বাংলাদেশের চেয়ে যে কারণে এগিয়ে আফগানিস্তান
Published: 2nd, March 2025 GMT
যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ, পাকিস্তানের শরণার্থী ক্যাম্প থেকেই তাদের ক্রিকেট শেখা, স্টেডিয়াম নেই, আধুনিক একাডেমি নেই– আফগানিস্তান ক্রিকেট নিয়ে এত দিন এমন ধারণাই ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের। তবে সেটা যে সর্বৈব মিথ্যা, তা ক্যামেরার সামনে জোর গলায় বলেছেন আফগান অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শাহিদি। ‘লোকে বলে আমাদের নাকি কিছু নেই। আমাদের স্টেডিয়াম, একাডেমিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে স্টেডিয়াম ৪০-৫০ হাজার দর্শকে ভরা থাকে।’ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে এভাবেই আফগানদের সম্পর্কে ক্রিকেটবিশ্বের ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে দেন শাহিদি। আর্থিক সচ্ছলতা বাদ দিলে তারা অনেক কিছুতেই বাংলাদেশের চেয়ে যে এগিয়ে, সে প্রমাণ দিয়েছেন এবারের আসরে। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে এসেই সেমিফাইনালের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন। বৃষ্টির কারণে তারা যখন হতাশ, সেখানে সেই বৃষ্টির কল্যাণেই কিনা একটি পয়েন্ট পেয়ে দেশে ফিরেছেন শান্তরা!
আসলে এবারের আসরে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের ক্রিকেট দক্ষতা ও সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন রশিদ লতিফ-ইব্রাহিম জাদরানরা। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার মাত্র সাত বছরের মধ্যে আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোতে শিরোপা দৌড়ে অন্য দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে আফগানরা। গত টি২০ বিশ্বকাপেই তারা সেমিফাইনাল খেলেছে। আর গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেমিতে যাওয়ার লড়াইয়ে মুম্বাইয়ে ম্যাক্সওয়েলের ম্যাজিক ইনিংসের কাছে হেরে যেতে হয় তাদের। ওয়ানডে ফরম্যাটেও যে তারা কতটা ভয়ংকর, সেটা ইংল্যান্ডকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এক সময় শুধু রশিদ খান, মুজিবুর রহমান, নবিরাই ছিলেন আফগান ক্রিকেটের পোস্টারবয়। ধরে নেওয়া হতো দলটিতে শুধু রহস্যময় স্পিনার রয়েছে, তবে আজমত-ফারুকিরা দেখিয়ে দিয়েছেন পেস বোলিংয়েও আফগানরা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। এখন এসব ট্যালেন্ট কি শুধুই গলির ক্রিকেট খেলে আসে? ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। বাংলাদেশে যেখানে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের বাইরে ওয়ানডে ফরম্যাটের বিসিবি স্বীকৃত কোনো টুর্নামেন্ট নেই, সেখানে আফগানিস্তানে সাতটি ওয়ানডে ফরম্যাটের টুর্নামেন্ট হয়। যার একটি আবার বয়সভিত্তিক। টি২০ ফরম্যাটের তিনটি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট হয় সেখানে, যার একটি ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক। প্রথম শ্রেণি ও তিন দিনের টুর্নামেন্টও রয়েছে আফগানিস্তানে। তাদের সমস্যা একটাই– বিদেশি ক্রিকেটাররা সেখানে খেলতে চান না।
তবে ঘরোয়া ক্রিকেট আফগানিস্তানে ভীষণ জনপ্রিয়। ঢাকা লিগে এখন মেরেকেটেও পাঁচশ দর্শক হয় না। সেখানে কাবুল, কান্দাহার আর জালালাবাদের মাঠ ভরে যায় দর্শকে। আফগানিস্তানে অঞ্চলভিত্তিক পাঁচটি ভাগ হলো আমুয়া, বন্দে আমির, বুস্ত, স্পিনঘর ও মিস আয়ানক। সেখানে প্রতিটি অঞ্চলে আলাদা আলাদা তিন ফরম্যাটেই লিগ হয়। অথচ বাংলাদেশের সব কিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। অনেক আলোচনার পরও বাংলাদেশে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা আলোর মুখ দেখেনি। তাহলে আফগানিস্তানের ক্রিকেট এগোবে নাকি বাংলাদেশেরটা এগোবে? আফগানিস্তান বোর্ড থেকে প্রতিবছর দেশজুড়ে ট্যালেন্ট হান্ট হয়। ব্যাটার, পেসার, স্পিনারের বাইরে কোচও সন্ধান করা হয়। এজন্য আফগান বোর্ড স্পন্সরের দিকে চেয়ে থাকে না। আইসিসি থেকে পাওয়া অনুদানের ওপর নির্ভর করেই চলে এসব ট্যালেন্ট হান্ট। আর এই আফগানিস্তান আগামী এক দশকের মধ্যে কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট জিতবে বলে বিশ্বাস দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার ডেইল স্টেইনের। ‘বিশ্বের বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি টি২০ টুর্নামেন্টে আফগানিস্তানের অনেক খেলোয়াড় অংশ নেয়। এটা তাদের জন্য দারুণ ব্যাপার। তবে আমার মনে হয় তাদের চার দিনের ম্যাচেও মনোযোগী হতে হবে। কারণ ওয়ানডে ভার্সনটা কিন্তু টেস্টেরই ছোট ভার্সন। এবং সেটা থেকে টি২০ও শেখা যায়। যখন তারা এই তিন ফরম্যাটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে– সত্যি কথা বলছি এর এক দশকের মধ্যেই তারা আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হবে।’
ইএসপিএনক্রিকইনফোর টকশোতে ডেইল স্টেইনের সঙ্গে ওয়াসিম জাফরও ছিলেন। তিনিও এই ভবিতব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। ‘আফগানিস্তান উন্নতি করছে। তারা এখন যে কোনো দলকেই হারাতে পারে, আর তাতে আপসেট বলা যায় না। আশা করি, এই দলটি অনেক দূর যাবে।’ তবে ব্যাটিংয়ের সময় এক ধরনের অস্থিরতা থেকে আফগানদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডেইল স্টেইন। ‘আমরা এমন এক সময়ে বাস করি, যেখানে লোকজনের ধৈর্য খুব কম। আমরা ইনস্টাগ্রামে একটা স্টোরি শুধু ২ সেকেন্ড দেখি। আফগানিস্তানের খেলোয়াড়রাও একই কাজ করেন। তারা খুব দ্রুত কিছু ঘটিয়ে ফেলতে চান। দেখা যায়, ক্রিজে সুইং পাচ্ছেন, অথচ এর মধ্যেই তারা চার-ছক্কা মারার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এটা চার দিনের ম্যাচ বেশি খেললে কমে যাবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন ফরম য ট র আইস স
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে নতুন কৌশলে এগোচ্ছে জামায়াত
সাধারণ মানুষের আরও কাছে যেতে নানা কৌশলে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামী। দল শক্তিশালী করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ কর্মশালা, রুকন সম্মেলন, সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি প্রায় প্রতিদিনই থাকছে কোনো না কোনো ইউনিটে। মাঠ পর্যায়ে বেশি বেশি যাচ্ছেন দলটির নেতারা।
গত ১১ এপ্রিল থেকে জামায়াতের ‘দাওয়াতি সপ্তাহ’ চলছে। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজারসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। কট্টর ধর্মীয় নীতির বদনাম ঘোচাতে কৌশলে পরিবর্তন আনছে দলটি। নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শেখানো হচ্ছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হবে, দলকে কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে– এসব বিষয়। মাঠে নামানো হয়েছে দলটির নারী শাখাকেও। এক সময় বোরকা, হিজাব ও হাত-পায়ে মোজা পরিহিত নারী কর্মীরা দলীয় কার্যক্রম চালালেও এখন কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। অনেক স্থানে শালীন পোশাকে কেবল বোরকা পরে ঘরে ঘরে দলের দাওয়াত নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এদিকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বেশ সক্রিয় জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে সংঘবদ্ধ ছিল দলটি। এখনও সেই প্ল্যাটফর্মগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এক প্রকার বাধ্য হয়ে তৃণমূল পর্যায়ে নতুনরূপে আবির্ভূত হতে চাচ্ছে জামায়াত। তারা সময়ের সুযোগ নিতে চাচ্ছে। তাদের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে না। অন্যদিকে জামায়াত নেতারা বলছেন, তারা বরাবরই উদার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। অনুকূল পরিবেশে তারা সেটারই বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে গণমানুষের আরও কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই দিতে কোটি টাকা খরচ করে বির্জা খাল খনন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে জামায়াত। নগরীর কাঁচা বাজারগুলোকে চীনের আদলে গড়ে তুলতে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের কাছে কয়েকটি বাজারের দায়িত্বভার চেয়েছে দলটি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে কয়েকটি স্কুলের দায়িত্বও নিতে চায় তারা।
নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে জামায়াতে ইসলামী খাল খনন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাচ্ছে।’
মহানগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ সমকালকে বলেন, আমরা সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাচ্ছি। বেশ সাড়া পাচ্ছি।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে নগর জামায়াতের একাধিক নেতা সমকালকে বলেন, নানামুখী তৎপরতা ও কর্মসূচির মাধ্যমে জামায়াত সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা পাল্টে দেওয়াই হচ্ছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জামায়াতের উদারতার বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জামায়াতের কার্যক্রম প্রসঙ্গে বাসদের চট্টগ্রাম জেলা ইনচার্জ আল কাদেরী জয় সমকালকে বলেন, ‘উদারতা দেখানোর মধ্য দিয়ে জামায়াত ব্যবসায়ীদের কাছে পেতে চাইছে। সাম্প্রদায়িক চোহারা লুকিয়ে কাজ করছে তারা।’ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অশোক সাহা বলেন, ‘জামায়াত এখন সময়ের সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে। তবে তারা প্রকৃত উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য থেকে নড়বে বলে মনে হয় না।’