হামজা চৌধুরীকেই দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বললেন জামাল ভূঁইয়া
Published: 2nd, March 2025 GMT
হামজা চৌধুরী যেদিন থেকে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে ফিফার ছাড়পত্র পেয়েছেন, সেদিন থেকেই বাংলাদেশ দল–সংক্রান্ত যেকোনো আলোচনায় চলে আসে তাঁর নাম। আজ ভারত ম্যাচের প্রস্তুতি শুরুর দিনে বাংলাদেশের অনুশীলনে না থেকেও যেন ছিলেন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় স্তরের দল শেফিল্ড ইউনাইটেডের এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। সাংবাদিকদের প্রশ্নের কেন্দ্রে হামজাই।
তেমনই এক প্রশ্নে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘হামজা এই গ্রুপের (বাংলাদেশের গ্রুপে) সেরা খেলোয়াড়। দক্ষিণ এশিয়ারই সেরা খেলোয়াড় সে। হামজা দলের জন্য অনেক বড় প্রেরণা।’ জামালের কথার সঙ্গে দ্বিমত করার আসলে কিছু নেই। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে হাই প্রোফাইল ফুটবলার বাংলাদেশের হামজাই।
সেই হামজাকে নিয়ে ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে প্রথম ম্যাচটা জিততে চায় বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের মাঠে ভারতকে হারিয়ে আসা সহজ নয়। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কলকাতার সল্টলেকে আগে গোল করে শেষ পর্যন্ত ড্র করেছিল বাংলাদেশ। এবার কী আশা? ‘ভালো ফল আশা করি। ভারতের খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমাদের তুলনা করলে আমি মনে করি বিশাল কোনো পার্থক্য নেই। অবশ্যই ৩ পয়েন্ট নিতে চাই’—ভারত ম্যাচের প্রস্তুতি শুরুর দিনে আত্মবিশ্বাসী জামাল।
আরও পড়ুনশেফিল্ড অভিষেকেই ম্যাচসেরা হামজা০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রস্তুতির মাঝপথে ইতালিপ্রবাসী ফাহামেদুল এসে যোগ দেবেন সৌদি আরবের ক্যাম্পে। জামালকে দিয়ে প্রবাসী ফুটবলার জাতীয় দলে ডাকার যে ধারা শুরু হয়েছে, তার সর্বশেষ নাম ইতালির চতুর্থ ডিভিশনে খেলা ফাহামেদুল।
এই ফাহামেদুলকে নিয়ে জামাল বলছেন, ‘আমি তাকে চিনি না। তাকে কোচ পছন্দ করেছেন। আমার ধারণা সে ভালো খেলোয়াড়।’ এরপর যোগ করেন, ‘সারা পৃথিবীতে অনেক বাংলাদেশি ফুটবলার আছে। তারা সবাই জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চায়। আমাকে দিয়ে শুরু। এটা ইতিবাচক দিক। আমি চাই আরও আসুক।’ কেন চান সেটাও বলেন, ‘ফ্রান্স টিম সব বিদেশি নিয়েই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে।’
জামাল ভূঁইয়া.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বদলে গেছে জীবনযাত্রার ছক
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস ছিল গতকাল রোববার। তবে বদলে গিয়েছিল জীবনযাত্রার চেনা ছক। সকালবেলা মুখে কিছু না তুলেই অফিস-কাছারি পথে পা বাড়িয়েছেন লোকজন। জীবন–জীবিকার দায় মেটাতে যাঁর যা কাজ তাতে নিয়োজিত হয়েছেন। এদিকে বেলা যায় তবু ক্ষুধা–তৃষ্ণার কথা মুখে নেই। পবিত্র মাহে রমজান পাল্টে দিয়েছে ব্যক্তিজীবন থেকে ঘরসংসারের গতানুগতিক কাজের ধারা।
শনিবার সন্ধ্যায় রমজান মাসের চাঁদ দেখার ঘোষণার পর থেকেই মূলত মাহে রমজানের আবহ ছড়িয়ে পড়ে মুসলিম পরিবারগুলোয়। এশার নামাজের পর সারা দেশে মসজিদগুলোয় খতম তারাবিহর প্রথম জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীতে মসজিদগুলোয় এশার ওয়াক্ত থেকেই নামাজিদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। অধিকাংশ বাড়িতেই বরাবরের চেয়ে তুলনামূলক আগেই রাতের খাবার পর্ব শেষ করা হয়। গৃহিণীরা প্রস্তুতি নেন শেষরাতে সাহ্রির খাবারের আয়োজন করতে।
সকালে নাশতা তৈরি নিয়ে যে ব্যস্ততা থাকে, গতকাল তা ছিল না। বেলা গড়ানোর পর থেকে বাড়তে থাকে ইফতারের প্রস্তুতি। প্রথম রোজায় সবাই চেষ্টা করেছেন পরিবারে সবাইকে নিয়ে সাধ্যমতো উপাদেয় খাদ্য-পানীয় দিয়ে ইফতার করতে। রমজান উপলক্ষে অফিসের সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। সে কারণে চাকরিজীবীরা হাতের কাজ শেষ করে দ্রুত বাসাবাড়িতে ফেরার পথ ধরেন। অনেকে ফেরার আগে কাঁচাবাজার, ফলের দোকান, ইফতারির দোকানগুলোয় গেছেন কেনাকাটা করতে।
গতকাল হোটেল–রেস্তোরাঁর ঝাঁপ ছিল বন্ধ। ফুটপাতের চায়ের দোকানগুলোর সামনেও পর্দা ঝুলিয়ে খানাপিনার দৃশ্যে আড়াল টানা হয়। দুপুরের পর পাড়া–মহল্লার মোড়ে, হোটেল–রেস্তোরাঁর সামনে বসে যায় ঝাল-মিষ্টি, ভাজাপোড়ার হরেক রকম উপকরণ সাজিয়ে ইফতারির পসরা।
ইফতারে মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি, বুন্দিয়া—এগুলোই বাঙালির প্রধান ও প্রিয় খাবার। এর সঙ্গে থাকে মাংস, সবজির বিভিন্ন ধরনের পদ, পরোটা, বিরিয়ানি ও মিষ্টি। মাংসের অনেক রকমের কাবাব, ভুনা, রোস্ট এসব দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করেন ঢাকার বাসিন্দারা। এর পাশাপাশি হালিমও ইফতারের তালিকায় বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। সারা দিনের তৃষ্ণা নিবারণ ও শরীরে পানির ঘাটতি পূরণের জন্য ডাব বা লেবুর শরবতই অনেকের কাছে প্রিয়।
পুরান ঢাকার চকবাজারে চকশাহি মসজিদের সামনে পয়লা রমজান দুপুর থেকে বসে ইফতারির বাজার। বহু বছর ধরে চলছে এই বৈচিত্র্যময় ইফতারসামগ্রীর পসরা। বেইলি রোডের ইফতারিও বিখ্যাত। বিকেলে দেখা গেল ক্যাপিটাল কনফেকশনারির আয়োজনে বসেছে ইফতারির বাজার। এবার এখানে আছে ১০০ রকম পদ। জিলাপির কেজি ৪০০ টাকা। পাশেই নবাবি ভোজের ইফতারির পসরায় আছে ৫০ রকমের পদ। ব্যবস্থাপক ইমাম হোসেন জানালেন, তাঁদের কাচ্চি, মোরগ–পোলাও ৩০০ ও স্পেশাল গরুর তেহারি ৩৫০ টাকা। জ্যাগেরি রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক জানালেন তাঁদের ইফতারির তালিকায় আছে প্রায় ৬০টি পদ। গরুর হালিম ৩৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ আর খাসির হালিম ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। বেইলি পিঠাঘর এখন সাজিয়েছে ৩০ রকমের ইফতারির পসরা।
সেগুনবাগিচায় রয়্যাল অ্যারোমা কারি অ্যান্ড কাবাব তাদের রেস্তোরাঁর সামনে শামিয়ানা টাঙিয়ে তার তলায় সাজিয়েছে প্রায় অর্ধশত পদের ইফতারি। ব্যবস্থাপক সবুজ মিয়া বললেন, তাঁরা দাম বাড়াননি। ইফতারিতে লাভ কম করে বেশি মানুষের হাতে উপাদেয় খাবার তুলে দেওয়ারই চেষ্টা করছেন তাঁরা।
দুপুরের পর থেকেই ইফতারির দোকানগুলোয় বেচাকেনার ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। পথে যানজট ও যানবাহনেও যাত্রীদের ভিড়ও ছিল বেশি। বেলা যখন অস্তাচলে, ইফতারি সামনে নিয়ে বসেছেন রোজাদাররা। সারা দিন পানাহারে বিরত থেকে অপেক্ষা মাগরিবের আজানের ধ্বনির জন্য। ইফতারি মুখে তোলার আগে পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে নিজেদের রোজা কবুল ও পাপ মার্জনার জন্য সবিনয়ে কাতর প্রার্থনা করেছেন। আরও প্রার্থনা করেছেন, তিনি যেন তৌফিক দেন রমজানের সংযমের শিক্ষায় আত্মশুদ্ধি করে নিতে।