সর্বোচ্চ এক ডজন ডিম, এক বা দুই লিটার দুধ ও এক কেজি মাংস কিনতে পারেন। কেউ চাইলে শুধু ডিম, দুধ অথবা মাংস কিনতে পারবেন। তবে মাংসের চাহিদা তুলনামূলক কম।
দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকায় ফ্রিজার ট্রাক রয়েছে। ফলে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য পণ্য নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রামে সে সুযোগ নেই। তাই পরিমাণ কম। আবার দ্রুত ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সবাইকে পণ্য দেওয়া হয়েছে। মাংসের চাহিদা কম থাকায় কিছু মাংস থেকে গেছে। ডিমের চাহিদা বেশি ছিল। দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে।