কমিটির আকার বাড়বে, লক্ষ্য তৃণমূলে বিস্তৃতি
Published: 2nd, March 2025 GMT
সদ্য আত্মপ্রকাশ হওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির আকার আরও বাড়বে। দল ঘোষণার পর আপাতত তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগী হবে দলটি। এর আগে ঘোষিত জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিগুলো থেকে নেতা-কর্মীদের দলে কীভাবে যুক্ত করা হবে, সেই কৌশল শিগগিরই আলোচনা করে ঠিক করবে নতুন দল। পাশাপাশি বক্তব্য-বিবৃতিসহ নিজেদের কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে আরও সচেতন হবেন দলটির নেতারা।
গত শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এনসিপির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের পর গতকাল শনিবার দলটির শীর্ষস্থানীয় চার নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, দল ঘোষণার পরও জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম চলমান থাকবে। শিগগিরই এই দুই প্ল্যাটফর্মের কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। তাদের সঙ্গে দলের কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক থাকবে না, দলের কার্যালয়ও হবে আলাদা।
নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতীক কী হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। রাজনৈতিক দল গঠনের আগে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শিরোনামে পরিচালিত জনমত জরিপে দলের জন্য বেশ কিছু প্রতীকের প্রস্তাব এসেছে। এগুলোর মধ্যে আছে বই, খাতা, কলম, মুষ্টিবদ্ধ হাত, কবুতর, শাপলা, ইলিশ, বাঘ ইত্যাদি। দলীয় প্রতীক চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় নেবে এনসিপি। এর আগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নীতিমালার শর্তপূরণে দলীয় কার্যালয় ঠিক করা হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হলে দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কার্যালয় এবং অন্তত ১০০ উপজেলা বা ক্ষেত্র অনুযায়ী মেট্রোপলিটন থানা কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হয়। এ ছাড়া নিবন্ধনের জন্য বিবেচিত হতে হলে দলের গঠনতন্ত্রেও সুনির্দিষ্ট কিছু বিধান স্পষ্টভাবে থাকতে হয়।
ফলে আপাতত শর্ত অনুযায়ী দলীয় কার্যালয় প্রতিষ্ঠা ও গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করাসহ নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করবে নতুন দলটি। প্রতীক নিয়েও দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। সবকিছু চূড়ান্ত করার পর নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
দলের বিস্তৃতি ও কার্যালয় নিয়ে ভাবনাজাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির যাত্রা শুরু হয়েছে ১৭১ সদস্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির মধ্য দিয়ে। তবে এ কমিটির আকার শিগগিরই বেড়ে দুই শতাধিক সদস্যের হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির দায়িত্বশীল দুই নেতা। দলের শীর্ষস্থানীয় পদগুলোর বাইরে ১৬ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, ৩২ জনকে যুগ্ম সদস্যসচিব, ২৬ জনকে দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক, ১৮ জনকে উত্তরাঞ্চলের সংগঠক, ১৪ জনকে যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও ৪৩ জনকে সদস্য করা হয়েছে।
একেকটি পদে এত ব্যক্তিকে কেন মনোনীত করা হলো, জানতে চাইলে নতুন দলের একজন নেতা এর পেছনে দুটি কারণের কথা বলেছেন। একটি হচ্ছে সাংগঠনিক কাজের সুবিধা, আর অন্যটি কমিটিতে বিভিন্ন মত ও শ্রেণির মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা। এ ছাড়া পদপ্রত্যাশীদের ‘খুশি’ করতে বিভিন্ন পদে অনেককে রাখতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ মুহূর্তে তৃণমূলে সংগঠনের বিস্তৃতিই এনসিপির প্রধান লক্ষ্য বলে জানান শীর্ষ ১০-এ থাকা একজন নেতা। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত কয়েক মাসে দেশের অন্তত ৪০০ থানায় জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি কমিটি গঠিত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও জেলা, মহানগর ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে শ খানেক কমিটি করেছে। এখন নতুন দলের ১৭১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে প্রায় সমানসংখ্যক নেতা এসেছেন। জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়েও জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিগুলোই দলের কমিটিতে রূপান্তরিত হবে কি না, সেই আলোচনা রয়েছে।
ওই নেতা জানান, তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিগুলো যাচাই করা হবে। সেসব কমিটির অনেককে নতুন রাজনৈতিক দলে যুক্ত করা হবে। তবে এ কাজটি কীভাবে করা হবে, তা শিগগিরই কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।
নতুন রাজনৈতিক দলের জন্য ঢাকায় কার্যালয় খোঁজা হচ্ছে বলে একজন নেতা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কার্যালয়ের জন্য ইতিমধ্যে ফার্মগেট, কাকরাইল, সেগুনবাগিচা ও হাতিরপুলে একাধিক ফ্লোর দেখা হয়েছে। ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন এলাকার মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয় করতে চাইছে দলটি।
কাকরাইলে ইতিমধ্যে দোতলা একটি ভবন কার্যালয়ের জন্য দেখা হয়েছে বলে জানান দলের মধ্যম সারির একজন নেতা। তবে এটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা চূড়ান্ত নাও হতে পারে।
শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় শিগগিরই চূড়ান্ত হবে। পাশাপাশি দলের নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্থানীয় কার্যালয় (জেলা-উপজেলা কার্যালয়) ও কমিটি করার কাজও খুব শিগগির শুরু হবে। তৃণমূলে দলের কার্যক্রম বিস্তৃত করা এ মুহূর্তে তাঁদের প্রধান লক্ষ্য। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি দেওয়া হবে।
ঈদুল ফিতরের পর পুরোদমে জাতীয় নাগরিক পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হবে বলে জানান ওই নেতা। তবে রমজান মাসে ইফতার অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক কর্মসূচিতে দলের নেতাদের দেখা যেতে পারে।
দুই সংগঠনের নতুন কাঠামো কেমন হবেরাজনৈতিক দল গঠনের পরও জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম চলমান থাকবে। নাগরিক কমিটির আরেকজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, আগের মতোই বাংলামোটরের কার্যালয় থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যক্রম চলবে। এটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে। সংগঠনটির নতুন কাঠামো নিয়ে আলোচনার জন্য খুব শিগগির একটি বৈঠক হবে।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ও নতুন দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিক কমিটির মতোই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম চলমান থাকবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ও আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি নিয়ে কাজ করবে এই প্ল্যাটফর্ম। তবে এর কার্যক্রম বাংলামোটরের বর্তমান কার্যালয় থেকেই চলবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
ভবিষ্যতে সচেতন থাকবেন নেতারারাজধানীতে বড় জমায়েতের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে এনসিপির। এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ এবং অনেক কম সময়ের প্রস্তুতিতে অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করতে পেরে ‘মোটামুটি সন্তুষ্ট’ দলটির নেতারা।
নতুন দলের একজন শীর্ষ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ গুছিয়ে ওঠাটা কঠিন ছিল। তবু অনুষ্ঠানে দলিত-হরিজন থেকে এলিট শ্রেণি—সব পর্যায়ের মানুষের সমাবেশ ঘটেছে। এতে তাঁরা মোটামুটি সন্তুষ্ট।
এই নেতা আরও বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশের চার শতাধিক থানায় যে কমিটি গঠন করেছে, সেই শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তির একটা চিত্র শুক্রবারের অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। লক্ষাধিক লোকের জমায়েত হয়েছে অনুষ্ঠানে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে যাঁরা অনুষ্ঠানে এসেছেন, তাঁদের অধিকাংশ নিজেদের অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনাতেই এসেছেন।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন করেছে। অতীতে আমাদের কর্মকাণ্ডে ভুল থাকতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে আমাদের আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই তাগিদটা আরও গভীরভাবে অনুভব করেছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক একজন ন ত অন ষ ঠ ন এনস প র ন বন ধ পর য য় র কম ট দল র ক ন ত কর গঠন র উপজ ল দলট র সদস য গঠন ক
এছাড়াও পড়ুন:
অস্কার মঞ্চে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরলেন অশ্রুসিক্ত জো
জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। এবারের আসরে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগের পুরস্কার জিতেছেন আমেরিকান তারকা জো সালদানা। ‘এমিলিয়া পেরেজ’ চলচ্চিত্রে একজন আইনজীবীর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে এই স্বীকৃতি উঠেছে তাঁর হাতে।
স্প্যানিশ-ভাষার সংগীতনির্ভর ছবিটি পরিচালনা করেছেন ফ্রান্সের জ্যাক অঁদিয়ার। অস্কারের মতো এমন অর্জন হাতে নেওয়ার পর অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন এই অভিনেত্রী।
মঞ্চে উঠে আবেগাপ্লুত জোয়ি তাঁর মাকে স্মরণ করেন এবং ‘এমিলিয়া পেরেজ’-এর সব শিল্পী ও কলাকুশলীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি শিল্প জগতে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমার দাদি ১৯৬১ সালে এই দেশে এসেছিলেন। আমি গর্বিত একজন অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান, যারা স্বপ্ন, সম্মানবোধ ও কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা নিয়ে বড় হয়েছেন। আমি ডোমিনিকান বংশোদ্ভূত প্রথম আমেরিকান, যে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করছে। আমি জানি, আমি শেষ ব্যক্তি নই। আমি আশা করি, এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই চরিত্রে আমি গান গাওয়ার ও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। যদি আমার দাদি আজ বেঁচে থাকতেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হতেন।’
তার এই বক্তব্য এমন এক সময়ে দিলেন যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে কঠোর আগ্রাসন চালাচ্ছে।
চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ একাডেমি পুরস্কার তথা অস্কারের আয়োজন চলছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে হলিউডের ডলবি থিয়েটারে। অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায়। আয়োজনের প্রথম পুরস্কারটি পেয়েছেন আমেরিকান অভিনেতা কিয়েরান কালকিন। ‘আ রিয়েল পেইন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতার স্বীকৃতি পেলেন তিনি।
অন্যদিকে, এবার সেরা অ্যানিমেশন ছবি (স্বল্পদৈর্ঘ্য) হিসেবে ‘ইন দ্য শ্যাডো অব সাইপ্রেস’, ফিচার অ্যানিমেশন হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ‘ফ্লো’। সেরা মেকআপ এবং হেয়ারস্টাইল বিভাগে পুরস্কার জিতেছে গেল বছরের অন্যতম আলোচিত ছবি ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’।
সেরা অ্যাডাপ্ট চিত্রনাট্যর পুরস্কার পেয়েছে আলোচিত ছবি ‘কনক্লেভ’। এছাড়া পল ট্যাজওয়েল ‘উইকেড’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পোশাক পরিকল্পনাকারী এবং শন বেকার ‘আনোরা’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছেন।